হাঁস পালন ও ব্যাবস্থাপনা

হাসের জাতঃ-


আমাদের দেশে বিভিন্ন জাতের হাঁস দেখা যায়। তার ভিতর উল্লেখ যোগ্য হলঃ-

১। পাতি হাঁস

২। নাগেসরি

৩। সিলেট মিট

৪। মাস্কভি

৫। ইন্ডিয়ান রানার

৬। খাকিকেম্বেল

৭। জিংডিং

হাসের বাসস্থানঃ-

৩০সেমি*৩৮সেমি*৩০সেমি বাশের খাচায় ৫-৬ টি হাঁস পালা যাবে।

হাসের বাসস্থান পালন পদ্ধতি অনুসারে নিম্ন্রুপঃ-

১। কাচা মেঝেঃ-ক) শুধুমাত্র রাত্রি বেলায় রাখার জন্য

খ) দো-আঁশ কাঁকর মিশ্রিত বালুমাটি  দিয়ে তৈরি করা হয়।

২। পাকা মেঝেঃ-ক) সবসময় রাখা যায়।

খ) ইদুরের উপদ্রপ কম হয়।

গ) কাদা হয় না।

ঘ) খাদ্য ও পানি দিতে সুবিধা হয়।

৩। মাচা যুক্ত মেঝেঃ-ক) কাঠ বা বাশের চাটাই বিছিয়ে তার উপর লিটার ব্যাবহার করা যায়।

 

খ) মেঝের চারিদিকে ফাকা স্লাট বা মাচা থাকে।

গ) হাসের পায়খানা সরাসরি পানিতে পরে।

ঘ) পানির পাত্র মাচার উপর স্থাপন করায় লিটার ভেজে না।

সতন্ত্র ব্রুডার হাউজঃ-

এই ঘরে শুধুমাত্র বাচ্চা ব্রুডিং হয়।বয়স এক মাস হলে গ্রোয়ার বা লেয়ার হাউজে স্থানান্তর করা হয়।

প্রতিটি হাসের জন্য ঘরের মেঝেঃ-

১। ব্রুডিং এর সময় ০.৫ বগফুট জায়গা প্রয়োজন

২। বারন্ত বয়সে ১.০ বগফুট জায়গা প্রয়োজন

৩। ১০ সপ্তাহ বয়স থেকে ডিম পাড়ার পুরব পরযন্ত ২.৫ বগফুট জায়গা প্রয়োজন।

৪। ডিম পাড়া শুরু করলে হাসপ্রতি ৩.৫ বগফুট জায়গা প্রয়োজন।

ঘরের অবস্থানঃ-

জ) পুরব-পশিচম লম্বা হবে।

খ) প্রচুর আলো-বাতাসএর জন্য উত্তর-দক্ষিন খোলা রাখতে হবে।

গ) জলাশয়ের পাড়ে ঘর তৈরি করতে হবে।

হাসের খাদ্যঃ-

পুস্টির উপর ভিত্তি করে খাদ্য উপকরন কে ৫ ভাগে ভাগ করা যায়।

১। শরকরা জাতিও উপাদানঃ-চাউল,গম,ভুট্টা,কাউন,বারলি,চাউলের গুরা,গমের ভুশি,ইত্যাদি।

২। আমিশজাতিও উপাদানঃ-শুটকি মাছের গুরা,বোন মিল,মিট মিল,সয়াবিন মিল,তিলের খইল ইত্যাদি।

৩। চবি জাতিও উপাদানঃ-আনিমেল ফ্যাট,হাঙ্গর এর তেল ইত্যাদি।

৪। ভিটামিন জাতিও উপাদানঃ-ফিড প্রিমিক্স হিসাবে বাজারে অনেক ভিটামিন পাওয়া যায়।

৫। খনিজ পদাথ জাতিও উপাদানঃ-ঝিনুক/শামুক চুন,লবন ইত্যাদি।

অপ্রচলিত খাদ্যঃ-

চারনভুমি অথবা জলাশয়ে চরে খাদ্য সংগ্রহ করে।

১। ছোট ছোট শামুক

২। ধান ও ধানের চিটা

৩।চিংড়ি,ব্যাঙাচি,ছোট ছোট মাছ

৪। ডাক উইড

৫। এলজি,ইষ্ট,প্লান্টম

৬।শাজ সবজি ও ফল-মুলের উপজাত।

খাদ্য ব্যাবস্থাপনাঃ-

১।হাস যতটুকু খাদ্য খায় তার সাথে দিগুন পানি খায়।

২।হাস কে শুকনা খাবার দিতে নাই,

৩। ৮ সপ্তাহ বয়স পরযন্ত বাচ্চাকে সাধিনভাবে খেতে দিতে হয়।

৪। ৯ সপ্তাহ বয়স থেকে ডিম পাড়ার পুরব পরযন্ত ওজন নিয়ন্ত্রনের জন্য পরিমান মত খাদ্য দিতে হয়।

