মুরগীর রোগ পরিচিতিঃ পর্বঃ১ বার্ডস এইডস / গামবোরো রোগ

বাংলাদেশের বানিজ্যক মুরগীর খামারে গামবোরো রোগ অতি পরিচিত একটি নাম। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় গামবোরো রোগের প্রকোপ দেখা যায়। বাংলাদেশের অথনীতি প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয় এই রোগের কারণে। নিম্নে গামবোরো রোগ সম্পকে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করছি —–


গামবোরো রোগের ইতিহাসঃ

১৯৬২ সালে বিজ্ঞানী কসাগ্রোভ আমেরিকার ডেলওয়ারা প্রদেশের গামবোরো নামক জেলায় এই রোগ প্রথম আবিষ্কার করেন । এবং ওই জেলার নামানুসারে এই রোগের নামকরন করা হয়।

ভারতের উত্তর প্রদেশে গামবোরো রোগ প্রথম দেখা ১৯৭১ সালে ।বাংলাদেশে গামবোরো রোগ প্রথম দেখা যায় ১৯৯২ সালে । অনেকের মতে ভারত ও নেপাল হতে আমদানীকৃত এক দিনের বাচ্চার সাথে এই দেশে গামবোরো রোগের অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে।বাংলাদেশে প্রথম গামবোরো রোগ পাওয়া যায় বিমান পোল্ট্রি কমপ্লেক্সে । কিন্তু সারা বাংলাদেশে এখন এই রোগ খুজে পাওয়া যায়।

গামবোরো রোগ সম্পকে কিছু তথ্যঃ

গামবোরো রোগ কে ইনফেকসিয়াস বারসাল ডিজিজ (Infectious Bursal Disease) বা IBD বলে। এটা মুরগীর রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, ফলে মুরগী দুবল হয়ে পড়ে ।

গামবোরো রোগ একটি ভাইরাস জনিত রোগ । এটি ডিস আর এন এ ভাইরাস (ds RNA VIRUS)

FAMILY : Birnaviridae

SUB-GENUS: Avibirnavirous

GENUS: Birnavious

 

এই ভাইরাসের দুইটি সেরোটাইপ আছে –

১।সেরোটাইপ-১ যেটা প্যাথোজেনিক

২। সেরোটাইপ-২, যেটা প্যাথোজেনিক নয়।

সেরোটাইপ ১ কে আরো বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায় ——–

# ক্লাসিক্যাল ভিরুল্যান্ট স্ট্রেইন – পাওয়া গেছে ১৯৬২ সাল হতে , এবং এটি কম মাত্রা সংবলিত ।

# ইউ এস এন্টিজেনিক ভ্যারিয়েন্ট স্ট্রেইন – পাওয়া গেছে ১৯৮২ সালে আমেরিকাতে , এটি ক্লাসিক্যাল ভিরুল্যান্ট স্ট্রেইন এর মত কম মাত্রা সংবলিত ।

#ভেরী ভিরুলেন্ট স্ট্রেইন – পাওয়া গেছে ১৯৮৭ সালে , এটি খুবই মাত্রা সংবলিত এবং মৃত্যুর হার অনেক বেশি ।

 

গামবোরো রোগ কিভাবে ছড়ায়ঃ

১।গামবোরো রোগের ভাইরাস এক মুরগী হতে অন্য মুরগীতে ছড়ায় ।

২।গামবোরো রোগের ভাইরাস মুরগীর বিষ্ঠার মধ্যে থাকে, এবং মুরগী ঐ বিষ্ঠা খাওয়ার মাধ্যমে আক্রান্ত হয়।

৩।একবার যে শেডে গামবোরো রোগের আক্রমন ঘটে , সেই এলাকার বাতাসে থাকে গামবোরো রোগের ভাইরাস ।

৪।গামবোরো রোগের ভাইরাস (ds RNA ভাইরাস) সংক্রমিত খাদ্য, পানি , বিভিন্ন যন্ত্রপাতি , কাপড় চোপড়, জুতার মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়।

৫। গামবোরো আক্রান্ত খামার ঘুরে আসার মাধ্যমেও এই রোগ ব্যাপক ভাবে ছড়ায়।

৬।গামবোরো রোগ সাধারনত ৩-৬ সপ্তাহের মুরগীর বাচ্চাতে হয়ে থাকে ।

৭।।এই রোগে আক্রান্তের হার ১০০% কিন্তু মৃত্যুর হার ৩০-৪০%

 

গামবোরো রোগ কেন হয়?

