প্রানিসম্পদ বিভাগে ডিপ্লোমা ডিগ্রি ঃ নতুন সুযোগ নাকি নিশ্চিত সংঘাত

পৃথিবীতে ভেটেরিনারি সায়েন্সের শুরু সম্পর্কে আমারা সবাই জানি, আজ থেকে প্রায় ২৫০ বছর পূর্বে ফ্রান্সের লিয়ন শহরে । বাংলাদেশে এই শিক্ষা এসেছে প্রায় ৬০ বছর পূর্বে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এটাও সবার অজানা নয়। বাকৃবির পর আজ দেশে সর্বমোট ১০ টি প্রতিষ্ঠান হতে এই ডিগ্রি দেয়া হয়। আমার ছোট অভিজ্ঞতা থেকে দেখছি বাংলাদেশের সবচেয়ে ঝামেলাপূর্ন বিভাগ এটি। এই বিভাগে ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল হাজবেণ্ড্রীর মধ্যকার পেশাগত দ্বন্দ তো চলছেই ,তার পুরেও আবার নতুন করে প্রানীসম্পদ সেক্টরে ডিপ্লোমা ডিগ্রি চালুর পায়তারা চলছে। যতটুকু আমি জানি পৃথিবীতে কোথাও কোন দেশে এই সেক্টরে ডিপ্লোমা ডিগ্রি চালু নাই , তাহলে বাংলাদেশ কি এমন দেশ হয়ে গেলো যে , ডিপ্লোমা ডিগ্রি চালু করা দরকার । আমি জানি না , যে ডিগ্রি দেশের পুরো ছাত্রসমাজ চাই না , দেশের কোন ভেটেরিনারিয়ান চায় না , সেখানে গুটি কয়েক ব্যক্তির স্বার্থসিদ্ধির জন্য কি ডিপ্লোমা চালু করার দরকার আছে। বাংলাদেশের এই ৬০ বছরে আমরা এই সেক্টর হতে এই দেশকে কি দিতে পেরেছি ? কি উন্নয়ন করেছেন আমাদের প্রবীন ভেটেরিনারিয়ান রা ?  শুধুমাত্র ডিভিএম ডিগ্রি নেওয়া পর্যন্ত কি আমাদের দায়িত্ব? এই পেশার ভবিষ্যত দেখার দায়িত্ব আসলে কার ? ডিপ্লোমা ডিগ্রি চালু হলে দেশে কি অবস্থার সৃষ্টি হবে এটা আমরা পলিটেকনিক এর দেশব্যাপী সংঘর্ষ ,সংঘাত দেখলেই বুঝতে পারব । তাহলে কি কারনে , কি উদ্দেশ্যে এই অপচেষ্টা ? শুধু কিছু টাকার লোভে একটা সম্ভাবনাময় সেক্টর কে নিশ্চিত অন্ধকারে নিমজ্জিত করা ছাড়া আর কিছুই না ।


দেশে নতুন করে ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট খুলে চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ডিগ্রী দেয়ার মানে কি ? যেসকল ছাত্র-ছাত্রী ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট এ ভর্তি হবে , তাদের তো পূর্ন অধিকার আছে উচ্চমাধ্যমিক লেভেল উত্তীর্ণ হওয়ার পর ডিভিএম ডিগ্রি নেওয়ার , তাহলে এই নবীন শিক্ষার্থীদের সুন্দর জীবন নিয়ে খেলা করার অধিকার কারো নাই। আমার বোধগম্য হচ্ছে না , আমার শ্রোদ্ধেয় ভেটেরিনারিয়ান গন যদি পেশাকে ভালোবেসে , পেশার উন্নয়নের জন্য ডিপ্লোমা ডিগ্রী চালু করতে চান ,তাহলে নতুন করে ভেটেরিনারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈ্রি করুন , প্রানি সম্পদ সেক্টরে নতুন করে ত্রিমুখী সংঘর্ষের সুযোগ তৈ্রি করার কি দরকার?  আমরা তো সবাই জানি বাংলাদেশে প্রানিসম্পদ সেক্টরে ভেটেরিনারি মেডিসিন ও এনিম্যাল হাজবেন্ড্রী এই দুই ডিগ্রির একত্রীকরনের উদ্দ্যোগ এই আদি আমলের। অনেক কমিটি হয়েছে, অনেক চেষ্টা হয়েছে, যেমন- ১৯৬৯ সালের শিক্ষা সম্পর্কিত মূল্যায়ন কমিটি ,১৯৭৪ সালের কৃষি প্রতিমন্ত্রি শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবতের নেতৃ্ত্বাধীন কমিটি , ১৯৭৬ সালের দেশি বিদেশি সংস্থা FAO,ADB ,Word Bank,UGC সহ বিভিন্ন মহলের মতামত অনুযায়ী প্রানসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড মোঃ আলাউদ্দিন কর্তৃক প্রেরিত  সুপারিশ ,১৯৭৭ সালে সিএমএলএ কর্তৃক নির্দেশিত ভাইভ নম্বর ৪০৫/১৫ ,তারিখ ২৩/০৩/১৯৭৭ এর সুপারিশ , ১৯৮২ সালে বিগেডিয়ার এনাম কমিটি ,১৯৯৫ সালের বাংলাদেশ সরকারের পশুসম্পদ উন্নয়ন শিক্ষানীতি মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রানালয় ৫,৪,১ শিক্ষা সহ ১৯৯৫ সালে মান্নান ভূইয়ার কমিটির সুপারিশ সহ সবাই বাংলাদেশে অভিন্ন ডিভিএম ডিগ্রি চালুর ব্যাপারে সুপারিশ করেন । বাংলাদেশের জন্য প্রানীসম্পদে শুধুমাত্র সমন্নিত কোর্স চালুর প্রস্তাব রাখেন , যার ফলশ্রুতিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় নতুন করে ৫ বছর মেয়াদী সমন্নিত ডিভিএম ডিগ্রি প্রদানের নিমিত্তে ভেটেরিনারি কলেজ  প্রতিষ্ঠা করা হয় ,যা বর্তমানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভূক্ত।  তাহলে আজকের এই পরিস্থিতিতে কেন এই ডিপ্লোমা ডিগ্রি ? যে ছাত্র/ছাত্রী ডিপ্লোমা তে ভর্তি হবে ,তার তো পূর্ন অধিকার আছে ৫ বছর মেয়াদী ডিভিএম ডিগ্রি গ্রহন করার , কেন তার এই অধিকারকে ক্ষুন্ন করা হবে?

