প্রিয় পাঠক, আমি ৩ পর্বের এই লেখায় আমাদের জীবনে পোল্ট্রী শিল্পের অবদান,এই শিল্পের উপর এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রভাব, এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে আমরা কি করেছি আর কি করা দরকার ছিল বা এখন কি করণীয় তার সবকিছু তুলে ধরার চেষ্টা করব। আশা করি আপনারা আপনাদের মূল্যবান মতামত দিয়ে আমাকে সহযোগীতা করবেন।
আজকের পর্বে তাই তুলে ধরলাম “আমাদের জীবনে পোল্ট্রী শিল্পের কি অবদান এবং এই শিল্পের উপর এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রভাব-ই বা কি।
আর ২য় পর্বে নিচের বিষয়গুলো অন্তভূক্ত করেছি। পড়তে চাইলে ক্লিক করুন এখানে।
১। এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়, ওআইই (OIE), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) – এর সমন্ন্বয়ে গৃহিত পদক্ষেপ সমূহ।
২। বাংলাদেশে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমনের বিভিন্ন পরিসংখ্যান ( বছর অনুযায়ী বানিজ্যিক খামার, পারিবারিক খামার, প্যারেন্ট স্টক-এ সংক্রমন) ও তার বিশ্লেষন।
৩। কি কি কারণে আমরা এখনও এই রোগ থেকে মুক্ত হতে পারলাম না।
আর ৩য় পর্বে আছে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে মুক্তির উপায় ও পোল্ট্রী শিল্প রক্ষার্থে করণীয়। পড়তে ক্লিক করুন এখানে।
১ম পর্বঃ
বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অস্টম জনবহুল দেশ। ১৬ কোটি মানুষের বাস। আমাদের প্রধান সম্পদ বলতে আমরা আমাদের মানব সম্পদ কেই বুঝি। আর আমাদের সীমিত আয়ের মধ্যেই মানব সম্পদের উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উচু করে নিজ মাতৃভূমির প্রতিনিধিত্ব করতে হবে। আমরা যদি একটু পেছনের দিকে খেয়াল করি, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের বিশেষ করে ৯০ এর দশকের আগে শিশু ও মাতৃ-মৃত্যু হার, মানুষের গড় আয়ু, গড় উচ্চতা, অপুষ্টি প্রত্যেকটিতেই আমরা প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক পিছিয়ে ছিলাম। আজকে আমরা এই সুচক গুলোর প্রত্যেকটিতেই প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অগ্রে অবস্থান করছি। আমাদের দক্ষ জনবল আজ বিশ্বের শ্রমবাজারে সুপ্রতিষ্ঠিত, আমাদের ছাত্র/ছাত্রীরা শিক্ষার সকল ক্ষেত্রে আজ বিশ্বের উন্নত দেশে সফলতার সাথে মেধা বৃত্তি নিয়ে লেখা পড়া করছে। মেধাবী শিক্ষক, গবেষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, কৃষিবিদ প্রতি বছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের উন্নত শিক্ষা ও গবেষনা প্রতিষ্ঠান থেকে অসংখ্য উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে চলেছেন ও নতুন নতুন উদ্ভাবনী দ্বারা আধুনিক ডিজিটাল বিশ্বে সমান তালে অবস্থান করছেন। আমাদের দেশের বহু শিক্ষক, গবেষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, কৃষিবিদ আজ এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকাতে তাদের উদ্ভাবনী দ্বারা শিক্ষা ও গবেষনা চালিয়ে যাচ্ছেন যার বর্ণনা আজকের এই একটি মাত্র লেখায় শেষ করা