গরম কাল শুরু হয়েছে। আমাদের দেশে গরমকালে পরিবেশের তাপমাত্রা কখনো কখনো ৩৭-৩৮ ডিগ্রি সে. ছাড়িয়ে যায়। এ সময়ে মুরগি পালন বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই গরমকালে মুরগি পালনে কিছু বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ও পরিচর্যা দরকার হয়। শীতকালে পরিবেশের তাপমাত্রা কম থাকে এ অবস্থায় কৃত্রিম তাপ প্রয়োগ করে তাপমাত্রা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রাখা যতটা সহজ গরমকালে উচ্চ তাপমাত্রা নিরবচ্ছিন্নভাবে কমিয়ে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রাখা ততটা সহজ নয়। অত্যাধিক গরমে বিভিন্নভাবে মুরগির উৎপাদনশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন- গরমকালে তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতাও বাড়তে থাকে। ফলে সহজেই মুরগির খাদ্য সামগ্রী বিভিন্ন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, মোল্ড, ফাংগাস ইত্যাদি দ্বারা দূষিত হয়ে বিষাক্ত হয়ে পড়ে এবং এখান থেকেই মুরগির জীবন-যাপন জটিল হতে শুরু হয়। পানিতে ভিজে যাওয়া এবং বাতাসে আর্দ্রতা বেশি হওয়ার কারণে লিটারের ময়েশ্চার দ্রুত বাতাসে শোষিত হয় না বিধায়, মুরগির ঘরে বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাস উৎপন্ন হয় এবং জটিলতা বাড়তে থাকে। তারপর এক সময় তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে মুরগির জন্য অসহনীয় হয়ে উঠে। ফলে উৎপাদন দুরের কথা মুরগির বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে যায়। এখন দেখা যাক এই অসহনীয় পরিবেশ মুরগির কি ক্ষতি করে এবং এ অবস্থায় টিকে থাকতে মুরগি নিজে কিভাবে লড়াই করে।
দ্রুতবর্ধনশীল ব্রয়লার এবং উচ্চ উৎপাদনশীল লেয়ার মুরগির ওপর পরিবেশের উচ্চ তাপমাত্রা মারাত্নক প্রভাব ফেলে। এই অবস্থাকে তাপজনিত পীড়ন বলা হয়। প্রত্যেক জীবই প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকতে কিছু কৌশল অবলম্বন করে থাকে। বেঁচে থাকার এই লড়াইয়ে কখনো সে টিকে থাকে আবার কখনো হারে। মুরগিও এর ব্যতিক্রম নয়। যখন ঘরের বাইরের তাপমাত্রা খুব বেশী থাকে তখন মুরগির ঘরের এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে যাতে মুরগি অতিরিক্ত দৈহিক তাপ শরীর থেকে বের করে আরাম বোধ করে। এই রুপ চ্যালেঞ্জিং সময়ে সর্বোচ্চ উৎপাদন পেতে কিছু গুরুত্বপূর্ন ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রয়োগ করতে হবে।
অন্যান্য প্রাণির মতো অতিরিক্ত দৈহিক তাপ অপসারণ করে শরীরের তাপমাত্রা নির্দিষ্ট রাখার জন্য মুরগির কোন ঘর্মগ্রন্থি নেই। মুরগি তার শরীরের অতিরিক্ত তাপ তিনটি উপায়ে অপসারণ করে থাকে। চামড়ার উপরিভাগ হতে বিকিরণের মাধ্যমে বাতাসের মধ্য দিয়ে অন্য কোন পাখিতে; ঠান্ডা কোন জিনিস যেমন খাঁচা, লিটার, মাচা ইত্যাদির সংস্পর্শে সরাসরি পরিবহনের (Conduction- তাপ সঞ্চালনের একটি পদ্ধতি) মাধ্যমে তাপ স্থানান্তর করে; চারপাশের বাতাসের মধ্যে পরিচালনের (Conduction) মাধ্যমে । যখন পরিবেশের তাপমাত্রা ২৮০সে. হতে ৩৫০সে. এর মধ্যে থাকে তখন শরীরের অতিরিক্ত তাপ অপসারণ করে শরীর নিয়ন্ত্রনের জন্য তাপ সঞ্চালনের পদ্ধতিগুলো কার্যকরী ভূমিকা রাখে। মুরগি তার শরীরের রক্তবাহি নালিকাগুলোকে চামড়া, কানের লতি এবং ঝুঁটিতে প্রসারিত করে পরিবহন, পরিচলন, বিকিরনের মাধ্যমে তাপ অপসারণ সহজ করার জন্য শরীরের ভিতরের তাপ চামড়ার উপরিভাগে নিয়ে আসে। যে সব মুরগি ফ্লোরে পালন করা হয় সে সব মুরগি conductive and convective heat loss বৃদ্ধির জন্য ফ্লোরের ঠান্ডা জায়গা খোঁজে এবং লিটার গর্ত করে তার মধ্যে বসে থাকে। মুরগি পাখা প্রসারিত করে শরীরের আয়তন বাড়িয়ে শরীর থেকে তাপ অপসারণ করে। যে সব মুরগি খাঁচায় পালন করা হয় সে সব ক্ষেত্রে গরমের সময় মুরগি শরীরের অতিরিক্ত তাপ অপসারণ করা দূরুহ হয়ে পড়ে, কারণ খাঁচায় পালন করা মুরগি শরীরের তাপ অপসারণের জন্য কোন ঠান্ডা জায়গা খুঁজে পায় না। যদি