মুরগীর রোগ পরিচিতিঃ পর্বঃ০৫ ঃ বার্ড ফ্লু /এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা



বার্ড ফ্লু /এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা মুরগির একটি মারাত্বক রোগ । সারা বিশ্বে পোল্ট্রির জগতে এই রোগ ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে । এই রোগে মৃত্যুর হার ১০০% পযন্ত হতে পারে। বতমান সময়ে এক আতংকের নাম বার্ড ফ্লু /এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা । প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয় এই রোগের জন্য। বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অন্তরায় এই রোগ। এই রোগ মুরগী হতে মানুষে ছড়িয়ে যায়, তাই একে জোনেটিক ডিজিজ ও বলে ।

বার্ড ফ্লু /এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার ইতিহাসঃ

বার্ড ফ্লু /এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রথম দেখা যায় আজ থেকে ১০০ বছরের আগে ইতালীতে।

তবে কাছাকাছি সময়ের মধ্যে মহামারি আকারে দেখা যায় ১৯৯৩ সালে মেক্সিকোতে , ১৯৯৭ সালে হংকং এ, ১৯৯৯ সালে ইতালী তে , নেদারল্যান্ডে ২০০৩ সালে, দক্ষিণ পুব এশিয়াতে ২০০৩ সালে ।

এখন ও পযন্ত বাংলাদশে উচ্চমাত্রার বার্ড ফ্লু /এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাস পাওয়া যায় নাই।

মানুষের শরীরে প্রথম এই ভাইরাস পাওয়া যায় ১৯৯৭ সালে হংকং এ , এতে ০৬ জন মানুষ মারা যায়। এখানে H5N1 ভাইরাসের উপস্থিতির প্রমান পাওয়া যায় এবং মুরগী হতে সংক্রমিত হবার খবর পাওয়া   যায়।

 

বার্ড ফ্লু /এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা সম্পকে কিছু গুরুত্বপুণ তথ্যঃ

১।বার্ড ফ্লু /এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি ভাইরাস জনিত রোগ। এই রোগের জন্য দায়ী ভাইরাস হল টাইপ এ স্ট্রেইন ইনফুয়েঞ্জা ভাইরাস।

২।এই ভাইরাস যখন মারাত্বক পযায়ে চলে যায় তখন একে “ফাউল প্লেগ” বলে।

৩।এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসগুলো এনভেলপড ভাইরাস যেখানে সিঙ্গেল স্ট্রেইন্ড সেগ্মেন্টেড আর এন এ জিনোম থাকে ।

৪।এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা Orthomyxoviridae  ফ্যামিলিভুক্ত ভাইরাস।

৫।ভাইরাসের নিউক্লিওপ্রোটিন ও ম্যাট্রিক্স প্রোটিন এন্টিজেন এর ভিন্নতার উপর ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।  টাইপ-এ, টাইপ- বি, টাইপ-সি । এর মধ্যে টাইপ-এ ভাইরাস পরিবশে পাওয়া যায়। এবং টাইপ- বি, টাইপ-সি  ভাইরাস শুধুমাত্র মানুষে পাওয়া যায়।

৬। টাইপ এ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস কে হেমাগ্লুটিনিন ও নিউরামাইনিডেজ এর এন্টিজেনের ভাইরাসের উপরিভাগে অবস্থানের উপর নিভর করে পুনরায় উপভাগে ভাগ করা যায়। এখানে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস টাইপ এ এর ১৫ টি হেমাগ্লুটিনিন ও ০৯ টি নিউরামাইনিডেজ উপভাগ আছে।

৭। এইচ ৫,(H5),এইচ৭(H7) উচ্চ রোগ সৃষ্টিকারী উপভাগ ।

বার্ড ফ্লু /এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগে আক্রান্ত হয় যে সব পাখি

গৃহপালিত পাখি, যেমন হাস, রাজহাস, টারকি, জল পাখি, কোয়েল, মুরগী , ফিজ্যান্ট আক্রান্ত হতে পারে।

 

বার্ড ফ্লু /এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ কিভাবে ছড়ায়?

 

১।সাধারনত জলজ পাখির মাধ্যমে ছড়ায়, এগুলোকে প্রাকৃ্তিক আধার বলা হয়ে থাকে ।

২।আক্রান্ত মুরগীর লিটার,বিষ্টা,খাদ্য, পানির মাধ্যমে ছড়ায়।

৩।আক্রান্ত মুরগির খামারে ব্যাবহার করা বিভিন্ন যন্ত্রপাতি , জামা কাপড়, জুতার মাধ্যমে ছড়ায়।

৪।এই ভাইরাস বায়ুর মাধ্যমে ছড়ায় ।

৫। আক্রান্ত মুরগির সংস্পশে আসলে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে, তবে মানুষ হতে মানুষে আক্রান্ত হওয়ার এখনো পযন্ত তেমন কোন রিপোট পাওয়া যায় নি ।

 

বার্ড ফ্লু /এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের লক্ষণঃ  

বার্ড  ফ্লু /এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের লক্ষন ভাইরাসের তীব্রতা, প্রজাতি, এবং পাখির বয়সের উপর নিভর করে। এমনকি পরিবেশের কারনেও লক্ষণ পরিবতিত হতে পারে।

