ছাত্রত্ব থাকা অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরি পাওয়ার অনুভুতিটা ছিল অনেক আনন্দের । এর পর মাস্টার্স শেষ হল, শুরু হল আসল শিক্ষকতার জীবন । ভাল-মন্দ মিলে ভালই কাটতেছিল এই জীবন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মানেই পিএইচডি, পোষ্ট ডক্টরেট করতে হবে দেশের বাইরে । এগুলো আবার নাকি ইংরেজি ভাষী দেশে হলে ভালো। সবার মুখে মুখে কথা গুলো শুনতে শুনতে লিখা শুরু করলাম। সাথে সাথে আন্তর্জাতিক ইংরেজি ভাষা টেস্টিং সিস্টেম এর জন্য প্রস্তুতি। এতিমধ্যে ওসাকা ইউনিভার্সিটির জাপানী এক প্রফেসর রাজি হল জাপান সরকার কর্তৃক পিএইচডি বৃত্তি (MEXT) এর জন্য সুপারিশ করতে। অন্যান্য ইংরেজি ভাষী দেশে থেকে সারা পাওয়া গেলেও MEXT এর জন্য আবেদন করলাম কারন এই সুযোগটিই সবার আগে ছিল এবং সময়ও ছিল খুব কম বিধায় আবেদনটা খুব ভালোভাবে করতে পারলাম না। কিন্তু তারপরেও কেন যেন মনে হচ্ছিল বৃত্তিটা হয়ে যাবে। আশায় দিন গুনতেছিলাম………।
জীবনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বিয়ে, সেটিও হয়ে গেল এই সময়ের মধ্যে । বিয়ের ক্ষেত্রেও পেয়ে গেলাম আশার চেয়ে অনেক বেশি। সেও মেক্সট এ আবেদন করেছিল এবং জার্মানিতে জার্মান একাডেমিক এক্সচেঞ্জ সার্ভিস (DAAD) এ আবেদন করেছিল। ওর ফলাফল আগে হল এবং দু-ক্ষেত্রেই ইতিবাচক ফলাফল। কি করবে ভেবে পাচ্ছিলনা। অবশেষে আমারও জাপানের পিএইচডি বৃত্তি টা হয়ে গেল।
লেখা-পড়া শেষ নাহতেই চাকুরি, বিয়ে, পিএইচডি বৃত্তি, জীবনের প্রায় সবকিছু পেয়ে গেলাম খুব সহজেই । এযেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি ………।
এত আনন্দের মধ্যে থেকেও সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না দুইজনে কি করবো। কারন জাপানে গেলেও দুজনের দুই বিশ্ববিদ্যালয়, দূরত্বও অনেক। নিজেদের মতামতের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিলাম দুজনেই জাপান যাবো।
সব কিছুই ঠিক হয়ে গেল পহেলা অক্টোবরে জাপান যাচ্ছি । প্রচন্ড ভালোলাগার মাঝেও শেষের দিকে একটু খারাপ লাগতেছিল এই ভেবে যে, সবাইকে ছেড়ে যেতে হবে।
যাইহোক জাপানে আসার প্রথম দিন থেকেই একা এবং মনে হতে লাগল এ কোথায় আসলাম সবাইকে ছেড়ে। আপনজনের কারো সাথে কথাটা পর্যন্ত বলতে পারছিনা, দেখাতো দুরের কথা। মনে হতে লাগল দেশের সকল স্মৃতি । কেন যে দেশের মানুষ গুলো আপনজনকে ছেড়ে বিদেশে আসে। আমার দেশটা তো অনেক ভাল। দেশে কি পিএইচডি করতে পারতাম না।
তারপর আবার আপনজনকে ছেড়ে প্রথম ঈদ। কান্না থামাতে পারিনা। ভাবতেই বুক ফেটে সুধু কান্না আসে। ঈদের নামায পড়লাম খুবই কষ্টে।
খুব স্বল্প সময়ের জন্য হলেও অনেক কষ্টে প্রিয় মানুষটার সাথে একবার দেখা করে আসলাম। বেশি সময় ধরে থাকার সুযোগ নেই কারন জাপান বলে কথা, সবাই রোবোটের মত রাতদিন কাজ করে। আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যত্বয় হবার সুযোগ নেই।
তবে জাপানের মানুষ গুলো খুবিই ভালো এবং প্রচন্ড সহযোগিতা পরায়ন । একটা সাহায্য চাইলে নিজের কাজ ফেলে রেখে কাজটা করে দিবে। করে দিতে সময়ও লাগাবে অনেক। কারন তার মত করে জাপানিজ বলতেই থাকবে, আমি হা করে তাকিয়ে থাকি এবং ভাবি সাহায্যটা না চাইলেও পারতাম। তখন মনে হয় বলেই বিপদে পরেছি। কিন্তু যখন কাজটা করে দেয় তখন ভালো লাগে। এখন একটু একটু করে সবকিছু সামলিয়ে নিচ্ছি। তারপরও একটা কথা খুব মনে পড়ছে, আরও কিছুদিন পরে দেশের বাইরে আসলে, দেশে অন্তত আরেকটি ঈদে সবার সাথে থাকতে পারতাম ।
জাপানের কথা যদি বলতে হয়, তাহলে এক কথায় এখানে সবকিছুই অনেক অনেক অনেক…… সুন্দর, নিয়মতান্ত্রিক এবং বসবাসের জন্য যোগ্য একটি শহর। বিস্তারিত নাহয় অন্যদিন বলবো।
একটি মন্তব্য