আসুন জেনে নেই কখন ও কোন কোন অবস্থায় কোরবানীর গরুতে কোরটিকোস্টেরয়েড বা ডেক্সামেথাসন ব্যবহার হয়।
এক। পরিবহনজনিত ধকলঃ কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে ৩-৪ মাস আগে থেকেই বৈধ ও অবৈধ উপায়ে সীমান্তের উপার থেকে আসে বিশাল সাইজের অসংখ্য গরু, উট ইত্যাদি। রাস্তায় প্রায় সকলেই দেখেছেন ট্রাক বোঝাই এসব গরু। কোরবানীর হাটে পৌছতে এসব গরুকে পাড়ি দিতে হয় হাজার হাজার মাইল। সেই রাজস্থান থেকে যাত্রা শুরু হয়। আর ব্যাপারীর হাত বদলও হয় কয়েকবার। অভুক্ত, গাদাগাদি আর ঠাসাঠাসি হয়ে ক্লান্ত শ্রান্ত দেহে এসব গরু এসে পৌঁছে কৃষকের হাতে নয়তো ঢাকাসহ বড় বড় শহরের কোরবানীর হাটগুলোতে। সাধারণত স্বল্প দূরত্বের ধকল সামলাতে শরীর হতে স্বাভাবিকভাবে উৎপন্ন কোরটিকোস্টেরয়েডই যথেষ্ট। তবে বহুদিন ধরে অভুক্ত আর অনাহারে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দেয়া এসব গরুতে অনেক সময় দেখা দেয় এড্রেনাল ইনসাফিসিয়েন্সি। এমন অবস্থায় চিকিৎসা হিসাবে এদের দিয়ে দেয়া হয় ডেক্সামেথাসন। ভারতীয় প্রেসক্রিপশন আর ব্যাপারীদের হাত ধরে এসব ঔষধ তখন চলে আসে সীমান্তের এপারে আমাদের দেশীয় ব্যাপারীদের হাতে। ডেক্সামেথাসন টেপারিং ডোজ আকারে অর্থাৎ এর ডোজ ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে হয়। ফলে বাধ্য হয়ে এর ব্যবহার চলে আরও কিছুদিন।
দুই। ব্যাথানাশকঃ পরিবহনকালীন সময়ে প্রচণ্ড গাদাগাদি আর ঠাসাঠাসির ফলে এসব গরুর মাংসপেশীতে অনেক সময় প্রচণ্ড ব্যাথা হয় ফলে চলাফেরায় সমস্যা হয়। কোরবানীপূর্ব এসব গরুতে অন্যকোন ধরনের ব্যাথানাশক, উদাহরণস্বরূপ ডাইক্লোফেনাক বা অন্য কোন এনএসএআইডি ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এমতবস্থায় কোরবানীর গরুর সুস্থতা ও ব্যাথা লাঘবের জন্য ডেক্সামেথাসন ব্যবহারই হয়ে উঠে সবচেয়ে নিরাপদ।
তিন। পানিশূন্যতা এবং কিটোসিসঃ পরিবহনকালীন সময়ে এসব গরু দীর্ঘ সময় ধরে অভুক্ত থাকে ফলে এদের দেহে পানিশূন্যতাসহ কিটোসিস দেখা দেয়। ডেক্সামেথাসন শরীরে পানি সংরক্ষণ ও কিটোসিস নামক বিষক্রিয়া মুক্ত হতে সাহায্য করে।
চার। কার্বোহাইড্রেট এনগর্জমেন্টঃ দীর্ঘসময় অভুক্ত এসব গরুকে যখন হঠাৎ ভুসি বা দানাদার খাদ্য যেমন চাল, গম বা ভুট্টা ভাঙা ইত্যাদি এবং বিচালি বা খড় জাতীয় শুকনো খাবার দেয়া হয় তখন কখনো কখনো তা অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণের ফলে কার্বোহাইড্রেট এনগর্জমেন্ট নামের একপ্রকার সমস্যা সৃষ্টি হয়। এতে করে শরীর হতে প্রচুর পরিমাণ পানি পাকস্থলীর এক অংশে জমা হয়ে শরীরে হঠাৎ পানিশূন্যতার সৃষ্টি করে। এখানে বলা দরকার যে, রুমন্থক প্রাণী যেমন গরু, ছাগল ভেড়া, মহিষ উট ইত্যাদির সাথে মানুষ, কুকুর বা বিড়াল পাকস্থলীর গঠনে ভিন্নতা রয়েছে। পরিবহন কালীন সময়ে পানিশূন্যতা রোধ, অনাহার বা অতিরিক্ত দানাদার হতে সৃষ্ট বিষক্রিয়া হতে কোরবানীর গরুকে মুক্ত রাখা জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরী। ডেক্সামেথাসন এধরনের পানিশূন্যতা তথা বিপাকীয় বিষক্রিয়া হতে রক্ষা করে। তবে মনে রাখা প্রয়োজন কয়েক ঘণ্টা বা স্বল্প দূরত্বের পরিবহন যেমন দেশের ভিতরে এক জেলা হতে অন্য জেলা এরূপ দূরত্বের পরিবহনে এধরনের জটিল সমস্যা হয়না বললেই চলে।
তবে পরিবহনকালীন যে কোন অবস্থারই সৃষ্টি হোকনা কেন, ডেক্সামেথাসন একটি প্রেসক্রিপসন ড্রাগ। এটি লাইফ সেভিং ড্রাগ আর এসেনশিয়াল ঔষধের তালিকা ভুক্ত যাই হোক না কেন এর অপব্যবহার বহুবিধ ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শ ও সতর্কতা প্রয়োজন। সবশেষে বলবো, কোরবানির গরু মোটাতাজাকরনে করটিকোস্টেরয়েডের ব্যবহার নিয়ে আজ এতসব কথা হয়তো রাখাল ছেলে আর বাঘের গল্পের সেই মিথ্যা বাঘের মতো মনে হলেও সত্যিকারের বাঘ হতে সতর্কতা অর্থাৎ এনাবোলিক-এন্ড্রোজেনিক স্টেরয়েড দিয়ে যাতে গরু মোটাতাজা করা না হয় সে ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। এজন্য সঠিক তথ্য বিশ্লেষণ ও সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন এখনই।
কোরবানীর মোটাতাজা গরু নিয়ে আরও কিছু সমস্যা সম্ভন্ধে জানতে দেখুন ক্যালসিনোসিস না সিউডোগাউট।