অত্যাধিক গরমে মুরগি কেমন ধকলে পড়ে, মুরগির ওপর কি কি প্রভাব পড়ে তা আমার ১ম আর্টিকেলে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তাই আর কোন ভূমিকায় না গিয়ে সরাসরি আজকের আর্টিকেলে চলে যাচ্ছি। যারা ১ম আর্টিকেলটি পড়েননি তারা এখানে ক্লিক করে পড়ে নিতে পারেন।
অত্যাধিক গরমের সময় মুরগিকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং উৎপাদন ঠিক রাখতে বিশেষ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত-
- পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা
- পুষ্টি ব্যবস্থাপনা
পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা
যখন পরিবেশের তাপমাত্রা খুব বেশি থাকে তখন খামারের পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা কি এবং কেমন হওয়া উচিত তা খামারি মাত্রই জানেন এবং বোঝেন। এ সময়ে মুরগির শেড পরিষ্কার রাখতে হবে। শেডের ছাউনি খড় হলে ভালো হয়। তবে ছাউনি টিনের হলে সিলিং দিতে হবে যাতে উত্তপ্ত টিনের তাপ মুরগির দেহে শোষিত না হতে পারে। যদিও ছাউনি কিসের হবে তা খামার স্থাপনের সময়েই নিরূপিত হয়ে থাকে। নিচে সিলিং না থাকলে টিনের চালা/ছাউনির উপেও পাতলা করে খড় বিছিয়ে দিতে হবে। মুরগির শরীরে, খামারের চারপাশে সেপ্র করতে হবে এর ফলে খামার জীবানুমুক্ত, ঠান্ডা এবং পরিচ্ছন্ন থাকবে।
পুষ্টি ব্যবস্থাপনা
তাপজনিত পীড়নের সময় মুরগির খাদ্যের specification পরিবর্তন করে পুষ্টি গ্রহণ বাড়ানোর চেয়ে পুষ্টি উপাদানের পরিপাচ্যতা বৃদ্ধি করে এবং বিশেষ micro ingredients ব্যবহার করে ভাল ফল পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে বিবেচ্য প্রধান পুষ্টি উপাদানগুলো হলো-
প্রোটিন ও এমাইনো এসিড
গরমের সময় খাদ্য পুষ্টি উপাদানের ঘনত্ব (density) বাড়ানোর চেয়ে পরিপাচ্যতা বাড়ানোই গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যে অতিরিক্ত প্রোটিনের পরিমাণ minimize এবং এমাইনো এসিডের ভারসাম্যতা বজায় রাখতে হবে।
ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান
কিছু ভিটামিন যেমন- ভিটামিন ই,ডি,এ,সি,বি এবং নিকোটিনিক এসিড তাপজনিত পীড়নের সময় মুরগির উৎপাদনশীলতার ওপর positive effect বজায় রাখে। গরম কালে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়। ফলে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এ সময় খনিজ উৎপাদন শরীরে ইলেট্রোলাইট সরবরাহ করে।
পানি সরবরাহ
মুরগির স্বাভাবিক অবস্থায় যে পরিমান খাদ্য গ্রহন করে তার দ্বিগুণ পানি গ্রহণ করে। গরমকালে পানি গ্রহনের পরিমান আরো বেড়ে যায়। পরিবেশের উচ্চ তাপমাত্রার কারণে সরবরাহকৃত পানির তাপমাত্রাও বেড়ে যায়। এ জন্য দিনের যে সময় তাপমাত্রা বেশি থাকে সে সময় পানিতে কয়েক খন্ড রবফ মিশিয়ে দিতে হবে এবং অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি সংখ্যক বার সতেজ ঠান্ডা পানি সরবরাহ করতে হবে।
শক্তি
গরমের সময় মুরগির পানি গ্রহনের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং খাদ্য গ্রহণের পরিমান কমে যায় এর ফলে মুরগির শরীরে পুষ্টি ঘাটতি দেখা দেয়। মুরগির স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রম ঠিক রাখতে এবং উৎপাদনশীলতা বজায় রাখতে খাদ্যে সম্পূরক শক্তি সরবরাহের দরকার হয়। তবে সম্পূরক শক্তির উৎস হিসেবে কার্বোহাইড্রেট এর চেয়ে চর্বি জাতীয় উপাদান ব্যবহার করা উত্তম। যখন পরিবেশের তাপমাত্রা বেড়ে যায় তখন পাখি শরীরে তাপ উৎপাদন এবং শরীর থেকে তাপ হারনোর (heat production Ges heat loss) এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দেয়। একটি পরীক্ষণের মাধ্যমে জানা গেছে যে, ৩২ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সে. এর মধ্যে ১ ডিগ্রি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে খাদ্য গ্রহণ ৫% কমে যায়। মুরগির খারাপ পারফরমেন্সের জন্য খাদ্য গ্রহণ কমে যাওয়া অন্যতম কারণ। সাধারণ নিয়েমে মুরগির ঘরের তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রি সে. এর উপরে প্রতি ২.