যাবে না। আমাদের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা বিশ্বের শান্তি প্রতিষ্ঠায় সমাদৃত। সম্মানিত পাঠক বৃন্দ আপনারা হয়তো ভাবছেন আমি পোল্ট্রি শিল্পের কথা বলতে গিয়ে পাগলের মতো এসব কি বলছি। হ্যা, আমি এতক্ষন ধরে যা বলছিলাম তার মূলে রয়েছে মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার সঠিক যোগান। খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান। এখানে খাদ্য ছাড়া বাকী ৪ টি চাহিদা অর্জন সম্ভব নয়। কারন পৃথিবীর যে সকল দেশ খাদ্যের জন্য অন্যের উপর নির্ভরশীল তারা বস্ত্রে, শিক্ষায়, স্বাস্থ্যে ও বাসস্থানে কাঙখীত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি। একটি আদর্শ জাতি গঠনের জন্য দরকার একটি আদর্শ খাদ্য। একটি আদর্শ খাদ্যের ৬ টি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের মধ্যে প্রথমটিই হলো আমিষ। আর এই আমিষ বা প্রেটিন-ই হলো আমাদের দেহ গঠনের তথা প্রাণি জগতের দেহ গঠনের জন্য অতীব জরুরী উপাদান-আমাদের শিশুদের বেড়ে ওঠার প্রধান হাতিয়ার। প্রোটিন আমরা পাই দুটি উৎস থেকে ১. প্রধান উৎস হলো প্রাণীজ উৎস অর্থাৎ দুধ, ডিম, মাছ ও মাংস ২. অন্যটি হলো উদ্ভিদজাত উৎস। তবে সারা দুনিয়াতে প্রাণীজ উৎস ছাড়া অতি সহজে ও সূলভে আমিষের পূরণ প্রায় অসম্ভব। এছাড়াও বিশ্ব খাদ্য সংস্থার ঘোষিত আদর্শ খাদ্য তালিকাতেও দুধ, ডিম কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
সুধী পাঠক বৃন্দ, আমরা আজ মেধাবী জাতি হিসাবে বিশ্ব দৃষ্টি কেড়েছি, বিশ্ব দরবারে অনেক অর্জন যা প্রথমেই বলেছি, এর পেছনের ভূমিকা কাদের? কারা ও কিভাবে এটা সম্ভব করলো? এই সত্যটা আজ সচেতন বাংলাদেশী প্রত্যেক মানুষের জানার অধিকার আছে । আমারও বলবার ও জানাবার অধিকার আছে। এই সকল সফলতার মূলে রয়েছে বেসরকারী পর্যায়ে তীল তীল করে নিরবে গড়ে উঠা আমাদের পোল্ট্রি শিল্পের এক বিরাট অবদান। আমাদের দেশে এই শিল্পের যাত্রা শুরু হয় ৯০ দশকের পর থেকে এবং ৯৫-৯৬ সালে তা দেশী ও সোনালী জাতের মুরগি ছাপিয়ে উন্নত জাতের লেয়ার ও ব্রয়লার মুরগির খামার হিসেবে ব্যাপক আকারে বেড়ে গেল এবং আমরা সহজে ডিম ও মুরগির মাংস পাচ্ছিলাম। ২০০১ সালে এসে খাদ্যে আফ্লাটক্সিনের কারনে এই শিল্পটি সাময়িক ধাক্কা খেলেও তা কাটিয়ে উঠতে বেশী দিন সময় লাগেনি বরং অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকলো। শিল্পটি ধীরে ধীরে স্বনির্ভরতার দ্বারপ্রান্তে এগিয়ে যাচ্ছিল। দেশীয় হ্যাচারী ও জিপি ফার্ম থেকে একদিন বয়সের প্যারেন্ট বাচ্চা, হ্যাচিং ডিম, বানিজ্যিক ডিম দেশের গন্ডি পেরিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে ও ভারতের পূর্বাঞ্চলে পরীক্ষামূলক রফতানি শুরু হলো। দেশের আমদানী নির্ভরশীলতা কমিয়ে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হতে লাগল। বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি অর্ধ-শিক্ষিত ও অশিক্ষিত মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হলো এবং আমরা আমিষের ঘাটতি পূরণে অনেক দূর এগিয়ে গেলাম, ঠিক