মুরগির খাদ্যে গুণগতমান সম্পন্ন কোলিন ক্লোরাইডের ব্যবহার ও গুরুত্ব

আমাদের দেশের পোল্ট্রি শিল্প দুই দশকের বেশি সময় ধরে অতিবাহিত হয়ে গেলে ও পোল্ট্রি খামারের সকল ব্যবস্থপনা এখন ও চলছে সনাতন পদ্বতিতে। অনেক খামারী এখন ও সঠিকভাবে খাদ্য তৈরী এবং খাদ্যের বিভিন্ন উপাদানের কাজ ও উপকারিতা সমন্ধে সচেতন নয়। উন্নত বিশ্বে যেখানে অত্যাধুনিক উপায়ে মুরগি পালন করা হচ্ছে সেখানে আমাদের দেশের খামারীরা সামান্য খাদ্য ব্যবস্থাপনার দাযিত্বটুকু নিজেরা গ্রহণ করে না। মুরগির খাদ্যে ব্যবহ্নত বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে কোলিন অন্যতম। মজার বিষয় হল এই কোলিন আমাদের দেশের খামারীরা ব্যবহার করেন মুরগীর ওজন কমানোর জন্য। কোন মুরগীর ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হলে বা বাচ্চা অবস্থায় খামারীরা কখনই কোলিন খাওয়ান না কারণ এতে মুরগীর ওজন নাকি কমে যায়। তাই এসব ভুল ভ্রান্তি দুর করতে এবং উন্নত ও গুনগত মান সম্পন্ন কোলিনের ব্যবহার উপর নিচে আলোকপাত করা হল।


পোল্ট্রির খাদ্য তৈরীতে প্রাণী পুষ্টি প্রিমিক্স হিসেবে কলিন এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর অর্ন্তগত একটি ভিটামিন এবং এটি ভিটামিন বি-৪ হিসেবে পরিচিত। ১৮৪৯ সালে সর্বপ্রথম ষাড়ের পিত্ত হতে কোলিনকে পৃথকীকরণ করা হয়। পিত্তকে গ্রিক ভাষায় কোলে (Chole) বলা হয়। পরর্বতীতে মস্তিষ্কের টিস্যু হতে একে আলাদা করা সম্ভব হয়েছে। ১৯৩২ সালে বেষ্ট নামক একজন বিজ্ঞানী ইঁদুরের ফ্যাটি লিভার রোগ নিয়ন্ত্রণে কোলিন বিশেষ ভূমিকা রাখে বলে প্রমাণ করেন। এ ধরনের গবেষণার ফলশ্রুতিতে ১৯৪৩ সাল থেকে সিনথেটিক কোলিন পোল্ট্রিতে বাণিজ্যিক হারে ব্যবহ্নত হচ্ছে। কোলিন নিজেই একটি ক্ষারীয় পর্দাথ। তাই একে পশুখাদ্য বা মানুষের খাদ্যে ব্যবহার করার আগে প্রশমিত করতে হয়। পশু খাদ্য হিসেবে কোলিন ক্লোরাইড এবং মানুষের ক্ষেেএ এটি কোলিন বাইটারট্রেট রুপে ব্যবহ্নত হয়ে থাকে। কার্যকরী দিক থেকে কলিন অনেকটা এমাইনো এসিড এবং অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিডের অনুরুপ। ভিটামিনসমূহ যেমন বিপাকীয় কার্যক্রমের অন্যতম উৎসেচক হিসেবে কাজ করে সেখানে ব্যাতিক্রম হিসেবে কলিন মুরগীর দেহের বিভিন্ন কলার গঠনশৈলীতে এবং স্নায়ুতন্ত্র সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কোলিন প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে তৈরি করা হয়, কিন্তু গঠনগত কারণে এককভাবে কোলিন বাজারজাত করা যায় না। কোলিন তরল পদার্থে নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশিয়ে অথবা শুষ্ক অবস্থায় ক্লোরাইডের সাথে মিশ্রিত করে বাজারজাত করা হয়। বাংলাদেশে কোলিন, কোলিন ক্লোরাইড হিসেবে পাওয়া যায়। কোলিন শত্তিশালী পানিগ্রাহী পদার্থ। একে যদি সন্ধ্যায় কঠিন অবস্থায় একটি পােএ রাখা যায় তবে সকালে ঐ পাএটিতে শুধুমাএ পানি দেখা যাবে। কোলিন পানি এবং এলকোহলে দ্রবণীয় কিন্তু ইথারে অদ্রবণীয়। এটি পোল্ট্রির দৈহিক বৃদ্বি, ডিম উৎপাদন, হ্যাচাবিলিটি এবং কিডনীর কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাচ্‌চা থেকে বাড়ন্ত পোল্ট্রিতে কোলিন এর চাহিদা বেশি, কারণ বাড়ন্ত অবস্থায় দৈহিক বৃদ্বি বেশি হয়। বিটেইন কিংবা মিথিওনিন সরাসরি কোলিন এর চাহিদা পূরণ করতে পারে না। খাদ্যে মিথিওনিন এর প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য খাদ্যে অবশ্যই কোলিনের মাএা ঠিক রাখতে হবে। মিথাইল গ্রুপের চাহিদা পূরণে প্রথমেই কোলিন এর প্রয়োজন হয়। যদি খাদ্যে পর্যাপ্ত কোলিন থাকে তবে কেবলমাএ মিথিওনিন অন্যান্য কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে।

