বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদের দাবিতে আন্দোলন

ঝিনাইদহ জেলা শহর থেকে ৯ কি.মি. দূরে মহাসড়কের পাশে অবস্থিত খুলনা বিভাগের একমাত্র ভেটেরিনারি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ। কলেজটির স্থাপন কাজ শুরু হয় মৎস ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে। তৎকালীন সময়ে প্রকল্প পরিচালক ডাঃ মোঃ লিয়াকত আলী উক্ত প্রকল্পের অর্থায়নে ২০০৯-২০১০ সালে অবকাঠামো স্থাপন কাজ শেষ করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলেজটি উদ্ভোধন করেন। প্রকল্পের অর্থ ার ফলে দীর্ঘ ৩ বছর এখানে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়নি। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ডঃ মোঃ মাহফুজুল বারি স্যারের একান্ত সহযোগিতায় কলেজটিকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়। উল্লেখ্য যে, ছাত্রছাত্রী পাঠদানের জন্য কোন শিক্ষক তখন নিয়োগ দেয়া হয়নি। হাতো গোনা গুটিকয়েক শিক্ষক যারা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে প্রেষণে আসেন। এ অবস্থায় একটি শিক্ষাবর্ষ শেষ হয় এবং ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষে কলেজটিতে পুনরায় ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়। প্রতি ব্যাচে ৬০ জন করে দুই ব্যাচে সর্বমোট ১২০ জন ছাত্রছাত্রীকে এই অল্প সংখ্যক শিক্ষক পাঠ দানে সক্ষম নয়। তাছাড়া ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষে আরো ৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।
বর্তমানে কলেজটি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রয়েছে। স্থ শেষ ায়ী শিক্ষক সহ কলেজটিতে এখন নিয়োগ দেয়া হয়নি কোন কর্মচারী কর্মকর্তা, ল্যাব টেকনিশিয়ান এবং লাইব্রেরিয়ান। এতে ছাত্রছাত্রী পাচ্ছেনা যথায শেষ শিক্ষার পরিবেশ। আর এই ভাবে চলতে থাকলে ছাত্রছাত্রীরা যেমন একাডেমিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের সরকার এবং দেশ। দক্ষ প্রাণি চিকিৎসক হতে হলে এমন শিক্ষা, লাভের চেয়ে ক্ষতি বয়ে আনবে বেশি। যা দেশ ও জাতির কাম্য নয়।
ইতিমধ্যে কলেজটিতে দেশের শীর্ষস্থানীয় কিছু গুণী ব্যক্তিবর্গ পরিদর্শন করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম মৎস ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী মো ছায়েদুল হক, সচিব ডাঃ সেলিনা আফরোজ, যুগ্ম সচিব মো আলী নূর, শিক্ষা সচিব ডঃ নজরুল ইসলাম খান (সাবেক তথ্য সচিব), আমেরিকান রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা, বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলর এবং ডিন।


এছাড়াও কলেজটিতে দেশ বরেণ্য রাজনৈতিক ও শিক্ষাবিদ বিভিন্ন সময় পরির্শন করেছেন। কলেজ অবকাঠামো পরিদর্শন করে তাঁরা মুগ্ধ হন এবং কলেজটি একটি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার যোগ্যতা রাখে সেটা জানান। মাত্র ১২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এটা স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হওয় সম্ভব নয়। সর্বশেষ কলেজটিতে পরিদর্শন করেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর ডঃ মোঃ আব্দুস। সাত্তার এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরি কমিশনের ২ জন সদস্য এবং কর্মকর্তাগণ। তারা কলেজটিকে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষদ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করতে ইচ্ছুক। কলেজ প্রশাসন সেই লক্ষে কাজ করছে বলে ছাত্রছাত্রীদের জানিয়েছে। কিন্তু এখনও কেন কাজটি বাস্তবায়িত হচ্ছে না এ প্রশ্ন সকল শিক্ষার্থীদের। তাদের এই দাবি বাস্তবায়িত না হওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা স্থায়ী ও পর্যাপ্ত দক্ষ শিক্ষক,পর্যাপ্ত ল্যাবরেটরি সরঞ্জাম, দক্ষ ল্যাব টেকনিশিয়ান, সুসজ্জিত লাইব্রেরী, পর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থা, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ইত্যাদি ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কলেজটিতে একটি ৩ তলা বিশিষ্ট প্রাণি হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও তা চালু হয় নাই। ফলে শিক্ষার্থীদের ব্যাবহারিক শিক্ষা ব্যহত হচ্ছে।

তাই যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ বাস্তবায়নের দাবিতে অত্র প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থী সরকারের এই বিষয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে সুদৃষ্টি আকর্ষন করছি। এরই পরিপেক্ষিতে অত্র কলেজের সকল শিক্ষার্থী শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করেছে। তাই অনতিবিলম্বে কলেজটিকে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধু অধিভুক্ত না রেখে পূর্ণাঙ্গ অনুষদের অন্তর্ভুক্ত না করলে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন অব্যহত থাকবে।
somewherinblog এ প্রকাশিত

লেখকঃ কাজী আব্দুস সবুর

ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্র। কাজ করছি International Veterinary Students Association (IVSA) এর ইউনিট প্রেসিডেন্ট হিসাবে, Standing Committee for One Health, IVSA র Local Veterinary Public Health Officer, Bangladesh হিসাবে এবং Students for One Health এর কেন্দীয় ওয়েবসাইট সাবকমিটিতে। লেখালেখি করি ২০১৩ থেকে somewhereinblog, Zero2Infinity সহ বিভিন্ন ব্লগ ও পত্রিকায়। কাজ করতে চাই জীববৈচিত্য ও পরিবেশ সংরক্ষক নিয়ে।

এটাও দেখতে পারেন

বন্যা কবলিত এলাকার প্রাণিদের জন্য করণীয়

আমাদের দেশের উত্তরাঞ্চল অর্থাৎ কুড়িগ্রাম লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। প্রায় সকলের বাড়িতেই পানি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.