বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটে চাকরির ‘আজগুবি’ বিজ্ঞাপন!

Bangladesh-Paranishompodবাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগের বিজ্ঞাপন দিয়েছে যেখানে সাধারণ শিক্ষার শিক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারবেন। জিনবিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী মনে করেন, অযোগ্য লোকদের সুযোগ দিতেই এ ধরনের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালকের দাবি, প্রতিষ্ঠানের প্রবিধানমালা মেনে এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
২ ফেব্রুয়ারি ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার-এ বিএলআরআইয়ের সাতটি বিভাগে নয়জন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এই পদে আবেদনের শেষ তারিখ আজই। বিভাগের মধ্যে আছে জেনেটিং ইঞ্জিনিয়ারিং, ডেইরি মাইক্রো বায়োলজি, প্রশিক্ষণ-পরিকল্পনা ও প্রযুক্তি পরিবীক্ষণ, মাংস ও ডিম প্রযুক্তি, প্রাণী স্বাস্থ্য ও প্যারাসাইটোলোজি। বিশেষায়িত এসব পদে আবেদনের জন্য পশুপালন, পশু চিকিৎসা, কৃষি, কৃষি অর্থনীতির পাশাপাশি অর্থনীতি, মার্কেটিং ও সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের আবেদনের সুযোগ রাখা হয়েছে। বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার মতো বিশেষায়িত পদে সাধারণ শিক্ষার স্নাতকদের আবেদনের সুযোগ রাখা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চাকরিপ্রার্থীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাই।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন মৌসুমী ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, বিএলআরআইয়ে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং) পদের জন্য সাধারণ শিক্ষার স্নাতকদের আবেদনের সুযোগ রাখা হয়েছে। তাঁরা যদি এই পদের জন্য নির্বাচিত হন, তা হলে অত্যন্ত বিশেষায়িত এই পদের কাজগুলো কীভাবে করবেন?
বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী বিষয়টিকে ‘আজগুবি’ বলে মন্তব্য করেন। তাঁরা মনে করেন, এর মাধ্যমে বিশেষায়িত শিক্ষার্থীদের জন্য চাকরির ক্ষেত্র আরও সংকীর্ণ করে ফেলা হচ্ছে। তাঁদের প্রশ্ন, বিশেষায়িত কারিগরি যোগ্যতার পদগুলোর যে কাজ তার গুণগত মান অন্যরা ঠিক রাখবে কীভাবে?
জানা গেছে, একজন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারকে কখনো অণুজীব বিজ্ঞানী, বায়োকেমিস্টের ভূমিকায় নামতে হয়। ডিএনএ বিশ্লেষণ করতে হয়, যা সাধারণ শিক্ষার ডিগ্রিধারী কারও পক্ষে সম্ভব না। এ কারণে বিশেষায়িত শিক্ষায় ডিগ্রিধারীরা এ ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশি জিনবিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী বলেন, এসব বিশেষায়িত পদের জন্য এ ধরনের বিজ্ঞাপন দিলে অযোগ্য লোকদের আবেদন করার সুযোগ তৈরি হয়। অন্যদিকে তাঁরা নিয়োগ পেলেও এ ধরনের কাজ এতটাই বিশেষায়িত ও কারিগরি-নির্ভর যে, তাঁরা করতে পারবেন না। বিভিন্ন দেশের উদাহরণ তুলে এই বিজ্ঞানী বলেন, এ ধরনের পদে নিয়োগের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নীতিমালা রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং বিএলআরআইয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, কারিগরি পদের জন্য এ ধরনের সুযোগ রাখা যৌক্তিক নয়। এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে কি না, সেটা খুঁজে বের করা দরকার বলে মনে করেন তাঁরা।
এ বিষয়ে বিএলআরআইয়ের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. নজরুল ইসলাম দাবি করেন, প্রতিষ্ঠানের প্রবিধানমালার আলোকে এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে তিনি রাজি হননি।


খবরঃ দৈনিক প্রথম আলো

প্রথম আলোতে এই সংবাদে কিছু মন্তব্য পড়েছে, নির্বাচিত কিছু মন্তব্য এখানে তুলে ধরছিঃ

