গবাদি পশু পালনের ক্ষেত্রে মোট উৎপাদন খরচের প্রায় ৭০-৭৫ ভাগ হলো খাদ্য খরচ। সুতরাং গবাদি পশু পালনের সবচেয়ে বড় অনত্মরায় খাদ্য সরবরাহ। আমরা জানি গরুর প্রধান খাদ্য হলো ঘাস ও খড়। রাসত্মার ধার, জমির আইল, পুকুরপাড় সহ আমাদের দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি এখন মানুষের খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহাৃত হচ্ছে। ফলে গো-খাদ্য জন্মানোর মতো কোন পতিত জমি আর অবশিষ্ট থাকে না। তাছাড়া কোন আবাদি জমি দুই ফসলের মধ্যবর্তী সময়ে এখন ফসলবিহীন পড়ে থাকেনা। প্রচলিত বিভিন্ন গো-খাদ্য উপাদান যেমন-খৈল, দানাশস্য ইত্যাদির উৎসের উৎপাদন কমে গেছে। এমন বহুমুখী কারনে গো-খাদ্যের প্রাপ্তির পরিমান প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে। এমতবস্থায় বিভিন্ন পুষ্টি সমৃদ্ধ অপ্রচলিত খাদ্যের সন্ধান এবং ব্যবহার বাড়াতে হবে। এই ধরনের খাদ্য খাওয়ানোকে আমরা alternative feeding বা বিকল্প খাদ্য সরবরাহ পদ্ধতি”বলতে পারি। এমন একটি alternative feed হলো এ্যাজোলা। গরুর জন্য প্রচলিত খাদ্যের একটি পুষ্টিকর ও ভালো বিকল্প হতে পারে এ্যাজোলা।
এ্যাজোলা কি ? এ্যজোলা একটি জলজ উদ্ভিদ। ইহা মসকিউটো ফার্ণ, ডাক উইড ফার্ণ, ওয়াটার ফার্ণ ইত্যাদি নামে পরিচিত। উদ্ভিদ জগতের অনত্মভুক্ত এর বিভাগ হলো – টেরিডোফাইটা, শ্রেণি-টেরিডোপসিডা, বর্গ- সালভিনিয়ালিস, গোত্র- সালভিনিয়াসি, গণ-এ্যজোলা এবং এর বেশ কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে। এদেশে পুকুর, ডোবা এবং বিভিন্ন জলাধারে এ্যাজোলা দেখতে পাওয়া যায়। গবাদি পশুর খাদ্য হিসাবে আমাদের দেশে এ্যাজোলার প্রচলন নেই বা থাকলেও উল্লেখ করার মতো নয়। তাছাড়া এ বিষয়ে আমাদের ধারনাও কম। আমদের পাশের দেশ ভারতে হাঁস-মুরগি এবং গবাদি পশুর বিকল্প খাদ্য হিসাবে এ্যাজোলার ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমদের দেশে ব্র্যাক হাঁস-মুরগি এবং গবাদি পশুর খাদ্য হিসাবে এ্যাজোলা ব্যবহারের বিষয়ে কাজ করছে।

এ্যাজোলা উৎপাদন পদ্ধতিঃ

একটি কৃত্রিম জলাধার তৈরি করে এ্যাজোলা উৎপাদন করা যায়। প্রথমে ২ মিটার লম্বা, ১ মিটার চওড়া ও ২০ সেমি গভীর গর্ত করে জলাধার তৈরি করতে হবে। এর পর গর্তটি পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে, যাতে অন্য কোন অবাঞ্চিত ঘাস বা উদ্ভিদের শিকড় বের হতে না পারে এবং মাটির তাপমাত্রা ঠিক থাকে ও পানি চুইয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। এরপর ১০-১৫ কেজি মাটি সমানভাবে পিটের মধ্যে ছিটিযে দিতে হবেএবং ৫ কেজি পরিমান গোবর কিছু রাসায়নিক সার পিট বা জলাধারের মধ্যে দিতে হবে। তারপর ৮ এমন ভাবে পানি ঢালতে হবে যাতে পানি উপচে না পড়ে । এরপর ১-২ কেজি রোগমুক্ত এ্যাজোলা মাদার সিড হিসাবে ছেড়ে দিতে হবে। ৭-১০ দিনের মধ্যে এ্যাজোলায় পিট পরিপূর্ণ হযে যাবে। এবং প্রতিদিন ১-১.৫ কেজি হারে এ্যাজোলা হারভেস্ট করা যাবে।
গবাদি পশুর খাদ্য হিসাবে এ্যাজোলার ব্যবহারঃ
