লিম্ফয়েড লিউকোসিস মুরগীর টিউমার সৃষ্টিকারী ভাইরাস রোগ। এ রোগের ক্ষেএে টিউমার সৃষ্টি হয় এবং রেট্রো ভাইরাস এর কিছু সারকোমা গ্রæপ এ রোগ সৃষ্টি করে তাই এ রোগের নামকরণ হয়েছে লিম্ফয়েড লিউকোসিস। এ রোগের ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার ৪ মাস পর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। এ জন্য ৪ মাস বয়সের নিচে এ রোগ হতে দেখা যায় না। এ ভাইরাস যকৃতের মধ্যে প্রবেশ করে এবং টিউমার সৃষ্টি করে। ফলে যকৃত বড় হয়ে যায়। লিভার বা যকৃত বড় হয়ে যায় বলে একে বিগ লিভার ডিজিজ (ইরম খরাবৎ উরংবধংব) ও বলে ।
ইতিহাস: রোলফ নামে একজন বিজ্ঞানী ১৮৬৮ সালে সর্বপ্রথম লিম্ফয়েড লিউকোসিস রোগ সর্ম্পকে একটি প্রতিবেদন দেন। পরে ১৯৪৭ সালে বার্মস্টার ও তার সহযোগীরা প্রমাণ করেন যে, লিম্ফয়েড লিউকোসিস রোগের জন্য ভাইরাস দায়ী।
কারণ: রেট্রোভিরিডি গোএের রেট্রো ভাইরাস এভিয়ান লিউকোসিস রোগের জন্য দায়ী। এ ভাইরাসের ১০ টি সাবগ্রুপ আছে যার মধ্যে এ এবং বি সাবগ্রæপটি সচরাচর পাওয়া যায়। অতি সম্প্রতি মাংস উৎপাদনকারী মুরগীতে জে (ঔ) সাবগ্রপটি পাওয়া যাচ্ছে যা মূলত মায়োলোমনোসাইট সিরিজের কোষের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং টিউমার সৃষ্টি করে। এ ভাইরাস হিস্টোপ্যাথলজি পরীক্ষায় মায়োলোসাইটোমস নামে পাওয়া যায়।
লিম্ফয়েড লিউকোসিস রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাসগুলোকে রেজিস্ট্যান্ট ইনডিউসিং ফ্যাক্টর (জবংরংঃধহপব রহফঁপরহম ভধপঃড়ৎ) বা আর আই এফ (জওঋ) এজেন্ট ও বলা হয়। কারণ মুরগির £ুণের ফাইব্রোবøাস্ট কোষ দ্বারা মিডিয়া তৈরী করে তাতে এ ভাইরাসগুলো পূর্বে মিশিয়ে দিয়ে তারপর যদি রায়োস সারকোমা রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস পরে মেশানো যায়, রায়োস সারকোমা ভাইরাস ঐ কোষগুলোতে সংক্রমণ সৃষ্টি করে তাদের ক্ষতিসাধন করতে পারে না।
রোগ ছড়ানোর প্রক্রিয়া: প্রকৃতিতে এ রোগ দুভাবে সংক্রমিত হয়। যথাঃ
১) এ ভাইরাস ডিমের সাদা অংশ ও কুসুম দ্বারা এক বংশ হতে অন্য বংশে এবং
২) সংর্স্পশ দ্বারা অর্থাৎ পায়খানা /লালার মাধ্যমে এক মুরগী হতে অন্য মুরগীতে প্রবেশ করে।
মুরগির দেহে যদি ভাইরাস থাকে তাহলে সেটা জরায়ুর মধ্যস্থ ডিমের মধ্যে প্রবেশ করে এবং পরর্বতীতে £ুনকে আক্রান্ত করে। তবে এক্ষেএে এ ভাইরাস গুলো £ুনের কোন ক্ষতিসাধন করে না বা মেরে ও ফেলে না। জন্মের পর তাদের মধ্যে ২ প্রকার বৈশিষ্ট্য ধরা পড়ে এগুলো হল:
১) কতগুলোতে প্রায় ১৪ সপ্তাহ পর হতে রোগ লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে থাকে এবং তারা মারা যায়।