কোলিনের বিপাক: প্রাকৃতিক উৎসে কোলিন শত্তভাবে কোষের সাথে লেগে থাকে কারণ এটি কোষের কোষপ্রাচীরে পাওয়া যায়। তাই এ কোলিন আংশিকভাবে হজম হয় এবং তুলনামূলকভাবে অল্প পরিমাণে অন্ত্র থেকে দেহে শোষিত হয়। মূলত ক্ষুদ্রান্তে শত্তি নির্ভর (Energy dependent) সোডিয়াম পাম্পের মাধ্যমে রত্তে শোষিত হয়।

choline
চিএ: দেহে কোলিন ক্লোরাইডের এর বিপাকক্রিয়া

 

কোলিন ক্লোরাইডের কাজ:
১. কোলিন দেহের কোষ গঠনে (মূলত ফসফ্যাটিডাইল কোলিন) ও এর দৃঢ়তা বজায় রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। বাড়ন্ত প্রাণীতে বিশেষ করে ব্রয়লারের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
২. কোলিন লেসিথিন তৈরীতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে আর এই লেসিথিন লিভারের মাধ্যমে চর্বি বিপাকে কার্যকরী ভ্থমিকা পালন করে। শত্তিশালী ফ্যাট ইমালসিফাইং যৌগ হিসাবে রত্তের মধ্যে বিদ্যমান চর্বি ও কোলস্টেরলকে দ্রবীভূত করতে সাহায্য করে।
৩. কোলিন ক্লোরাইড ট্রান্সমিথাইলেশন বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। ট্রা্ন্‌সমিথাইলেশন প্রক্রিয়ায় এমন একটি বিক্রিয়া যেখানে দুইটি যৌগের মধ্যে এমাইনো গ্রুপের পরির্বতনের মাধ্যমে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় নতুন যৌগের সৃষ্টি করে যা বিভিন্ন জৈবিক কাজ সম্পন্ন করে । এ বিক্রিয়ার জন্য কোলিন প্রয়োজন কারণ কোলিনকে মিথাইল গ্রুপ দান করতে হলে প্রথমে বিটেইনে রপান্তরিত হতে হয়। এই ট্রান্সমিথাইলেশন বিক্রিয়া দেহে বিভিন্ন ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়ায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করার মাধ্যমে দেহকে বিভিন্ন বিষাত্ত পদার্থের বিষক্রিয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
৪. কোলিন এসিটাইল কোলিন তৈরীর মাধ্যমে স্নায়ুতন্ত্রের জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এসিটাইল কোলিন নার্ভাস সিগনাল স্থানান্তরে ও মসিতষ্কের গঠনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
৫. রত্ত তঞ্চন (Clotting), প্রদাহ ও ফিটাসের উন্নয়নে অংশগ্রহনকারী বিভিন্ন উপাদানের মেসেজিং মলিকিউল হিসাবে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৬. অসমোলাইট এর উৎস হিসেবে ও কোষের আয়তন নিয়ন্ত্রণে কোলিন ভূমিকা রাখে। উল্লেখ্য ,বিটেইন ও গ্লিসারোফসফোকোলিন হল কোলিন উদ্ভুত অসমোলাইট।