৫। সকাল ৮-৯ টা ও বিকাল ৪-৫ টার সময় ২ বার খাদ্য দিতে হয়।

আলক ব্যাবস্থাপনাঃ-

প্রতিদিন ১৪-১৬ ঘন্টা আলো দিতে হবে। ৪০-৬০ ওয়াটের বাল্ব ২৫৬ বরগ ফুট জায়গার জন্য ৭ ফুট উপরে ঝুলাতে হবে।

ডিম সংগ্রহঃ-

সকালে ডিম সংগ্রহ করা উচিত।হাস কে সকাল ৭.৫০ টা পরযন্ত খাচায় আটকে রাখা উচিট।যাতে বেশি পরিমান ডিম সংগ্রহ করা যায়।

ভাল হাসের বাচ্চা পাওয়ার উপায়ঃ

১। ভাল জাতের হাঁস থেকে ডিম সংগ্রহ করতে হবে।

২।ডিম পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হবে।

৩। ডিম সাভাবিক আক্রিতির হবে।

৪। রগাক্ক্রান্ত হাসের  ডিম পরিহার করতে হবে।

৫।সুস্থ্য সবল হাঁস থেকে ডিম সংগ্রহ করতে হবে।

ডিম কম বেশি হওয়ার কারনঃ-

১। ২২-২৪ সপ্তাহ বয়সে ডিম পাড়া শুরু হায়। ফলে বয়সের কারনে ডিম কম বেশি হতে পারে।

২। সাধারনত সকালে ডিম পারে। সময়ের কারনে ডিম কম বেশি হতে পারে।

৩। ডিম পারার আগে ঘর থেকে বের করলে ডিম নাও পারতে পারে।

৪। রাতে হাসের ঘরে বন্য জন্তুর আগমন হলে ডিম কম বেশি হতে পারে।

৫। হাসের ঘরে অপরিচিত লোক ঢুক লে ডিম কম বেশি হতে পারে।

জিব নিরাপত্তাঃ-

১। হাসের ঘরে ঢুকার পুরবে জিবানু নাসক মিশ্রিত পানি দিয়ে হাত ও পা ধুয়ে নিতে হবে।

২। ঘরের ভিতড় ও বাহিরে পরিস্কার ও শুকনা রাখতে হবে।

৩। বাহিরের লোক ঘরে ঢুক্তে দেয়া যাবেনা।

৪। বিশুদ্ধ পানি ও টাটকা খাদ্য দিতে হবে।

৫।নিয়মিত টিকা দিতে হবে।

৬। মরা হাঁস মাটিতে পুতে রাখতে হবে।

টিকা প্রদানের সময় সুচিঃ-

১। ডাক ভাইরাস হেপাটাইটিস-৫ ডিন বয়সে ১ম মাত্রা     -১ মিলি      –   বুকের মাংসে

২৪ দিন বয়সে বুস্তার ডোজ

২। ডাক প্লেগ – ১৮ দিন বয়সে ১ম মাত্রা                              -১ মিলি      –   বুকের মাংসে

৩৫ দিন বয়সে বুস্তার ডোজ

৪-৫ মাস বয়স অন্তর দিতে হবে

৩।  ডাক কলেরা – ৪৫ দিন বয়সে১ম মাত্রা                               -১ মিলি      –   বুকের চামড়ার নিচে

৪-৫ মাস বয়স অন্তর দিতে হবে

হাঁস ও মুরগির মাংসের পুস্টি মানঃ-

মুরগি———–হাস

প্রোটিন ————–১২.৯%———১৩.৫%

চরবি—————–১০.৯%———১৪.৫%

অ্যাস—————–০.৯%———–১.০%

ড্রাইমেটার———–২৬.৪%———৩০.৩%

ডিমের ওজন———৫৭ গ্রাম——–৭৫ গ্রাম

লেখকঃ ডাঃ এ কে এম ফজলুল হক

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া

এটাও দেখতে পারেন

What heat stress does in poultry

যে ৪ উপায়ে বিটেইন (Betain) হিট স্ট্রেস মোকাবিলায় কাজ করে

হিট স্ট্রেস (heat stress) গবাদিপশু ও পোল্ট্রি খামারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা, যা ওজন কমায়, …

৩ মন্তব্য

  1. Dear sir
    Please send your email address or Phone number.

  2. দেশী মুরগীর খামার দেওয়ার ব্যাপারে অভিজ্ঞরা বিস্তারিত তথ্য দিয়ে সহায়তা করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.