২) ১৪ সপ্তাহ পরর্বতী মুরগির দেহে ভাইরাস থাকে কিন্তু তাদের দেহে কোন রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায় না এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও সৃষ্টি হয় না। এ সব মুরগি হতে ভাইরাস বেরিয়ে এসে অন্য মুরগিতে সংক্রমিত হতে থাকে এবং ডিমের মাধ্যমে ও সংক্রমিত হয়।
রোগের সহায়ক উৎপাদকসমূহ:
১) বংশের প্রভাব: মুরগির বংশের সাথে রোগের কিছুটা সর্ম্পক রয়েছে। দেশী বা সংকর জাতের মুরগির চেয়ে উন্নত জাতের মুরগিতে এ রোগ অধিক হয়।
২) বয়সের প্রভাব: বয়সের সাথে রোগের বিশেষ সর্ম্পক আছ।মুরগির দেহে ডিমের মাধ্যমে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে। এ ছাড়া ও অল্প বয়স্ক মুরগিতে সংর্স্পশ দ্বারা ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু সাধারণত ১৪ সপ্তাহের পূর্বে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না।
রোগ সৃষ্টির প্রক্রিয়া: ডিম, লালারস ও পায়খানার মাধ্যমে মুরগীর শরীরে প্রবেশ করে। এরপর রত্তের মাধ্যমে বারসাতে যায় এবং বারসার লিম্ফয়েড ফলিকলের মধ্যে প্রবেশ করে। বেশির ভাগ ফলিকল নষ্ট হয়ে যায় এবং কিছু ফলিকল টিউমার আকৃতি ধারণ করে।
বাহ্যিক লক্ষণ: মাথার ঝুটি ফ্যাকাশে হয় এবং কুচকে যায়। ক্ষুধামন্দা, দূর্বলতা, ডায়রিয়া, শুকিয়ে যাওয়া, হাড় আক্রান্ত হলে ফুলে যাওয়া, ডানা আক্রান্ত হলে ডানা ঝুলে পড়ে। দেহের পালক ভাঙ্গা ভাঙ্গা ও ময়লা হয়। অন্ত্রে রোগ হলে ডায়রিয়া হতে পারে। আক্রান্ত মুরগীর ঝুটি নীলাভ (Cyanosis) হয়ে যায়। যকৃত বড় হওয়ার কারণে তলপেট বড় দেখা যায়। পা-প্যারালাইসিস হতে ও পারে, না ও হতে পারে। কিন্তু মারেক্সে আক্রান্ত মুরগীর মত এক পা সামনের দিকে অন্য পা পিছনের দিকে থাকে না। ডিম পাড়া মুরগীতে ডিম উৎপাদন কমে যায়। অনেক সময় মুরগীর পায়ের ও ডানার হাড়ের অস্থি অস্বাভাবিক ঘন হয়ে (Osteopetrosis) মোটা ও বেকে যায় । কখনো কখনো পা ও পাখার হাড়ে অস্টিওপোেিরাসিস হয় যার ফলে পা ও পাখা বড় হয়ে যায়।
সাম্প্রতিককালে মংস উৎপাদনকারী মুরগীতে জে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত মুরগী পরিলক্ষিত হচ্ছে যা প্রধানত হাড়ের আবরণ তথা পাজরের সংযোগস্থল, র্স্টানাম, পেলভিস, ম্যান্ডিবল এবং মাথার খুলিতে দেখা যায় এমনকি এ ভাইরাস বিভিন্ন ভিসেরাল অঙ্গতে দেখা যেতে পারে।
অভ্যন্তরীণ লক্ষণ:
তুলনামূলক পরীক্ষা দ্বারা রোগ নির্ণয়: মারেক্স ও লিম্ফয়েড লিউকোসিসের মধ্যে তুলানা করে ও এ রোগ সমন্ধে ধারণা করা যায়।
