পোষা প্রাণি থেকে বন্য জীবজন্তুর চিকিৎসার জন্য বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় প্রাণি হাসপাতালটির নাম হচ্ছে এস.এ. কাদেরী টিচিং ভেটেরিনারি হাসপাতাল। এটি ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে।
হাসপাতালটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
১. শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে পেশার উন্নয়ন করা।
২. প্রাণিসেবার মাধ্যমে জনগণকে সেবাদান করা।
৩. যোগ্য ও দক্ষ প্রাণি চিকিৎসক তৈরি করা।
৪. দেশে সর্বোত্তম প্রাণি চিকিৎসা নিশ্চিত করা।
৫. মান সম্মত গবেষণায় সহায়তা করা।
হাসপাতালটিতে কর্মরত বিভিন্ন পদের নাম ও সংখ্যা: হাসপাতালে বিভিন্ন পদে কর্মরত এক বা একাধিক ব্যক্তি রয়েছেন। এদের সংখ্যা হচ্ছে: ডিরেক্টর ও ভিএস ১ জন করে মোট দুই জন, ডিএমএস স্টাফ ৭ জন, ল্যাবরেটরি টেকনেশিয়ান ও কম্পাউন্ডার ১ জন করে মোট দুই জন, ড্রেসার ২ জন, ল্যাব এটেন্ড্যান্ট ৩ জন, কম্পিউটার অপারেটর ও এমএলএসএস ১ জন করে মোট ২ জন।
কর্তব্যরত ডাক্তার: যে সকল সুদক্ষ ডাক্তারের সহায়তা ও মেধায় হাসপাতালটি আজ দেশের একটি প্রথম শ্রেণীর প্রাণি হাসপাতালে পরিণত হয়েছে তারা হলেন- প্রফেসর ড. এম.এ মতিন প্রধান (মেডিসিন), প্রফেসর ড. রায়হান ফারুক (ক্লিনিক্যাল মেডিসিন), ড. বিবেক চন্দ্র সূত্রধর (সার্জারি), ড. মিজানুর রহমান (মেডিসিন), ড. ভজন চন্দ্র দাশ (সার্জারি), ডাঃ আব্দুল মান্নান (ভেট. সার্জন), ডাঃ আনোয়ার পারভেজ (রিপ্রডাকশন), ডাঃ আহাদুজ্জামান (মেডিসিন)। হাসপাতালটি থেকে বর্তমানে বেশ কয়েকজন ডাক্তার উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশ ও দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তারা হলেন ডাঃ আজিজুন্নেসা (বাকৃবি, বাংলাদেশ), ডাঃ ইউসুফ এলাহী (দক্ষিণ কোরিয়া), ডাঃ সুচন্দন সিকদার (অস্ট্রেলিয়া), ডাঃ পঙ্কজ চক্রবর্তী ও মনোয়ার সাইদ পল্বব।
ইউনিট: হাসপাতালটিতে বর্তমানে ৮ টি ইউনিট রয়েছে। সেগুলো হল: বড় প্রাণি ইউনিট, ছোট প্রাণি ইউনিট, পোল্ট্রী এন্ড এভিয়ান ইউনিট, অব্স ও গাইনি ইউনিট, সার্জারি ইউনিট, ক্লিনিক্যাল ল্যাব (ডায়াগনোসিস) ইউনিট, কনসালটেনসি ইউনিট ও স্যাটেলাইট এন্ড অ্যাম্বুলেটরি ইউনিট।
ইউনিট গুলোর মাঝে স্যাটেলাইট এন্ড অ্যাম্বুলেটরি ইউনিটটি চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসা সেবার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে যায়। বর্তমানে ইউনিটটি খুবই প্রশংসার সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
যে ধরণের প্রাণির চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়: একজন প্রাণিচিকিৎক তথা ভেটেরিনারিয়ানের কাছে আপনি মাছ ও মানুষ ব্যতিত সকল ধরণের প্রাণির সেবা পাবেন। সাধারণত এই হাসপাতালে আসা প্রাণিগুলো হল গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল, ঘোড়া, কুকুর, বিড়াল, ময়না, হাঁস-মুরগি, খরগোশ, কবুতর, তিতির, কচ্ছপ ইত্যাদি। বন্য প্রাণির মাঝে রয়েছে হরিণ, বানর, হাতি, বেজি, পেঁচা, শকুন, চিল ইত্যাদি। সাফারি পার্ক ও চিড়িয়াখানার প্রাণির মাঝে রয়েছে বাঘ, ভাল্কুক, জলহস্তী, বনবিড়াল, মেছো বিড়াল, সাপ ইত্যাদি। এছাড়াও প্রয়োজন অনুযায়ী প্রাণিগুলোর পোস্ট মর্টেম বা ময়না তদন্তও করে এখানে।
সময় সূচী: রবি-বৃহঃস্পতিবার সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শনিবার সকাল সকাল ৯ টা থেকে দুপুর পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়। চিকিৎসার জন্য প্রাণিভেদে খুবই স্বল্পমূল্যে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। ভবিষ্যতে হাসপাতালটি ২৪ ঘন্টায়ই খোলা রাখার সিদ্ধান্ত রয়েছে কর্তৃপক্ষের।
যে ধরণের চিকিৎসা পাওয়া যায়: হাসপাতালটি বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে। এদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে টিকাদান, কৃমিনাশক ঔষধ প্রদান, প্রেগন্যান্সি বা গর্ভ পরীক্ষা, বিভিন্ন ধরণের ছোট বড় সার্জারি, অর্থোপেডিক এবং অপথ্যালমিক সার্জারি, রক্ত সঞ্চালন ও মোবাইল অ্যাম্বুলেটরী সার্ভিস। এসব চিকিৎসা সাধারণত বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেই দিয়ে থাকে। হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উন্নতমানের ল্যাবরেটরি সুবিধা রয়েছে।
উল্লেখযোগ্য রোগ নির্ণয়ে সহায়ক যন্ত্রপাতি: মাইক্রোস্কোপ, সি-আর্ম, সিআর, এক্স-রে, ইউএস, ভাইটাল সাইন মনিটর ইত্যাদি।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা: হাসপাতালটিতে খুব শীঘ্রই চালু হতে যাওয়া উল্লেখযোগ্য সেবাগুলো হচ্ছে ফিজিওথেরাপি, প্রাণি পুনর্বাসন, জরুরী বিভাগ বা ইমার্জেন্সী এন্ড ক্রিটিক্যাল বিভাগ, বক্ষ সার্জারি, ফ্যাকো সার্জারি, ক্রায়ো সার্জারি, কিডনি ডায়ালাইসিস, কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন, সিটি স্ক্যান, এম.আর.আই ইত্যাদি।
প্রাণি চিকিৎসা ও রক্ষার জন্য প্রাণি হাসপাতাল একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই হাসপাতালটি দেশের উল্লেখযোগ্য ও উচ্চমানের একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আপনার মন চাইলে হাতে সময় নিয়ে হাসপাতালটির যাবতীয় কর্মকান্ড স্বচক্ষে দেখতে আসতে পারেন। হাসপাতালটি আপনাকে স্বাগতম জানাচ্ছে।
লেখা: সাইফুল ইসলাম, শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়।
তথ্য কৃতজ্ঞতা: ড. ভজন চন্দ্র দাস, ডিরেক্টর অফ এস.এ.কিউ হসপিটাল।
তথ্য ও ছবি সংগ্রহে: মোঃ কায়ছার রহমান, শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়।
নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়