সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের(ময়মনসিংহ) গবেষকদের ‘নতুন প্রজাতির কলিজাকৃমির সন্ধান লাভ’ শীর্ষক বিভ্রান্তিমূলক সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাজধানীতে অবস্থিত শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি এন্ড প্যারাসাইটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উদয় কুমার মোহন্ত।
বর্তমানে জাপানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবে গবেষণারত উদয় কুমার রোববার ই-মেইলের মাধ্যমে এই প্রতিবাদ লিপি পাঠান।
বিভিন্ন নিউজ পোর্টালে ‘নতুন প্রজাতির কলিজাকৃমির সন্ধান লাভ’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে নতুন প্রজাতির কলিজাকৃমির সন্ধানের কৃতিত্ব হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের(বাকৃবি) কয়েকজন অধ্যাপক ও গবেষকের নাম উদ্ধৃত করে যা দাবি করা হয়েছে তা বিভ্রান্তিমূলক বলে প্রতিবাদপত্রে দাবি করেছেন প্রথম নতুন কলিজাকৃমি সন্ধানকারী গবেষক উদয় কুমার মোহন্ত।
উদয় কুমার মোহন্ত ফোনের মাধ্যমে জানান, ২০১৪ সালের পূর্ব পর্যন্ত ধারনা করা হত যে, বাংলাদেশে শুধুমাত্র Fasciola gigantica প্রজাতির কলিজা কৃমি-ই গবাদী পশুকে আক্রমন করে। Uday Kumar Mohanta, Madoka Ichikawa-Seki, Takuya Shoriki, Ken Katakura & Tadashi Itagaki গবেষকবৃন্দ ২০১২ সাল থেকে শুরু করে দুই বছর ব্যাপী নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের কলিজা কৃমির বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য( Morphology-status of seminal vesicle, a temporary reservoir for spam) এবং জেনেটিক বৈশিষ্ট্য( ITS1I mitochondrial gene, nad1) সর্বপ্রথম উদঘাটন করেন। উক্ত গবেষণার জন্য বাংলাদেশের ৬ টি কৃষি-জলবায়ু ভিত্তিক এলাকার গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেরা থেকে প্রায় ১৫০০ কলিজা কৃমি সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত কলিজা কৃমি থেকে ১৫০ টি কলিজা কৃমির বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য এবং জেনেটিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা হয়। বৈশিষ্ট্য নির্ধারিত ১৫০ টি কলিজা কৃমির মধ্যে মাত্র ২০ টি ফেসিওলা জাইগান্টিকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয় আর বাকী ১২৭ টি ফেসিওলা জাইগান্টিকা ও ফেসিওলা হেপাটিকার মধ্যর্বতী একটি প্রজাতি বা হাইব্রডি ফেসিওলা (যা Intermediate form of Fasciola ev aspermic Fasciola sp. নামে পরিচিত); অবশিষ্ট ২ টি কলিজা কৃমি ইভোলুশনারী প্রসেস অবস্থায় আছে। এই গবেষণায় পপুলেশন জেনেটিক এনালাইসিস, পেয়ার ওয়াইজ ফিক্সাশন ইনডেক্স ও মেডিয়ান জয়েনিং নেটওয়ার্ক এর মত জটিল এনালাইসিস এর মাধ্যমে পৃথিবীতে নতুন এই হাইব্রডি ফেসিওলার উৎপত্তি এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তাদের বিস্তারও উদঘাটিত হয়েছে। গবষেণা কর্মটি জাপানের ইওয়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারী প্যারাসাইটোলজি গবেষণাগারে প্রফেসর ড. ইতাগাকি তাদাসি এর তত্ত্বাবধায়নে সর্ম্পূণ করা হয়ছে।
উক্ত গবষেণা কর্মটি আন্তর্জাতিক “ Parasitology Research (Impact factor 2.35)” ২০১৪ সালরে এপ্রিলে“ Characteristics and molecular phylogeny of Fasciola flukes from Bangladesh, determined based on spermatogenesis and nuclear and mitochondrial DNA analyses” শিরোনামে প্রকাশিত হয়।(লিংক:http://link.springer.com/article/10.1007/s00436-014-3898-5))। শুধু তাই নয়, গবেষণালব্ধ ফলাফল জাপানের বিভিন্ন কনফারেন্সসহ মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত ICOPA 2014(International Congress for Prasitology যেটি সমগ্র পৃথিবীর মেডিক্যাল, ভেটেরিনারি এবং মৎস্য প্যরাসাইটোলজিস্টদের সর্বোচ্চ গবেষণার আসর) এ উপস্থাপন করা হয়।
গবেষণা প্রবন্ধটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম-ফেসবুক, গবেষকগনের নেটওয়ার্ক- Research gate, Google Scholar এ সহজ প্রাপ্য। গুগল বা যেকোন ব্রাউজারে গিয়ে কী ওয়ার্ড Fasciola gigantica,Bangladesh লিখে সার্চ দিলেই পাওয়া যাবে। সর্বোপরি, বাকৃবি গ্রাজুয়েটদের গ্রুপ মেইল: BAUnet@yahoogroups.com এর মাধ্যমে সকলের অবগতির জন্য ওই সময় প্রেরন করা হয়েছিল। উল্লখ্যে যে. জাপানের এই গবেষণাগারে দক্ষিন ও দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার প্রায় সব দেশের (চীন, জাপান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, মায়ানমার, নেপাল, বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, ফিলিপিন ইত্যাদি) কলিজা কৃমির বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য এবং জেনেটিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এ কারনে এই গবেষণাগার পৃথিবীতে কলিজা কৃমির জন্য অত্যন্ত খ্যাতি সম্পন্ন একটি গবেষণাগার।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, গত ০৩/০৪/২০১৫ শুক্রবার অনলাইন নিউজ পোর্টালে নতুন প্রজাতির কলিজা কৃমির সন্ধান” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশতি হয়। উক্ত সংবাদে দাবি করা হয়েছে যে , ময়মনসিংহের বাংলাদশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি ল্যাবে প্রফেসর ড. এমদাদুল হক চৌধুরী এর তত্ত্বাবধানে প্রফেসর ড. মোতাহার হোসেন মন্ডল এবং প্রফেসর ড. রফিকল ইসলাম এর সার্বিক সহযোগিতায় ডিএলএস এর কর্মকর্তা ডা. সৈয়দ আলী আহসান গবেষণা করে নতুন প্রজাতির হাইবব্রিড কলিজা কৃমির সন্ধান পেয়েছেন । তাদের দাবি অনুযায়ী, তারাই প্রথম বাংলাদেশে ফেসিওলা জাইগান্টিকা ও ফেসিওলা হেপাটিকার মধ্যর্বতী ভিন্ন একটি প্রজাতি বা হাইব্রিড ফেসিওলার সন্ধান পেয়েছেন । এ সংক্রান্ত তাদের কোথাও কোন বৈধ প্রকাশনা আজ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি। তাই উক্ত সংবাদে কোন রেফারেন্সও উল্লেখ করা হয়নি।
সুতরাং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আমার গবেষণা কর্মটিকে অন্যরা নিজেদের কাজ বলে দাবি করা সম্পূর্ণ নৈতিকতা বিরোধী এবং অন্যায়। আমি এই সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।