এন্টিবায়োটিকের বদলে কালোজিরা

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মুরগি ও ডিমের চাহিদাও বেড়েছে। দেশি মুরগি পর্যাপ্ত না থাকায় ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির মাংস ও ডিমের ওপর চাপও বাড়ছে। পাশাপাশি দামও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আবার বার্ড ফ্লুর আক্রমণ ছাড়াও বিভিন্ন রোগ থেকে এসব মুরগিকে রক্ষা করতে নির্ভর করতে হচ্ছে এন্টিবায়োটিকের ওপর। এন্টিবায়োটিক প্রয়োগকৃত মুরগির ডিম, মাংস এবং গবাদিপশুর দুধ বা এন্টিবায়োটিক দ্বারা সংরক্ষিত খাদ্য খেয়ে মানবদেহে স্লো-পয়জনিং হচ্ছে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারানোসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে এন্টিবায়োটিকজনিত ওষুধ খেয়ে কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গৃহপালিত পশুপাখিতে এন্টিবায়োটিকের অবাধ ব্যবহারে জনস্বাস্থ্য আজ হুমকির মুখে। এন্টিবায়োটিকের ক্ষতিকারক প্রভাবে ইউরোপে চিংড়ি রপ্তানি হুমকির মুখোমুখি। অথচ এন্টিবায়োটিকের বদলে প্রাকৃতিক উপাদান কালিজিরা মিশ্রিত খাবারে মুরগির বৃদ্ধির হার, ডিমের গুণগত মানও এন্টিবায়োটিক প্রয়োগকৃত খাবারের চেয়ে অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। কালোজিরা ব্যবহারে পোল্ট্রি শিল্পে যেমন প্রসার ঘটবে তেমনি মানুষের স্বাস্থ্য রোগবালাই থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করবে। পোল্ট্রিশিল্পকে ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে এন্টিবায়োটিকের বদলে প্রাকৃতিক উপাদানের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার প্রচেষ্টা বিশ্বব্যাপী চলছে। এ কাজে ব্যর্থ হলে পোল্ট্রিশিল্প এবং পরিবেশ চরম বিপন্নের সম্মুখীন হবে।


কালোজিরা হতে পারে এণ্টিবায়োটিকের বিকল্প

প্রাকৃতিক উদ্ভিদ উপাদানের মধ্যে অন্যতম একটি উৎস হচ্ছে কালোজিরা। কালোজিরা প্রাকৃতিক মহৌষধ যা পবিত্র কোরআন এবং বাইবেলও সাক্ষ্য দেয়। বিশ্বব্যাপী কালোজিরা নিয়ে অসংখ্য গবেষণা হলেও বাংলাদেশে পোল্ট্রি শিল্পে এন্টিবায়োটিকের বদলে কালোজিরা প্রয়োগে সাফল্য প্রথম বলে ধারণা করেছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা। বাংলাদেশে এখনো কালোজিরার উৎপাদন ও ব্যবহার খুবই কম। পোল্ট্রিশিল্পে এর প্রয়োগ সফল হলে কালোজিরা চাষে বাংলাদেশে যেমন অপার সম্ভাবনা নিয়ে আসবে তেমনি মানুষের স্বাস্থ্যরক্ষায় একটি যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত রাখবে। গবেষণার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলাম। সরকারের বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) গত বছর এন্টিবায়োটিকের বদলে কালোজিরা প্রয়োগের দুটি গবেষণা_ একটি লেয়ার মুরগি ও অন্যটি ব্রয়লার মুরগির ওপর সম্পন্ন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলাম। গবেষণা সহকারী হিসেবে ছিলেন হাবিপ্রবির ভিসি অধ্যাপক ড. এম আফজাল হোসেন, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের প্রভাষক মো. আবু সাঈদ এবং মো. নূরে আলম সিদ্দিকী। প্রথম গবেষণায় দেখা যায়, এন্টিবায়োটিকের বদলে কালোজিরা প্রয়োগে মুরগির ডিমে প্রায় শতকরা ৪৩ ভাগ কোলেস্টেরল কমিয়ে আনা সম্ভব। এই কম কোলেস্টেরলসমৃদ্ধ মুরগির ডিম হৃদরোগে আক্রান্ত রোগী ও সুস্থ সবল মানুষের জন্য নিরাপদ হবে বলে দাবি করছেন গবেষকরা। এ ডিম দিয়ে বাচ্চা ফুটানো সম্ভব না হলেও পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্য হিসেবে প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়া সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য যে, মানবদেহ একদিনে প্রায় ২১৪-২২০ মাইক্রো গ্রাম কোলেস্টেরল ধারন করতে পারে। কিন্ত এন্টিবায়োটিক প্রয়োগকৃত ডিমে প্রায় ৩০০ মাইক্রো গ্রাম কোলেস্টেরল পাওয়া যায় যা হৃদরোগের জন্য খুবই ভয়াবহ।

