সরকারি কর্মকর্তাদের ২৮ ক্যাডারের মধ্যে ইকোনমিক ক্যাডারকে প্রশাসনে একীভূত করার প্রক্রিয়া চলছে। সচিবালয় ক্যাডারের মতো এ ক্যাডারকেও প্রশাসনে একীভূত করা হবে।
প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে ইকোনমিক ক্যাডারকে একীভূত করে নতুন নামকরণ করা হচ্ছে ‘উন্নয়ন ও প্রশাসন’ নামে নতুন ক্যাডার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় শিগগির এ ব্যাপারে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করবে বলে জানা গেছে। বিসিএস ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যকার সমঝোতা চুক্তির ভিত্তিতেই জারি হতে পারে এ প্রজ্ঞাপন।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহিদ খান এই ক্যাডারটি একীভূত করার প্রস্তাব করেছিলেন বলে বাংলাদেশ প্রতিদিন তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।
সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকে আরও গতিশীল করার স্বার্থে তিনি এ প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তার সেই প্রস্তাবকে সামনে রেখেই নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই সরকার ইকোনমিক ক্যাডার তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বলে দেশের আরেকটি শীর্ষ দৈনিকে প্রকাশ করা হয়।
সরকারের শীর্ষপর্যায়ের একটি সূত্র জানিয়েছে যে, ইকোনমিক ক্যাডার বিলুপ্ত করার যৌক্তিকতা আছে। তাদের কারণেই সরকারের অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্ব হয় অথবা অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্পের কাজ শুরু করারই সময় থাকে না। তাই সাবেক সচিব আবু আলম শহিদ খানের প্রস্তাবটি বিবেচনায় নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি ও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় ইকোনমিক ক্যাডারের বাস্তবায়নে সম্পৃক্ততা এবং প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসন ক্যাডারের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, প্রত্যেক মন্ত্রণালয়েই প্রশাসন, প্ল্যানিং ও উন্নয়ন উইং আছে। এর মধ্যে প্রশাসনে থাকে প্রশাসন ক্যাডার, প্ল্যানিং উইং পুরোটাই ইকোনমিক ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত। উন্নয়ন উইং প্রশাসন ক্যাডার ও ইকোনমিক ক্যাডার কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কাজ করে। মন্ত্রণালয়ের সব প্রকল্প প্রস্তাবনা প্ল্যানিং উইংয়ের মাধ্যমে প্রস্তুত করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। সেখানে যাওয়ার পর ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তারা আবার নানা রকম যাচাই বাছাই শুরু করেন। প্রকল্প প্রস্তাবটি যাতে সময়মতো যাচাই বাছাই শেষ করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হয় সেজন্য বার বার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে অনুরোধ জানাতে হয়। কোনো কোনো প্রকল্প প্রস্তাবনা মাসের পর মাস ইকোনমিক ক্যাডারের কোনো না কোনো কর্মকর্তার টেবিলে পড়ে থাকে বলে সূত্র অভিযোগ করেন। এ ছাড়া ইকোনমিক ক্যাডার সৃষ্ট আরও বেশ কিছু অনাকাক্সিক্ষত সমস্যার কারণেও প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয় বলে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অভিযোগ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের যার মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বও কাজ করে, প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর প্রভাব পড়ে। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থেই ইকোনমিক ক্যাডার বিলুপ্ত করে এ ক্যাডারের বর্তমান জনবল প্রশাসন ক্যাডারে একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে সাবেক সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহিদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইকোনমিক ক্যাডারকে প্রশাসন ক্যাডারে একীভূত করা হলে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প আরও গতিশীল হবে। আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্বের অবসান হবে এবং উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার উপকৃত হবে। কারণ প্রকল্পের আর্থিক অনুমোদন দিয়ে থাকে ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তারা আর প্রকল্প বাস্তবায়ন করে প্রশাসনের কর্মকর্তারা। দুটি ক্যাডার একীভূত হলে প্রকল্প বাস্তবায়ন দ্রুত গতিতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তার উদ্যোগকে ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তারা ইতিবাচভাবে গ্রহণ করেছিলেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
দুটি ক্যাডার একীভূতকরণে গত নভেম্বরে সচিবালয় ও পরিকল্পনা কমিশনে দুটি আলাদা মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯৬ সাল থেকেই ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তারা বিভিন্ন দাবি জানিয়ে এলেও তা পূরণ হচ্ছিল না। ২০১০ সালে পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকারের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ওই কমিটির সুপারিশ আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমানে ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের শুরুর দিকের পদবির নাম সহকারী প্রধান এবং প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদবির নাম সহকারী সচিব। একীভূত হলে সহকারী প্রধান পদবিটিই আর থাকবে না। একীভূত হলে ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তারা তৃণমূল পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে কাজ করতে পারবেন। জেলা প্রশাসকও (ডিসি) হতে পারবেন তাঁরা। কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছিল, ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে বর্তমানে যে জট লেগেছে, তাও আর থাকবে না। এ ছাড়া সহকারী বা সিনিয়র সহকারী সচিবেরা যে ধরনের সহায়ক কর্মচারী পেয়ে থাকেন, তা পাবেন সহকারী প্রধান বা সিনিয়র সহকারী প্রধানেরা।
এদিকে ২০১২ সালের ৮ নভেম্বর সরকারের ২৮টি ক্যাডার সার্ভিস বিলুপ্তির পক্ষে মত দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পরিকল্পনা কমিশন বিভাগের দারিদ্র্য বিশ্লেষণ ও পরিবীক্ষণ অনুবিভাগ আয়োজিত ‘ষষ্ঠ-পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১১-১৫) বাস্তবায়ন-পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন’ সম্পর্কিত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির সভায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ কথা বলেছিলেন।
তিনি তখন বলেছিলেন, ২৮টি ক্যাডার না রেখে এদের ৩-৪টি গ্র“পে ভাগ করা হবে। কারণ এসব একাধিক ক্যাডার সরকারের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে।
জানা গেছে, ইকোনমিক ক্যাডারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এ একীভূতকরণের বিরোধিতা করছেন। সমর্থন জানাচ্ছেন জুনিয়র কর্মকর্তারা।