ফুট এন্ড মাউথ বা হুফ এন্ড মাউথ রোগ ইনফেকসিয়াস , কখন মারাত্বক ভাইরাল রোগ । এই রোগ সাধারনত ক্লোভেন হুফ ওয়ালা প্রানীর হয়ে থাকে । এই রোগ গৃহপালিত এবং বন্য প্রানীর হয়ে থাকে ।এই ভাইরাস প্রানীর শরীরে ২-৩ দিনের জন্য উচ্চ জ্বর সৃষ্টি করে ।এই রোগ হলে আক্রান্ত প্রানীর মুখে এমনকি পায়ের পাতায় ফোসকা সৃষ্টি করে ।এর ফলে পায়ে ক্ষত হয়ে প্রানিটি পঙ্গু হয়ে যেতে পারে ।ফুট এন্ড মাউথ/ ক্ষুরা রোগ এমন এক রোগ যা বানিজ্যিকভাবে গঠিত ফামের জন্য হুমকি্স্বরুপ । যে কোন গরুর খামার হোক না ডেইরী / মোটাতাজাকরন খামার সহ সব খামারের জন্য এক মহাবিপদের নাম এই ক্ষুরা রোগ ।
বাংলাদেশের পানির এলাকাতে এই রোগ বেশি দেখা যায় ,বিশেষত বষা মৌসুমে এই রোগের প্রোকোপ দেখা যায়। এই দেশে সাধারনত মে-জুন মাসে এই রোগের প্রোকোপ দেখা যায় , তবে কিছু কিছু এলাকা যেমন সিরাজগঞ্জ, টাংগাইল , পাবনা , চাদপুর ইত্যাদি জেলাতে এই রোগ এপ্রিল মাসেও দেখা যেতে পারে ।
তবে দক্ষিণাঞ্চল বিশেষত বরিশাল , ভোলা , বরগুনা, পটুয়াখালী ইত্যাদি জেলাতে বষা মৌসুম শেষ হবার পর ও এই রোগ পাওয়া যায় ।
অন্য নাম ঃ অ্যাপ্থওয়াস ফিভার , টাইগার হার্ট ডিজিজ

কিভাবে ছড়ায় ঃ
১। আক্রান্ত প্রানীর সংস্পশে আসলে
২। আক্রান্ত প্রানীর ব্যাবহার করা যে কোন যন্ত্রপাতি পুনরায় ব্যাবহার করলে ।
৩। আক্রান্ত প্রানী বহনকারী যে কোন গাড়ির সংস্পশে আসলে ।
৪।আক্রান্ত প্রানীর খামারে কাজ করা পরিহিত পোষাক এর মাধ্যমে ।
৫। আক্রান্ত প্রানীর খাদ্য হতে সংক্রমিত হতে পারে।
৬। বিভিন্ন গৃহপালিত প্রাণীর মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে।
৭। এছাড়া বিভিন্ন বন্য প্রাণীর মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে।
৮।এই রোগ সিমেন ,লালা, মূত্র,গবর,দুধ,ইত্যাদির মাধ্যমেও ছড়ায়।
৯। এছাড়া বিভিন্ন পাখির মাধ্যমেও এই রোগ বিস্তার লাভ করে ।
রোগ সৃষ্টির প্রক্রিয়াঃ
ইনফেকশন ঘটার পর ফ্যারিঞ্চ এবং শ্বাসতন্ত্রে ভাইরাসের প্রতিরুপ ঘটে
↓
রক্তের মধ্যে ভাইরাসের অনুপ্রবেশ ঘটে
↓
পরবতীতে সমগ্র শরীরের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে পরে , এরপর সেকেন্ডারী লক্ষণ সৃষ্টি করে , বিশেষত এপিথেলিয়াল টিস্যুতে
যে সব প্রানী আক্রান্ত হতে পারে ঃ
১।গরু
২। মহিষ ( যারা বেশি পানিতে থাকে )
৩।ছাগল
৪।শুকর
৫।হরিন
৬। বাইসন
৭।এন্টিলপ ( এক ধরনের হরিন)
লক্ষণ ঃ
১।মাত্রাতিরিক্ত লালা নিসঃরন
২। পানি এবং খাবার গ্রহণ কমে যাওয়া।
৩।জিহ্ববাতে ঘা হবে।
৪।পঙ্গুত্ব
৫।শরীরের লোমহীন/ কম লোমযুক্ত অংশ যেমন- ওলান, ভালভা, চোখের কনজাক্টিভাতে ভেসিকল/ গুটি গুটি পাওয়া যাবে।