তখনি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও ২০০৭ সালের মার্চের দিকে বার্ড ফ্লু তার করাল থাবা মেলে ধরল। আমাদের দেশে এ রোগটি দেখা দেওয়ার অনেক আগে বহু দেশেই এর উপস্থিতি ছিল এবং এখনও আছে। কিন্তু আমাদের দেশের মতো এতোটা আতংকের খবর পাইনি। আমাদের দেশ একটি দরিদ্র জনবহুল দেশ বলে মানুষের মাঝে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশংকার কথা বিদেশীরা ব্যাপকভাবে প্রচার করা শুরু করল, আমরা কোন কিছু না বুঝেই ডিম, মুরগির মাংস খাওয়া ছেড়ে দিলাম। দেশী- বিদেশী বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থা যারা বিদেশী সাহায্যে চলে তারা এর প্রকৃত কারন নির্ণয় ও প্রতিকারের ব্যবস্থা না করেই কেবল মাত্র গণহারে মুরগি নিধন শুরু করলো, আক্রান্ত খামারের মুরগিসহ এক কিলোমিটারের মধ্যে সকল ভাল মুরগিও নিধন করা হলো। নামমাত্র ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলো। কিন্তু এর পাশাপাশি এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে, আমাদের নতুন প্রজন্মকে অপুষ্টির হাত থেকে বাঁচাতে রোগটি নিয়ে কোন গবেষনা বা প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহন করা হলো না। যার ফলে এই শিল্প ও শিল্পের সাথে জড়িত হাজার হাজার মানুষের ভাগ্য আজ আশা-নিরাশার দোলাচালে দুলছে। বিনিয়োগকারিরা সর্বস্ব হারিয়ে এখন দিশেহারা। সামনের যাত্রা অনিশ্চিৎ ভেবে অনেকেই ব্যবসার ধরণ পরিবর্তন করতে যাচ্ছেন। নতুন করে কেউ বিনিয়োগে সাহস পাচ্ছেন না।
আজকে ২০১২ সালে এসে লক্ষ্য করছি আমরা আবার ৯০ এর পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছি, আবার আমরা মেধাহীন, দূর্বল ও কর্মক্ষমতাহীন জাতিতে পরিনত হতে যাচ্ছি, আবার আমাদের ডিম, মুরগীর মাংসের জন্য অন্য দেশের মুখাপেক্ষি হয়ে থাকতে হচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশ যেমন চায়না, ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালেশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার মতো দেশ যদি এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধে জীবনিরাপত্তার সকল পদ্বতি অনুস্মরণ করার পাশাপাশি ভ্যাকসিন ব্যবহার করে থাকেন, আমরা কেন করছি না? আমরা তথাকথিত প্রাণঘাতী ভাইরাসের দোহাই দিয়ে জাতি হিসেবে নিজেরাই আত্নহত্যার পথ বেছে নিচ্ছি না কি? আমরা আমাদের নতুন প্রজন্মকে আবার অপুষ্টির দিকে নিয়ে যাচ্ছি না কি? বিবেকবান মানুষের কাছে আমার এই প্রশ্ন রইল। আমাদের দূর্ভাগ্য যে আমরা সঠিক লোককে সঠিক জায়গায় কাজে লাগাচ্ছি না। এমন কি কাজ করতেও দিচ্ছি না। আমাদের দেশীয় বিজ্ঞানীরা এই বিষয়ে কাজ করতে চাইলেও তাদেরকে কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না, বাধা দেওয়া হচ্ছে। আমরা আমাদের এই বিশাল শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে অত্যন্ত নির্লজ্জভাবে নিজেদের জ্ঞান গরিমা বিষর্জন দিয়ে বিদেশীদের পরামর্শ মেনে চলছি, বিনিময়ে কিছু খয়রাতি অর্থ পাচ্ছি। মানুষ মারা যাবে এবং তাদের বাঁচাতে কোটি কোটি ফ্লু ট্যাবলেট পেয়েছি, যেগুলো গত ফেব্রম্য়ারী মাসে