মানব কল্যাণে ভেটেরিনারিয়ানদের গুরুত্ব

প্রাচীনকাল থেকেই ভেটেরিনারি শিক্ষা সারা বিশ্বের মানব কল্যাণে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। মানুষের প্রয়োজনে আবিষকৃত ঔষধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, রোগ প্রতিষেধক টিকা এবং প্রতিকারের উপায় বের করতে ভেটেরিনারিয়াদের অবদান উল্লেখযোগ্য।


পৃথিবীতে প্রাতিষ্ঠানিক ভেটেরিনারি শিক্ষার ইতিহাস খুব বেশিদিনের নয়। প্রায় সাড়ে ৩’শ বছর আগে ফ্রান্সের লিয়ন শহরে ১৭৬৬ সালে পৃথিবীর প্রথম ভেটেরিনারি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। আমাদের এই উপমহাদেশে ভেটেরিনারি শিক্ষা চালু হয় ১৭৯০ সালে। ১৯৪৭ সালে বাংলাদেশের কুমিল্লায় প্রথম ভেটেরিনারি কলেজ স্থাপিত হয়।

ভেটেরিনারি সায়েন্স বিজ্ঞানের সেই শাখা যেখানে গৃহপালিত প্রাণিসম্পদ (গবাদিপশু,হাঁস-মুরগি ইত্যাদি) এর এনাটমি ফিজিওলজী, ব্রিডিং, ফিডিং, স্বাস্থসম্মত ব্যবস্থাপনা, প্যাথলজী, রোগবালাই ও ক্ষতের চিকিৎসা এবং জেনেটিক রোগ প্রতিরোধসহ মাংস ও মাংসজাত খাদ্য উৎপাদন এবং তাদের বিজ্ঞানসম্মত প্রজনন কৌশল সন্নিবেশিত।

ইতিহাস থেকে জানা গেছে, ১৯৯৫ অষ্টেলিয়ার স্টেট ভেটেরিনারি অফিসার পিটার সি. ডোর্হাটী যৌথভাবে রোফ লিংকারনাজেল এর সাথে মেডিসিনে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। শরীরে ইমিউন সিস্টেম ‘মেজর হিসটোকমপ্যাটিবিলিটি কমপ্লেক্স ’ ব্যবহার করে কিভাবে ভাইরাস আক্রান্ত কোষকে সনাক্ত করা যায় সেটি  তারা নির্ণয় করেন।

মানুষের সুস্থাস্থের জন্য প্রাণিসম্পদের সুস্থ্যতা প্রয়োজন সবার আগে। কেবল মানবদেহে সংক্রমিত হয় এরকম প্রায় ৭৫% রোগের জীবাণু আসে পশুপাখি থেকে। মাঝেমাঝেই রেবিস, বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু, নিপা ভাইরাস সহ অনেক রোগ মহামারী আকারে দেখা দেয়। উন্নতদেশে মানবকল্যাণে ভেটেরিনারিয়ানরা এইসব রোগের উপর গবেষণা করছে। এপর্যন্ত যতগুলো টিকা আবিষকৃত হয়েছে তার সবগুলোই প্রাণীসম্পদের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল।

গবেষক ভেটেরিনারিয়ানরাই অনকোভাইরাস (Oncoviruses), সালমনেলা স্পেসিস (Salmonella species), ব্রুসেলা স্পেসিস (Brucella species), সহ অনেক রোগের জীবাণু সনাক্ত এবং আলাদা করেন। ভেটেরিনারিয়ানরাই বটুলিজম (Botulism) রোগের জীবাণু চিহিৃত করেন। ভেটেরিনারিয়ানরা একটি এন্টিকোয়াগুলেন্ট (Anticoagulant) আবিষ্কার করেন যেটি হৃদরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। তারা মানুষের জন্য কিছু অস্ত্রপাচার কৌশলও আবিষ্কার করেন।

বাংলাদেশে থেমে নেই প্রাণিসম্পদ নিয়ে গবেষণা। বাংলাদেশ একটি জনবহুল অনুন্নত দেশ।আমাদের দেশে গবাদিপশুর সংখ্যা প্রায় ২কোটি ৮০ লক্ষ। ১৮কোটি জনগণের এই দেশে পশুপাখির সাথে মানুষের সংস্পর্শ খুব সহজেই হয়ে থাকে। প্রাণীসম্পদ তথা মানবকল্যাণে দক্ষ ভেটেরিনারিয়ান তৈরীর লক্ষ নিয়ে বাংলাদেশে এপর্যন্ত ৯টি ভেটেরিনারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশে  ভেটেরিনারিয়ানদের সাথে মেডিক্যাল ডাক্তারদের সমন্বয় নেই বললেই চলে।

ভেটেরিনারিয়ানদের সাথে মেডিক্যাল ডাক্তারা সমন্বয় সাধন করে কাজ করলেই হতে পারে প্রাণিসম্পদ তথা মানবসম্পদের কল্যাণ।

লেখকঃ মোঃ আব্দুর রহমান

আমি বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটেরিনারি সায়েন্সে অধ্যয়নরত।

এটাও দেখতে পারেন

বিভিএ’র নবনির্বাচিত কমিটির বিগত এক মাসের অর্জন

এক মাস পূর্ণ করলো বিভিএ ২০১৭-২০১৮ কমিটি। কেমন ছিলো এই এক মাসের অগ্রযাত্রা ? কী …

৩ মন্তব্য

  1. Thanks for your good post.Recently we observed that some medical students have complete their ms in veterinary university.Its really good sign for us..

  2. ডাঃ তায়ফুর রহমান (এডমিন)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.