কোলিন ক্লোরাইড এর অভাবজনিত লক্ষণ:
১. কোলিন ক্লোরাইড এর অভাবে ফ্যাটি লিভার এবং কিডনি রোগ দেখা দেয়। ফলে ডিম পাড়া মুরগীর ডিম উৎপাদন কমে যায়, ডিমের আকার ছোট হয়ে যায় ও সর্র্বোপরি হ্য্‌চাবিলিটি কমে যায়।
২. খামারে সর্ব্বোচ উৎপাদন র্দীঘস্থায়ী হয় না, সর্বোপরি খামারের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়।
৩. খাদ্য রুপান্তর হার কমে যায় ফলে ব্রয়লারের মাংস উৎপাদন কমে যায়।
৪. কোলিন ক্লোরাইড এর অভাবে পেরোসিস রোগ (হাড় নরম ও বাঁকা হয়ে যাওয়া) দেখা দেয়।
৫. বাচ্চা মুরগীতে শারীরিক বৃদ্বি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং হাটুর গিরা ফুলে যেতে পারে।
৬. মুরগীর বাচ্চার দ্রুত বৃদ্বির সময় মৃত্যুহার বৃদ্বি পায়।
৭. অধিক গরমের সময় লেয়ার মুরগীতে অস্বাভাবিক মৃত্যু পরিলক্ষিত হয়।

কেন ব্যবহার করা উচিত:
১. বর্তমানে ব্রয়লার, লেয়ার এবং ব্রিডারের তালিকায় প্রোটিন কনসেনট্রেট তথা প্রোটিনের ব্যবহার বেড়ে গেছে। প্রোটিনের বিপাকীয় কার্যক্রমের জন্য কোলিন ক্লোরাইড এর ব্যবহার জরুরী। মোদ্দাকথা খাদ্যে অতিরিত্ত প্রোািটন ব্যবহার করলে কোলিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে।
২. দ্রুত বৃদ্বির জন্য কোলিন ক্লোরাইড ব্যবহার করা অবশ্যই প্রয়োজন। কারণ কোলিন ক্লোরাইড ব্যবহার না করলে খাদ্য রুপান্তর দক্ষতা কমে যাবে।
৩. খাদ্যে অতিরিত্ত চর্বি বা চর্বি জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করলে এর যথাযথ বিপাকের জন্য কোলিন ব্যবহার করা অতীব জরুরী।
৪. যুত্তরাস্ট্র, ফ্রান্স ও তাইওয়ানে পরিচালিত কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে উচ্চ মাএার কোলিন ক্লোরাইড ব্যবহার করলে পোল্ট্রিতে বিশেষ করে ব্রয়লার মুরগীতে উপকার পাওয়া যায়। ৮০০ পিপিএম কোলিন (যা ১৫০০ পিপিএম ৬০% কোলিন ক্লোরাইড এর সমতুল্য) খাদ্যে ব্যবহার করলে খাদ্য রুপান্তর হার হ্রাস পায়। যদি ব্রয়লার মুরগিতে ১০০০ কেজি ওজন বাড়াতে হয় তবে খাদ্যে ২.২ কেজি ৬০% কোলিন ক্লোরাইড ব্যবহার করতে হবে এবং এক্ষেেএ ৫০ কেজি খাদ্যের ব্যবহার কমানো সম্ভব।

