ডিম সকলেরই খুব পরিচিত এবং প্রিয় একটি খাদ্য। ডিমে দেহের গঠন উপযোগী সকল পুষ্টি উপাদানই বিদ্যমান। এজন্য এটাকে সর্বৎকৃষ্ট পুষ্টিমূল্য সম্পূর্ণ খাদ্য বা আদর্শ খাদ্য বলা হয়।
কারো কারো ধারণা সাদা ডিমে ভিটামিন বেশি। আবার কারো ধারণা লাল ডিমে। এ ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল। সব ডিমেই সমান ভিটামিন বা পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। ১টা ডিমে ১২-১৪% প্রোটিন, ১০-১২% স্নেহ ও ১০% খনিজ পদার্থ বিদ্যমান যা একটা মানুষের ১দিনের জন্য যথেষ্ট। ডিমের খোসার ওজন সম্পূর্ণ ডিমের ১১% হয়ে থাকে। ১টি ডিমের সাদা অংশের তুলনায় কুসুমের পুষ্টিমূল্য বেশি।
এতে লৌহ ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, খনিজ পদার্থ, ভিটামিন-এ, থায়ামিন, রাইবোফ্লাভিন এবং সামান্য পরিমাণে ভিটামিন-ডি পাওয়া গেলেও তা নির্ভর করে হাঁস-মুরগির রোদে থাকার ওপর। কথাটা খুব আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, যেসব হাঁস-মুরগি রোদে বেশি থাকে যেসব হাঁস-মুরগির ডিমে ভিটামিন-এ ও ডি বেশি থাকে। বাংলাদেশের গৃহস্থালীর হাঁস-মুরগিতে প্রচুর ভিটামিন এ ও ডি থাকে। ফলে এসব হাঁস-মুরগির কুসুমের রং ও বেশ গাঢ় হয়। পোলট্রি ফার্মের মুরগিগুলো আলো-বাতাস এবং ঘাস-পাতা কম পায় বলে এসব মুরগির ডিমের রং খুব হাল্কা হয়। ফার্মের মুরগির খাদ্যে ভিটামিন এ ও ডি যোগ করা সত্ত্বেও কুসুমের রং হালকা থাকে তবে ঐসব ডিম থেকে ভিটামিন এ ও ডি ঠিকই পাওয়া যায়।
অনেক সময় ক্যারোটিনের অভাবেও কুসুমের রং হালকা হয়। ডিমে উচ্চ জৈবমূল্যের প্রোটিন বিদ্যমান। ডিমে অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিড পাওয়া যায় যার ১০০ ভাগই দেহে শোষিত হয়। মুরগির আহারের ওপর ডিমের স্বাদ ও পুষ্টিমূল্য নির্ভর করে। রান্নার ফলে সব আকারেরই খাদ্য উপাদান একটু হলেও নষ্ট হয়ে যায়। তবে ডিমের খাদ্য উপাদান বিশেষ নষ্ট হয় না। রান্নার ফলে ডিমে বিদ্যমান থায়ামিন এবং রাইবোফ্লাভিনের সামান্য অংশ নষ্ট হয়। রান্নার সময় খেয়াল রাখতে হবে ডিমের সাদা অংশ এবং কুসুম যেন জমাট বাঁধে কিন্তু শক্ত হয়ে না যায়। অনেকেই আছে শখ করে, বাজি ধরে বা মনে করে যে কাঁচা ডিমে ভিটামিন বেশি প্রভৃতি ভেবে কাঁচা ডিম খেয়ে ফেলে। এটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর কারণ এতে স্যালমোনেলা নামক ব্যাক্টেরিয়া থাকে যা ডিমকে দূষিত করে। এরূপ দূষিত ডিম খেলে ডায়রিয়া, পেটের অসুখ দেখা দিতে পারে |
মেদ কমাতে ডিমের সাদা অংশ:
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ওবেসিটির এক জরিপে দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন সকালে দুটো ডিমের সাদা অংশ দিয়ে নাস্তা সেরেছে, তাদের চর্বি কমেছে অন্যদের তুলনায় ৩৪ শতাংশ বেশি। কারণ, ডিমের সাদা অংশ উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। তাই এটা খাওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই হজম প্রক্রিয়ার গতি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। আর হাই-প্রোটিন খাবার এমনিতেই চর্বি গলিয়ে দেয়। খানিকটা চিন্তার বিষয় হলো, ডিমের সাদা অংশে সোডিয়ামের পরিমাণ খানিকটা বেশি। তাই বেশি বেশি খাওয়ার আগে পুষ্টিবিদের পরামর্শ জরুরি।