পরিবেশের তাপমাত্রাই শরীরের তাপমাত্রাকে নির্দেশ করে অর্থৎ শরীরের তাপমাত্রা পরিবেশের তাপমাত্রার সমান অর্থাৎ ৪১০ সে. হয়, তাহলে তাপ অপসারণের ঐ সকল পদ্ধতিগুলো আর ভালভাবে কাজ করে না। মুরগির বিপাকীয় শক্তির প্রায় ৭৫ ভাগই শরীরে তাপ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় এবং অতিরিক্ত তাপ শরীর থেকে অপসারণ করতে হয়। সুতরাং খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে তাপজনিত ধকল প্রতিরোধ মুরগির একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। যখন তাপমাত্রা খুব বেড়ে যায় তখন তাপ অপসারণের পদ্ধতিগুলো- পরিবহন, পরিচলন ও বিকিরণ এর সামর্থ্য কমে যায়। এ অবস্থায় প্যান্টিং এর মাধ্যমে তাপ অপসারণের চেষ্টা করে। এটি শ্বাস তন্ত্রের moist linings হতে পানি বাষ্পায়নে সহায়তা করে। এভাবে পানির বাষ্পায়ন প্রাথমিকভাবে মুখের ভিতরে এবং বাইরে বাতাস চলাচলে সহায়তা করে এবং তাপ জনিত পীড়নকালীন সময়ে শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের প্রধান উপায় হিসাবে বিবেচিত হয়।
খুব বেশি তাপমাত্রায় প্যান্টিং এর সময় ফুসফসের মধ্য দিয়ে air sac বা বায়ু থলি হতেও পানি বাষ্পীভূত হয়ে থাকে এই অবস্থায় রক্তে কার্ববন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা কমে যায়, এই অবস্থাকে respiratory alkalosis বলা হয়। এই অবস্থা মুরগির উৎপাদন সক্ষমতাকে মারাত্নকভাবে প্রভাবিত করে। ব্রয়লার এবং ডিমপাড়া মুরগি তাপজনিত পীড়নের প্রতি খুবই সংবেদনশীল। যখন পরিবেশের তাপমাত্রা পাখির তাপ অপসারণের সামর্থ্যকে অতিক্রম করে তখন মুরগি ফ্লোরের উপর শুয়ে পড়ে এবং অতিকষ্টে শ্বাস গ্রহন করে। এর ফলে মুরগি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মুরগির শ্বাস, সংবহন এবং পরিপাকজনিত বিষয়গুলো প্রায় ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। পরিবেশের উচ্চ তাপমাত্রায় প্রাথমিক এবং গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতিকর প্রভাব হলো খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দেয়া। পাখি তার দেহে সঞ্চিত ফ্যাট শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, খাদ্যের কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন পরিপাকে উৎপাদিত তাপের চেয়ে কম তাপ উৎপাদন করে। খাদ্য গ্রহন কমে যাওয়ার কারণে পুষ্টি প্রাপ্যতা কমে যায় এবং এর ফলে দ্রুত মুরগির উৎপাদনশীলতাকে বিঘ্নিত করে, বাড়ন্ত বাচ্চার দৈহিক বৃদ্ধি কমে যায়, ডিমপাড়া মুরগির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে ডিমের আকার ছোট হয়, ডিম উৎপাদন কমে যায় এবং ডিমের খোসা পাতলা হয়। ডিমের হ্যাচাবিলিটি কমিয়ে দেয় এবং ব্রিডার মোরগের ফার্টিলিটি কমিয়ে দেয়।
লেখাটি আগে ফার্ম হাউজ ম্যাগাজিনে (এপ্রিল সংখ্যা) প্রকাশিত।
আমরা যেহেতু কন্ট্রোল শেডে মুরগি পালন করিনা… তাই স্যালাইন এবং ভিটামিন সি ব্যবহার করে থাকি। আবার অনেক সময় Beatain ব্যবহার করে থাকি। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে তাপমাত্রা বেশি হলে কেবল মাত্র স্যালাইন আর ভিটামিন সি দিলেও এটা কন্ট্রোল হবে না, কারণ স্যালাইন বিটেইন ছাড়া খুব একটা কার্যকর নয়, এখানে Saline+Vit.C+Betain একসাথে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। এই ধরণের একটা product “Electro-C” নামে Safe Bio Products Ltd বাজারজাত করে স্পেন থেকে। এটা লিকুইড। এর ionic form Na+, k+ and Mg++, vitamin C, Betain এবং Eucaliptas ও cytrus extracts পাখিকে রিফ্রেশ বা চনমনে করে। তাছাড়া সিলিং ফ্যানের পরিবর্তে পাক ফ্যান বা এক্সজ্ট ফ্যান ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এর পরও Disprin tab 25-30 tab/1000 litre পানিতে দিয়ে দুপুর বেলা দিলে এই সমস্যা থেকে কিছুটা উপকার পাওয়া যায়।
betain er mode of action ta bolle upokrito hoitam….
Betaine এর Mode of action দেখতে এখানে ক্লিক করুন।