এ্যাজোলা উচ্চ মাত্রার প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি উদ্ভিদ। ইহাতে অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিড, ভিটামিন(ভিটামিন এ, ভিটামিন বি১২, বেটা-কেরোটিন) গ্রোথপ্রেমোটর, খনিজ উপাদান যেমন-ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, পটপশিয়াম, ফেরাস(লৌহ), জিঙ্ক পর্যাপ্ত পরিমানে থাকে। এ্যাজোলাতে ২৫-৩৫% প্রোটিন (On a dry weight basis), 10-15% খনিজ পদার্থ, ৭-১০% এমাইনো এসিড, কাবোহাইড্রেট এরং চর্বি খুব কম পরিমানে থাকে। উচ্চমাত্রার প্রোটিন এবং কম পরিমানে লিগনিন থাকার কারনে গবাদি পশু সহজেই এ্যাজোলা পরিপাক করতে পারে। প্রতিদিনের স্বাভাবিক খাবারের সাথে ২-৩ কেজি এ্যাজোলা খাওয়ানোর ফলে দুধ উৎপাদন ১৫-২০% বৃদ্ধি পাওয়ার রেকর্ড রয়েছে। গরুর প্রচলিত স্বাভাবিক খাবারের ১৫-২০% এ্যাজোলা খাওয়ানো যেতে পারে এর ফলে খাদ্য খরচ অনেক কমে যাবে। দুধ উৎপাদনে কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। এমনকি এ্যাজোলা খাওয়ানোর ফলে গাভীর দুধ উৎপাদন ও দুধের গুণগতমান, গরুর স্বাস্থ্য ও longevity বেড়ে যায়। গো-খাদ্য হিসাবে অন্যান্য প্রচলিত খাদ্যের তুলনায় এ্যাজোলার পুষ্টিমান তুলনা করে দেখা যায় যে এ্যজোলার পুষ্টিমান ভালো ।
গো-খাদ্য হিসাবে এ্যাজোলার পুষ্টিমানঃ
খাদ্য উপাদানের নাম | ক্রড প্রোটিন | আঁশ | পরিপাচ্য পুষ্টি |
রাফেজ | – | ১৮ % এর বেশি | ৬০ % এর কম |
দানাদার | – | ১৮ % এর কম | ৬০ % এর বেশি |
লিগিউম ফডার( প্রোটিন সমৃদ্ধ ঘাস) | ১৬-২০ % | ৩০% | ৬০ % এর কম |
এ্যাজোলা | ২৫% | ১০% | ৬০-৬৫ % |
দুধ, মাংশ, ডিম উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গবাদিপ্রানিকে বিভিন্ন সিনথেটিক এনটিবায়োটিক, স্টেরয়েড এবং ভিটামিন খাওয়ানো হয়। খাদ্য হিসাবে বিভিন্ন এনিমেল প্রোডাক্ট ব্যবহারের কারনে এইসব রাসায়নিক পদার্থ মানুষের শরীরে জমা হয়ে বিভিন্ন রোগ হয়। যদি আমরা বিকল্প (substitute) খাদ্য হিসাবে পুষ্টি সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক খাদ্য গবাদি পশুকে সরবরাহ করতে পারি তাহলে মানুষ এবং প্রাণিস্বাস্থের জন্য তা হবে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ্যাজোলা হতে পারে গবাদি পশুর এমন একটি বিকল্পখাদ্য। আমরা জানি প্রোটিন একটি অন্যতম পুষ্টি উপাদান কিন্তু আমাদের দেশে গবাদি পশুকে যে ধরনের খাদ্য সরবরাহ করা হয় তা সবই কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য উপাদান। কিন্তু দুগ্ধবতী গাভীর জন্য সরবরাহকৃত খাদ্যে একটি নিদিষ্ট মাত্রায় প্রোটিন থাকা দরকার। একটি দুগ্ধবতী গাভীর দুগ্ধদানকালীন সময়ের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রদানকৃত খাদ্যে যে পরিমান প্রোটিন থাকা দরকার তা নিম্নরুপ
দুধ উৎপাদন (stage of lactation) | প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা(ক্রড প্রোটিন) |
প্রারম্ভিক (early lactation) | ১৬-১৮ |
মধ্যবর্তী (mid early lactation) | ১৪-১৬ |
শেষ (late lactation) | ১২-১৪ |
দুগ্ধবিহীন কাল (dry period) | ১০-১২ |