 

১। এই রোগ হলে কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই অনেক মুরগী মারা যায়।

২।মুরগী খুব দুবল হয়ে যায়।

৩। খাদ্য গ্রহনে অনীহা দেখা যায়।

৪। মাত্রাতিরিক্ত পানি গ্রহন লক্ষ্য করা যায়।

৫।লেয়ার মুরগির ক্ষেত্রে প্রথমে নরম খোলাযুক্ত ডিম পাড়ে, এবং পরে ডিম পাড়া বন্ধ করে দেয়।

৬।মাথার ঝুটি কালচে রঙ এর হয়ে যায়।

৭।মাথার ঝুটিতে হালকা রক্তবিন্দু থাকতে পারে।

৮।মাথা ফুলে যাবে এবং পানি জমে যেতে পারে।

৯।প্রচুর পরিমানে পানির মত পায়খানা / ডায়রিয়া  দেখা যাবে।

১০। আক্রান্ত মুরগীর চামড়ার পালকহীন অংশে(যেমন- পা)রক্তবিন্দু পাওয়া যাবে।

১১।ব্রয়লারের ক্ষেত্রে এই রোগের লক্ষণ গুলো কম সুস্পষ্ট।

 

 

বার্ড ফ্লু /এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের পোস্ট র্টে রিপোর্টঃ

 

খালি চোখে যা যা দেখা যায়ঃ

১।এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যদি মুরগী হটাৎ মারা যায় তবে তেমন কোণ পরিবর্তন পাওয়া যাবে না।

২।তবে যে সব মুরগী অনেক সময় ধরে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভুগে মারা যায়, সেই সব মুরগীতে অনেক লক্ষন পাওয়া যাবে, যেমন- মাথা ও চামড়ার নিচে পানি জমতে পারে, মাংশপেশিতে জমা রক্ত থাকতে পারে,

৩।হালকা রক্তবিন্দু শরীরের নানা অংশে পাওয়া যাবে, বিশেষত স্বরযন্ত্র, শ্বাসনালী, প্রভেন্টিকুলাস, সিকাল টনসিল,পেটের নিচের চবিতে, এবং স্টানামের ভেতরের অংশে।

৪।সাদা সাদা ক্ষত দাগ/ রক্তবিন্দু পাওয়া যেতেৃ পারে প্লীহা, যকৃত,বৃক্ক,অগ্নাশয়,ওভারি এবং ফুসফুসে ।

৫।বায়ু থুলিতে একজুডেট থাকতে পারে।

কিভাবে বার্ড ফ্লু /এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা  রোগ প্রতিরোধ করবেন ?

১। আক্রান্ত এলাকার সব মুরগী মেরে ফেলতে হবে। যে খামারে এই রোগের আক্রমন দেখা যায়, এই খামারের চারপাশের সব খামারের মুরগী এক সাথে ধংস করতে হবে।

২। খামারের বায়োসিকিউরিটি/জৈব নি্রাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৩।আক্রান্ত এলাকাতে সকল ধরনের পাখির প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে।

৪।শীতের সময়ে জলজ অতিথি পাখিরা যাতে খামারে সংস্পর্শে আসতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

৫।এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস আছে বা এই ভাইরাসের আক্রমন ঘটেছিল এমন দেশ, অঞ্চল, এলাকা হতে কোন প্রকার এক দিনের মুরগীর বাচ্চা, ডিম , খাদ্য বা যে কোন প্রকার পোল্ট্রি সম্পকিত কোন সামগ্রী আনা হতে বিরত থাকতে হবে ।

৬। ক্ষুদ্র, মাঝারী, বৃহৎ সহ সব খামারীদের মধ্যে এই রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান ও সচেতনতা প্রদান করতে হবে।

৭। সব সময় একজন ভাল রেজিস্টার্ড ভেটরিনারিয়ানের পরামর্শ নিতে হবে।

 

লেখকঃ ডা মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান পাপ্পু

I am Kbd Dr.Md.Mustafijur Rahaman Pappu. I have completed Doctor of Veterinary Medicine (DVM) Degree and Master's in Pathology under Faculty of animal science & veterinary medicine of PATUAKHALI SCIENCE & TECHNOLOGY UNIVERSITY( PSTU) My home town is JHENAIDAH . কৃষিবিদ ডা মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান পাপ্পু যুগ্ম সাধারন সম্পাদক, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন (বিভিএ),খুলনা বিভাগ। কার্যনির্বাহী সদস্য, বঙ্গবন্ধু ভেটেরিনারি পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি। সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক, ভেটেরিনারি স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন (ভিএসএ),পবিপ্রবি। সাবেক সহ সভাপতি , বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, পবিপ্রবি শাখা। Mobile -01915 084474. 01771 444402

এটাও দেখতে পারেন

মুরগির লিভারের রোগ: লিম্ফয়েড লিউকোসিস

লিম্ফয়েড লিউকোসিস মুরগীর টিউমার সৃষ্টিকারী ভাইরাস রোগ। এ রোগের ক্ষেএে টিউমার সৃষ্টি হয় এবং রেট্রো …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.