মেয়াদ উত্তির্ন হয়ে গেছে, আবার আনা হয়েছে। এই বিদেশীদের সহায়তায় বার্ড ফ্লু নিয়ন্ত্রনে সরকারের গৃহিত সকল পদক্ষেপ সরকারী ভাস্যমতে সঠিকভাবে পালন করার পরও পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি ঘটছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৪৭ শতাংশ বানিজ্যক খামার এবং প্রায় ৫৯ শতাংশ ব্রীডার ফার্ম বন্ধ হয়ে গেছে। আর আমাদের মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তা ব্যক্তিরা এমন অবস্থায় আছেন যেন এদেশে এই ভাইরাস ব্যতীত অন্য কোন ভাইরাসে কোন মানুষ মৃত্যু বরণ করছেনা! যখনি আমাদের দেশীয় গবেষকরা এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার পক্ষে কথা বলেছেন তখনি মানুষ মারা যাবার দায়দায়ীত্ব চাপিয়ে সরকার তাদের মুখ থামিয়ে দিয়েছে। এই খানে আমার কিছু কথা পাঠকদের জানানো দরকার। যে পোল্ট্রি শিল্পের সাথে প্রায় এক কোটি মানুষ সরাসরি কাজ করছে, প্রায় ১ লক্ষ প্রাণি চিকিৎসক, পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞ, নিউট্রিশনিষ্ট সরাসরি মুরগির সাথে কাজ করছে, মুরগি কেটে পোষ্টমর্টেম করছে, আমি নিজেও একজন ক্ষুদ্র প্রাণি চিকিৎসক ও মাইক্রোবায়োলজিষ্ট হওয়ায় ২০০৩ সাল থেকে অদ্যাবধি মুরগি ছাড়া একদিন কাটিয়েছি মনে পড়ে না, মারা গেলেতো আমাদেরই আগে মারা যাবার কথা। এ ছাড়াও ৮৬ হাজার গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই দেশী মুরগি, হাঁস আছে যে গুলি নাকি আরও ভয়াবহ আকারে এই রোগ ছড়ায়। সেইসব গ্রামের মেহনতি, মুক্তিকামি মানুষের কথা একবারও ভাবলেন না। কই গত ৫ বছরে আমরা তো কেউ মরে যাইনি?
সম্মানিত পাঠক সমাজ একবার ভাবুনতো? আমাদের সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের কথামতো মরে যাব এই ভয়ে যদি এই শিল্পের সাথে জড়িত সকলে মুরগি পালন বন্ধ করে দেয়, তাহলে দেশের কি অবস্থা হবে? প্রতিদিন হাসপাতালের রোগীদের খাবারের তালিকায় ডিম, মুরগির মাংস দিতে না পারলে রোগী ও ডাক্তারদের কি অবস্থা হবে? পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা নাস্তায়, টিফিনে কি খাবে? আমাদের শিশুরা সকালের নাস্তায় কি খাবে? ভাবছেন জীবানু মুক্ত ডিম ও মুরগির মাংস আমদানি করে খাবেন কিন্তু সেটা পাবেন কোথায়? এশিয়ার কোন দেশই তো এই ভাইরাস মুক্ত নয়। ইউরোপ থেকে আমদানি করবেন? সম্ভব নয়। তাহলে কি হবে? কোন উপায়ের কথা কেউ বলেন না, উপায় বলেন একটাই আর তা হলো মুরগি মেরে ফেলা। এই মেরে ফেলার কারনে আমরা আমাদের জাতিকেই মেরে ফেলছি সে কথা কেউ ভাবছিনা। তাহলে বলবেন উপায় কি? উপায় আছে এবং উপায় আমাদেরই বের করতে হবে। বাইরে থেকে কেউ এসে আমাদের উপায় বের করে দেবে না বরং সমাধান যাতে না হয় সেই চেষ্টায়ই তারা করছে এবং করবে। প্রতিদিন গড়ে ১০ জন মানুষ গাড়ী চাপা পড়ে মারা যাচ্ছে, আমরা কি গাড়ী চড়া বন্ধ করে দিয়েছি বা গাড়ী গুলো ভেঙ্গে ফেলেছি ? ইমারত বানাতে গিয়ে প্রতিদিন আমরা কাউকে না কাউকে হারাচ্ছি, আমরা কি ইমারত বানানো বন্ধ রেখেছি? প্রতি বছর ডায়রিয়া, কলেরা, নিউমোনিয়া, নিপা ভাইরাস, টাইফয়েডে