তবে আমাদের দেশে গবাদি পশুকে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য খুবই কম পরিমানে সরবরাহ করা হয়। রোমন্থক প্রাণি দু’টি ভিন্ন উৎস থেকে এমাইনো (এমাইনো এসিড হলো প্রোটিনের গাঠনিক উপাদান) এসিড পেযে থাকে। প্রথমত: পেয়ে থাকে আমরা গবাদি পশুকে যে খাদ্য সরবরাহ করে থাকি তা থেকে। সরবরাহকৃত খাদ্য হতে কিছু প্রোটিন রুমেন ফারমেন্টেশনে অবমুক্ত হয় এবং এমাইনো এসিড ইনট্যাক্ট অবস্থায় ডিওডেনামে পৌছে। এই প্রোটিনকে বলা হয় রুমেন আনডিগ্রেডেবল প্রোটিন বা বাইপাস প্রোটিন। এরপর ইহা পৌষ্টিকতন্ত্রের প্রাচীরে এমাইনো এসিড হিসাবে শোষিত হয়ে রক্ত প্রবাহে মিশে। এবং দ্বিতীয উৎস হলো অণুজীবের দেহ যাকে বলে মাইক্রোবিয়াল প্রোটিন্ ( rumen degradable protein) । একটি নিদিষ্ট মাত্রা পর্যনত্ম দুধ উৎপাদনের জন্য গাভীর খাদ্যে undegraded (UDP) or bypass protein থাকা দরকার। গাভীর (Higl yielding) ক্ষেত্রে একটি নিদিষ্ট সীমা (১২ লিটার) পর্যনত্ম দুধ উৎপাদনের জন্য rumen degradable protein or RDP ভুমিকা থাকে। তবে এর বেশি উৎপাদনের জন্য গাভীর খাদ্যে অবশ্যই undegraded (UDP) or bypass protein থাকতেই হবে। যেহেতু আমাদের দেশে গবাদি পশুকে সরবরাহকৃত খাদ্যে প্রোটিন source থাকে না বললেই চলে তাই এ্যাজোলা হতে পারে উৎকৃষ্টমানের প্রোটিন সমৃদ্ধ সবুজ গো-খাদ্য যা bypass protein এর অন্যতম উৎস।
এ্যাজোলা গরু-ছাগলের পাশাপাশি মুরগির খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যায়। এ্যাজোলা খাওয়ানোর পর দেখা গেছে মুরগিকে সরবরাহকৃত সাধারণ খাদ্যের তুলনায় এ্যাজোলা খাওয়ানোর পর দৈহিক বৃদ্ধি দ্রুত হয়েছে এবং ওজন ১০-১২ % বেশি হয়েছে। ডিমের কুসুম বড় হয়েছে এবং ডিমের খোসা চকচকে বা আর্কষনীয় হয়েছে। যা ভোক্তার পছন্দ ও চাহিদা কে positively প্রভাবিত করে। এছাড়া এ্যাজোলা খাওয়ানোর ফলে ব্রয়লারের দৈহিক ওজন এবং লেয়ারের ডিম উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশে প্রচলিত ব্রয়লার খাদ্যের সাথে বিভিন্ন মাত্রায় (৫%, ১০%, ১৫%) এ্যাজোলা মিল’ ব্যবহার করে দেখা গেছে ব্রয়লারের দৈহিক বৃদ্ধি প্রচলিত খাদ্যের মতো হয়েছে। বাংলাদেশে এখনো মোট মুরগির একটা বড় অংশ ছেড়ে পালন করা মুরগি। কিন্তু এসব মুরগির কোন খাদ্য তালিকা নেই। এদের খাদ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি প্রকৃতি নির্ভর। এসব দেশি মুরগির খাদ্য হিসাবে এ্যাজোলা ব্যবহার করে মুরগির উৎপাদনশীলতা বাড়ানো যেতে পারে।
ধন্যবাদ মহির ভাই কে । সুন্দর এক টা আরটিকেল এর জন্য।next time আর ও সুন্দর সুন্দর লেখা আহবান করছি। কিন্তু ভাই এ্যাজলা কি সব জায়গায় available?কস্ট করে জানালে খুশি হব।
ধন্যবাদ সুন্দর এক টা আর্টিকেল এর জন্য
Thanks for your excellent article.
খুব ভাল এটা গরিবের জন্য.Thank you.
01912535633
গো-খাদ্যের সম্পরুক হিসাবে এ্যাজোলা মত আর কি আছে.জানতে চাই. Mob.0191253533
এত সুন্দর তথের জন্য অপনাকে ধন্যবাদ.আমার এলাকায় এ্যাজোলার চাষ শুরু করছি.কেহ আগ্রহী থাকলে আমি বীজ ফ্রি দেবো .যোগাযোগ 01912535633
thank you