যেহেতু এই রোগের জন্য দায়ী ভাইরাস ds RNA ভাইরাস ,এবং এই  ds RNA ভাইরাস অত্যন্ত শক্তিসম্পন্ন ভাইরাস । এই ds RNA ভাইরাস মুরগির লিটারে এবং খামারের পরিবেশে প্রায় ৪ মাস বেচে থাকতে পারে ।এই ds RNA ভাইরাস মুরগীর বাচ্চার বাসা ফেব্রিসিয়াস ( Bursa of fabricious) এবং থাইমাস গ্রন্থির কোষে আক্রান্ত করে, এর পরিপ্রেক্ষিতে আক্রান্ত মুরগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লোপ পায় ।উল্লেখ্য বাসা ফেব্রিসিয়াস ( Bursa of fabricious) বি লিম্ফোসাইট এবং থাইমাস গ্রন্থি টি লিম্ফোসাইট তৈ্রি করে ।

এখানে আরো বলে রাখা যায় , মুরগীর বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বাসা ফেব্রিসিয়াস ( Bursa of fabricious) ছোট হতে থাকে , এবং প্রায় ১০০-১২০ দিন পর পুরোপুরি বিলীন হয়ে যায়। ফলে লেয়ার মুরগি, ব্রিডার খামারে সাধারনত গামবোরো রোগ হয় না।

 

গামবোরো রোগের লক্ষণঃ

১।গামবোরো রোগে আক্রান্ত মুরগীর দেহের পালক উসকো খুসকো হয়ে যায় ।

২। চুন চুন পায়খানা করে ।

৩। গামবোরো রোগে আক্রান্ত মুরগী যখন পায়খানা করে তখন পায়খানার সাথে পানি বের হয়, অথাৎ পায়খানা ছড়িয়ে পড়ে।

৪।খাবার ও পানি খাওয়া কমিয়ে দেয়।

৫।ডায়রিয়া দেখা যায়, ফলে মলদ্বারের কাছের পালক ভিজে যায়।

৬।মুরগী ঝিম ধরে বসে থাকে।

৭। মুরগীর দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।

৮।এক মুরগী অন্য মুরগীর পৃষ্ঠদেশ ঠো্করাতে থাকে।

৯।হাটাহাটি বা নড়াচড়া করতে চায় না ।

১০। আক্রান্ত মুরগী মাথা সামনের দিকে নুয়িয়ে রাখে।

১১। মুরগীর দেহের ওজন কমে যায়।

 

পোস্ট মটেম লক্ষনঃ( ময়না তদন্ত)ঃ

খালি চোখে যা পাওয়া যাবেঃ

১।গামবোরো রোগের ভাইরাস (ds RNA ভাইরাস) এর target organ হলো বাসা ফেব্রিসিয়াস ( Bursa of fabricious) তাই প্রথমে বাসা ফেব্রিসিয়াস ( Bursa of fabricious)  এ লক্ষণ পাওয়া যাবে। ভাইরাস আক্রান্তের ১-৩ দিনের মধ্যে বাসা ফেব্রিসিয়াস ( Bursa of fabricious) ফুলে যাবে এবং জিলাটিন জাতীয় পানি পাওয়া যাবে।

২।আক্রান্তের বয়স যদি ৩-৮ দিন হয় তাহলে বাসা ফেব্রিসিয়াস ( Bursa of fabricious) ছোট হয়ে যাবে।

৩। আক্রান্তের বয়স যদি ৮-১৩ দিন হয় তাহলে বাসা ফেব্রিসিয়াস ( Bursa of fabricious)এর লুমেন এ কেজিয়াস কোর পাওয়া যাবে।

৪। আক্রান্ত মুরগীর দুই পায়ে ফোটা ফোটা রক্ত বিন্দু পাওয়া যাবে।

৫।কিডনী অনেক ফুলে যায় , এবং ইউরেট জমা হয়।

৬। এছাড়া মুরগীর বক্ষেও ফোটা ফোটা রক্ত বিন্দু পাওয়া যাবে।

গামবোরো রোগ কিভাবে নিণয় করবেন?

