অধ্যাপক ডা. মাহবুব আলী খান বলেন, ‘আমাদের দেশে সাধারণত বিক্রয়যোগ্য গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ কাজে স্টেরয়েড আইটেমের ডেক্সামেথাসন গ্রুপের বিভিন্ন ইনজেকশন প্রয়োগ হয়ে থাকে। এ ছাড়া ইউরিয়া খাওয়ানো হয়। মুখেও বিভিন্ন ধরনের উচ্চ মাত্রার ভিটামিনের মিশ্রণ খাওয়ানো হয়। কোরবানির আগে এ প্রবণতা বেড়ে যায় জানিয়ে তিনি বলেন, স্টেরয়েড আগুনের তাপেও নষ্ট হয় না।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব গরুকে পাম ট্যবলেট, ডেক্সামেথাসন ও স্টেরয়েড খাইয়ে মোটাতাজা করা হয়, সেসব পশুর মাংস খেলে মানবদেহে ভয়ানক রোগব্যাধি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. ইকবাল কবীর বলেন, গরুগুলোর দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে, এগুলো প্রাকৃতিকভাবে নয়, কৃত্রিমভাবে মোটা করে বাজারে তোলা হয়েছে।
প্রাণীবিদরা বলছেন, প্রাকৃতিকভাবে শক্তি-সামর্থ্যের কোনো গরু যেমন তেজি ও গোয়ার প্রকৃতির হয়, এই গরুগুলো ঠিক উল্টোভাবে ধীর ও শান্ত হয়ে থাকে। শরীরে ও আচরণে কোনো তেজি ভাবই দেখা যায় না। স্টেরয়েড খাওয়ানো গরু চেনার উপায় কী? জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞ ড. বায়েজিদ মোড়ল বলেন, এসব গরু অসুস্থতার কারণে সব সময় নীরব থাকে। কৃত্রিমভাবে মোটা করা এসব গরুকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জবাই না করলে মারা যায়। মোটাতাজা গরুর মধ্যে পাবনা ব্রিড, অস্ট্রেলিয়ান-ফিজিয়ান ব্রিড, ইন্ডিয়ান হরিয়ানা ব্রিড, পাকিস্তানি সাহিয়াল ব্রিড কিছু পরিচিত জাত রয়েছে। তবে এর পাশাপাশি রয়েছে স্থানীয় ব্রিডিং পদ্ধতি, যা লোকাল ক্রস ব্রিড নামে পরিচিত। এসব ব্র্যান্ডের সব গরুই মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ায় বড় করা হচ্ছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক ডা. মেহেদী হাসান বলেন, গরু মোটাতাজাকরণ একটি নিয়মিত ও প্রচলিত পদ্ধতি। প্রাণিসম্পদ বিভাগ এ জন্য গবাদি পশু চাষিদের দুই থেকে আড়াই কেজি বিশেষ পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত ইউরিয়া, লালিগুড় ও খড়ের একটি বিশেষ ধরনের মিশ্রণ খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়। আট দিন (০৮) কোনো পাত্রে এ মিশ্রণ বন্ধ করে রেখে তা রোদে শুকিয়ে গরুকে খাওয়াতে হয়। তিন মাস (০৩) ধরে এটা খাওয়ালে গরু খুব দ্রুত মোটাতাজা হয়ে ওঠে। অথচ কিছু প্রাণিচিকিৎসকের পরামর্শে দ্রুত মোটাতাজা করতে ক্যাটাফস, বার্গাফ্যাট, বায়োমিঙ্গ খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে গরু মোটাতাজা করেছেন_ মানিকগঞ্জের সিংগাইরের আছিমপুরের এ রকম একজন খামারি জানান, গত সপ্তাহে তিনি মোটাতাজা করতে ১৫টি গরু কিনেছেন। তিনি জানান, চিকিৎসকের পরামর্শমতো তিনি অনেক দামি ইনজেকশন, ট্যাবলেট ও পাউডার ওষুধ খাওয়ানো শুরু করেছেন। তার খামারে গরুকে ক্যাটেল কেয়ার, ইনজ্যাইভিট, এনোরা, সেটরন ভেট ইত্যাদি ওষুধ খাওয়ানো হয়ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রাণিসম্পদ বিভাগের ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, ডেক্সামেথাসন জাতীয় ওষুধ প্রাণী বা মানুষকে খাওয়ালে এক (০১) সপ্তাহের মধ্যে মোটাতাজা হবে। তবে এই মোটাতাজা বেশি দিন স্থায়ী হয় না, বড়জোর দুই থেকে তিন মাস। আর এই ডেক্সামেথাসন গরুকে খাওয়ালে আর সেই গরুর মাংস মানুষ খেলে লিভার, কিডনি, ক্যান্সার, হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্তসহ হতে পারে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (প্রাণী স্বাস্থ্য) ডা. ফরহাদুল আলম বলেন, ক্ষতিকর ওষুধ সেবনের মাধ্যমে মোটাতাজা করা গরু কোরবানির হাটে তোলা হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি জানান, আসন্ন ঈদুল আজহায় প্রতিটি গরুর হাটে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ টিমের মাধ্যমে গরুর রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। যদি কোনো গরুর রক্ত পরীক্ষায় বিষাক্ত কিছু ধরা পড়ে, তাহলে সেই গরুকে সিল করে দেওয়া হবে এবং গরু বিক্রেতার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুএঃ বাংলাদেশ ভেটেরিনারি স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশান লিংক ও কালের কণ্ঠ পএিকা।