প্রাণিসম্পদ যেকোন দেশের একটি গুরুত্বপুর্ণ উপাদান কিন্তু এই প্রানিসম্পদ উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে রোগ বা অসুখ। এরকমই একটা গুরুতর অসুখ ব্রুসেলোসিস যা একটি জুনোটিক রোগ অর্থাৎ যা প্রাণীদেহ থেকে মানুষ এর মধ্যে স্থানান্তরিত হয়ে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) এর মতে ব্রুসেলোসিস রোগটি বর্তমানে সময়ের ব্যাপক বিস্তৃত বৈশ্বিক, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উদ্বেগের বিষয়। ব্রুসেলোসিস অত্যন্ত সংক্রামক রোগ যা প্রাণী থেকে অপাস্তুরিত দুধ আহার বা আক্রান্ত পশুর সংস্পর্শে বা তাদের নিঃসরণ (Secretion) এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থেকে বা ভালোভাবে সিদ্ধ না করা মাংস দ্বারা বা অ্যারোসল শ্বসন দ্বারা বা যৌনমিলন থেকেও ছড়াতে পারে। ব্রুসেলোসিস (ঢেউ-খেলানো জ্বর, মাল্টা জ্বর) এক প্রকার সিস্টেমিক রোগ যা বহু বছর ধরে প্রাণীর দেহের ভিতর প্রসারিত হতে পারে এবং রক্তের মাধ্যমে অনেক টিস্যু ও অঙ্গতন্ত্র (স্নায়ুতন্ত্রের, হৃদয়, কঙ্কালতন্ত্র, অস্থি মজ্জা, ইত্যাদি) ছড়িয়ে যেতে পারে।
এক নজরে ব্রুসেলোসিস** | ||
রোগের সমার্থক নাম সমুহ (Synonyms) | Undulant Fever, Malta Fever, Mediterranean Fever, Enzootic Abortion, Epizootic Abortion, Contagious Abortion, Bang’s Disease, Bangsche Krankheit, Brucella, Brucellemia, Brucelliasis, Brucellose, Brucellosen, Brucellosi, Brucelose, Brucelosis, Cyprus fever, Febris melitensis, Febris sudoralis, Febris undulans, Fievre caprine, Gibraltar fever, Goat fever, Maltafieber, Melitococcosis, Neopolitan fever, Rock fever, Typhomalarial fever, ICD9: 023, ICD10: A23 |
|
রোগ প্রতিনিধি (Agent) | Brucella abortus*, B. melitensis*, B. suis*, B. ovis, B. canis*, B. neotomae, B. ceti*, B. pinnipedialis, B. microti*, B. inopinata* | |
রোগ সংরক্ষণ প্রানী (Reservior) | গরু, ছাগল, ভেড়া, কুকুর, শুকুর, Coyote নেকড়ে, হরিণ, খরগোশ | |
মাধ্যম (Medium) | দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, কমসিদ্ধ মাংস, আক্রান্ত্র প্রানী বা জীবাণুর সাথে সরাসরি সংস্পর্শ, যৌনমিলন | |
ভৌগলিক বিস্তৃতি (Geographic Distribution) | জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইডেন, ডেনমার্ক, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম ও ইউরোপের আরো কিছু দেশ ছাড়া পৃথিবীর মোটামুটি সব দেশ বিশেষ করে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশসমুহ | |
রোগের প্রকাশ (Incubation Period) | ১০ -১৪ দিন ( ক্ষেত্রবিশেষে ৫-৬০ দিন) | |
রোগ নির্ণয় (Diagnostics Tests) | ELISA; I-ELISA; RBT; SAT; TAT; CFT; MRT; FPA; PCR | |
রোগ-লক্ষণ (Clinical Signs) | দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, গিটে ব্যাথা, প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া, অণ্ডকোষে ব্যাথা, গর্ভপাত, বিভিন্ন অংগ-তন্ত্রের ইনফেকশন | |