পার্থক্যসূচক | মারেক্স | লিম্ফয়েড লিউকোসিস |
বয়স | ৪ সপ্তাহ বা তার বেশি | ১৪ সপ্তাহের বেশি |
বাহ্যিক লক্ষণ | সাধারণত পক্ষাঘাত হয়, এক পা সামনের দিকে বেকে যায় | পক্ষাঘাত হতে ও পারে, না ও পারে |
বারসা | বড় বা ছোট হয় | টিউমার হয়ে বড় দেখায় |
চামড়া ও প্রোভেন্ট্রিকুলাসে টিউমার | থাকতে ও পারে, নাও থাকতে পারে | থাকবে না |
যকৃত | টিউমার দেখা যায় (রত্তনালীতে) | টিউমার দেখা যায় (ভিতরের দিকে) |
কেন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্র | আক্রান্ত হয় | আক্রান্ত হয় না |
আঙ্গুল দ্বারা পরীক্ষা: পায়খানার রাস্তা দ্বারা আঙ্গুল প্রবেশ করে বারসা বড় ও উচুঁ নিচুঁ আছে কিনা তা পরীক্ষা করা যায়। কারণ বারসাতে টিউমার হওয়ার কারণে বারসা বড় হয়ে যায়।
সিরাম ও ডিমের কুসুম দ্বারা পরীক্ষা: আক্রান্ত ও মৃত মুরগীর সিরাম ও ডিমের কুসুম আলাদা করে তা থেকে ভাইরাস পৃথক করে রোগ নির্ণয় করা যায়।
চিকিৎসা: ভাইরাস রোগের কোন চিকিৎসা নেই, তবে ২য় পর্যায়ের ব্যাকটেরিয়া হতে রক্ষার জন্য চিকিৎসা করতে হয়। এজন্য পানিতে এনরোফ্লক্সাসিন গ্রæপের ঔষধ দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া পানিতে টক্সিন নিউট্রালাইজার জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্বির জন্য ইমিউনিটি বর্ধক পানিতে ব্যবহার করা যেতে পারে অথবা জৈব সেলেনিয়াম (Alkosel, Selplex) খাদ্যে নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে।
প্রতিরোধ: এ রোগ প্রতিরোধ দুরুহ ব্যাপার। তবু ও যে সমস্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করা যেতে পারে তা হল:
১. রোগ মুত্ত মুরগির ডিম হতে বাচ্চা ফুটিয়ে নতুনভাবে আর¤ভ করা ।
২. বাচ্চা পরিবহনের প্যাকেট পুনরায় ব্যবহার না করা।
৩. একই শেডে একই বয়সের মুরগী পালন করা।
৪. ৬ সপ্তাহ বয়সে মুরগীকে এভিয়ান লিউকোসিস ভাইরাসের টিকা প্রদান করা। উল্লেখ্য সাবগ্রæপ এ ভাইরোসের এনভেলাপে বিদ্যমান গøাইকোপ্রোটিন হতে রিকম্বিানেন্ট এ এলএসভি প্রস্তুত করা সম্ভব যা ভ্যাকসিন হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
৫. মুরগির বাচ্চার বারসা ফেব্রিকাস সার্জারি করে ফেলে দিলে তাতে রোগ হবার সম্ভবনা কমে যায়।
ধন্যবাদ ডা: আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সাইদুল হক স্যার আপনাকে। আপনার পোস্টের সুচনা ধরেই আমার মনে একটি প্রশ্ন জেগে উঠল আর সেটা হল এক্ষেত্রে এই রোগে আক্রান্ত মুরগির ডিম খেলেও কি কোনরূপ সমস্যার সম্মুখীন হতে পারি?