৫ ডিগ্রি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে খাদ্যে energy content ২২ কিলোক্যালরি/কেজি হিসাবে কমানো উচিত। তাপজনীত পিড়নের সময় মুরগি রেশন শক্তির উৎস হিসেবে কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিনের চেয়ে বেশি পরিমাণে সম্পূরক হিসেবে ফ্যাট ব্যবহার করা ভালো এবং ফ্যাট পরিবেষণ বৃদ্ধি করা উচিত। কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন পরিবেশকে বেশি তাপ উৎপন্ন হয় যা তাপজনিত পীড়ন আরো বাড়িয়ে দেয় এবং মুরগির মৃত্যু ঘটে। ফ্যাট থেকে প্রাপ্ত শক্তি কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন থেকে কম পরিমাণে তাপ উৎপন্ন করে। তাপ জনিত পীড়ন হ্রাসের জন্য মুরগির খাদ্যে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য উপাদান থেকে প্রাপ্ত এনার্জির পরিমান কমাতে ফ্যাট এর পরিমান বাড়াতে হবে এবং তা ৪.৫% পর্যন্ত হতে পারে। লেয়ার খাদ্যে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে ফ্যাট সরবরাহ করতে হবে। খাদ্য কম গ্রহণজনিত পুষ্টি ঘাটতি মেটাতে মুরগির রেশনে বেশি পরিমান ফ্যাট জাতীয় খাদ্য সরবরাহ, ব্যবহার ও পরিশোষণ নিশ্চিত করতে হবে। ফ্যাট পরিপাকে প্রতি ক্যালরি ফিড এনার্জি থেকে উৎপাদিত দৈহিক তাম কম বলে বেশি পরিমান ফ্যাট ব্যবহার করলেও কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিনের তুলনায় কম তাপ উৎপাদিত হয়। এটা পরিষ্কার যে গরমকালে তাপজনিত পীড়ন প্রতিরোধে মুরগির খাদ্যে ফ্যাটের পরিমান বাড়াতে হবে। তবে বাড়তি ফ্যাট যাতে পাখির শরীরে utilized হয় এ বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে ব্রয়লার এবং পুলেটের ক্ষেত্রে বিষয়টি অধিক গুরুত্ববহ কারণ ব্রয়লার এবং পুলেটের বয়স কম হওয়ার কারণে উচ্চ মাত্রার ফ্যাট utilize করার মতো পর্যাপ্ত bile উৎপাদন করতে পারে না। যেহেতু ফ্যাট হতে কম তাপ উৎপাদিত হয় এজন্য অতিরিক্ত উৎপাদন কমাতে অন্যান্য ডায়েটারি এনার্জির পরিবর্তে ফ্যাট জাতীয় খাদ্য ব্যবহার বাড়ানো যেতে পারে। খাদ্যে প্রোটিনের পরিমাণ কিছু কিছু সময় calculated value’র চেয়ে ০.৫% কমানো যেতে পারে। যদি এমনটি করা হয় সেক্ষেত্রে এমাইনো এসিডের প্রয়োজনীয় মাত্রা ঠিক রাখতে মিথিওনিন ও লাইসিনের মতো সিন্থেটিক এমাইনো এসিড ব্যবহার করা যেতে পারে। যদি দেখা যায় যে,তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সে. এর উপরে উঠতে পারে সেক্ষেত্রে প্রায় ৩ ঘন্টা আগে থেকেই খাদ্য প্রদান সীমিত করতে হবে। শেডে আলোর ব্যবস্থা থাকলে রাতে এবং খুব সকালে মুরগি খাদ্য গ্রহণে বেশি আগ্রহী হয়। সুতরাং midnight Feeding or intermittent lighting program রাতে মুরগির খাদ্য গ্রহণকে প্রভাবিত করে। গরমকালে তাপজনিত পীড়নের সময় প্রতি টন মুরগির খাদ্যে ৫০ হতে ৩০০ গ্রাম ভিটামিন ‘সি’ ব্যবহার তাপজনিত পীড়নের প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং তীব্র পীড়নে মুরগিকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে। তাপজনিত পীড়নের সময় পরিবেশগত ব্যবস্থাপনার সাথে পুষ্টি ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাপজনিত পীড়ন প্রতিরোধ করে মুরগিকে উৎপাদনশীল রাখতে অন্যান্য ব্যবস্থাপনা অনুশীলনের সাথে গরমের সময়ে মুরগির রেশনে অব্যশই ফ্যাট জাতীয় খাদ্য উপাদান বেশি ব্যবহার করতে হবে। কারণ কার্বোহাইড্রেট বিপাকে শরীরে ফ্যাট বিপাকের চেয়ে বেশি তাপ উৎপন্ন হয় যা তাপজনিত পীড়নকে আরো বাড়িয়ে দেয় এবং মুরগির মৃত্যু ঘটতে পারে।
সূত্রঃ ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি ম্যাগাজিন অবলম্বনে
কেমন লাগলো তা মন্তব্য করে জানাবেন।
(এডমিন কর্তৃক পরিমার্জিত)
আপনার পোস্টটি খুবই সময়োপযোগী। ধন্যবাদ।