চিকিৎসা (Treatment) | যৌথভাবে- Doxycycline + Rifampin
অথবা, Tetracycline + Gentamicin |
দিনে দু-বার কমপক্ষে ৬ সপ্তাহ |
প্রতিসেধক (Vaccine) | Brucella abortus 19, RB51 (যদিও সব দেশে এর ব্যবহার নেই) | |
প্রতিরোধ (Prevention) | অপাস্তুরিত দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, কমসিদ্ধ মাংস, আক্রান্ত্র প্রানীর সাথে সরাসরি সংস্পর্শ পরিহার; ও টিকা প্রদান | |
* চিহ্নিত ব্রুসেলা জীবাণুগুলো বিভিন্নভাবে মানুষে রোগ ছড়াতে পারে। | ||
** উপরোক্ত তথ্যগুলো ছাড়াও আরো অনেক – Synonym, Agent, Reservoir, Vector, Medium, Distribution, Test, Treatment; অবস্থান, সময়ভেদে বিদ্যমান রয়েছে। |
ব্রুসেলা জীবাণু রোদের মাঝে কয়েক ঘন্টা বাচলেও ঠান্ডা এবং ছায়ার মধ্যে ১৮৫ দিন পর্যন্ত বেচে থাকতে পারে। রোগের সময়কাল কয়েক সপ্তাহ থেকে, মাস বা এমনকি বছর পর্যন্ত হতে পারে। এই রোগ ভূমধ্য জ্বর, মাল্টা জ্বর, গ্যাস্ট্রিক-সবিরাম জ্বর এবং তরঙ্গায়িত জ্বর সহ বিভিন্ন নাম দ্বারা পরিচিত একটি প্রাচীন সংক্রামক ব্যাধি যা একই সাথে প্রাণিস্বাস্থ্য এবং জনস্বাস্থ্য এর প্রধান উদ্বেগ হিসেবে চলছেই এবং বিশ্বব্যাপী ১০০ টির মত দেশে বার্ষিক ৫,০০,০০০ (পাঁচ লক্ষ) সংক্রমণ ঘটাচ্ছে।বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুযায়ী এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে গরুতে ৩.৭%, মহিষে ৪%, ছাগলে ৩.৬%, ভেড়ায় ৭.৩%, শুকুরে ৪.৮%, কুকুরে ৪% এবং মানুষের ক্ষেত্রে কৃষকদের মাঝে ২.৬ – ২১.৬%, দুধ দোহনকারীদের মাঝে ১৮.৬%, কসাইদের মাঝে ২.৫% আর প্রাণী চিকিৎসকদের মাঝে ৫.৩ – ২১.৬% ব্রুসেলোসিস পাওয়া গেছে।
যেসব এলাকায় মানুষের মাঝে ব্রুসেলোসিস পাওয়া যায় তার মাধ্যমে এটাই প্রকাশ পায় যে উক্ত এলাকায় প্রাণিদের মাঝে প্রচন্ড আকারে ব্রুসেলোসিস বিরাজ করছে যা স্থানীয়ভাবে, সরাসরি স্বংস্পর্শের মাধ্যমে, খাবারের মাধ্যমে বা প্রাণী আমদানি করার মাধ্যমে ঐ এলাকায় ব্রুসেলোসিস ছড়িয়ে পড়ছে। এছাড়াও বিজ্ঞাণীরা বা শিক্ষানবিশ ছাত্র-ছাত্রীরা যারা ব্রুসেলা জীবাণু নিয়ে গবেষণা, কালচার বা টীকা তৈরীর সাথে জড়িত তারাও এ ঝুঁকির বাইরে নয়।
ব্রুসেলোসিস নির্ণয়ের জন্য বর্তমানে বিভিন্ন প্রকার পরীক্ষা থাকলেও উল্লেখযোগ্য পরীক্ষাগুলো হচ্ছে –
১। ধীরগতির পরীক্ষা (Slow Test) : যেমন- SAT, EDTA, ELISA, Milk Ring Test প্রভৃতি
২। দ্রুতগতির পরীক্ষা (Rapid Test) : যেমন- RBT, modified RBT প্রভৃতি
৩। অন্যান্য পরীক্ষা : যেমন- আক্রান্ত কোষ, দুধ বা সিরা’র PCR নির্যাস হতে DNA পরীক্ষা, CFT, Agar gel immunodiffusion, Allergic tests, Skin test প্রভৃতি
এছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধুনিকতার সংগে পাল্লা দিয়ে ব্রুসেলোসিস রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় এসেছে আধুনিকতার ছোয়া। বর্তমানে Nano-Technology বা ন্যানো-প্রযুক্তি চিকিৎসা জগতে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করছে। এর ছোয়া লেগেছে ভেটেরিনারী চিকিতসাক্ষেত্রেও।