অনেক শিশু মারা যাচ্ছে তার কি কোন সুরাহা করতে পেরেছি ? যে রোগগুলির সাথে জাতির মেধা বিকাশের কোন সেক্টর জড়িত নয়, সেই সকল নিয়ন্ত্রনযোগ্য রোগের সুরাহা আমরা কেন সারা বিশ্বই করতে পারেনি। তাহলে আমাদের কিসের ভয় ? আমাদেরকে আর যুযুর ভয় দেখাবেন না, দেখানোর চেষ্টাও করবেন না। উন্নত বিশ্বের মতো আমরাও চাই প্রতিটি মানুষ যেন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে জন্ম নেয় এবং সুস্থ সবল জীবন যাপন করে ও স্বাভাবিক মৃত্যুকে বরণ করতে পারে। ঠিক একইভাবে মানুষের জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় আমিষের উৎসকে কিভাবে অক্ষুন্ন রেখে আমরা ভালভাবে স্বনির্ভর জাতি হিসেবে বেঁচে থাকতে পারি তার জন্য যা যা করা দরকার তার সবকিছুই করতে হবে, না হলে আমাদের অনেক কিছু হারাতে হবে, যা এতদিনে আমরা তীল তীল করে অর্জন করেছিলাম।
আজ আরও একটি সত্যি কথা অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, বাংলাদেশের যা কিছু উন্নতি সাধিত হয়েছে তার প্রধান ভূমিকা নাকি তৈরী পোশাক শিল্পের। আমরা আম-জনতা তাই মনে করে থাকি। আসলে কি তাই? সচেতন পাঠক সমাজ একটু ভিন্ন দৃষ্টিতে চিন্তা করুন- আজকে পোশাক শিল্পে যে শ্রমিকরা নিরলস ভাবে অতি অল্প বেতনে প্রতিদিন প্রায় ১২-১৪ ঘন্টা হাড় ভাংগা পরিশ্রম করে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে পোশাক তৈরী করছেন, সেসকল শ্রমিকের সুঠাম দেহ, কর্মদক্ষতা কোথা থেকে এল? এদের খাদ্যের তালিকায় থাকে…ডিম, মুরগী ও মাছ। এই আমিষের সরবরাহ আছে বলেই শ্রমিকরা আজ তাদের শ্রম, মেধা খাটিয়ে ভাল পোশাক তৈরী করছে, বিনিময়ে খুব অল্প মুজুরিই দেয়া হচ্ছে। যখন এই ডিম, মুরগির ঘাটতি শুরু হবে, আমদানি করে অত্যন্ত চড়া মূল্যে খেতে হবে, অনেকেই ঠিকমতো খেতে পারবে না, পেটে ভাল খাবার না থাকলে পোশাকের কোয়ালিটিও ঠিক থাকবে না। দাবি উঠবে বেতন বৃদ্ধির, আপনাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে, পোশাক শিল্পও হুমকির মুখে পড়বে। অন্যদিকে আফ্রিকার দেশগুলোতে তাকালে দেখা যায় সেখানে কোন শিল্প নেই, কারখানা নেই, মানুষের কোন কাজ নেই । সেখানে আজ উন্নত বিশ্ব কিভাবে খাদ্য সরবরাহ করে মানুষকে অপুষ্টির হাত থেকে বাচাঁনো যায়, প্রোটিনের উৎপাদন বাড়ানো যায়, সেই চেষ্টাই সবার আগে করা হচ্ছে। আগে তো মানুষকে অপুষ্টি জয় করতে হবে, তার পর শ্রম। কেবল মাত্র মানুষের কর্মসংস্থান ও আয় বাড়লেই আমাদের মতো ক্ষুদ্র আয়তনের দেশে এই বিশাল জনগোষ্ঠির আমিষের চাহীদা দুর হবে না। আমদানী করে হয়তো সাময়িক ঘাটতিটা মেটানো সম্ভব কিন্তু বিশাল জনগোষ্ঠির চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। পৃথিবীর কোন দেশ পারেনি আমরাও পারব না। বিদেশীরা যখন জানতে পারবে আমাদের নিজস্ব কিছুই নেই তখন কিন্তু তাদের দেশের ঘাটতির কথা বলে অযথাই দাম বাড়িয়ে দেবে। আর তাই আমার মতে বাংলাদেশের সবচাইতে বড় যে শিল্প তা হলো আমাদের কৃষি ও প্রাণি শিল্প। এই দুটি শিল্পকে বাদ দিয়ে আধুনিক বাংলাদেশ কল্পনা করা যাবে না, আধুনিক বাংলাদেশের কারিগরও তৈরী হবে না। আর এই শিল্পের সাথে জড়িয়ে আছে প্রায় এক কোটি অশিক্ষিত/অর্ধশিক্ষিত পূরম্ষ ও মহিলার কর্মসংস্থান। আমাদের আগামী প্রজন্মের মা ও শিশুদের উজ্জল ভবিষ্যৎ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়। তাই একে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমাদের সঠিক পরিকল্পনা করে এগুতে হবে। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে মেধা ও উন্নয়নের বিকাশে ক্ষুদ্র ত্যাগ স্বীকারে আমরা কখনও পিছু হঠিনি আর পিছু হঠতে চাই না।
২য় পর্বে নিচের বিষয়গুলো অন্তভূক্ত করেছি। পড়তে চাইলে ক্লিক করুন এখানে।
১। এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়, ওআইই (OIE), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) – এর সমন্ন্বয়ে গৃহিত পদক্ষেপ সমূহ।
২। বাংলাদেশে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমনের বিভিন্ন পরিসংখ্যান ( বছর অনুযায়ী বানিজ্যিক খামার, পারিবারিক খামার, প্যারেন্ট স্টক-এ সংক্রমন) ও তার বিশ্লেষন।
৩। কি কি কারণে আমরা এখনও এই রোগ থেকে মুক্ত হতে পারলাম না।
আর ৩য় পর্বে আছে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে মুক্তির উপায় ও পোল্ট্রী শিল্প রক্ষার্থে করণীয়। পড়তে ক্লিক করুন এখানে।
খুব সুন্দর পোস্ট, কিন্তু এই কথাগুরো সাধারণ মানুষের জানা দরকার।
অনেক ধন্যবাদ মজীদ ভাই। আমি চাচ্ছি আপনারা সকলে এই বার্তাটা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাবেন।
দারুন লিখেছেন, চালিয়ে যান। আমরা আপনার পাশে আছি। ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ
লেখাটি পড়ে অনেক ভালো লাগল। অনেক কিছু জানতে পারলাম। সাধারণ মানুষের এ বিষয়ে জানার অনেক কিছু আছে। তাই লেখাগুলো তাদের মাঝে পৌঁছে দিতে হবে। ধন্যবাদ।
এর জন্য আমাদের সকলের এক হয়ে কাজ করতে হবে । ধন্যবাদ
অনেক সু্ন্দর আর তথ্যবহুল লেখা। Keep it up !!!
অনেক ধন্যবাদ, দোস্ত ।
Its a excellent piece of writing. Thank you and I hope we can get more information regarding AI and its impact and future perspective.
আপনাকে ধন্যবাদ।
Go ahead. we are with you.
Thank you.
Good writing. Plz spread this news to all Vets, Health professionals and Agriculturists
Please share it to your teachers, colleagues, students of your university.
😉 Its great initiative to control Avian Influenza & development of our Poultry Sector
I think you can help to go ahead.
Dr Sarwar,
Thanks a lot. I enjoyed your inspiring speeches. I think it will help to build the professionalism as well as it will increase the awareness among the Veterinarian.
Thank you big brother, you can also advice me to go ahead & do something for our sector.
very nice think , wish u all the best
Thank you so much Romana.
Nice article, go ahead, best of luck………………………
Thank you apa for your nice comments.
This is a very effective website to increase & establish vet profession in Bangladesh.