অন্যান্য পাখির মতো মুরগিও তার ঠোঁটের সাহায্যে খাবার তুলে খায় এবং দাঁত নেই বলে সে খাবার চিবিয়ে খেতে পারে না। মুরগির মুখের ভেতর অনেক গ্রন্থি থাকে যা থেকে লালা নিঃসৃত হয় যা খাবারকে ভিজিয়ে দেয়, ফলে খাবার গিলতে সুবিধা হয়। আর লালায় কিছু এনজাইম থাকে যা খাদ্য বস্তু হজম শুরু করে। এরপর জিহ্বা সেই খাবারকে পেছনের দিকে ধাক্কা দিয়ে গলাঃধকরণে সহায়তা করে। এখানে একটি কথা বলে রাখা ভালো অনেকে মনে করে থাকেন যে মুরগির জিহ্বায় স্বাদ-গ্রন্থি নেই কিন্তু এই কথাটা ঠিক নয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে মুরগির জিহ্বায় প্রায় ২৪-৪০টি টেস্ট-বাড রয়েছে।
অন্ননালীঃ এরপর খাদ্য অন্ননালীতে প্রবেশ করে যা একটি নমনীয় টিউবের মতো এবং যা মুখকে পরিপাকতন্ত্রের অন্য অংশের সাথে সংযুক্ত করে। অন্ননালী খাদ্যকে ক্রপ-এ পৌছে দেয়।
ক্রপঃ ক্রপ বা খাদ্যথলী কেউ বা এটাকে টোনা বলে থাকে। এটি দেহ-গহ্বরের বাইরে গন্ডদেশে অবস্থিত। যেকোন খাবার বা পানি যা গেলা হয়েছে তা এখানে জমা থাকে যতক্ষণনা তা পরবর্তী অংশে পৌছানোর সময় হয়। যখন এই ক্রপ খালি হয় বা প্রায় খালি হয়ে আসে তখন এটা মস্তিস্কে ক্ষুধার অনুভূতি প্রেরণ করে এবং মুরগি তখন আরো খাদ্য গ্রহণ করে। মুখের লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত এ্যামাইলেজ খুব স্বল্প পরিমানে হজম ক্রিয়া শুরু করে যা এই ক্রপেই সমপন্ন হয়ে থাকে। মুলতঃ এটি সাময়িকভাবে খাদ্য সংরক্ষণের একটি আধার হিসেবে কাজ করে।
পাখিদের জন্য ক্রপ বিকশিত হলেও ডাইনোসরদেরও ক্রপ ছিল এবং এটি মুলতঃ দ্রুত এবং বেশি পরিমানে খাদ্য গ্রহণে সহায়তা করে থাকে। পরবর্তীতে ক্রপ থেকে খাদ্যবস্তু পরের ধাপে ধীরে ধীরে চলে যায়। তবে কখনও কখনও এই নিয়মের কিছুটা ব্যাত্যয় ঘটে এবং এটি impacted বা ‘backed up’ হয়ে যায় যাকে বলে crop impaction বা crop binding বা pendulous crop।
প্রোভেনট্রিকুলাস (The Proventriculus)ঃ
অন্ননালী ক্রপকে অতিক্রম করে প্রোভেনট্রিকুলাসকে ক্রপের সাথে যুক্ত করে। প্রোভেনট্রিকুলাসকে বলা হয় ‘true stomach’ এবং এটি glandular stomach বা গ্রন্থিময় পাকস্থলি। এখান থেকেই মুলতঃ digestion শুরু হয়।
মানুষের পাকস্থলির মতোই এখানে hydrochloric acid এবং digestive enzymes (যেমন: pepsin) খাবারের সাথে যুক্ত হয় এবং হজম শুরু করে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে যেহেতু এখানে খাদ্যবস্তু চুর্ণ-বিচুর্ণ হয় না তাই একে প্রোভেনট্রিকুলাস বলা হয়। কেননা ভেনট্রিকুলাস বা গিজার্ড শুরু হয় এই অংশের পর থেকে।
গিজার্ড (The Gizzard):
এই অংশটি পাখিদের বেলায় অনন্য। একে অনেক সময় ‘mechanical stomach’ বলা হয়। দুই প্রস্থ শক্তিশালী মাংসপেশী দ্বারা এটি গঠিত হয় এবং এটি পাখিদের দাঁতের কাজ করে থাকে।লালাগ্রন্থির পরিপাক রস সমেত খাদ্যবস্তু প্রোভেনট্রিকুলাস পার হয়ে এখানে এসে পাথর কণা বা Grit (যা পাখি খাদ্য গ্রহণের সময় খেয়ে থাকে) এর সহায়তায় চুর্ণ-বিচুর্ন হয়ে ভালোভাবে মিশে একাকার হয়ে যায়। এই পাথর কণাগুলো এখানে ততক্ষণ থাকে যতক্ষণ না এরা গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে পরিপাকতন্ত্রের অন্য অংশে যাবার জন্য প্রস্তুত হয়। আর এগুলো প্রোভেনট্রিকুলাস-এর এসিডের দ্বারা নরম হয়ে গিজার্ডে এসে শক্তিশালী মাংসপেশীর পেশনে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়।

ক্ষুদ্রান্ত (Small intestine)
গিজার্ড শেষ হওয়ার পরপরই duodenal loop এর দ্বারা শুরু হয়ে ileo-caecal-colon junction-এ এসে ক্ষুদ্রান্ত শেষ হয়। পূর্বের অংশের এসিডিক খাবার ডিওডেনামে এসে প্যানক্রিয়াস বা অগ্নাশয়ের ক্ষারীয় রস বা এনজাইমের দ্বারা neutralized হয়ে থাকে। এই এনজাইম প্রোটিন বিশ্লেষণ করে থাকে। এখানে লিভারের পিত্তথলী থেকে আসা পিত্তরস চর্বি হজমে সহায়তা করে। এই হজমকৃত খাদ্যরস ক্ষুদ্রান্ত দ্বারা শোষিত হয়ে লিভারে চলে যায় এবং লিভারে দেহ কোষ তৈরির প্রাথমিক কাজটি শুরু হয় এবং দেহে শক্তি যোগানও করে থাকে।
সিকা (Caeca)ঃ
সিকা হলো দুটি এক মুখ বন্ধ নল যা ফার্মেন্টেশন-এর জন্য জায়গা সরবরাহ করে। এখানে অ-হজমকৃত খাদ্যকণার microbial breakdown হয়। এতে সাধারনতঃ সরিষা বর্ণ থেকে গাঢ় বাদামী বর্ণের froth থাকে যা প্রতিদিন একবার করে excreted হয়ে থাকে।
বৃহদন্ত্র (Large intestine)ঃ
এটি খুব ছোট একটি অংশ এবং এটি খাদ্যব্সতু বিশেষতঃ পানি পুনঃশোষণের সাইট হিসেবে কাজ করে।
ক্লোয়েকা (Cloaca)ঃ
cloaca বা vent হলো digestive এবং urogenital system এর common chamber। এটি faeces ও urine ত্যাগে সাহায্য করে এবং eggs বা seminal fluid নিঃসরণের পথ হিসেবেও কাজ করে।