গত রোববার রাজধানীর হাতিরপুল এলাকার ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে বেওয়ারিশ কুকুরের কামড়ে আহত হন ঢাকা সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী সুফিয়া বেগম (৩৮)। জলাতঙ্কের সংক্রমণ রোধে তাঁকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
ওই এলাকার বাসিন্দারা জানান, বেওয়ারিশ কুকুরের অত্যাচারে তাঁরা অতিষ্ঠ। দিনের বেশির ভাগ সময় গলিতে চার-পাঁচটি বেওয়ারিশ কুকুর ঘোরাফেরা করে। এ জন্য তাঁদের আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। বিশেষ করে শিশু-কিশোররা থাকে ঝুঁকির মধ্যে।
‘ঢাকা সিটি করপোরেশন কুকুর মারা বন্ধ রেখেছে। কিন্তু কুকুরের যন্ত্রণা তো আর বন্ধ হয়নি’, জানালেন ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের বাসিন্দা শিহাব উদ্দিন। তাঁর মতে, কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে শুধু বড় বড় কথা ও মানবিকতার দোহাই দিলে তো আর চলবে না।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, কুকুর মেরে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। বরং কুকুরকে টিকাদান ও পরিকল্পিত জন্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ পদ্ধতিতে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এ জন্য বাংলাদেশেও এ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
এ অবস্থায় আজ ২৮ সেপ্টেম্বর দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘সকলে মিলে কাজ করি, জলাতঙ্ক প্রতিরোধ করি’। জলাতঙ্ক প্রতিরোধে কুকুর না মেরে টিকাদান কর্মসূচির বিষয়টি মানুষকে জানানোর জন্য বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন তাদের সহায়তা করছে।
অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জলাতঙ্কের প্রধান বাহক হচ্ছে কুকুর। এশিয়া ও আফ্রিকায় জলাতঙ্কে আক্রান্ত ৯৯ শতাংশ মানুষ কুকুরের কামড়ের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। কিন্তু শত বছর ধরেও কুকুর মেরে জলাতঙ্ক প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও কুকুরকে টিকাদান কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। কুকুরকে টিকাদান করা হলে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ করা যেমন সম্ভব হবে, তেমন নিষ্ঠুর পদ্ধতিতে কুকুর নিধনও বন্ধ হবে।
কুকুরকে টিকাদান কর্মসূচিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে আন্তর্জাতিক সংগঠন ওয়ার্ল্ড সোসাইটি ফর দ্য প্রোটেকশন অব অ্যানিমেলস (ডব্লিউএসপিএ)। ডব্লিউএসপিএ জানায়, জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণে কুকুর নিধন অকার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণের জন্য সারা বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় দুই কোটি কুকুরকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। কিন্তু তার পরও প্রতিবছর প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ জলাতঙ্কে মারা যায়।
বাংলাদেশে বছরে জলাতঙ্কে মারা যায় দুই হাজারেরও বেশি মানুষ। পক্ষান্তরে কুকুরকে টিকাদান পদ্ধতি বৈজ্ঞানিক ও কার্যকর উপায়। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, তানজানিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে সফলতা পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ডব্লিউএসপিএ সূত্র জানায়, গত বছরের নভেম্বরে কক্সবাজার থেকে কুকুরকে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। এটি ছিল কুকুরকে টিকাদানের একটি পরীক্ষামূলক (পাইলট) প্রকল্প। প্রায় দেড় মাস ধরে চলা ওই প্রকল্পে কক্সবাজারের চার হাজার কুকুরকে টিকা দেওয়া হয়, যা সেখানকার মোট কুকুরের ৭০ শতাংশ। কক্সবাজারকে ওই প্রকল্পের আওতায় আনার পর সেখানে মানুষ ও কুকুরের মধ্যে জলাতঙ্ক রোগ কমে গেছে।
সূত্র জানায়, ওই পরীক্ষামূলক প্রকল্পের সফলতার পর সাতক্ষীরায় টিকাদান কর্মসূচি চালানো হয়। ২৬ সেপ্টেম্বর রংপুর বিভাগের আটটি জেলায় কুকুরকে টিকাদান কর্মসূচি শেষ হয়েছে। ৮ অক্টোবর থেকে পর্যায়ক্রমে রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলায়, সিলেটের তিনটি ও ঢাকার ১৭টি জায়গায় টিকাদান কর্মসূচি চালানো হবে। এভাবে আগামী নভেম্বরের মধ্যে দেশের ৩৫টি জেলায় কুকুরকে টিকাদান কর্মসূচি চালানো হবে।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক বেনজির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিকাদানের মাধ্যমে যদি একটি এলাকায় থাকা কুকুরগুলোর জলাতঙ্কের প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি করা যায়, তবে সেই এলাকায় জলাতঙ্ক প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। দেশের যেসব এলাকায় কুকুরকে টিকা দেওয়া হয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রায় ৭০ শতাংশ কুকুরকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে।’
কুকুরকে না মেরে টিকাদান কর্মসূচি কতটা কার্যকর—এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কুকুরকে টিকাদান কর্মসূচি জলাতঙ্ক প্রতিরোধের একমাত্র কার্যকর উপায় এবং এর মাধ্যমেই জলাতঙ্ক পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব।’ তিনি জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণের এ প্রকল্পের জন্য তিন কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জলাতঙ্ক রোগীদের জন্য প্রায় ১০ কোটি টাকার টিকা কিনেছে।
রেবিস ইন এশিয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৭ সাল থেকে বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস উদ্যাপনের পর থেকে ৭৭ লাখ কুকুরকে জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া হয়েছে। ১৮ কোটি ২০ লাখ মানুষকে জলাতঙ্ক সম্পর্কে স্বাস্থ্য শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
জলাতঙ্ক দিবসের কর্মসইচ: জলাতঙ্ক দিবস উপলক্ষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আজ সকালে একটি পথ শোভাযাত্রা ও ট্রাক শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে। পথ শোভাযাত্রাটি সকালে মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পর্যন্ত যাবে। এ ছাড়া সুসজ্জিত চারটি ট্রাকে ব্যান্ড পার্টির মাধ্যমে শহরের চার প্রান্তে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে প্রচারণা চালানো হবে। এই শোভাযাত্রার মাধ্যমে মানুষকে জানানো হবে, কুকুরকে টিকাদানের মাধ্যমে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এ ছাড়া জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে শনিবার সকাল ১০টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস সম্মেলনকক্ষে সেমিনারেরও আয়োজন করা হয়েছে।
সূত্র: আজকের প্রথম আলো
জলাতংক একটি গুরুত্বপূর্ন জুনুটিক ডিডিজ। কুকুর, শিয়াল, বাদুর ইত্যাদি জাতীয় প্রাণী ইহার প্রধান বাহক। এ রোগ নিয়ন্ত্রণে ভেটেরিনারিয়ান গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কিন্তু পুরো লেখাটিতে ভেটেরিনারিয়ানদের সংশ্লিষ্টতা তো দুরের কথা কোথাও একটি বারের জন্য নামটি পর্যন্ত উচ্চারিত হয়িন। এই বিষয়ে প্রফেশনের স্বার্থে আমাদের সচেতনা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।