যে ঝড়ে ডিপ্লোমা স্থগিত হলো সেই ঝড়ে এবার উড়িয়ে দিতে সমস্ত বাধা

প্রিয় ভেটেরিনারিয়ানগণ, আন্দোলনের যে শক্তি আপনারা দেখিয়েছেন, তার জন্য প্রথমেই আপনাদেরকে রক্তিম অভিনন্দন জানিয়ে আজকের আর্টিকেল শুরু করছি। পেশার মান আর আত্ম-সম্মান রক্ষার সংগ্রামে যারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তাঁদের প্রত্যেকের জন্য রইলো সশ্রদ্ধ সালাম আর নিরন্তর শুভেচ্ছা। পেশাগত কারণে ভীষণ ব্যস্ত থাকায় অনেক দিন লেখা হয়ে ওঠেনি। আজ সময় করে শত ব্যস্ততার মধ্যেও লিখতে বসলাম। সংশ্লিষ্ট সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে যেভাবে সবাই আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েছিল তার সামনে মাথা নোয়ালো প্রশাসন। তবে এই আন্দোলনকে সফলতায় রুপান্তরিত করতে যারা যারা সহযোগীতা করেছেন, উদ্দ্যোগী ভূমিকা নিয়েছেন তাদেরকে জানাই প্রাণঢালা অভিনন্দন। আমি দেখেছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে কি ব্যাপক প্রচারণা চলেছে; দেখেছি কি ভীষণ আগুন-বাষ্প একেকজনের  লেখনিতে; প্রচন্ড ঘৃণা আর অভিমান তাদের অগ্রজ ভাইদের মহান(!) কার্যকলাপে । যে অগ্নি-বাষ্প বুকে ধারন করে মিছিলে মিছিলে কাঁপিয়ে দিয়েছিল একেকটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন, সেই অগ্নি-বাষ্পে পুড়ে ছাই হয়েছে প্রতিপক্ষের বিষ-নীল আশা। বাকৃবি থেকে মেহেদী হাসান সিয়াম -এর লেখায় সবুজ বাংলাদেশ২৪ ডট কম প্রকাশ করে:


বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা ভেটেরিনারি সাইন্স বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স চালুর প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে বুধবার সকাল থেকে ক্লাস বর্জন করেছে। জানা যায়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ভেটেরিনারি সাইন্স বিষয়ে ৩ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্স চালুর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর প্রায় এক হাজার ভেটেরিনারি ডাক্তার বের হয়। দেশের প্রাণিসম্পদ খাতে এই নব্য ডাক্তারদের কর্মসংস্থানের চাহিদা পূরণ হয় না ভেটেরিনারিয়ানদ ের ধারণা এমতাবস্থায় নতুন করে ডিপ্লোমা কোর্স চালু করা হলে কর্মসংস্থান সংকট আরও বাড়বে । এরই প্রেক্ষিতে বুধবার সকাল ১১ টার দিকে ক্লাস বর্জন করে তারা এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। এরপর তারা ময়মনসিংহ জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর অবরোধ করে। এ সময় জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অনুপস্থিত  থাকায় শিক্ষার্থীরা তাঁর কার্যালয়ে স্মারকলিপি জমা দেয়। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের প্রসঙ্গে বাকৃবি ভেটেরিনারি অনুষদ ছাত্র সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মানিকুজ্জামান মানিক জানান, আমরা ভেটেরিনারি ছাত্র সমাজ বাংলাদেশে ভিত্তিহীন, অপ্রয়োজনীয় ডিপ্লোমা কোর্স চালুর প্রক্রিয়া প্রত্যাহার করা না হলে আরো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।

সবুজ বাংলাদেশ২৪ ডট কম সিভাসুতে আন্দোলনের খবর জানিয়ে লিখেছিল- “ডি.ভি.এম ডিগ্রীর উপর তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স চালুর প্রতিবাদে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়। আজ সকাল থেকে তারা বিভিন্ন ক্লাসে গিয়ে প্রতিবাদের জন্য শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য বলে। আজ বিকেলের সিদ্ধান্তের পর তারা চুড়ান্ত আন্দোলনের ডাক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। শিক্ষার্থীরা সকালে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণি সম্পদ অফিসারের কার্যালয়ে স্বারকলিপি পেশ করে। এরপর শিক্ষার্থীরা সরাসরি ডি.জি বরাবর মোবাইল ফোনে এস.এম.এস দিয়ে ডিপ্লোমা কোর্স বাতিল করতে অনুরোধ করে। অন্যথায় আন্দোলনে নামার কথা জানায়। সময় শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ পরিলক্ষিত হয়