একই সময়ে কালোজিরা মিশ্রিত খাবারে মুরগীর বৃদ্ধির হার, ডিমের গুণগত মানও এন্টিবায়োটিক প্রয়োগকৃত খাবারের চেয়ে অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয়, উক্ত গবেষণায় দেখা যায় যে, কালোজিরা মিশ্রিত পোল্ট্রি খাবারে ল্যাকটোব্যাসিলাস নামক এক ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়া দ্রƒত বংশবিস্তার ঘটায় যা মুরগীর পাকস্থলীতে দ্রƒত পরিপাকক্রিয়া সম্পন্ন করে।

পাশাপাশি ই-কোলাই নামক এক ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার পরিমান প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যায়। ২০১১ সালে উক্ত গবেষণার একটি নাতিদীর্ঘ আর্ন্তজাতিক মানের জার্ণাল ”জার্ণাল আব এনিমেল এন্ড ফিড সায়েন্স” গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। চলতি বছরে বয়লারের গবেষনার বিভিন্ন গবেষনা সফলতায় শেষ হয়েছে।

দ্বিতীয় গবেষণায় দেখা যায় যে, কালোজিরা মিশ্রিত পোল্ট্রি খাবারে ব্রয়লার মুরগীর দেহেরে ওজন, বৃদ্ধির হার  সবকিছুই ত্বরানিত হয় যা বাজারের মুরগীর চেয়ে অনেক পরিমান বেশি।

ব্রয়লার মুরগীর ব্লাড সিরামের কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড আকস্মিকভাবে হ্রাস পায় এবং এইচডিএল নামক এক ধরনের উপকারী  কোলেস্টেরলের পরিমান বেড়ে যায়। তাই কালোজিরা প্রয়োগ সম্পন্ন ব্রয়লার মুরগীর মাংস অনেকটাই নিরাপদ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ঠ গবেষকবৃন্দ। একইভাবে পাশাপাশি ই-কোলাই নামক এক ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার পরিমান দ্রুত কমে যায়।

ড. তোফাজ্জল ইসলাম জানান, আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে লেয়ার ও ব্রয়লার মুরগীতে কালোজিরা এন্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে প্রয়োগে সফলতা পেয়েছি। পরবর্তীতে ডায়াবেটিকসহ অন্য মানবরোগেও এটির প্রয়োগে সফলতা আসতে পারে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

খবরঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন ও newshoursbd.com

লেখকঃ ডাঃ কাজী আশরাফুল ইসলাম

Upazilla Livestock Officer, Pabna Sadar, Pabna. E-mail: kaziashrafbabu@yahoo.com

এটাও দেখতে পারেন

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে অনলাইন গবাদি পশু শনাক্তকরণ এবং নিবন্ধন ব্যবস্থা চালুঃ জানা যাবে স্বাস্থ্য ও রোগের ইতিহাস

প্রাথমিকভাবে ৫০,০০০ পশু নিবন্ধিত হবে যা গ্রাহকদের পশুগুলোর স্বাস্থ্য ইতিহাস দেখার সুযোগ দিবে। প্রথমবারের মতো, …

২ মন্তব্য

  1. ব্রয়লার মুরগির জন্য কালোজিরা ব্যবহারের নিয়মটা বলে দেবেন কি?

  2. Interesting news. May I know the inclusion level ( minimum and maximum) of kalizira? Is it cost effective?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.