ব্যবহার বিধি ও মাএা:

মিশ্রিত খাদ্য ও পানির সাথে কলিন মিশিয়ে খাওয়ানো যায়। এন.আর.সি অনুমোদিত (National Research Council, USA) মাএা হল:

লেয়ার ব্র্রয়লার কলিন(মিলিগ্রাম/কেজি)
০-৬সপ্তাহ —— ১৩০০মিগ্রা/কেজি
৬-১২সপ্তাহ —— ৯০০মিগ্রা/কেজি
১২-১৮সপ্তাহ —— ৫০০মিগ্রা/কেজি
ডিমদেওয়াকালীনসময়ে —— ১০৫মিগ্রা/মুরগী/দিন
—— ০-৩সপ্তাহ ১৩০০মিগ্রা/কেজি
—— ৩-৬সপ্তাহ ১০০০মিগ্রা/কেজি
—— ৬-৮সপ্তাহ ৭৫০মিগ্রা/কেজি

 

বাজারে প্রাপ্ত বিশুদ্ব কলিন ক্লোরাইডে ৮৬.৭৯% কলিন আছে। ১ টন খাদ্যে বিশুদ্ব কোলিন মিশাতে চাইলে ১.১৫ কেজি (১/০.৮৬৭৯ = ১.১৫) কলিন ক্লোরাইড মিশাতে হবে। যদি ৬০% কলিন ক্লোরাইড থেকে কোলিন এর প্রয়োজন পূরণ করতে হয় তাহলে ১.১৫ কে ০.৬ দ্বারা ভাগ করে সঠিক পরিমাণ অর্থাাৎ ১ কেজি কোলিন এর জন্য (১.১৫/০.৬) ১.৯১ কেজি কলিন ক্লোরাইড ৬০% মিশাতে হবে।

কোলিনের উৎস: মুরগীর খাদ্যের অধিকাংশ উপাদানে কোলিন বিদ্যমান যেমন দানাদার শস্য ও এর উপজাত , সয়াবিন মিল ইত্যাদি। খাদ্যের লিপিড বা চর্বি জাতীয় অংশের মধ্যে সাধারণত কোলিন থাকে। উদ্ভিদ অংশে কোলিন এর পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম থাকে কিন্তু সয়াবিন এবং তুলাবীজে কোলিন এর মাএা বেশি থাকে। প্রাণীজ উৎসে কোলিন মোটামুটি থাকে। দুটো উৎসেই কোলিন সরাসরি পাওয়া যায় না। ভূট্টার মধ্যে কোলিনের পারিমাণ তুলনামূলকভাবে কম থাকে অন্যদিকে গম ও বার্লিতে ভূট্টার প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ কোলিন পাওয়া যায়। সয়াবিন কোলিনের একটি উত্তম উৎস। কোলিন যকৃতে ও তৈরী হয় যদি অতিরিত্ত মিথিওনিন সরবরাহ করা হয়। নিচে পোল্ট্রির খাদ্য তৈরীতে ব্যবহ্নত বিভিন্ন খাদ্য উপাদানে কলিন এর পুষ্টি উপাদান মাএা উল্লেখ করা হল:

উপকরণেরনাম কলিন(মিগ্রা/কেজি)
ভূট্টা ৬২০
মিটএন্ডবোনমিল ১৯৯৬
সয়াবিনমিল ২৭৯৪
সূর্যমুখীমিল ৩৯০
গমেরভূষি ১২৩২
ফিসমিল ৩০৫৬
ব্লাডমিল ৬৯৫
গরুরযকৃত ১৮২৫০
ননিবিহীনদুধ ১৫৬৫
বার্লি ৯৯০