আজকের বরিশাল : পবিপ্রবি’র আন্দোলনের খবর প্রকাশ করে এভাবে“ভেটেরিনারিতে “ডিপ্লোমা কোর্স “ চালুর প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে পবিপ্রবির শিক্ষাথীদের বরিশালে ডিএলও অফিস ঘেরাও,স্মারকলিপি প্রদান পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যলয়ের এনিমেল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের (বরিশাল ক্যাম্পাস) ভেটেরিনারি স্টুডেন্ট’স এসোসিয়েশন (ভিএস এ) এর পক্ষ হতে গতকাল বরিশাল জেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা ডা মোঃআব্দুল জব্বার এর নিকট প্রানিসম্পদ অধিদপ্তরের আওতায় ভেটেরিনারিতে “ডিপ্লোমা কোর্স “ চালুর প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করা হয় । এ সময় ভেটেরিনারি স্টুডেন্ট’স এসোসিয়েশন (ভিএস এ) এর ভিপি মোঃখলিলুর রহমান, এ ভিপি রকিবুল ইসলাম,মোঃ রিয়াজ আল মাহমুদ,সাধারন সম্পাদক মোঃমুস্তাফিজুর রহমান পাপ্পু, যুগ্ম সধারন সম্পাদক মহসিন শিকদার ,সাংগঠনিক সম্পাদক পপি হাজরা,দপ্তর সম্পাদক দেবাশিষ বিশ্বাস, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক প্লাবন পাল সহ প্রায় শতাধিক শিক্ষাথী উপস্থিত ছিলেন । এসময় ছাত্র নেতারা অবিলম্বে প্রানিসম্পদবিরোধী ভিত্তিহীন এই “ডিপ্লোমা” কোর্স চালুর প্রক্রিয়া চিরতরে বন্ধ করার আওহবান করেন । তারা আরোও হুশিয়ারি করে বলেন যদি এই কোর্স চালুর বিষয়ে কেহ এগিয়ে আসেন তাহলে কঠোর জবাব দিবে ছাত্রসমাজ । এ সময় ছাত্র-ছাত্রীদের চাপের মুখে জেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা ডা মোঃআব্দুল জব্বার প্রানিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও এই ডিপ্লোমা কোর্স চালু করার প্রজেক্টের পিডি ড .আমিনুল ইসলাম এর সাথেও কথা বলেন এবং ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি সরাসরি বলেন । উল্লেখ্য এর আগের বিক্ষুব্ধ ছাত্র-ছাত্রী বরিশাল জেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তার ্কার্যালয় ঘেরাও করেন ।

কেউ কেউ আবার আমরণ অনশনে যেতেও প্রস্তুত ছিলেন, একজন তার আবেগ তুলে ধরেছেন এভাবে “আমরা আন্দোলনে যেতে রাজি আছি। আমরা আশা করি কোন নেগেটিভ রেজাল্ট পাবো না কিন্তু যদিকোন নেগেটিভ রেজাল্ট আসে তাহলে আমরা আমরণ অনশনে যাবো।

আন্দোলনের খবরাখবর এবং ডিপ্লোমা বাস্তবায়ন কার্যক্রমের সংবাদ সঠিকভাবে ভেটেরিনারিয়ানদের মাঝে প্রচার না করায় ক্ষোভ প্রকাশিত হয়েছে “বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন(BVA)” এর বর্তমান প্রেস এন্ড পাবলিকেশন সেক্রেটারী ডাঃ মোঃ আসাদুজ্জামানের প্রতিও। কাউকে ছেড়ে কথা কয়নি এই প্রজন্মের ভেটেরিনারিয়ানরা। দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিভিএ প্রেসিডেন্ট ড. আক্তার স্যার ও ডিএলএস’র ডিজি ডাঃ মোসাদ্দেক-এর । ক্ষোভ ভরা ভাষায় একজন লিখেছেন: “DLS এর প্রত্যেকটি পাচাটা ভেটদের ( এদেরকে ভেট বলতে ঠোট কাঁপে সাথে লিখতে গেলে কাঁপে হাত ) বিরূদ্ধে একশনে যেতে হবে। কুকুর এদের চেয়ে ভালো। নিজের স্বার্থের জন্য পেশা আর ডিগ্রীর কথা একটুও ভাবে না। ডিপ্লোমা নিয়ে সচিব এবং যুগ্নসচিব যদি ছেলেখেলা করে তাহলে এর পরিনাম হবে ভয়াবহ। আর এর সাথে ডাঃ মোসাদ্দেকের নূন্যতম সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তাহলে মোসাদ্দেককে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেট শিক্ষার্থীদের হাতে ন্যস্ত করা হবে। ওরাই দেখিয়ে দিবে ভেট পাওয়ার ( VET POWER)। তারপর বিভিএ প্রেসিডেন্ট ড. আক্তার স্যার উনি কোথায় ? উনি বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী বাকৃবির ভিসি এবং ভেট অনুষদের ডীন হিসেবে যথেষ্ট সম্মান করি। কিন্তু ভেটেরিনারির দুর্দিনে উনার নিশ্চুপ থাকাটা একদিকে যেমন নিতান্তই হতাশার অন্যদিকে তেমনি উনার সাংগঠিক দুর্বলতার অন্যতম প্রতিফলন। এখনোও সময় আছে বিভিএর প্রেসিডেন্ট থেকে পদত্যাগ করতে পারেন। নাহলে হাজার হাজার ভেটদের বিপ্লবের সামনে ঠিকতে পারবেন না। আর বিভিএ চলতি কমিটির অন্যান্য সদস্যদের বলছি, আপনাদের মধ্যে অনেকের স্থবিরতা সাধারন ভেটদের হতাশ করছে।

