পদোন্নতি, পদায়ন ও বদলির আদেশ দিয়ে কর্মকর্তাদের নতুন কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়৷ এরপর অধিদপ্তর এক চিঠিতে কর্মকর্তাদের এই আদেশ অনুসরণ করতে বলেছে৷ কিন্তু আরেক চিঠিতে সেই আদেশ বাতিল করেছে৷ এ ঘটনা ঘটেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে৷ কাগজপত্র অনুযায়ী, তিনটি আদেশই হয়েছে একই দিনে—গত ৬ মে৷ তবে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের এ পাল্টাপাল্টি আদেশ-নিষেধের ঘটনা ঘটেছে গত ৬ থেকে ১১ মের মধ্যে৷এই আদেশ-নিষেধের গ্যাঁড়াকলে পড়েছেন ১৫৩ জন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা৷ এর মধ্যে ৭৬ জন কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছেন৷ বাকি ৭৭ জনের বদলির আদেশ হয়েছিল৷
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, বিভাগীয় কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, বিসিএস (প্রাণিসম্পদ) ক্যাডারের ৭৬ জন কর্মকর্তাকে গত ৬ মে পদোন্নতি দেয় মন্ত্রণালয়৷ ভেটেরিনারি সার্জন (ভিএস), উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ইউএলও) ও জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ডিএলও)—এ তিন পদে কর্মকর্তাদের পদোন্নতির আদেশ দিয়ে পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়৷ তাতে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের বদলি/পদায়ন করে ১৪ মের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়৷ অন্যথায় ১৫ মের পূর্বাহ্ণ থেকে তাত্ক্ষণিকভাবে অবমুক্ত বা স্ট্যান্ড রিলিজ বলে গণ্য করা হবে বলে উল্লেখ করা হয় প্রজ্ঞাপনে৷ একই দিন অপর পাঁচটি প্রজ্ঞাপনে পৃথক ৭৭ জন কর্মকর্তার বদলির আদেশ হয়৷
কাগজপত্রে দেখা যায়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে ৬ মে দুটি অফিস আদেশ জারি হয়৷ একটিতে মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন ধরে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের পদায়ন করা পদে যোগ দিতে ‘মুভমেন্ট আদেশ’ দেওয়া হয়৷ অপরটিতে বলা হয়, ‘বিভিন্নস স্মারকে যে মুভমেন্ট আদেশ জারি করা হয়েছিল, এক্ষণে উক্ত মুভমেন্ট আদেশগুলো বাতিল করা হলো৷ উল্লিখিত মুভমেন্ট আদেশ দ্বারা কোনো কর্মকর্তা কোথাও যোগদান, দায়িত্ব হস্তান্তর বা গ্রহণ করে থাকলে তাও বাতিল বলে গণ্য হবে৷’ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর থেকে জারি করা তিন ধরনের অফিস আদেশে বিভ্রান্তিতে পড়েন কর্মকর্তারা৷ কিন্তু কয়েকজন কর্মকর্তা এরই মধ্যে বদলি ও পদোন্নতি পাওয়া পদে যোগ দেওয়ার জন্য দায়িত্ব হস্তান্তর করেন৷ কিন্তু নতুন পদ বা কর্মস্থলে গিয়ে জটিলতায় পড়েন৷কারণ, পরের আদেশের কারণে ওই পদেরকর্মকর্তা দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে রাজি হননি৷ এঁরা এখন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে বিভিন্নজনের টেবিলে টেবিলে ঘুরছেন৷
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুসারে ৬ মে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার ভেটেরিনারি সার্জন মুহাম্মদ মারুফ রিজভী তালুকদার তাঁর দায়িত্ব উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রৌশনী আকতারের কাছে হস্তান্তর করেন৷ তাঁকে পদায়ন করা হয়েছিল গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায়৷ গত ৭ মে সেখানে গেলে সেখানকার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তাঁর কাছে দায়িত্বভার অর্পণে অস্বীকৃতি জানান৷ এ ব্যাপারে মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা৷
৭ মে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে লিভ রিজার্ভে থাকা ভেটেরিনারি সার্জন মুহাম্মদ আহসান হাবীব তাঁর দায়িত্ব অর্পণ করেন এই শাখার দায়িত্বে থাকা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মলয় শংকর দের কাছে৷ আর ১১ মে ঢাকার প্রাণিসম্পদ গবেষণা শাখার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন উপজেলার ভেটেরিনারি সার্জন ওসমান গণির কাছ থেকে৷ এ পদের কর্মকর্তা অখিল চন্দ্র পদোন্নতি পেয়ে জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হন৷ তিনি দায়িত্ব হস্তান্তর করে যোগ দিতে মহাখালীর ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ শাখায় যান৷কিন্তু সেখানে যোগ দিতে পারেননি৷ এভাবে অন্তত ২০ জন কর্মকর্তা সংকটে পড়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান৷ ভুক্তভোগী কর্মকর্তাদের প্রশ্ন, মন্ত্রণালয়ের আদেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাতিল করার এখতিয়ার রাখেন কি না, না রাখলে চাকরি বিধি অনুযায়ী এর বিহিত কী হবে? এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করলে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মোজাম্মেল হক সিদ্দিকী মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন৷
মন্ত্রণালয়ের আদেশ অধিদপ্তর বাতিল করতে পারে কি না—এ প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এখন কথা বলা যাবে না৷’ জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদসচিব শেলীনা আফরোজা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের কিছু থাকলে আমরা যাচাই করে দেখব৷’ মত্স্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মুহাম্মদ ছায়েদুল হক দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি৷ তবে প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অধিদপ্তর কখনো মন্ত্রণালয়ের আদেশ বাতিল করতে পারে না৷ যতটুকু জেনেছি, ভুল বোঝাবুঝি থেকে এটি হয়েছে৷’ তিনি বলেন, মন্ত্রী দেশে ফিরলে সচিবকে নিয়ে আইনগতভাবে সমাধান করা হবে৷