খরগোশ, আপাদমস্তক লোম আবৃত শান্ত স্বভাবের এক তৃণভোজী গৃহপালিত প্রাণী। একটা সময়ে শুধুমাত্র বাড়ীর শোভা বর্ধণকারী শখের পোষা প্রাণি অথবা গবেষণাগারে বিভিন্ন পরীক্ষার কাজে প্রতিপালিত হলেও বর্তমানে পরিবারের পুষ্টির সরবরাহ এবং বিকল্প আয়ের উৎস হিসাবে এক বিরাট স্থান দখল করে নিয়াছে ছোট্ট এই প্রাণীটি।ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা ভেবে অনেকেই গরু-ছাগলের মতই অর্থকরী প্রাণী হিসাবে খামার পদ্ধতিতেও পালছেন খরগোশ। সঠিক পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রতিপালন করলে অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণীর মতই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে খোরগোশ।বিশেষ করে দরিদ্র দুরিকরণে খরগোশ পালন হতে পারে এক অনন্য সহায়ক।আমাদের দেশের অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত অবস্থা অনুসারে খরগোশ পালনের প্রধান প্রধান সুবিধা গুলো হলঃ
Ø খরগোশ খুব দ্রুত বর্ধণশীল প্রাণী এবং তাদের খাদ্য রুপান্ত্র হার(FCR) অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় অনেক ভাল।
Ø একটি মা খরগোশ প্রতিবার ৪-৮ টি বাচ্চা দেয়।
Ø বাড়ির ছাদ বা আংগিনাতে অল্প জায়গাতেই এটি পালন করা যায়।
Ø খরগোশের মাংস নরম, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর, এতে ফ্যাট, কোলেস্টেরল ও সোডিয়ামের পরিমান কম থাকে তাই হার্টের রোগীকেও খাওয়ানো যায়।
Ø সব ধর্মের লোক এটি খেতে পারে।
Ø খরগোশ তৃণভোজী প্রানী, রান্না ঘরের উৎচ্ছৃস্ট, ঘাস, আগাছা, শাক প্রভৃতি তার সাভাবিক খাবার বিধায় খাদ্যর যোগান দেয়া সহজ।
Ø পারিবারিক শ্রমেই সফলভাবে খরগোশ পেলে লাভবান হওয়া যায়।
খরগোশের বাসস্থানঃ
সাধারনত ২ টি উপায়ে খরগোশের বাসস্থান তৈরি করা যায়-
১. বিছানা পদ্ধতিঃ
ছোট আকারের খামারের জন্য এই পদ্ধতিটু খুবই ভাল। এই পদ্ধতিতে খরগোশ রখার মেঝে ভাল করে প্লাস্টার করা উচিত। তার উপর ৪-৫ ইঞ্চি পুরু করে ধানের তুষ, কাঠের গুড়া, খড় ইত্যাদি দিয়ে বিছানা বানাতে হবে। প্রজনন সময় ব্যাতিত অন্য সব সময় পাঠা খরগোশকে মা খরগোশ থেকে আলাদা রাখতে হবে। এই পদ্ধতিতে রোগের প্রাদুর্ভাব একটু বেশী থাকে।
২. খাচা পদ্ধতিঃ
বানিজ্যক ভাবে বড় আকারের খরগোশ খামার তৈরিতে এটি ভাল।খরগোশের খাচা লোহার হতে পারে। খাচায় পর্যাপ্ত জায়গা থাকতে হবে।প্রজনন সময় ব্যাতিত অন্য সব সময় মা খরগোশকে পুরুষ খরগোশ থেকে আলাদা খাচায় রাখতে হবে।
প্রাপ্ত বয়ষ্ক খরগোশ রাখার খাচার আয়তন হবে নিম্নরুপ-
১। বড় আকৃতি(>৫ কেজি)@ ১২০x৬০x৬০ ঘন সে.মি
২। মাঝারি আকৃতি(৮-৫কেজি)@ ১০০x৬০x৫৫ ঘন সে.মি
৩। ছোট আকৃতি(২-৪ কেজি)@ ৮০x৬০x৫০ ঘন সে.মি
৪। নেস্ট বক্স @ ১.৮x০.৯x০.৫ ঘন মিটার
খরগোশের খাদ্য বাবস্থাপনাঃ
সবুজ ঘাস, শাক, মুলা, বাধাকপি, গাজর, শসা প্রভৃতি খরগোশের স্বাভাবিক খাবার।খরগোশের সঠিক পুষ্টির খাদ্যে ১৭-১৮ শতাংশ আমিষ, ১৪ শতাংশ আশ, ৭ শতাংশ খনিজ পদার্থ এবং প্রতি কেজিতে ২৭০০ কিলোক্যালোরি বিপাকীয় শক্তি থাকা প্রয়োজন।পোল্ট্রি খাদ্য খরগোশের খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যায়।খরগোশকে পর্যাপ্ত পরিমান পানি সরবরাহ করতে হবে।
একটি প্রাপ্ত বয়স্ক খরগোশের দৈনিক ১০০ গ্রাম সবুজ ঘাসের সাথে ২০০-২৫০ গ্রাম সুষম দানাদার খাবার প্রয়োজন।মাংস উৎপাদনকারী খরগোশের আনুমানিক খাদ্য তালিকা নিম্নরুপঃ
বয়স(সপ্তাহ) |
ওজন(গ্রাম) |
খাদ্য(গ্রাম) |
পানি(মি.লি) |
৬ |
৯২০ |
১৩৩ |
৮৪ |
৭ |
১২০০ |
১৭৭ |
১১৩ |
৮ |
১৫১০ |
২২০ |
১৪০ |
৯ |
১৫১০ |
২৪৩ |
১৫৩ |
১০ |
২০৭০ |
২৫৮ |
১৬১ |
১১ |
২৩০০ |
২৬৭ |
১৬৫ |
১২ |
২৫১০ |
২৬৭ |
১৬৮ |
প্রাপ্ত বয়স |
৪০০০ |
৩০০ |
১৭০ |
খরগোশের প্রজননঃ
পুরুষ খরগোশ ৮ মাস বয়সে এবং স্ত্রী খরগোশ প্রজাতি ভেদে; ছোট প্রজাতি ৩-৪ মাস এবং বড় প্রজাতি ৮-৯ মাস বয়সে প্রজনন ক্ষমতা লাভ করে। খরগোশের গরম হওয়া বোঝা খুব কঠিন। অস্থিরতা, খাচার সাথে গা ডলা, ভালভা ফুলা ও বেগুনি রং ধারণ করা প্রভৃতি গরম হওয়ার লক্ষণ। মা খরগোশ সাধারণত ২৮-৩২ দিন বাচ্চা পেটে রাখে। প্রতিবার বাচ্চা দেওয়ার ২১ দিনের মাথায় যৌন মিলন ঘটিয়ে বছরে ৫-৬ বার বাচ্চা নেওয়া যায়।
রোগ বালাইঃ
খরগোশ সাধারনত মিক্সোমাটোসিস, সালমোনেলসিস, কক্সিডিওসিস ও কিছু পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত হয়। মিক্সমাটোসিস রোগের প্রাদুর্ভাব খরগোশে মাহামারি আকার ধারণ করে। খরগোশ শীত সহ্য করতে পারলেও অত্যাধিক গরম সহ্য করতে পারে না।
আরে ভাই তো জটিল লেখেছেন। আজ ই দুই জনকে বললাম খরগোশ পালনের কথা। আশা করি আপনি আরও ভালো ভালো লেখা নিয়ে আসবেন সামনে।