প্রাণিসম্পদ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দিতে পাবনায় কাজ করছে “ভেটসকর্ণার”

পাবনার পৈলানপুরে ভেটেরিনারি ক্লিনিকের আদলে গড়ে উঠেছে এক অনন্য প্রতিষ্ঠান- “ভেটসকর্ণার”। সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ের কিছু ভেটেরিনারিয়ানবৃন্দের উদ্যোগে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়। উদ্ভোধন করা হয় দারুন এক সময় আর তারিখে- ১০/১০/১০ ইং সকাল ১০টা ১০ মিনিটে। (উদ্যোক্তাদের মধ্যে এই অধমও একজন। উদ্ভোধনের এই উদ্ভট আইডিয়াটাও ছিল আমারই। )


যাই হোক, চালু হওয়ার পর থেকে এখানে পাবনার খামারিদের বিশেষত পোল্ট্রি খামারিদের নানা ধরনের পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।আছে পোস্টমর্টেম করার ব্যবস্থাও।

পটভূমিঃ আমি পাবনায় আমার কর্মজীবন শুরু করার থেকেইেএকটা ব্যাপার খেয়াল করি- সেটা হলো প্রায় সব ভেটেরিনারিয়ানরাই কোন না কোন দোকানে বা চায়ের স্টলে আড্ডা দেয়। সবার সাথে সবার নিয়মিত দেখাও হয় না। আমি ভাবলাম, যদি একটা এসোসিয়েশনের মতো করা যায় তবে সবার একটা বসার জায়গা হতো। তাছাড়া সেখানে খামারিদেরও সেবা দেয়া যেত। আমি সবসময় ভাবতাম, মানুষের জন্য যদি মেডিকেল বোর্ড বসানো যায় তবে ভেটেরিনারিতে কেন নয়? যাই হোক এই সমস্ত বিষয় নিয়ে কথা বললাম আমাদের আরেকজন উদ্যোক্তা মাসুদ ভাইয়ের সঙ্গে। এই মাসুদ ভাই বাকৃবি’র বাংলাদেশ ভেটেরিনারি ছাত্র সমিতির ভিপি ছিলেন, উনি জানালেন, ওনারাও এটা নিয়ে ভেবেছেন, কিন্তু কোনকিছু করা হয়ে ওঠেনি। শেষে যুক্ত হলেন স্কয়ার এগ্রো ডিভিশনের এক্সিকউটিভ ডাঃ রাসেল, উনিও এটা নিয়ে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেয়ার চেষ্টা করেছেন। যাই হোক, একটা ছোট খাটো রুমও পেয়ে গেলাম, বসার মতো। সেই রুমের মালিকের সাথে দেখা করতে গেলাম আমরা কয়জন, ইতিমধ্যেই আমাদের সাথে আরো যারা যুক্ত হলেন, ডাঃ জসিম (নোভারটিস), ডাঃ মেহেদি (অনন্য সমাজ কল্যাণ সংস্থা), ডাঃ শরিফ (সিপি বাং) । মালিক আমাদের স্বল্প ভাড়াতেই রুমটা আমাদের কাছে ভাড়া দিতে আগ্রহী হলেন। আমি একটা টেবিল দিলাম, একটা কোম্পানি কিছু চেয়ার স্পন্সর করলো, সাইনবোর্ড স্পন্সর করলো আরেকটা কোম্পানি। একটা নাম প্রস্তাব করলাম “ভেটসকর্ণার”, সবার ভালো লাগলো নামটা। আমি একটা লগো ডিজাইন করলাম, সবার মতামত নিয়ে কিছু কারেকশন করে সেটাও ফাইনাল করে ফেললাম। এভাবেই প্রতিষ্ঠানটি দাড়িয়ে গেল। আমরা প্রত্যেক সদস্য কিছু চাঁদা দিলাম, তা দিয়ে আরো কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা হলো। তারপর থেকে সেখানে আমরা নিয়মিতভাবে বসতে শুরু করলাম, কিছু লিফলেট ছাপিয়ে প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। ধীরে ধীরে খামারি আসতে শুরু করলো। আমরা পোস্টমর্টেম করে চিকিৎসা দিতে থাকলাম। জটিল কোন কেস আসলে আমরা কয়েকজন মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