ন্যানোবিজ্ঞান এবং ন্যানোপ্রযুক্তির হলো অত্যন্ত ক্ষুদ্র জিনিস এর অধ্যয়ন এবং প্রয়োগ যা অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে যেমন রসায়ন, জীববিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, বস্তু বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিজ্ঞানে ব্যবহার করা যেতে পারে. ন্যানো প্রযুক্তি হলো বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, যা প্রায় 1 থেকে 100 ন্যানোমিটার এর nanoscale এ পরিচালিত হয়। এই ন্যানোপ্রযুক্তির জনক হলো পদার্থবিদ রিচার্ড ফাইনম্যান।
এটা কল্পনা করা ঠিক কঠিন, যে ন্যানোপ্রযুক্তি আসলে কতটা ছোট! এক ন্যানোমিটার এক মিটার এর বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ, বা একটি মিটার সমান 10-9 । বোঝার সুবিধার জন্য উদাহরণস্বরুপ: একটি ইঞ্চি সমান ২৫,৪০০,০০০ ন্যানোমিটার বা সংবাদপত্রের একটি পাতা প্রায় ১০০,০০০ ন্যানোমিটার পুরু। আরো ভালোভাবে বুঝতে গেলে- একটি তুলনামূলক স্কেলে, যদি একটি মার্বেল এক ন্যানোমিটার হয়, তবে এক মিটার হবে পৃথিবীর আকার এর সমান।
পৃথিবীর সবকিছু, যেমন – আমরা যে খাবার খাই, যে জামাকাপড় আমরা পরিধান করি, যে ভবন বা ঘরে আমরা বাস করি, এবং এমনকি আমাদের নিজের শরীর তাও পরমাণু দ্বারা গঠিত হয়, কিন্তু ছোট অণু ও পরমাণু যেমন খালি চোখ দিয়ে দেখা অসম্ভব, বস্তুত, অনেক কিছুই সাধারণ অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যেও দেখা অসম্ভব এর এই অবস্থায় অণুবীক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন ন্যানোবিজ্ঞান এর ন্যানোস্কেল। ন্যানোবিজ্ঞান এবং ন্যানোপ্রযুক্তি দ্বারা পৃথক পৃথক অণু ও পরমাণু দেখতে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারা যায়।
আমাদের জীবন যাত্রার মান রোগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা এবং পরিবেশের গুণগত মানের সাথে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত। গৃহপালিত প্রাণি হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রায় ৬০০ মিলিয়ন কৃষকের জীবিকা অর্জনের প্রধান চালক এবং যা কৃষি সম্পর্কীয় GDP তে প্রায় ৩০-৩৫% অবদান রাখে। প্রাণিদের মধ্যে নতুন রোগের বিধ্বংসী প্রাদুর্ভাব এবং পুরাতন রোগের আবির্ভাব যার মধ্যে আবার প্রায় ৬১% হল জুনোটিক, গৃহপালিত প্রাণিপালকদের জন্য অন্যতম প্রধান গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। ২০০ চেয়েও আরো বেশি জুনোটিক রোগ নিরূপণ করা হয়েছে এবং যার থেকে প্রতি বছর প্রায় ২.২ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে এবং বিশ্বব্যাপী প্রায় ২.৪ বিলিয়ন মানুষ অসুস্থ হচ্ছে। যদিও এসব ক্ষেত্রে প্রাণীর অনেক টীকা আবিস্কৃত হয়েছে কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে জুনোটিক রোগ প্রতিরোধে এমন কোন টীকা নেই, তাই বিজ্ঞানীরা ন্যানোপ্রযুক্তি ব্যবহার করে জুনোটিক রোগ প্রতিরোধে টীকা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা আবিস্কারের চেষ্টা করেছেন।