৬।যদি কম বয়সের প্রানী আক্রান্ত হয় , তাহলে গ্যাস্ট্রোএন্টাইরাইটীস / বৃহদান্ত্রে ঘা হবে ,এবং মায়োকাডাইটিস হবে, এ ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার ৬০% পযন্ত হতে পারে ।
৭। জিহ্ববাতে এবং খুরের মাঝে ভেসিকল / গুটি গুটি পাওয়া যাবে ।


পোস্ট মটেম এ কি কি পাওয়া যায়ঃ
গ্রস লিসন /খালি চোখে যা পাওয়া যায় ঃ
১।ভেসিকল / গুটি গুটি পাওয়া যাবে আক্রান্ত প্রানির ঠোটে, জিহ্ববার উপরে , ভালভাতে, ওলানে, কনজাংক্টিভাতে।
২। গলকম্বল , তলপেট, পেরিনিয়ামে হালকা লক্ষন পাওয়া যাবে।
৩।তলপেট এবং ক্ষুদ্রান্ত্রে হালকা রক্ত ও পানি পাওয়া যাবে।
৪। আক্রান্ত প্রানীর হৃদপিন্ডের পেশীতে কিছু লক্ষণ পাওয়া যাবে বিশেষ করে বাছুর,ছাগল ,শুকরে।
মাইক্রোস্কপে যা পাওয়া যাবেঃ
১।হায়ালিন ডিজেনারেশন
২।হৃদপিন্ডের পেশীতে ক্ষত পাওয়া যাবে।
৩। মাঝে মাঝে নিউট্রফিল নামক পুজ সৃষ্টিকারী রক্তকনিকা পাওয়া যাবে।
কিছু গুরুত্বপূণ তথ্য ঃ
ক্ষুরা রোগের মোট ৭ টি সেরোটাইপ পাওয়া যায় ।
১। সেরোটাইপ –ও (O)
২।সেরোটাইপ- এ (A)
৩।সেরোটাইপ- সি (C)
৪।স্যাট -১(SAT-1)
৫।স্যাট-২(SAT-2)
৬।স্যাট-৩(SAT-3)
৭।এশিয়া-১(ASIA -1)
তবে বাংলাদেশে পাওয়া যায় ——–
১।সেরোটাইপ –ও (O)
২।সেরোটাইপ- এ (A)
৩।সেরোটাইপ- সি (C)
৪।এশিয়া-১(ASIA -1)
বাংলাদেশে ক্ষুরা রোগ কিভাবে প্রতিরোধ করবেনঃ
১।বাংলাদেশের সকল প্রানী হাসপাতালে ক্ষুরা রোগের ভ্যাক্সিন পাওয়া যায়্ , তাই আপনার প্রানীকে ক্ষুরা রোগের হাত থেকে বাচাতে নিয়মিত ক্ষুরা রোগের ভ্যাক্সিন দিন ।
২।নিয়মিত প্রানীর ব্যাবহার করা জিনিস পত্র জীবানুমুক্ত রাখতে হবে।
৩।মৃতপ্রানী ভালোভাবে মাটিতে পুতে রাখতে হবে ।
৪।আক্রান্ত প্রানী জবাই করতে হবে ।
৫।জনসাধারনের মধ্যে সচেতনতা বৃ্দ্ধি করতে হবে ।
৬। সাধারন মানুষকে ক্ষুরা রোগ সম্পকে ব্যাপকভাবে জানাতে হবে।
চিকিৎসাঃ
১।আক্রান্ত আংশে হালকা জীবানুনাশক দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে যাতে পরবতীতে কোন ব্যাক্টেরিয়া আক্রমন করতে না পারে, এ ক্ষেত্রে ২% কস্টিক সোডা, ৪% সোডা অ্যাশ , ২% এসিটিক এসিড জীবানুনাশক হিসেবে ভালো কাজ করে ।
২।নেবানল পাউডার দিতে হবে যদি পায়ে কোন লক্ষণ পাওয়া যায়।
৩।কস্টিক সোডা দিয়ে ধোওয়ার পর বোরাক্স দিতে হবে ।
৪।সালফাডাইমিডিন অথবা ব্রড স্পেক্টাম এন্টিবায়োটিক দিতে হবে যাতে করে পরবতীতে আর কোন ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন না হয় ।
কিভাবে ভাক্সিন দিতে হয় ঃ
ভাক্সিনের নামঃ এফ এম ডি ভাক্সিন
ডোজ ঃ ১ম ডোজ দিতে হয় ৬ মাস বয়সে , এরপর প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর মাংশপেশিতে ভাক্সিন দিতে হয় ।
আপডেটঃ (এডমিন কর্তৃক ছবি সংযোজিত)