কার্যক্রমঃ চিকিৎসা সেবা পাশাপাশি আমরা ভাবলাম, আমাদের নিজেদের উন্নতির জন্যও কিছু একটা করা দরকার। আমরা প্রতি মাসে একবার করে মাসিক সভা করি, সেখানে অন্যান্য বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি একটা নির্দিষ্ট টপিকের উপর মুক্ত আলোচনা হয়। এতে করে সেই বিষয়ে আমাদের ভেতরকার সন্দেহ বা কোন সীমাবদ্ধতা থাকলে তা দূর হয়ে যায়। এই সেদিনও আমরা একটা জটিল কেস নিয়ে আলোচনা করে একটা প্রেসক্রিপশন করলাম এবং আমরা কেসটা খুব সফলভাবে মোকাবেলা করতে পেরেছিলাম। এছাড়াও যখন, বার্ড ফ্লু’র আক্রমন চলে তখন আমরা সম্মিলিতভাবে কিভাবে কি করলে সবার জন্য ভালো হয় সেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে আমাদের কর্মপন্থা নির্ধারণ করি। এতে করে আমার বার্ড ফ্লু সার্ভিলেন্স এর কাজও খুব চমৎকার ভাবে করতে পেরেছি। কেননা কোথায় মুরগি মারা যাচ্ছে, কোথায় বিক্রি হচ্ছে, ইত্যাদি খবরগুলো আমরা সবাই সবার সাথে শেয়ার করতাম। কোন রোগে বর্তমানে কোন ড্রাগ বেশি কার্যকরি হচ্ছে, নতুন কি ড্রাগ বাজারে এলো ইত্যাদি বিষয়েও আমরা আপডেট থাকি সর্বদা।

সম্প্রসারণঃ এখন আমরা আরো বড় একটি রুম ভাড়া নিয়েছি। আমরা চাচ্ছি, ভেটসকর্ণার-এ ছোট পরিসরে একটা ডায়াগনিসস ল্যাব করতে। দেখি কতদূর কি করতে পারি.. আমরা আরো চাই, দেশের সবকটি জেলায় ভেটসকর্ণারের শাখা খুলতে। আপনারা আগ্রহী হলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা সর্বাত্মক সহযোগীতা করবো। আমাদের ভেটসকর্ণারের জন্য আপনার দোয়া করবেন।

(আমার নিজের ল্যাপটপ আর মোবাইল চুরি হয়ে যাওয়ায়, ছবি দিতে পারলাম না।)

লেখকঃ ডাঃ তায়ফুর রহমান

ডাঃ তায়ফুর রহমান; ডিভিএম, এম এস, এমপিএইচ ; ন্যাশনাল টেকনিক্যাল এডভাইজার-এপিডেমিওলজি, জাতিসঙ্ঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা, ঢাকা; ব্লগ এডমিনিষ্ট্রেটর, ভেটসবিডি

এটাও দেখতে পারেন

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে অনলাইন গবাদি পশু শনাক্তকরণ এবং নিবন্ধন ব্যবস্থা চালুঃ জানা যাবে স্বাস্থ্য ও রোগের ইতিহাস

প্রাথমিকভাবে ৫০,০০০ পশু নিবন্ধিত হবে যা গ্রাহকদের পশুগুলোর স্বাস্থ্য ইতিহাস দেখার সুযোগ দিবে। প্রথমবারের মতো, …

৬ মন্তব্য

  1. খূব ভালো লাগলো, আসলে ভেটেরিনারীয়ানদের এমন কিছু করা উচিত যাতে দেশের উপকার হয়, সাধারন মানুষ আমাদের গূরুত্ব বুঝতে পারে।

    • ডাঃ তায়ফুর রহমান (এডমিন)

      ঠিক তাই, ভালো বলেছেন, আমরাও তাই মনে করি। কেবল পশু হাসপাতালের ভেতর বসে থাকা আর কলের পেছনে দৌড়ে বেড়ানোই ভেটেরিনারিয়ানদের কাজ নয়। সমাজে আমাদের আরো অনেক দ্বায়িত্ব আছে, অনেক কর্তব্য আছে। আসলে আমাদেরকেই আমাদের মান-মর্যাদা বাড়াতে সচেষ্ট হতে হবে। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

  2. আপনাকেও ধন্যবাদ

  3. Unique example of cooperation between technical experts to resolve issues relating to poultry and livestock to share know knowledge .
    Please let me know if we can sponsor any of your events on be half of Phytobiotics , Germany. Greetings . Mahbub Hossain . 01711 563700

  4. Thanks for Nimontron. I would love to meet you all very soon in Pabna. Mahbub

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.