রোগের বিলম্বিত সনাক্তকরণই, পালের (Herds) সমগ্র প্রাণী এবং মানুষে রোগের সংক্রমণ বিস্তারের প্রধান কারণ বলে ধারণা করা হয়। কিছু কিছু জুনোটিক রোগ ভৌগোলিক সীমানা ছাড়িয়ে যায়, হয় বিশ্বায়িত, উদাহরণস্বরুপ- H1N1, সোয়াইন ফ্লু, ইবোলা, জিকা, ইত্যাদি, যা জীব-নিরাপত্তা এর জন্য বিশাল হুমকি। বিশ্ব প্রাণী স্বাস্থ্য সংস্থা – সমূলে ধ্বংস বা “Stamping out (Cull and Kill) এবং টিকা, অথবা দুই এর সংমিশ্রণে রোগ নির্মুল নীতি গ্রহণ করেছে। কিন্তু যেসব দেশে এমন কৌশল আইনত অনুমোদিত নয়, গৃহপালিত প্রাণিপালকরা সংক্রামিত প্রাণির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ স্বংস্পর্শে থাকায়, নিজেদেরকে আরো বিপদে ফেলছে। বিদ্যমান থেরাপির ঔষধ প্রতিরোধক ক্ষমতা (Drug Resistance), ঔষধের অপর্যাপ্ত শক্তি (Insufficient Drug Potency), পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ও প্রাণিখাদ্য-পণ্যতে ঔষধ এর অবশিষ্টাংশ (Drug Residues) থাকা এই পরিস্থিতিকে আরো ভয়াবহ করে তুলছে। এই সমস্যা আরও তীব্রতর হয় যখন সংক্রমণ কোষ-আভ্যন্তরীণ বা আন্তঃকোষীয় (Intracellular Infections) হয়।
ব্রুসেলোসিস হলো এমনই একটি আন্তঃকোষীয় রোগ, যা শরীরের রোগ-প্রতিরোধক ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ন অংগে যেমন – প্লীহা, যকৃত, ফুসফুস, বৃক্ক, লসিকাগ্রন্থি, অস্থিমজ্জা, পাকস্থলী, সেমিনাল ভেসিকল, অন্ডকোষ, এপিডিডাইমিস, এমনকি CerebroSpinal Fluid এও আক্রমণ করতে পারে। তাই একবার আক্রান্ত্র হলে এটি সমূলে উত্পাটন করা অনেক কঠিন।
ন্যানো প্রযুক্তিই হতে পারে এর উপযুক্ত সমাধান। কারণ-
- প্রচলিত নিয়ম অনুসারে শরীরে ঔষধ ডেলিভারি কৌশল ঔষধের পরিব্যাপ্তির (Diffusion) উপর নির্ভর করে যেখানে, ঔষধ কোষ ঝিল্লির জুড়ে আন্তকোষীয় ঘনত্ব (Intracellular Concentrations) তৈরী করে।
- অপরপক্ষে, Nanocarriers একই পথ অনুসরণ করে মারাত্মক জীবাণুর কোষের মধ্যে উচ্চমাত্রার সক্রিয় ঔষধ পেলোড (Drug Payloads) প্রদান করতে সক্ষম।
- আরো গুরুত্বপূর্ণভাবে, Nanocarriers এছাড়াও অন্যান্য মুখোমুখি চ্যালেঞ্জ, যথা- Drug Efflux Through Efflux Pumps and Cyp-Mediated Metabolism পরাস্ত করতে সক্ষম।
- এভাবেই Nanocarriers, নির্দিষ্ট সংক্রামক রোগের রোগ নিরাময় কৌশলে আরো নির্দিষ্টভাবে অবদান রেখে চলেছে।
Nanocarriers এর আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো – উন্নতমাত্রার Bioavailability, পছন্দসই টিস্যু নির্বাচনশীলতা, এবং কাঙ্ক্ষিত জায়গায় উচ্চমাত্রার ঔষধ পেলোড। আরো গুরুত্বপূর্ণভাবে, ঔষধের কেন্দ্রীকরণ (Concentrations) শরীরের অন্যান্য জায়গায় কার্যকরভাবে কমে যায়। এর ফলে প্রাণী চিকিৎসায় নির্দিষ্ট সুবিধা পাওয়া যাবে, যথা- দুধে বা মাংসে ঔষধের উপস্থিতি (Drug Residue) অনেকাংশে কমে যাবে। এছাড়াও ন্যানোপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ন্যানো-টিকাও ব্যবহার করা সম্ভব, যেখানে স্বল্পমাত্রার অ্যান্টিজেন, নির্দিষ্ট কোষে প্রেরণ করে অল্প সময়ে এবং দীর্ঘমেয়াদি ইমিউনিটি প্রদান করা সম্ভব।
