আগামীকাল ১৯ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) দেশের পোল্ট্রি শিল্পের সবচেয়ে বড় আসর ৯ম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো ও সেমিনার ২০১৫ শুরু হতে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এবারের শোতে থাকছে ২৯৭টি স্টল। অংশ নিচ্ছে ১৪৭ টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান। তিন দিনব্যাপী আয়োজিত এ সেমিনারে ৪৭ টি টেকনিক্যাল পেপার উপস্থাপন করা হবে।
রোববার (১৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক গোলটেবিল বৈঠকের শুরুতে ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি)’র সভাপতি মসিউর রহমান এ তথ্য জানান।
এমডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ স্বাস্থ্যখাতে অগগতি অর্জন করলেও পুষ্টির ক্ষেত্রে এখনও অনেক পিছিয়ে আছে।অন্যতম কারণ হচ্ছে এখনো প্রতিদিন জনপ্রতি মুরগির মাংসের ঘাটতি প্রায় ২৬ গ্রাম এবং ডিমের ঘাটতি প্রায় ২৩ গ্রাম। ফলে এখনো শূণ্য থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে ৩৮.৭ শতাংশ খর্বাকৃতির, ৩৫.১ শতাংশ কম ওজনের এবং ১৬.৩ শতাংশ ক্ষীণকায় হচ্ছে। অপুষ্টির শিকার মা ও শিশুর সংখ্যা পূর্বের তুলনায় কমলেও তা আশাব্যঞ্জক নয়। এ প্রেক্ষিতে মেধাবী ভবিষ্যত প্রজন্ম গড়তে হলে পুষ্টিকর খাদ্য- ডিম ও মুরগির মাংস খাওয়ার পরিমান কয়েকগুন বাড়াতে হবে এবং পুষ্টি ঘাটতি পূরণে সরকার ও শিল্প উদ্যোক্তাদের একসাথে কাজে করতে হবে । ওয়াপসা-বিবি আয়োজিত “ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণে পোল্ট্রি শিল্পের ভূমিকা” শীর্ষক ঐ গোলটেবিল বৈঠকে পুষ্টি ও প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞগণ এসব অভিমত দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. নাজমা শাহীন মূল প্রবন্ধে বলেন, প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে ডিম ও মুরগির মাংস খাওয়ার পরিমান অনেক কম। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র সুপারিশকৃত প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ করতে হলে বাংলাদেশে পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশ অত্যন্ত জরুরী। তিনি বলেন আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষের প্রোটিনের প্রধান উৎস হচ্ছে শর্করা জাতীয় খাদ্য। কাজেই খাদ্যাভাস পরিবর্তনের জন্য কাজ করতে হবে।
ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখার (ওয়াপসা-বিবি) সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকার এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এক হয়ে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, হরতাল অবরোধের মত রাজনৈতিক কর্মসূচীর কারণে সাধারন মানুষের আয়-উপার্জনের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দুর্দশা বাড়ছে। তিনি বলেন, পূর্বের যেকোন সময়ের তুলনায় এবারের আয়োজনটি হবে অনেক বেশি গুরুত্ববহ এবং আকর্ষণীয়। বর্ধিত জনসংখ্যার ডিম ও মুরগির মাংসের চাহিদা মেটাতে এবং আগামী ২০২০ সাল নাগাদ পোল্ট্রি শিল্প যে লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায়- তা অর্জনের ক্ষেত্রে ৯ম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো ও সেমিনার উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালযের সবেক উপাচার্ষ্য ও জাতিসংঘ কৃষি ও খাদ্য সংস্থার (এফএও) সিনিয়র কন্সালট্যান্ট ড.এম এ সাত্তার মন্ডল বলেন, নিরাপদ খাদ্যের নানাবিধ চ্যালেঞ্জ থাকলেও এর মধ্য দিয়ে পোল্ট্রি শিল্পে গতিশীলতা এসেছে। এখন মাংস ও ডিম উৎপাদনে মানের বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, ২০১১-১২ সালে বার্ড ফ্লু’র কারনে প্রায় ৭০-৭৫ হাজার খামার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট এর প্রাণিস্বাস্থ্য গবেষণা বিভাগের প্রধান ড. মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে ২০৫০ সালে ২২ কোটি মানুষ হবে। বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে পোল্ট্রি শিল্পের উপর নির্ভর করতেই হবে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির সিএসও ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মাংস ও ডিম উৎপাদনের প্রতিটি স্তরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলেই কেবল নিরাপদ খাদ্য পাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি পোল্ট্রি শিল্পকে টেকসই করতে হবে।
এফএও এর ন্যাশনাল কনসালট্যান্ট ড. নিতিশ দেবনাথ বলেন, ভবিষ্যতের পুষ্টি চাহিদা পুরণে সরকার ও শিল্প মালিকদের মধ্যে পার্টনারশিপ তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্যে বাংলাদেশ চোখ ধাধানো অগ্রগতি অর্জন করলেও একটি জায়গায় ঘাটতি রয়েছে তা হচ্ছে পুষ্টি।
গোলটেবিল আলোচনায় জানানো হয়, জাপানের মানুষ বছরে গড়ে ৬০০টি ডিম খায়, সেখানে বাংলাদেশের মানুষ খাচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০টি ডিম। মাংসের ক্ষেত্রে আমেরিকার মানুষ বছরে গড়ে যেখানে প্রায় ৫০ দশমিক ১ কেজি মাংস খায়, সেখানে বাংলাদেশের মানুষ মুরগির মাংস খায় মাত্র ৩ দশমিক ৬৩ কেজি।
বিডিনিউজ২৪ডটকম, ঢাকামেইল২৪ডটকম এবং ঢাকানিউজ২৪ডটকম-অবলম্বনে।