কলিন বিশুদ্বতার নিশ্চিতকরণ পরীক্ষা: সঠিকভাবে কোলিন ক্লোরাইড পরিমাপ করতে হলে কোলিন ও ক্লোরাইড এর পরিমাণকে আলাদাভাবে বিবেচনায় রাখতে হবে। এর কারণ হল যদি কোলিন ক্লোরাইডকে পানিতে দ্রবীভুত করা হয় তবে এটি ”কোলিন” ও ”ক্লোরাইড” এ দুটি সমান অংশে বিভত্ত হবে। ক্লোরাইড পদ্বতি সহজ, নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী। তাই এটা সহজে অনুমেয় উৎপাদনকারী ্‌এবং ব্যবহারকারী উভয়েই এটি ব্যবহার করতে সক্ষম। কিন্তু সাম্প্রতিককালে দেখা যাচ্ছে কোলিন ক্লোরাইড এর সঠিক পরিমাপের ক্ষেেএ প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। কিছু উৎপাদনকারী ক্লোরাইডযুত্ত কিছু লবণ যেমন পটাসিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম ক্লোরাইড বা এমানিয়াম ক্লোরাইড ব্যবহার করে কোলিন ক্লোরাইডে কোলিনের মাএা সমৃদ্ব করছেন এবং ৩৫% কোলিন ক্লোরাইডকে ৬০% কোলিন ক্লোরাইড নামে বাজারে বিক্রি করছেন। চারটি টেস্ট এর মাধ্যমে কোলিন ক্লোরাইডের পরিমাণ জানা যায় । এগুলো হল:

১. মহর/ভলর্হাট টেস্ট (Mohr/Volhardt): এ পরীক্ষাটি নির্ভরযোগ্য ও দ্রুত করা যায় এবং এতে সিলভার নাইট্রেট (AgNO3) টাইট্রেশন এর মাধ্যমে ক্লোরাইড এর পরিমাণ মাপা যায়। বাজারে বিভিন্ন লবণ যেমন সোডিয়াম ক্লো্‌রাইড ও ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড ব্যবহার করে প্রতারণামূলকভাবে কোলিনের পরিমাণ বাড়ানোর অপচেষ্টা এ টেস্টের মাধ্যমে বের করা সম্ভব। এ টেস্টের মাধ্যমে কলিন নির্ণয় করা যায় এবং কলিন ও ক্লোরাইড এর ১:১ অনুপাত অনুমান করা যায়।

২. পারক্লোরিক টেস্ট (Perchloric acid) : এ পরীক্ষায় পারক্লোরিক (HCIO4) টাইট্রেশন এর মাধ্যমে ক্লোরাইড এর পরিমাণ মাপা যায়। এ পরীক্ষায় ক্লোরাইড এর পরিমাণ নির্ণয় করা যায় তবে কোলিন এর পরিমাণ জানা সম্ভব হয় না।

৩. রিইনকি কালার তুলনাকরণ (Reinecke color comparison): এ পরীক্ষায় লবনের রং এর তুলনা পরিমাপের মাধ্যমে কোলিন পরিমাফ করা হয় এবং এটি কোলিন এর জন্য সবচেয়ে কার্যকরী টেস্ট। যুত্তরাস্ট্রে (NFIA) প্রিমিক্সে কোলিনের সঠিক পরিমাপ নির্ণয়ের জন্য এ টেস্টকে আর্দশ ধরা হয়। চীনে প্রিমিক্স প্রোডাক্টে কোলিনের পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য একে রাস্ট্রীয়ভাবে আর্দশ পরীক্ষা হিসেবে ও বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

৪. আয়ন ক্রোমাটোগ্রাফি (Ion chromatography): এ পরীক্ষায় কোলিন সহ সব ধরনের ধনাত্নক চার্জ পরিমাপ করা হয়। তবে

কিছু ক্যাটায়ন যেমন পটাসিয়াম ও এমোনিয়াম আয়ন যুত্ত উপাদান এর উপস্থিতিতে এ পরীক্ষা প্রভাবিত হয়। এ টেস্টের মাধ্যমে চুড়ান্তভাবে কোলিনের পরিমাণ জানা যায়।

