এবারও দেশের পশ্চিমের ৬ জেলায় কোরবানীর বাজার ধরতে প্রায় ৭৫ হাজার গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। গতবছরের চেয়ে এবার সংখ্যা কম হবে বলে কৃষকরা জানায়। প্রতি গরুর গড় মূল্য ৫০ হাজার টাকা করে ধরলে মোট মূল্য দাঁড়ায় ৩৭৫ কোটি টাকা। কেরাবানীর আগে এসব গরু বিক্রি করা হয়ে থাকে। কোরবানীর পশু হাটগুলো ইতিমধ্যে জমে উঠেছে। হাটে প্রচুর গরু উঠছে। দাম গতবছরের চেয়ে চড়া বলে ব্যাপারিরা জানায়। আগে কোরবানী গরুর জন্য ভারতীয় গরুর দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো। দেশে কোরবানীর বাজার ধরার জন্য গরু মোটাতাজা করা শুরু হলে দৃশ্যপট পাল্টে যেতে থাকে। আজ থেকে ১৫-১৬ বছর আগে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলাতে কোরবানীর বাজার ধরতে গরু মোটাতাজা করার ব্যবসা শুরু হয়। এরপর পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও যশোর জেলাতে বাণিজ্যিকভাবে কোরবানীর বাজার ধরতে গরু মোটাতাজা করার ব্যবসার প্রসার ঘটে। ভারতীয় গরুর উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পায়। চাষির গোয়ালে-গোয়ালে সারাবছর ধরে সিন্ধি, ফিজিয়ান, শাহীওয়াল, নেপালী ও দেশি জাতের গরু পালান করা হয়। কেউ এক বা দু’টি, আবার কেউ ৫-৭টি গরু পালন করে। আর কোরবানীর আগে বিক্রি করে দেয়। আবার কেউ কেউ ঢাকা বা চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে কোরবানীর পশু হাটগুলোতে বিক্রি করে থাকে।
কুষ্টিয়া জেলা প্রাণীসম্পদ অফিসার ডা. আসাদুল হক জানান, এবার এ জেলায় ২২ হাজার গরু কোরবানীর বাজার ধরার জন্য মোটাতাজা করা হয়েছে। তিনি জানান, এসব গরুর গড় দাম ৮০ হাজার টাকা করে ধরা হয়েছে। যার বাজার মূল্য একশ’ ৬০ কোটি টাকা হবে বলে তিনি জানান। নিচে ২৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫-৭ লাখ টাকা দামেও এ জেলার ষাঁড় বিক্রি হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামের কোরবানীর পশু হাটগুলোতে কুষ্টিয়ার গরুর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। মাগুরা জেলা প্রাণীসম্পদ অফিসার শ্যামল কুমার পাল জানান, এ জেলায় এবার কোরবানীর বাজার ধরার জন্য প্রায় ১০ হাজার গরু পালন করা হয়েছে। এসব গরু এখন হাটে বিক্রি করা হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণীসম্পদ অফিসার ডা. কোহিনুর মিয়া জানান, এ জেলাতে ১২ থেকে ১৪ হাজার গরু কোরবানীর বাজার ধরতে মোটাতাজা করা হয়েছে। চাষিরা বাজারে এসব গরু ছাড়ছে। আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসার ডা. জিল্লুর রহমান জানান, এ উপজেলাতে ৬ হাজারের মত গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। এ উপজেলায় চোখ ধাঁধানো গরুর ছবি ও সাইজ ক্রেতাদের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ছবি দেখে গরুর দরদাম হয়ে থাকে। ঢাউস সাইজের একটি গরু ৩ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ৫-৭ লাখ টাকা দামে বিক্রি হয়ে থাকে। গরুর মালিকরা ঢাকাতে