ঝালকাঠির নলছিটিতে হাঁস-মুরগি কবুতর ও ছাগলের আদর্শ খামার গড়ে তুলেছেন মিজানুর রহমান মাসুদ নামে এক যুবক। গ্রামে বিদ্যুৎ না থাকলেও নিজস্ব জেনারেটর, সোলার প্লান্ট, গ্যাস ও সাপ্লাই মটারের মত আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। তার এই সফলতায় একদিকে যেমন তার বেকাত্ব ঘুছিয়েছেন অপরদিকে তিনি জেলা জুড়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তার এই সাফাল্যের অনুপ্রাণিত কেউ কেউ হয়ে এ ধরণের আদর্শ খামার করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। গত ২০১১ সলের মাঝামঝি সময় প্রথমে ৪০টি যমুনাপাড়ি ছাগল নিয়ে খামার গড়ে তোলেন নলছিটির ডেবরা গ্রামের মিজানুর রহমান মাসুদ। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় একশ’ তে। শুরুতেই সফলতা পেয়ে নিজের ৭০ শতাংশ জমিতে গড়ে তোলেন ‘শাফিন আদর্শ খামার’। একটি খামারের মধ্যে তিনি খাকি ক্যাম্বেল নামে পরিচিত পাঁচশ’ হাঁস, দুইশ’ কবুতর এবং একশ শুরু করেন। এ গ্রামে বিদ্যুত নেই, তবুও থেমে যায়নি তার পরিকল্পনা। নিজস্ব জেনারেটর, সোলার প্লান্ট, গ্যাস ও সাপ্লাই মটারের মত আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সফল হয়েছেন তিনি। এছাড়া খামারে বসেই নিজস্ব মেশিনে ভূট্টা, গম ও ডাল ভেঙে তৈরি করেন গবাদি পশুর খাবার। খামার মালিক মাসুদ জানান, যমুনাপাড়ি ছাগলে বছরে দুইবার তিন থেকে চারটি করে বাচ্চা দেয়। এছাড়াও প্রতিদিন প্রায় চার লিটার করে দুধ দেয় প্রতিটি ছাগল। লাভজনক হওয়ায় তিনি এ জাতের ছাগল পালন করছেন। এছাড়া নেপিয়ার জাতের হাইব্রিড ঘাস চাষ করে ছাগলের খাবার তৈরি করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন জেলা জুড়ে। তার এ কাজে সহযোগিতা করতে উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর ঘাষ চাষের জন্য এই গ্রামে তিনটি প্রদর্শনী প্লট করে দিয়েছেন। তার এ খামারে কাজ করছেন তিনজন শ্রমিক। উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে শ্রমিকরাই খাবার তৈরি এবং খমারের পরিচর্যা করছেন। সপ্তাহে দুইবার স্প্রে করে জীবানুমুক্ত রাখা হচ্ছে খামারের পরিবেশ। এমনকি এই খামারে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের মাধ্যমে পশুকে নিরাপদে রাখা হয়। বছর ঘুরলেই লাভের মুখ দেখার আশায় রয়েছেন খামারের মালিক ও শ্রমিকরা। সপ্তাহে দুই তিন দিন খামারের পরিস্থিতি দেখতে ছুটে যান উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. পলাশ সরকার। এছাড়াও খামারের মালিক অথবা শ্রমিকরা কেউ সমস্যায় পড়ে জরুরি ফোন করলে নিজে অথবা অফিসের স্টাফ পাঠিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেন তিনি। খামারের মালিক মিজানুর রহমান মাসুদ জানান, শুধু লাভের আশায় নয়, শাফিন আদর্শ খামার করা হয়েছে এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে। আমি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় বসবাস করি। এলাকায় আমার দুই ভাই বেকার রয়েছে। প্রথমে তাদের এবং এলাকার বেকার যুবকদের কথা চিন্তা করে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি খামার করার পরিকল্পনা করি। গত বছরের মাঝামাঝি সময় এ কার্যক্রম হাতে নিই। শুরুতেই আমার খামারে ব্যপক সফলতা এসেছে। আমার খামার সম্প্রসারিত করে লোক নিয়োগ করা হবে। এতে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি মিলবে অনেক যুবকের। আবার কেউ উদ্বুদ্ধ হয়ে এ ধরণের খামার করতে পারেন। তাকে আমি ছাগলের বাচ্চাসহ সব ধরণের সহযোগিতা করবো। খামার থেকে প্রতি বছর আমার খচর বাদ দিয়ে দুই থেকে তিন লাখ টাকা আয় হবে বরে জানান। মিজানুরের প্রতিবেশী হেলাল উদ্দিন জানান, খামারটি টিকে থাকলে এক সময় এখানে অনেক শ্রমিক কাজ করতে পারবে। এখান থেকে দুধ ও ডিম সংগ্রহ করা সহজ হবে। এ ধরণের খামার আরো কয়েকটি হলে জেলার দুধ ও ডিমের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। ব্যক্তি পর্যায়ের জেলার সব চেয়ে বড় ও আদর্শ খামার হিসেবে ইতোমধ্যেই পরিচিতি লাভ করা এই খামার দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের যুবকরা বেকারত্ব ঘোছাতে পারেন, হতে পারেন মাসুদের মতো সাবলম্বী।
বিষয়বস্তুছাগল পালন মুরগি পালন হাইব্রিড ঘাস
এটাও দেখতে পারেন
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে অনলাইন গবাদি পশু শনাক্তকরণ এবং নিবন্ধন ব্যবস্থা চালুঃ জানা যাবে স্বাস্থ্য ও রোগের ইতিহাস
প্রাথমিকভাবে ৫০,০০০ পশু নিবন্ধিত হবে যা গ্রাহকদের পশুগুলোর স্বাস্থ্য ইতিহাস দেখার সুযোগ দিবে। প্রথমবারের মতো, …
I think, your article will more inspire to more people like me. Thank you very much.