Ershad Hossain বলেছেন “নিজেদের জ্ঞাতি গুষ্টির লোক নিয়োগ দেওয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ”

Hasanuzzaman বলেছেন, “বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদের জন্য সাধারণ শিক্ষার স্নাতকদের আবেদনের সুযোগ রাখা হয়েছে। তা হলে কৃষি বিজ্ঞানী হিসাবে মাঠে ৫ বছর ফসল ফলানোর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন যে কোনো ব্যাক্তিকে নিয়োগ দেয়ার জন্য দাবী জানাচ্ছি, তাতে অন্ততপক্ষে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতদের চেয়ে অনেক বেশী সফলতা পাওয়া যাবে। উপরোক্ত ক্ষেত্রগুলোতে আন্তর্জাতিকভাবে জ্ঞান ও গবেষণা বিনিময় করে সাফল্য অর্জন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর দ্বারা দেশ ও দশের উন্নয়ন ঘটে, কারন এগুলো দেশের সুদূরপ্রসারী উন্নয়নের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ডেইরি মাইক্রো বায়োলজি, প্রশিক্ষণ-পরিকল্পনা ও প্রযুক্তি পরিবীক্ষণ, মাংস ও ডিম প্রযুক্তি, প্রাণী স্বাস্থ্য ও প্যারাসাইটোলোজি এসকল বিশেষায়িত ক্ষেত্রে অর্থনীতি, মার্কেটিং ও সমাজবিজ্ঞানের ছাত্ররা কিভাবে অন্যান্য দেশের বিশেষজ্ঞদের সাথে মেধা ও গবেষণার বিনিময় করবে ! অন্য দেশের বিশেষজ্ঞরা যখন পারস্পরিক মত, মেধা ও গবেষণা বিনিময় করে তাদের উন্নয়ন ঘটাবে তখন আমাদের দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা বিদেশের বাজারে বাজারে ঘুরবে আর আমাদের রক্ত পানি করা পয়সার অপচয় করতে থাকবে। এটাই এই ডিজিটাল সরকারের মহাপরিকল্পনা।”

Tanveer Ahmed বলেছেন, “বিজ্ঞাপন দাতাদের আবার প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হউক।”

Md. Ashaduzzaman Sarker বলেছেন, “আমি কারো পক্ষ নিয়ে কথা বলছি না। জাস্ট কিছু যুক্তি দিচ্ছি। তারা যদি এই সব পদের জন্য বিবেচিত না হয় তাহলে এডমিন ক্যাডারের সোসাল সাইন্স, ইসলামিক স্টাডিজ থেকে পাস করা লোকরা কিভাবে সরকারের বিভিন্ন পদে আইসিটি (ইনফরমেশন টেকনোলোজির) ডেপুটি সেক্রেটারি, জয়েন্ট সেক্রেটারি, আইসিটি’র ডিজি হয় কিভাবে!! এডমিন ক্যাডারে এইসব নৈরাজ্য এবং সেই সাথে এক্স- ক্যাডারের উপর এডমিন ক্যাডারের দৌরাত্য সম্বন্ধে কেউ কিছু লিখে না কেন!!!!!”

dr. nazrul islam বলেছেন, “ভাবছি বাচ্চাটাকে কেজি ইসকুল থেকে ছারিয়ে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে চাকরিতে দিয়ে দিব নাকি ! বড় হয়ে ত সেই চাকরিই করবে”

লেখকঃ ডাঃ মমতাজ নাছরীন দোলন

আমি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্বাবদ্যালয়, ময়মনসিংহ হতে ডিভিএম, এবং প্যারাসাইটোলজি-তে মাস্টার্স করেছি।

এটাও দেখতে পারেন

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে অনলাইন গবাদি পশু শনাক্তকরণ এবং নিবন্ধন ব্যবস্থা চালুঃ জানা যাবে স্বাস্থ্য ও রোগের ইতিহাস

প্রাথমিকভাবে ৫০,০০০ পশু নিবন্ধিত হবে যা গ্রাহকদের পশুগুলোর স্বাস্থ্য ইতিহাস দেখার সুযোগ দিবে। প্রথমবারের মতো, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.