টিকা, মানব কল্যাণে এক অনন্য সৃষ্টি


এক সময়ের প্রাণঘাতী জলবসন্ত ও গায়ে ফস্কা সৃষ্টিকারী গো-বসন্ত  নামের ভাইরাল রোগদ্বয়ের সাথে টিকার আবিষ্কার অতপ্রতভাবে জড়িত।জলবসন্তের টিকা আবিষ্কারের কৃতিত্ত অ্যাডওয়াড জেনার নামের এক ইংরেজ  বিজ্ঞানির যিনি পেশায় ছিলেন একজন চিকিৎসক। তাঁর এই  টিকা আবিষ্কারের মাধ্যমেই টিকার ধারনা বিজ্ঞান সম্মত ভাবে গৃহীত হয়। ১৭৮৮ সাল,  জলবসন্ত  মহামারী রূপ নিয়েছ তাঁর নিজের শহর বার্কলেতে। তিনি তার চিকিৎসা কার্য পরিচালনা করতে গিয়ে একটা বিস্ময় লক্ষ করলেন যে, যেসব মানুষ  কোন না কোন সময় গোবসন্ত দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন তারা আর জলবসন্ত রোগে আক্রান্ত হন না। তিনি ধারনা করলেন গোবসন্তের জীবাণুর মধ্যে  জলবসন্তকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আছে।তিনি নেমে পড়লেন তার নিছক ধারনাকে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করার কাজে। কিভাবে করবেন এই পরীক্ষা? অক্লান্ত চেষ্টায় কেটেছে প্রায় বছর, ১৭৯৬ সালে প্রথম সুযোগ আসে যখন সারাহ নামে এক গোয়ালিনী হাতে গো-বসন্তের ফস্কা নিয়ে চিকিৎসার জন্য  আসে জেনারের কাছে।জেনার ঐ মহিলার হাতের ফস্কা থেকে কিছু তরল  পদার্থ সংগ্রহ করেন এবং জলবসন্ত  আক্রান্ত অন্য রোগী থেকে কিছু তরল  পদার্থ সংগ্রহ করেন।জেনারের অনুরোধে পিপ নামে এক গরীব কৃষক তার ছেলে জেমসকে তাঁর হাতে তুলে দেন এই ভয়ংকর পরীক্ষা চালনর জন্য।  জেনার ৮ বছরের ছেলে জেমসের বাহুতে ছিদ্র করে কিছু  গোবসন্তের জীবাণু ঢুকিয়ে দেন তার শরীরে। ছেলেটি প্রথমে গোবসন্ত দ্বারা আক্রান্ত  হয় এবং পরে সুস্ত হয়ে উঠে। জেনার ছেলেটির দেহে এবার জলবসন্তের জীবাণু  দিলেন।কি আশ্চার্য! জেমস জলবসন্তের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলো না। জেনার হাতেনাতে পেয়ে গেলেন তার ধারনার ফলাফল এবং সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে,  গোবসন্তের জীবাণু শরীরের ভিতর জলবসন্তের জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলে।  এবার এই মহান আবিষ্কারের নাম দেওয়ার পালা, জেনার তার এই আবিষ্কারের নাম দিলেন ভ্যাক্সিনেশন, ল্যাটিন শব্দ ভ্যাক্সিনিয়া থেকে যার বাংলা অর্থ গোবসন্ত।  আজকের ভ্যাক্সিন যা কোটি প্রাণের নিরাপত্তা দেয় তা জেনারের এই মহান আবিষ্কারের ফল।

তারপর লুই পাস্তুরের র‌্যাবিস ভ্যাক্সিন(১৯৮৫) আবিষ্কার টিকা আবিষ্কারের ক্ষেত্রে যোগ করে আরেক নতুন মাত্রা। এরপর ডিপথেরিয়া, ধনুস্টংকার, আনথ্রাক্স, কলেরা,প্লেগ,টাইফয়েড, যক্ষা ইত্যাদি ব্যাক্টেরিয়াল রোগের আন্টিটক্সিন ও টিকার আবিষ্কার হয় পরবর্তী কয়েক দশকের মধ্যেই।টিকা আবিষ্কার ও উন্নয়নের সবচেয়ে বেশী কাজ হয়েছে বিংশ শতাব্দির মধ্যভাগে। এসময় আবিষ্কৃত হয়েছে গবেষনাগারে ভাইরাস কালটারের পদ্ধতি সহ পোলিও রোগের টিকা।গবেষনা হয়েছে মিস্লেস, মামস, রুবেলা ইত্যাদি ভাইরাস এবং এদের টিকা আবিষ্কার নিয়ে।পথ বাতলে দিয়েছে আরও অনেক জটিল সব রোগ প্রতিরোধের।বর্তমানে আবিষ্কৃত হয়েছে রিকম্বিন্যান্ট টিকা, চেষ্টা চলছে বাকি সকল রোগের টিকা আবিষ্কারের। থেমে নেই নন-ইনফেকসাস রোগ যেমন এলার্জির টিকা আবিষ্কারের চেষ্টাও।

থাঙ্কস জেনার, থাঙ্কস পাস্তুর প্রাণিকুলের কল্যাণে এই অনন্য সৃষ্ট্রির পথ দেখানোর জন্য।


লেখকঃ DR. MD. AMINUL ISLAM

ডাঃ মোঃ আমিনুল ইসলাম; ডিভিএম, এমএস ইন মাইক্রবায়োলজি। ই-মেইলঃ aminulislam_vet@yahoo.com, ওয়েবঃ www.maislamtota.weebly.com

এটাও দেখতে পারেন

esta tienda online 1

Las 33 Mejores Tiendas Online En Las Que Comprar Como la mayoría, nos permite devoluciones …

একটি মন্তব্য

  1. খুব চমৎকার লিখেছেন ভাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.