একটি সতর্কতা

কোরবানির জন্য যারা মোটাতাজা দেখে গরু কিনতে চান, তাদের জন্য সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।


তারা বলছেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা ওষুধ ব্যবহার করে শরীরে পানি জমিয়ে কোরবানির আগে বিক্রির জন্য গরুকে মোটা করে তোলে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।

কৃত্রিমভাবে মোটা করা এসব গরু কীভাবে সনাক্ত করা যায়, তার কয়েকটি উপায়ও বাতলে দিয়েছেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন ও ভেটেরিনারি সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক আনোয়ারুল হক বেগ।

আগামী ১৬ অক্টোবর দেশে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ উদযাপন হবে। এই সময়ে অর্ধ কোটি গরু জবাই হবে। পশুসম্পদ অধিদপ্তরের হিসেবে, গত বছর ঈদে ৫৭ লাখ পশু জবাই হয়েছিল, যার অধিকাংশই গরু।

ঈদের আগে কয়েকদিন ধরে সারাদেশে অস্থায়ী পশুর হাটে চলে গরু কেনা-বেচা। আর লাভের আশায় অনেক ব্যবসায়ী স্টেরয়েড দিয়ে গরুকে মোটা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্টেরয়েড মূলত হাঁপানির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এ জাতীয় ওষুধ যেমন- ডেক্সামেথাসন বা ডেকাসন, বেটামেথাসন ও পেরিঅ্যাকটিন অতিরিক্ত মাত্রায় দিলে গরুর কিডনি ও যকৃতের কার্যকারিতা নষ্ট হওয়ায় শরীর থেকে পানি বের হতে পারে না।

এ কারণে শোষিত হয়ে পানি সরাসরি গরুর মাংসে চলে যায়। ফলে গরুকে মোটা দেখায়।

অধ্যাপক আনোয়ারুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গরুকে নিয়ম মাফিক খাদ্য দিয়ে মোটা-তাজা করলে তার মাংস ক্ষতির কারণ হয় না। কিন্তু স্টেরয়েড দিয়ে মোটা করার গরুর মাংস ক্ষতিকর।

স্টেরয়েড খাওয়ানো গরু চেনার উপায় কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব গরু অসুস্থতার কারণে সবসময় নিরব থাকে। ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না। খাবারও খেতে চায় না।

“এসব গরুর পেছনের দিকে উরুর পেশীবহুল জায়গায় আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিলে তা উল্লেখযোগ্যভাবে দেবে যাবে। কারণ বাইরে থেকে মাংস মনে হলেও এখানে মাংসের সঙ্গে ব্যাপক পরিমাণে পানি থাকে।”

অধ্যাপক আনোয়ারুল হক বলেন, কৃত্রিমভাবে মোটা করা এসব গরুকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জবাই না করলে মারা যায়।

এসব গরুর মাংস খাওয়ার অপকারিতা তুলে ধরে তিনি বলেন, এতে মানুষের ফুসফুস ও যকৃতে পানি জমে, কিডনি দুর্বল হয় ও হৃদপিণ্ডের ক্ষতি হয়।

পশুপালন বিষয়ক এই অধ্যাপক বলেন, বেশি লাভের আশায় অনেক কৃষক পশু চিকিৎসকদের পরামর্শ না মেনে গরুকে স্টেরয়েড দেন। অনেক ক্ষেত্রেই হাতুড়ে চিকিৎসক কিংবা বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্ররোচনাও থাকে।

ঈদের তিন মাস আগে থেকেই এই অসাধু প্রক্রিয়া শুরু হয় বলে তিনি জানান।

দেশের সবচেয়ে বেশি গরু মোটাতাজা করা হয় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায়। এই উপজেলায় প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক ষাঁড়, বলদ ও বকনা রয়েছে মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ায়।

শাহজাদপুরের গরু পালনকারী মকবুল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত বছর একজন প্রতিবেশীর কয়েকটি গরু দ্রুত মোটা হওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করেন তিনি এবং ওই গরুগুলো বেশ ভালো দামে বিক্রি হয়েছিল।

“পরে তার (প্রতিবেশীর) কাছে জানতে পারি, এক ধরনের বড়ি খাওয়ালে গরু মোটা হয়। তার দেখাদেখি আমিও ওই বড়ির পাতা আমার গরুকেও খাওয়াচ্ছি। এতে গরু শরীর মোটা হচ্ছে।”

মাসখানেক ধরে নিয়মিত এই বড়ি খাওয়াচ্ছেন বলে মকবুল জানান। এর ক্ষতিকর দিক অজানা হলেও গরু নিস্তেজ হওয়ার বিষয়টি নজরে এসেছে তার।

এসব বড়ি কোথায় পান- জানতে চাইলে মকবুল বলেন, “গ্রামের মুদির দোকানেই পাওয়া যায়। দেশীয় ও ভারতীয় দুই ধরনের ওষুধই পাওয়া যায়।”

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল হাই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা কৃষকদের নিয়মমাফিক উপায়ে মোটাতাজাকরণে উদ্বুদ্ধ করলেও অনেকে দ্রুত ফল পাওয়ার আশায় গরুকে বড়ি খাওয়ায়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় পশুপালন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোসাদ্দেক আলী বলেন, গরু মোটাতাজা করতে স্টেরয়েড এবং বিভ্ন্নি হরমোন গো-খাদ্যের সঙ্গে বা অন্যভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে ঠিক। তবে তা মংস্য ও পশুখাদ্য আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

লেখকঃ ডা.মু. সাইদুজ্জামান(পলাশ)

Regional Sales Manager,Century Agro Ltd;Ex-Area Executive,ACI Godrej,Ex-Farm Executive,Kazi Farms Group;Ex-Manager(Technical);Prime Care&Krishi Pannya Feed;Ex-Livestock Officer,RDRS Bangladesh(CLP),Ex-Trainer,UDDIPON;DVM from BAU , Present address:Santinagar,Joypurhat. Permanent address: Islambag (chini masjid); saidpur; nilphamari, E-mail: tasaidvm81@gmail.com, Cell phone-01755635268&01190909775

এটাও দেখতে পারেন

What heat stress does in poultry

যে ৪ উপায়ে বিটেইন (Betain) হিট স্ট্রেস মোকাবিলায় কাজ করে

হিট স্ট্রেস (heat stress) গবাদিপশু ও পোল্ট্রি খামারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা, যা ওজন কমায়, …

একটি মন্তব্য

  1. অসংখ্য ধন্যবাদ এরকম একটা সময় উপযোগী আর্টিকেল লেখার জন্য। তবে এরকম গরু চিনার আরও কয়েকটি উপায় যদি লিখতেন তাহলে আরও উপকার হতো আমাদের জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.