এবার বাংলাদেশেও বার্ড ফ্লু-তে মানুষের মৃত্যু !!

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বার্ড ফ্লু-তে আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এর বরাত দিয়ে দেশের জাতীয় দৈনিকগুলো এ খবর প্রকাশ করেছে। ২০০৮ সালে বাংলাদেশে প্রথম বার্ড ফ্লু ভাইরাস সনাক্ত হওয়ার পর এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে কারো মৃত্যু হলো। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রে (সিডিসি) পাঠানো নমুনা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়ার পরই রোববার আইইডিসিআর এ তথ্য জানায়।


গত ১২ ফেব্রুয়ারি আইইডিসিআর শিশুটিকে নিয়মিত গবেষণার আওতায় আনা হয়। ওই দিনই তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পর তাকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হয়, যেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর কারণ হিসেবে প্রথমে মেনিনজাইটিস বলা হয়। তবে শিশুটির মধ্যে বার্ড ফ্লু’র কোন লক্ষণ দেখা না গেলেও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আইইডিসিআর যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি-তে নমুনা পাঠায় এবং গত শনিবার এর ফলাফল বাংলাদেশকে জানানো হয়।

এদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত “এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রিপেয়ার্ডনেস এন্ড রেসপন্স প্রজেক্ট” নামে যে প্রকল্পের মাধ্যমে পোল্ট্রি খামারগুলিতে জীব-নিরাপত্তা বাড়ানোর কাজ করছিলেন, তা এখন বন্ধের পথে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাও বন্ধ রয়েছে কয়েক মাস ধরে। প্রচন্ডরকমভাবে লোকবল স্বল্পতার কারণে বস্তুতঃ এখন পোল্ট্রি খামারগুলির ওপর সরকারের নজরদারী আর নেই বললেই চলে। বাংলাদেশের মতো এতো জনবহুল দেশে এ রোগ মহামারী আকার ধারণ করলে তা কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। এবং মানুষে আক্রান্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিদেশগামী যাত্রীদেরকে বিমানবন্দরে নানা হয়রানীর শিকার হতে হবে। তাই এ ব্যাপারে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে এখনই। গত বছর বার্ড-ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে অসংখ্য খামার ধ্বংস হয়ে গেলেও সরকারীভাবে ঘোষণা হয়েছিল মাত্র ১৬ টি। কার স্বার্থে এবং কি কারণে এই তথ্য গোপন করা? বাধা কোথায়? অথচ বিগত সময়ের অভিজ্ঞতা ও রোগ-জীবানুর গতি-প্রকৃতি থেকে দেখা গেছে আক্রান্তের শুরুতেই কোন খামার ধ্বংস করে ফেললে তার আশপাশের পোল্ট্রি খামারগুলো অনেকাংশে এ রোগ থেকে মুক্ত রাখা সম্ভব হতো। কিন্তু তা না করায় খামারীরা মরক দেখা দিলে গোপনে মুরগি বিক্রি দেয় । এলাকায় মাইকিং করে অসুস্থ মুরগি বিক্রি করে। মৃত মুরগি যেন-তেনভাবে পুঁতে রাখে বা যেখানে-সেখানে ফেলে দেয়। এতে করে রোগ আরো দ্রুত ছড়িয়ে পরে। অপরদিকে যখন সেইসব অসুস্থ মুরগি নিয়ে ব্যাপারিরা গাড়িতে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন, আর অনেক মুরগিই পথিমধ্যে মারা যায়, তখন ব্যাপারিরা সেইসব মৃত মুরগি ঠ্যাং ধরে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। এবার শুরু হয় সেই মুরগি নিয়ে কুকুরের খেলা।

প্রসঙ্গক্রমে আরো বলে রাখি, (এটা সম্পূর্ণই আমার ব্যক্তিগত মতামত) স্থানীয়ভাবে বার্ড ফুতে আক্রান্ত খামারের খবর সরকারীভাবে কেন প্রকাশ করা হয় না, তার কিছু কারণ এখানে তুলে ধরতে চাই। মূল যে কারণগুলো তার মধ্যে অন্যতম হলো, কালিং করার জটিল প্রক্রিয়া (কালিং কমিটিতে ডিসি, এসপি, প্রধান হিসাব রক্ষকসহ জেলার শীর্ষ পর্যায়ের ৫ কর্মকর্তাকে নিয়ে সভা করতে হয়); নিধনকালে আবার এনাদেরকে উপস্থিতও থাকতে হয়। আবার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নিধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে যে অর্থ খরচ করেন তা প্রাপ্তিতেও আছে দীর্ঘসূত্রিতা। এসব কারণে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ প্রশাসন বার্ড-ফ্লু সনাক্তকরণের ক্ষেত্রে অনেকটাই নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন। তাছাড়া ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে দীর্ঘসূত্রিতাও খামারিকে গোপনে মুরগি বিক্রি করে দিতে উৎসাহীত করে। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও বারবার এক্সটেনশান প্রাপ্ত মহাপরিচালক দিয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এই পথ চলাও যেন জড়াজীর্ণতায় ঘেরা। এই সকল অচলাবস্থার অবসান হওয়া এখন সময়ের দাবী।

লেখকঃ ডাঃ তায়ফুর রহমান

ডাঃ তায়ফুর রহমান; ডিভিএম, এম এস, এমপিএইচ ; ন্যাশনাল টেকনিক্যাল এডভাইজার-এপিডেমিওলজি, জাতিসঙ্ঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা, ঢাকা; ব্লগ এডমিনিষ্ট্রেটর, ভেটসবিডি

এটাও দেখতে পারেন

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে অনলাইন গবাদি পশু শনাক্তকরণ এবং নিবন্ধন ব্যবস্থা চালুঃ জানা যাবে স্বাস্থ্য ও রোগের ইতিহাস

প্রাথমিকভাবে ৫০,০০০ পশু নিবন্ধিত হবে যা গ্রাহকদের পশুগুলোর স্বাস্থ্য ইতিহাস দেখার সুযোগ দিবে। প্রথমবারের মতো, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.