একান্ত নির্ভুলতার সঙ্গে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর প্রারম্ভিক সনাক্তকরণ- রোগের দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা, মহামারী প্রাদুর্ভাব ও সমগ্র দেশব্যাপী বিকাশ রোধে এবং জনস্বাস্থ্য সংরক্ষণে অত্যাবশ্যক। রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু সনাক্তকরণে, প্রচলিত কৌশলগুলো যেমন – Cell Culture, বায়োকেমিক্যাল ভিত্তিক পরীক্ষা, ELISA বা PCR, সময় সাপেক্ষ এবং সীমিত সংবেদনশীলতা প্রকাশ করে। বর্তমানে কফ থেকে যক্ষ্মা সনাক্তকরণের জন্য Nanomaterial ভিত্তিক ডিভাইসও ডিজাইন করা হয়েছে। Biosensors এর উপর ভিত্তি করে খাদ্যে সংক্রামক রোগ সনাক্তকরণের জন্য সালমোনেলা প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি সঙ্গে ব্যবহৃত হচ্ছে। কার্বন ন্যানোটিউব ভিত্তিক সেন্সর দ্বারা পশুদের রক্তে এস্ট্রোজেন এর মাত্রা নির্ধারন করে, প্রাণীদের সঠিক ঋতুকাল যাচাই এবং সে অনুযায়ী সক্রিয় প্রজনন করা সম্ভব হচ্ছে। ন্যানো-ভিত্তিক নতুন অপটিক্যাল কাজ বায়োসেন্সর ব্যবহার করে; দুধে, প্রস্রাবে ভেটেরিনারী ঔষধের অবশিষ্টাংশ, যেমন- Sulfamethazine, প্রজেস্টেরন, Clenbuterol, ইত্যাদি অতি দ্রুত শনাক্ত করা যাচ্ছে। Nanosensors এবং Cantilever Arrays দ্বারা একটি নির্দিষ্ট জীবাণুর নির্দিষ্ট Gene sequence নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে জীবন যাত্রার মান উন্নত করার জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি, ক্লিনিকাল নিরূপণবিদ্যা, ব্যক্তিগত ঔষধ, এবং পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে, নিয়মিত, দ্রুত এবং সংবেদনশীল পর্যবেক্ষণ কৌশল গ্রহণ ও নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে একজন ইরানী গবেষক, ডঃ হোসেইন হেলি; Nanostructure উপাদানের উপর ভিত্তি করে Electrochemical Genosensor আবিষ্কার করেছেন যার দ্বারা ব্রুসেলা জীবাণুর স্ট্রেইন নির্ণয়ের জন্য নতুন পদ্ধতি উদ্ভব হয়েছে এবং সাথে সাথে ব্রুসেলোসিস নির্ণয় প্রক্রিয়া দ্রুত এবং যথেষ্ট সহজ হবে বলে আশা করা যায়।বর্তমানে, বাংলাদেশের ব্রুসেলোসিস পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন দেশের সাথে নিরলস উন্নত গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডঃ মোঃ সিদ্দিকুর রহমান।
ডঃ মোঃ সিদ্দিকুর রহমান ১৯৯৬ সালে প্রভাষক পদে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৮, ২০০৪ এবং ২০০৮ সালে তিনি যথাক্রমে সহকারী প্রভাষক, সহযোগী প্রভাষক এবং অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। তিনি বাকৃবি হতে স্বর্ণপদক ও বেস্ট পাবলিকেশন পদক লাভ করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ একাডেমি অফ সায়েন্স হতেও স্বর্ণপদক লাভ করেছেন। তিনি দক্ষিণ কোরিয়া হতে পি.