নিয়ে এসব গরু বিক্রি করে। মেহেরপুর জেলা প্রাণীসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার এ জেলায় কোরবানীর পশু হাটগুলোতে বিক্রির জন্য ৩ হাজার ৭৫১টি গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। ঝিনাইদহ জেলা প্রাণীসম্পদ অফিসার কানাই লাল স্বর্ণকার জানান, এ জেলাতে প্রায় ১২ হাজার গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। আর যশোর জেলাতেও অন্তত ১৫ হাজার গরু কোরবানীর বাজার ধরতে পালন করা হয়েছে।
গো-খাদ্যের দাম চড়ার কারণে গরু মোটাতাজা করার ব্যবসা এখন লাভজনক নয়। এক কেজি গমের ভুষি ৩০ টাকা, চালের খুদ ১৭-১৮ টাকা, ধানের কুড়ার কেজি ১০-১২ টাকা, এক আঁটি খড় ১২ টাকা এবং এক আঁটি কাঁচা ঘাসের দাম ৬ টাকা। একটি বড় সাইজের গরু পালতে দৈনিক ৩শ’ টাকা গো-খাদ্য লাগে বলে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার খামারি আব্দুর রহিম জানান। তিনি একটি ষাঁড় ৭০ হাজার টাকাতে কিনে একবছর পালন করেছেন। এ ষাঁড়টির দাম সাড়ে ৩ লাখ টাকা উঠেছে বলে তিনি জানান। একই গ্রামের ঝরনা বেগম জানান, গো-খাদ্যের চড়া দামের কারণে গরু মোটাতাজা করার ব্যবসা লাভজনক নয়। তিনি জানান, ভারতীয় গরু বেশি দেশে ঢুকলে দাম পড়ে যায়। তিনি দেশের খামারিদের স্বার্থে ভারতীয় গরু ঢোকা বন্ধের দাবি করেন।
বেলেপাড়া, উজানগ্রাম, হরিনারায়ণপুর, পান্টি, কাঁচেরকোল, শৈলকুপা, ভাটই, আলমডাঙ্গা, মুন্সিগঞ্জ, ডুগডুগি, জীবননগর, লাঙ্গলবাঁধ, শ্রীপুর, ভৈরবা, খালিশপুর, কোটচাঁদপুর, বারোবাজার, জামজামি, গাংনী, মেহেরপুর, আড়পাড়া, মহম্মদপুর, ঝিকরগাছা, নাভারন, চৌগাছা, কেশবপুর, মনিরামপুর, নোয়াপাড়া প্রভৃতি বড়-বড় পশু হাটগুলোতে প্রচুর গরু উঠছে। ২৫ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা দামের গরুর চাহিদা বেশি বলে কৃষক ও ব্যাপারিরা জানান। দাম গতবছরের চেয়ে বেশি। সাধারণ সাইজের দাম ৫ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কুষ্টিয়ার দেড়িপাড়া গ্রামের ব্যাপারি ইকবাল হোসেন শৈলকুপা পশুহাটে ইত্তেফাকের এ প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে জানান, গতবছর যে গরুর দাম ৫০ হাজার টাকা ছিল, এবার তা কিনতে হচ্ছে ৬৫-৭০ হাজার টাকাতে। বড় গরুর দাম নির্ভর করে ক্রেতার পছন্দের উপর। এসব গরুর স্থানীয় ক্রেতা নেই। ঢাকা ও চট্টগ্রামে এসব গরুর ক্রেতা। ব্যাপারিরা গৃহস্থের বাড়ি থেকে গরু কিনে ট্রাকযোগেও ঢাকাতে চালান নিয়ে যাচ্ছে।
তথ্য সূত্রঃ লেখাটি দৈনিক ইত্তেফাক এর ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি বিমল সাহা কর্তৃক গত ১৮ অক্টোবর, ২০১২ ইং তারিখে উক্ত দৈনিকে প্রকাশিত।
এই আর্টিকেলটির লেখক কে?
শুধু কপি আর পেস্ট করলেই লেখক বলা যায়?
এডমিন এর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
দুঃখিত, আমি এখনই সংশোধন করে দিচ্ছি। আর সেই সাথে ভবিষ্যতে মৌলিক আর্টিকেল উপহার দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছি। নতুন ব্লগার হিসেবে সকলের সহযোগীতা কামনা করছি।