হতাশা ছিল VS, ULO , DLO – এদের ভূমিকা নিয়েও-“VS, ULO , DLO আপনারা জবে ঢুকার পর থেকেই শুধুমাত্র হ্যাঁ শুধুমাত্র প্রমোশনের জন্য ভেট প্রফেশনের দুর্দিনেও আপনাদের সহযোগিতা পাওয়া যায়না । নাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ডিপ্লোমা বাতিলের দাবিতে ডিএলও অফিস ঘেরাও করতে হতো না । এর আগেই আপনারা কর্মবিরতি দিয়ে সচিব বরাবর ই-মেইলে প্রতিবাদ জানাতে পারতেন।

ক্ষোভ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়েও-“বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। ভেট শিক্ষার্থীদের বলছি আপনারা অনেক একাডেমিক একশন (Academic Action) এর ভয়ে থাকেন। একটা কথা মনে রাখবেন, আপনারা সবাই যদি একতাবদ্ধ থাকেন, তবে কতজনের বিরূদ্ধে একাডেমিক একশন নেয়া হবে ?? ” ব্যাক্তিগতভাবে আমার সাথে কেয়েকজনের কথা হয়। তারা জানায়, এবার যদি কোন শিক্ষক বেশি বাড়াবাড়ি করে, যদি আন্দোলনের পথে বাধা হয়ে দাাঁড়ায় তবে তাঁর বিরুদ্ধেও একশান নেয়া হবে” কি একশান নেয়ার পরিকল্পনা করছো, জানতে চাইলে শুধু বলে, “এবার কারো নিস্তার নেই!! অনেক সহ্য করেছি”।

এবারের আন্দোলনে একটা ব্যাতিক্রমি দিক আমার দৃষ্টি কেড়েছে, আর তা হলো ডিএলও অফিস ঘেড়াও করা। আমার জানা অতিতের মধ্যে এধরনের কার্যক্রম এবারই প্রথম। আমি সবসময়ই মনে করি আমাদের আন্দলনের সাথে অবশ্যই ফিল্ড পর্যায়কে একিভূত করতে হবে। নৈতিক সমর্থন গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে, প্রয়োজন হলে তাদেরকে কর্ম-বিরতিতে যেতে হবে। আমরা যে পাবলিককে সেবা দিই, সেই পাবলিককে জানতে হবে আমরা কি চাই। জন-সমর্থন নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। কেননা, সরকার নিশ্চই জন-সমর্থনের বাইরে কিছু করবে না। আর তেমনটা করতে পারলেই আমরা পাবো কাঙ্খিত সাফল্য, যেমনটা এবার পেয়েছি।

ডিপ্লোমা স্থগিতের এই শক্তি আর অনুপ্রেরণা নিয়ে আমাদের এবার এগিয়ে যেতে হবে আরো বহুদূরে। তবে তার জন্য সবার আগে “ঘরের শত্রু ” যেন বিভিষণ হয়ে দাঁড়াতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।

 

লেখকঃ ডাঃ তায়ফুর রহমান

ডাঃ তায়ফুর রহমান; ডিভিএম, এম এস, এমপিএইচ ; ন্যাশনাল টেকনিক্যাল এডভাইজার-এপিডেমিওলজি, জাতিসঙ্ঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা, ঢাকা; ব্লগ এডমিনিষ্ট্রেটর, ভেটসবিডি

এটাও দেখতে পারেন

বিভিএ’র নবনির্বাচিত কমিটির বিগত এক মাসের অর্জন

এক মাস পূর্ণ করলো বিভিএ ২০১৭-২০১৮ কমিটি। কেমন ছিলো এই এক মাসের অগ্রযাত্রা ? কী …

একটি মন্তব্য

  1. ভেটদের উপর এত ঝড় কেন আসে বারবার? এটা কার দোষ ? ভেটদের না নিজেদের না ভাগ্যের ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.