১, মুরগীর বয়স

২।এক বারে কতোগুলো মারা গেল

৩।বিভিন্ন লক্ষন দেখে

৪।পোস্ট মটেম লক্ষনঃ( ময়না তদন্ত) দেখে।

 

 

চিকিৎসা ঃ

গামবোরো রোগের বিরুদ্ধে কাযকরী কোন চিকিৎসা নাই । এই রোগের সাথে সাথে অন্যান্য রোগ যেমন – কক্সিওডিওসিস হতে পারে। তাই যে কোন একটি এন্টিবায়োটিক  দেয়া যেতে পারে , সাথে সালফার গ্রুপের একটি ডাগ দেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে ciprofloxacin গ্রুপের  ঔষধ , ভালো কাজ করে , তন্মধ্যে..korea হতে আমদানীকৃত CIPRIL বাজারের সেরা ।

যেহেতু গামবোরো রোগে মুরগী দুবল হয়ে পড়ে, তাই ভিটামিন সি দেয়া যেতে পারে , এছাড়া পানিতে ভিনেগার , পানি গহনের পরিমান বৃদ্ধির জন্য চিনি দেয়া যেতে পারে।

 

 

খামারকে বিভিন্ন রোগ বিশেষত গামবোরো রোগ হতে বাচানোর প্রতিরোধ ব্যাবস্থাঃ

 

১। আপনার খামার কে গামবোরো রোগ হতে বাচাতে সঠিকভাবে জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।

২।দশনাথী প্রবেশ সীমাবদ্ধ করুন।

৩। গামবোরো আক্রান্ত খামার পরিদশন বন্ধ করুন।

৪।নিয়মিত রেজিস্টাড ভেটেরিনারিয়ান এর পরামশ গ্রহন করুন।

 

আক্রান্ত মুরগি
পায়ে ও বক্ষে রক্তক্ষরণ

                                                                           

লেখকঃ ডা মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান পাপ্পু

I am Kbd Dr.Md.Mustafijur Rahaman Pappu. I have completed Doctor of Veterinary Medicine (DVM) Degree and Master's in Pathology under Faculty of animal science & veterinary medicine of PATUAKHALI SCIENCE & TECHNOLOGY UNIVERSITY( PSTU) My home town is JHENAIDAH . কৃষিবিদ ডা মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান পাপ্পু যুগ্ম সাধারন সম্পাদক, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন (বিভিএ),খুলনা বিভাগ। কার্যনির্বাহী সদস্য, বঙ্গবন্ধু ভেটেরিনারি পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি। সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক, ভেটেরিনারি স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন (ভিএসএ),পবিপ্রবি। সাবেক সহ সভাপতি , বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, পবিপ্রবি শাখা। Mobile -01915 084474. 01771 444402

এটাও দেখতে পারেন

মুরগির লিভারের রোগ: লিম্ফয়েড লিউকোসিস

লিম্ফয়েড লিউকোসিস মুরগীর টিউমার সৃষ্টিকারী ভাইরাস রোগ। এ রোগের ক্ষেএে টিউমার সৃষ্টি হয় এবং রেট্রো …

৭ মন্তব্য

  1. ধন্যবাদ।

  2. Many many thanks. এরকম আরো লেখা চাই।

  3. ধন্যবাদ আপনাকে উপকারী তথ্য দেয়ার জন্য

  4. মাত্রাটা উল্লেখ করলে ভাল হতো, কত মিলিগ্রাম কয়টা মুরগী,

  5. আমার খামার এ এক সাথে 64 টি মারা গেছে 25 দিন বযস

  6. Most effective blog. I’m grateful o you.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.