এইড. ডি. এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ব্রাজিল, জাপান, ইন্ডিয়া হতে বিভিন্ন সময়ে ব্রুসেলোসিস এর উপর গবেষণা ও প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন। তার প্রকাশিত বই এর সংখ্যা ১৫ এবং গবেষণা প্রবন্ধের সংখ্যা ১৭৬। এছাড়াও তিনি বাকৃবি এর মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও ভেটেরিনারী টিচিং হাসপাতাল এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্প্রতি তিনি USDA এর সহায়তায়, আমেরিকার Texas A & M বিশ্ববিদ্যালয় হতে ৩ মাসের এবং ব্রাজিলের জাতীয় কাউন্সিলের সহায়তায় Federal University of Minas Gerais হতে ৭ মাসের ব্রুসেলোসিস নিরূপণ ও চিকিৎসায় ন্যানোটেকনোলজির প্রয়োগের উপর বিশেষ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ সম্পাদন করে এসেছেন।
আশা করা যায় সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশে ব্রুসেলোসিস এর মত মারাত্মক রোগ এর দ্রুত নিরূপণ ও চিকিৎসায় ন্যানোটেকনোলজির প্রয়োগ করে দেশের প্রাণীসম্পদ তথা অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখা সম্ভব হবে।
তথ্য সুত্রসমূহঃ
- Devarajan, P. V., D’Souza, A.A., 2014. Targeted Drug Delivery for Veterinary Infections. Int. Anim. Heal. J. 1, 32–36.
- Hashemitabar, G.H.R., Naeemipour, M., 2014. Application of Nano-Vaccines in Veterinary Medicine. Ferdowsi University of Mashhad, Mashhad, Iran. hashemit@um.ac.ir.
- Manuja, A., Kumar, B., Singh, R.K., 2012. Nanotechnology developments: opportunities for animal health and production. Nanotechnol. Dev. 2. doi:10.4081/nd.2012.e4
- Muktar, Y., Bikila, T., Keffale, M., Medicine, V., Box, P.O., 2015. Application of Nanotechnology for Animal Health and Production Improvement : A Review. World Appl. Sci. J. 33, 1588–1596. doi:10.5829/idosi.wasj.2015.33.10.96253
- Num, S.M., Useh, N.M., 2013. Nanotechnology applications in veterinary diagnostics and therapeutics. Sokoto J. Vet. Sci. 11, 10–14.
- Rahman, A., 2015. Epidemiology of brucellosis in humans and domestic ruminants in Bangladesh. Institute of Tropical Medicine of Antwerp.
- Rahman, M.S., Sarker, M.A.S. d, Rahman, A.K.M.A., Sarker, R.R., Melzer, F., Sprague, isa D., Neubauer, H., 1996. The prevalence of Brucella abortus DNA in seropositive bovine sera in Bangladesh. African J. Microbiol. Res. 8, 3856–3860. doi:10.5897/A
- Rahman, M.S., Sarker, R.R., Melzer, F., Sprague, L.D., Neubauer, H., 2011. Brucello sis in human and domestic animals in Bangladesh: A review. African J. Agric. Res. 6, 6348–6353. doi:10.5897/A
- Scott, N.R., 2005. Nanotechnology and animal health. Rev . sci. tech. Off. int. Epiz. 24, 425–432.
- Vikrama Chakravarthi, P., Balaji, S.N., 2010. Applications of nanotechnology in veterinary medicine. Vet. World 3, 477–480. doi:10.5455/vetworld.2010.477-480
প্রফেসর ড. মোঃ সিদ্দিকুর রহমান
মেডিসিন বিভাগ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ – ২২০২ |
ডাঃ মোঃ কামরুল হাসান
মেডিসিন বিভাগ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ – ২২০২
|