অর্থ-বিত্তের লোভ লালসা মানুষ কে যে কত নিচে নামাতে পারে তার প্রমান এই ডিপ্লোমা ডিগ্রি চালুর সিদ্ধান্ত। আমাদের সবাইকে তো এই ইহলোক ত্যাগ করতে হবে। এমন একটা কাজের জন্য সারা জীবন মানুষের অভিশাপ নেওয়ার কি দরকার। আমাদের নৈ্তিকতা আজ কোথায় নেমে গেছে ?

আজ আমি লজ্জিত যে,  আমি  ওই সব ভেটেরিনারিয়ান্দের উত্তরসুরী , যারা টাকার জন্য নিজের পেশাকে ধংসের দিকে ঠেলে দেয় । আমি তো মনে করি উনারা সেই মেয়েদের মত যারা টাকার জন্য নিজের ইজ্জত দিতে দ্বিধা বোধ করে না ।

হাইরে কপাল ,যেখানে আমরা আজ নতুন কিছু আবিস্কার করব ,সেখানে আমরা আমাদের পেশাগত ঝামেলা মেটাতে ব্যস্ত। কোথায় আজ বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন (বিভিএ),কোথায় ? কি দরকার এই এসোসিয়েশনের ,

তাই আসুন বাংলার ভেটেরিনারিয়ান রা , জেগে উঠুন , । আমরা ছাত্র সমাজ যখন এই ভিত্তিহীন অকার্যকর ডিপ্লোমা ডিগ্রী চালুর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, ইনশাল্লাহ আমরা জয়ী হয়েই ছাড়ব।  এই ডিগ্রি চালুর প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ না করা হলে আমরা কঠোর কর্মসুচি দিতে বাধ্য থাকব।

 

 

 

 

 

 

লেখকঃ ডা মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান পাপ্পু

I am Kbd Dr.Md.Mustafijur Rahaman Pappu. I have completed Doctor of Veterinary Medicine (DVM) Degree and Master's in Pathology under Faculty of animal science & veterinary medicine of PATUAKHALI SCIENCE & TECHNOLOGY UNIVERSITY( PSTU) My home town is JHENAIDAH . কৃষিবিদ ডা মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান পাপ্পু যুগ্ম সাধারন সম্পাদক, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন (বিভিএ),খুলনা বিভাগ। কার্যনির্বাহী সদস্য, বঙ্গবন্ধু ভেটেরিনারি পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি। সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক, ভেটেরিনারি স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন (ভিএসএ),পবিপ্রবি। সাবেক সহ সভাপতি , বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, পবিপ্রবি শাখা। Mobile -01915 084474. 01771 444402

এটাও দেখতে পারেন

বিভিএ’র নবনির্বাচিত কমিটির বিগত এক মাসের অর্জন

এক মাস পূর্ণ করলো বিভিএ ২০১৭-২০১৮ কমিটি। কেমন ছিলো এই এক মাসের অগ্রযাত্রা ? কী …

৪ মন্তব্য

  1. Is there any course in your country in medical science to become half doctor ? then why for veterinary science ? We Bengali and veterinarian are both belong to Crab class always pull down legs.Go ahead.

  2. মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান পাপ্পু

    আওয়াজ তুলুন ভেটেরিনারিয়ান গন
    \

  3. ভেটেরিনারিতে ডিপ্লোমা চালু- একেই বলে “মা-এর খবর নাই, মাসিকে নিয়ে টানাটানি”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.