উন্নত মানের কোলিন ক্লোরাইড এর বৈশিষ্ট্য: একটি উন্নত মানের কোলিন ক্লোরাইডে যা থাকতে পারে তা হল:
১. আর্দ্রতার পরিমাণ ২.৫% এর নীচে। আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকলে ভিটামিন এর পচন (Decomposition) শুরু হয়।
২. উচ্চ কোলিন ক্লোরাইড ঘনত্ব।
৩. খুবই নিচু মাএার ট্রাইমিথাইল এমাইন এমোনিয়াম (TMA) । উঁচু মাএার TMA থাকলে ঐ খাদ্য বা প্রিমিক্সে মাছের গন্ধ পাওয়া যাবে।
৪. ডাইঅক্সাইন মুত্ত। এটি মূলত শুষ্ককরণ প্রক্রিয়া কারণে হয়ে থাকে এবং উন্মুত্ত জ্বলন্ত শিখায় শুষ্ককরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলে এ সমস্যাটি এড়ানো সম্ভব নয়। ২০০১ সালের নভেম্বর এ EU directive 2001/102/EC অনুসারে প্রতি কেজি খাদ্য উপাদানে এন ঘনত্ব হল ০.৭৫ ন্যানো গ্রাম যা মাছের তেলে ৬ ন্যানো গ্রাম পর্যন্ত হয়।
৫. জিএমও (GMO= Genetically Modified Origin) মুত্ত পণ্যের সহজপ্রাপ্যতা। ইউরোপীয় ইউনিয়নে মানুষের বা পশু খাদ্যে এ পরিমাণ ০.৯% এর বেশি অনুমোদন করা হয় না।
৬. ক্যারিয়ার হিসাবে পুস্টিমান যুত্ত উপাদান যেমন ভেজিটেবল ক্যারিয়ার।
৭. অনাকাংখিত বস্তুর সর্বনিম্ন উপস্থিতি।
৮. ধুলা মুত্ত
৯. বিভিন্ন গুণগত মান সম্পন্ন টেস্ট যেমন FAMI-QS, HACCP, ISO 9002, 14001 দ্বারা সত্যায়িত।
১০. কম লিড টাইম (Lead time) অর্থাৎ দ্রুত ফল পাওয়ার সম্ভবনা।
১১. কোন ধরনের জমাট বাধানো অবস্থার সৃষ্টি না হওয়া (No caking)

বাজারে মুরগীর খাদ্যে ব্যবহার করা যায় এরকম কয়েকটি উন্নত মানের কোলিন ক্লোরাইড হল Chlorine Chloride 60% (Balchem Italy, বাজারজাতকরণে আরিফ বাংলাদেশ) , Taminizer C (Taminco, Belgium, বাজারজাতকরণে ইন্টার এগ্রো) । এছাড়া তরল কোলিন ক্লোরাইড হিসাবে কোলিন এইচ ৭৫ (Choline H75, বাজারজাতকরণে এসকেএফ) পাওয়া যায়।

রেফারেন্স: ১) Quality and nutritional aspects of Choline chloride by H.A Workel ২) Technical bulletin of Belchem animal nutrion and health 3) Choline: Function & requirement (Belchem)
4) Cholines key role in poultry diet revisited, July 5, 2010.

 

লেখকঃ ডা: আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সাইদুল হক

আবুল হাসনাত মোঃ সাইদুল হক, ডিভিএম।

এটাও দেখতে পারেন

What heat stress does in poultry

যে ৪ উপায়ে বিটেইন (Betain) হিট স্ট্রেস মোকাবিলায় কাজ করে

হিট স্ট্রেস (heat stress) গবাদিপশু ও পোল্ট্রি খামারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা, যা ওজন কমায়, …

২ মন্তব্য

  1. কোলিন ক্লোরাইড কোথায় পাব?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.