ঢাকায় প্রাণী মেলা শুরু হচ্ছে ৮ নভেম্বর, চলবে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত (সংশোধিত সময়সূচী)

এনিমেল হেলথ্‌ কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন (আহকাব) বাংলাদেশে প্রথম বারের মতো আয়োজন করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক ডেইরি, মৎস্য ও পোষ্য প্রাণী মেলা। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনের এ মেলা শুরু হবে ৮ নভেম্বর, বৃহঃবার থেকে। মেলায় দেশি- বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানি তাদের পশু-স্বাস্থ্যের বিভিন্ন পণ্য, উপকরণ ও যন্ত্রপাতি প্রদর্শন করবে।
মেলা উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে আহকাবের সভাপতি মোমিন উদ দৌলা মূল বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি জানান, প্রদর্শনীতে ১০৬টি স্টল থাকবে। এতে অংশ নেওয়ার জন্য অনেক দেশি- বিদেশি কোম্পানি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। প্রায় সব স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, মেলা উপলক্ষে সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। ওই সেমিনারে দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সহসভাপতি রফিকুল হক, মহাসচিব ডা. সুলতান মাহামুদসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।


খামার বিচিত্রায় দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জনাব মোমিন উদ দৌলা বলেন, “আমাদের প্রানীজ শিল্প অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি শিল্প। তারপরেও ডেইরী, মৎস্য ও পোষাপ্রানী সেক্টরের উন্নয়নের জন্য অতীতে উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপ দেখা যায় নি।
আমাদের দৈনিক জনপ্রতি ১২০ মিলিলিটার হিসেবে বার্ষিক প্রায় ৭২ লক্ষ টন দুধের চাহিদা রয়েছে, এর মধ্যে আমরা মাত্র ২৬ লক্ষ টন উৎপাদন করতে পারি, বাকী প্রায় ৫২ হাজার টন গুড়াদুধ আমদানী করে চাহিদা মেটাতে হয়। এতে বছরে আমদানীর ক্ষেত্রেই প্রায় ১০,০০০ কোটি  টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে যা আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
নদীমাতৃক আমাদের দেশের মৎস্য সেক্টর একটি বিশাল সম্ভাবনাময় সেক্টর। আমাদের মিঠা ও লোনাপানির বিশাল জলরাশি আছে। আমরা এই বিশাল জলরাশির যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারছি না বিভিন্ন প্রতিকুলতার কারণে। বিশাল অবকাঠামোর তুলনায় আমাদের মৎস্য উৎপাদন অত্যন্ত অপ্রতুল। তারপরেও শুধুমাত্র চিংড়ি রপ্তানি করেই আমরা বার্ষিক প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমান ২০০০ কোটি টাকা আয় করছি। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমরা সমগ্র দেশবাসী, নীতিনির্ধারণী মহল এবং বিশেষ করে প্রাণীজশিল্প সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠিকে এটা অবহিত করতে চাই যে, শুধুমাত্র আমাদের বিদ্যমান মৎস্য অবকাঠামো সঠিকভাবে ব্যবহার করেই আমরা বর্তমানে উপার্জিত ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারকে ৩০০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে পারি।
এছাড়া দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য দুগ্ধ বা ডেইরী শিল্পের কারিগরি উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। কৃষিভিত্তিক আমাদের দেশের অর্থনীতিতে ডেইরী ও মৎস্য সেক্টরের উন্নয়ন হলে এই শিল্পে আমরা স্বয়ংস্বম্পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হবো, এতে আমদানীনির্ভরতা কমে দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠির পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। দেশের ডেইরী ও মৎস্য শিল্পের উন্নয়নের পাশাপাশি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ডেইরী ও মৎস্যের চাহিদা পুরণের লক্ষ্য নিয়েই এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এছড়াও আমরা আশা করছি এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমরা সংশ্লিষ্ট সকলকে সাথে নিয়ে এ সেক্টরের দ্রুত উন্নয়ণের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌছুতে পারবো ।”

প্রাণিজশিল্প কৃষিশিল্পের সম্পুরক সেক্টর। ব্যাংকঋণের ক্ষেত্রে কৃষিশিল্পে ২% এবং প্রাণিজশিল্পে প্রায় ১৭% সুদ রয়েছে। সরকারী এই স্ববিরোধী নীতি সম্পর্কে প্রাণিজশিল্পের শীর্ষস্থানীয় সংগঠনের নেতা হিসেবে জনাব মোমিন উদ দৌলার মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন-

