ঈদে বাড়ি যাওয়া হলো না শত শত ভেটেরিনারিয়ানের (আপডেট ০৫ অক্টোবর সকাল ০৯:০৭)

কোরবানির পশুর হাটে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার দায়িত্ব পড়েছে দেশের প্রায় সমস্ত ভেটেরিনারি সার্জনের উপর, শুধু যে ভেটেরিনারি সার্জনরাই এ দায়িত্ব পালন করছেন তা কিন্তু নয়, পরিস্থিতি সামাল দিতে গবেষণা কর্মকর্তা কিন্তু আবার ভেটেরিনারিয়ান এমন কর্মকর্তারাও এ দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের মানুষ যাতে করে সুস্থ ও স্বাভাবিক ভাবে মোটাতাজাকৃত পশু ক্রয় করতে পারে তার নিশ্চয়তা বিধান করতে সরকার সব ভেটেরিনারি সার্জনের ছুটি বাতিল করেছে। ফলে এবার তারা ঈদে আর সবার মতো বাড়ি যেতে পারছেন না। তবে এ নিয়ে তাদের কোন আক্ষেপ নেই । দেশের মানুষ নিরাপদ মাংস খাবে এ কথা ভেবে তারা বাড়ি যেতে না পারার  কষ্ট গায়ে মাখছেন না। তবে কষ্ট হচ্ছে অফিসিয়াল পরিবেশের বাইরে এসে হাটের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে। প্রচন্ড গরমের মাঝে, কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ, ধুলো ময়লা সমস্ত কিছু সারাটাদিন ধরে সহ্য করতে হচ্ছে।


অনুভুতি জানাতে গিয়ে ডাঃ ওসমান গনি শিশির বলেন, “এমন পরিবেশে এত দীর্ঘ সময় কাজ করার অভিজ্ঞতা আগে ছিল না, ফলে মানিয়ে নিতে একটু কষ্ট হয়েছে। তবে অফিসের অন্যান্য স্টাফরা আমাকে সহযোগীতা করায় কাজটা সহজ হয়েছে কিছুটা।” এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি প্রানিসম্পদ ক্যাডারের অর্গানোগ্রাম বাস্তবায়নের জোর দাবী করে বলেন, ”
দেশের সকল মানুষের উৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী, প্রশাসন, ডাক্তারগণ দায়িত্ব পালন করেন পালাক্রমে অর্থাৎ কেউ ছুটিতে যায়, কেউ দায়িত্ব পালন করেন কিন্তু প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর (বিশেষত ভেটেরিনারি সার্জনগন) তার সমস্ত শক্তি দিয়ে কোরবানির পশুরহাটে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে নিজেদের উৎসব আনন্দকে জাতির স্বার্থে বিসর্জন দিয়ে। এর পরেও কি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নতুন অর্গানোগ্রাম আলোর মুখ দেখবে না? প্রতিটি উপজেলা, সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভায় পর্যাপ্ত ভেটেরিনারি সার্জন নিয়োগ পাবেন না? জাতি আর কতকাল জেগে জেগে ঘুমাবে????”

10714156_1548036772093710_6774850840123637629_o

এখানে দৈনিক যুগান্তরের একটি রিপোর্টের কিছু অংশ তুলে ধরতে চাই “২২ সেপ্টেম্বর জনস্বার্থে অ্যাডভোকেট মনজিল মোর্শেদের করা একটি রিট আবেদনের পর হাইকোর্ট পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রত্যেক হাটে চিকিৎসক নিয়োগ দেয়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে নগরীর ১১টি প্রবেশ পথে আসা গবাদি পশুরও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিশেষ মেডিকেল টিম গঠন করে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। সরেজিমন বিভিন্ন হাট ঘুরে তাদের কোনো কর্মতৎপরতা দেখা যায়নি। কয়েকটি হাটে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মেডিকেল টিম থাকলেও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও ব্যবস্থাপনা না থাকায় তারা পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে পারছেন না। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই পশু বিক্রি হচ্ছে সব হাটে। পশু চিকিৎসকরা বলছেন, স্টেরয়েড ব্যবহার করে মোটাতাজা করা গরুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার মতো সরঞ্জাম তাদের কাছে নেই। ফলে চোখের আন্দাজে পরীক্ষা করা হচ্ছে। বারিধারা জে বক হাটে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের প্রধান ডা. রেজাউল হক খান যুগান্তরকে বলেন, আমরা পশুর প্রাথমিক চিকিৎসা করছি। যেমন পায়ে ব্যথা, পেট ফাঁপা, খাদ্য গ্রহণ করাসহ বিভিন্ন সমস্যার প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। স্টেরয়েডের মাধ্যমে মোটতাজাকরণ গরু ল্যাবরেটরি টেস্টের মাধ্যমে সুনিশ্চিতভাবে নির্ণয় করা হয়। কিন্তু হাটে সে ব্যবস্থা নেই। তবে কোনো ক্রেতা পরীক্ষার জন্য এলে অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে চোখের আন্দাজে দেখা হচ্ছে। উত্তর শাহাজাহানপুর হাটে একই অধিদফতরের মেডিকেল টিমের চিকৎসক ডা. ওসমান গনিও প্রায় একই কথা বললেন। এদিকে পশুর প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চিকিৎসকরা টাকা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন গরু ব্যবসায়ীরা।
ডাঃ তানজিলা ফেরদৌসি লিমা’র কোরবানির পশুর হাটে দায়িত্বপালনের এই ব্যাপারটি ধরা পড়েছে একটু ব্যাতিক্রমভাবে। তিনি ফেইসবুকে তার অনুভুতি শেয়ার করতে গিয়ে লিখেছেন, “লেডিস ভিএস গরুর হাটে বসে গরু দেখছেন, এটা গরু দেখার চেয়েও বেশি এ্যাট্রাক্টিভ (আকর্ষনীয়)”।

অন্যান্য ভিএসদের সাথে কথা বললে তারা প্রায় সকলেই জানান যে, কাজটি বেশ চ্যালেন্জিং। প্রচন্ড ধকল সামলাতে হচ্ছে রোজ।

প্রতি বছরই যদি ভেটেরিয়ানদের এই দায়িত্ব পালন করতে হয় তবে সরকারকে দায়িত্বপালনরত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কাজে সহযোগীতার্থে কিছু সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবী করেন তারা।

লেখকঃ ডাঃ তায়ফুর রহমান

ডাঃ তায়ফুর রহমান; ডিভিএম, এম এস, এমপিএইচ ; ন্যাশনাল টেকনিক্যাল এডভাইজার-এপিডেমিওলজি, জাতিসঙ্ঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা, ঢাকা; ব্লগ এডমিনিষ্ট্রেটর, ভেটসবিডি

এটাও দেখতে পারেন

বিভিএ’র নবনির্বাচিত কমিটির বিগত এক মাসের অর্জন

এক মাস পূর্ণ করলো বিভিএ ২০১৭-২০১৮ কমিটি। কেমন ছিলো এই এক মাসের অগ্রযাত্রা ? কী …

২ মন্তব্য

  1. Thanks Shamim for your nice writing. But I seen it late.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.