“প্রানীজশিল্প অবশ্যই কৃষিশিল্পের একটি সম্পুরক সেক্টর। ব্যাংক ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে কৃষিশিল্প ২% সুদের সুবিধা ভোগ করলেও প্রাণীজশিল্পের ক্ষেত্রে এ সুবিধা দেয়া হচ্ছে না। কৃষিশিল্পে শুধু ২% সুদে ঋণসুবিধাই নয়, কৃষি উপকরণের ক্ষেত্রেও হাজার হাজার কোটি টাকার ভর্তুকী পাচ্ছে। রপ্তানির ক্ষেত্রেও রয়েছে বিশেষ ইনসেনটিভ। অথচ সম্পুরক খাত হওয়া সত্ত্বেও প্রানীজশিল্প এ সুবিধা ভোগ করতে পারছে না, যার ফলশ্রুতিতে এই শিল্পের বিকাশ যতটা আশা করা হয়েছিল ততটা হয়নি। খেয়াল করলে দেখবেন, আমরা প্রাণীজশিল্পে ব্যবসায়ের পাশাপাশি দেশের আপামর জনগোষ্ঠির আমিষ ও পুষ্টি চাহিদা পূরণে ব্যপক অবদান রাখতে পারছি।”

অন্য একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন-

“আমাদের প্রানীজ শিল্প অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি শিল্প। আপনারা হয়তো সকলেই জানেন যে, আমরা আমাদের চাহিদার তুলনায় অনেক কম দুধ উৎপাদন করে থাকি। চাহিদার বেশিরভাগই আমদানীকৃত গুড়াদুধ দিয়ে মেটানো হয়। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা মেটানোর জন্য দুগ্ধ শিল্পের কারিগরি উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। এদেশে প্রায় ২ কোটি ৪৫ লক্ষ গবাদিপশু আছে এবং ৯ লক্ষাধিক মহিষ আছে। এর মাঝে প্রায় ৪৯ লক্ষ গাভী এবং ৩ লক্ষ দুধ প্রদানকারী মহিষ রয়েছে। এদেশের দুধের মূল জোগানদাতা স্থানীয়জাতের গাভী। ৪৯ লক্ষ গাভীর মধ্যে প্রায় ৪২ লক্ষ গাভীই হলো স্থানীয়জাতের এবং ৭ লক্ষ হলো শংকরজাতের। দৈনিক মাথাপিছু ১২০ মিলিলিটার দুধের চাহিদার অনুকুলে বার্ষিক প্রায় ৭২ লক্ষ টন দুধের চাহিদা রয়েছে যার মধ্যে আমরা শুধুমাত্র ২৬ লক্ষ টন উৎপাদন করে থাকে। বাকী প্রায় ৫২ হাজার টন গুড়াদুধ আমদানী করে চাহিদা মেটানো হয়। আমরা শুধু মাত্র বিদ্যমান দুগ্ধ শিল্পকে উন্নয়ন করেই আরো প্রায় ৩৭ লক্ষ টন দুধ বেশি উৎপাদন করতে পারি। এটা ঠিক যে, এদেশের ডেইরী শিল্প বর্তমান অবস্থা থেকে রাতারাতি উত্তরণ ঘটাতে পারবে না। এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। উন্নতজাতের গাভী প্রবর্তনই এ থেকে উত্তরণের টেকসই প্রযুক্তি যা এদেশে অনেকটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে যেহেতু ডেইরী শিল্পে আমাদের চাহিদার তুলনায় ঘাটতি প্রকট, তাই আপাততঃ জরুরী ভিত্তিতে সর্বপ্রথমেই দেশী প্রজাতির গাভীকে শংকরায়নের মাধ্যমে বেশী দুধ উৎপাদনে সক্ষম গাভীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা। একই সাথে গাভীর প্রয়োজনীয় খাদ্যের জোগান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা।”

ভেটসবিডি  প্রাণিমেলার সর্বাঙ্গিন সফলতা কামনা করছে।

লেখকঃ ডাঃ তায়ফুর রহমান

ডাঃ তায়ফুর রহমান; ডিভিএম, এম এস, এমপিএইচ ; ন্যাশনাল টেকনিক্যাল এডভাইজার-এপিডেমিওলজি, জাতিসঙ্ঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা, ঢাকা; ব্লগ এডমিনিষ্ট্রেটর, ভেটসবিডি

এটাও দেখতে পারেন

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে অনলাইন গবাদি পশু শনাক্তকরণ এবং নিবন্ধন ব্যবস্থা চালুঃ জানা যাবে স্বাস্থ্য ও রোগের ইতিহাস

প্রাথমিকভাবে ৫০,০০০ পশু নিবন্ধিত হবে যা গ্রাহকদের পশুগুলোর স্বাস্থ্য ইতিহাস দেখার সুযোগ দিবে। প্রথমবারের মতো, …

২ মন্তব্য

  1. This Exhibition supposed to be on 8-10th November not in October, Thanks…….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.