বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় “কৃত্রিম প্রজননের ফ্রাঙ্কেনস্টাইন ইনব্রিডিং” শীর্ষক নিবন্ধটি প্রকাশের পর বাংলাদেশে ডেইরী শিল্প নিয়ে ভাবেন বা এ শিল্পের সাথে বিভিন্নভাবে যুক্ত এমন অনেকেই অসংখ্য ইমেইল এর মাধ্যমে তাদের অভিমত, অভিজ্ঞতা এবং বিশেষজ্ঞ মন্তব্য জানিয়েছেন। অনেকে মনে করেন আমাদের প্রাণীসম্পদে ইনব্রিডিং সমস্যার সাথে সাথে আরও অনেকগুলো বিষয় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত। গাভী প্রতি দুধের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া ও দুধের বাজারমূল্য কম হওয়ায় অর্থাৎ উৎপাদিত দুধ ও পশুখাদ্য মূল্যের অনুপাতটি ক্রমশ নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে যাওয়ায় দুধ উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। আবার অনেকে মনে করেন ডেইরী খাতে সরকারের উদাসীনতা, পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং প্রানীস্বাস্থ্য সেবার অপ্রতুলতাও ডেইরী শিল্প বিকাসের অন্তরায়। বাস্তবিক অর্থে এ সবই অত্যন্ত প্রাসংগিক এবং ডেইরী উন্নয়নের বাধা।
মূলত, কৃত্রিম প্রজনন ও তার মাধ্যমে ক্রসব্রিডিং এর মুল উদ্দ্যশ্যই হল প্রাণীতে অধিক পরিমাণ উৎপাদন-বান্ধব ডমিন্যান্ট জিন এর সন্নিবেশ ও হেটারোসিস ঘটিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করা। এটি সুপ্রতিষ্ঠিত যে ক্রসব্রিডিং এর ফলে শুধুমাত্র প্রথম প্রজন্মেই আউটব্রিডিং ঘটে ফলে ১০০ ভাগ হেটারোসিস সংরক্ষিত হয় এবং ঐ আউটব্রিড প্রাণী হতে সবচেয়ে বেশী উৎপাদন পাওয়া যায়। আউটব্রিডিং এর বিপরীতে, ইনব্রিডিং হচ্ছে জেনেটিক দৃষ্টিকোণ থেকে নিকট সম্পর্কযুক্ত পিতামাতা হতে প্রজন্ম সৃষ্টির প্রক্রিয়া । ইনব্রিডিং এর ফলে প্রানীতে উৎপাদন-বান্ধব ডমিন্যান্ট জিনের হেটারোসিস বিনষ্ট হয়ে রিসেসিভ জিনের হোমোজাইগোসিটি বৃদ্ধি পায়। ফলে মারাত্মক ক্ষতিকারক রিসেসিভ জিনের সমন্বয় ঘটে প্রাণীতে উৎপাদন হ্রাস (দুধ বা মাংস) সহ বহু ধরনের জেনেটিক রোগেরও সৃষ্টি হয়। আউটব্রিড প্রজন্মের প্রাণীর মধ্যে পূনঃপূনঃ প্রজনন হলে ইনব্রিডিং প্রক্রিয়াটি শুরু হয়, ফলে পরবর্তী প্রজন্ম সমুহে আর কখনোই শতভাগ হেটারোসিস সংরক্ষিত হয় না। এই ইনব্রিডিং এর মাত্রা নির্ভর করে কতবার, কোন বিন্যাসে ও কি প্রক্রিয়ায় দুটি আউটব্রিড প্রজন্মের প্রানীর মধ্যে ব্রিডিং করানো হয়। এ প্রক্রিয়াটি যখন একটি বিরাট গোষ্ঠীতে বা পপুলেশনে ঘটে তখন এর ফলাফল হিসাবে ইনব্রিডিং ডিপ্রেশন দেখা যায়। সামগ্রিক ভাবে উৎপাদন হ্রাস বা স্থবিরতা এবং কখনো কখনো জেনেটিক রোগের উপস্থিতি দেখেও ইনব্রিডিং এর স্পষ্ট ধারনা পাওয়া যায়। মানুষের হিমোফিলিয়া, গবাদী প্রাণীতে ব্র্যাকিস্পাইনিয়া, কমপ্লেক্স ভারটিব্রাল ম্যালফরমেসন (CVM), বোভাইন লিউকোসাইট এডহেসন ডিজিজ (BLAD) ইত্যাদি জেনেটিক রোগসমূহ রিসেসিভ জিনের হোমোজাইগোসিটির ফলে সৃষ্ট।
গত ৪০ বছর বাংলাদেশে কৃত্রিম প্রজননের ফলে ২০ থেকে ২৫ লিটার দুধের গাভী যে তৈরি হয়নি তা কিন্তু নয়। সামগ্রিক ভাবে জাতীয় পর্যায়ে গবাদী প্রাণীতে ইনব্রিডিং হয়েছে বা হচ্ছে কিনা বুঝতে হলে একটি বা দুটি গাভীর উৎপাদন বা দেশের কোন একটি এলাকার খণ্ডচিত্র দিয়ে মূল্যায়ন করলে সঠিক হবেনা। বরং বিষয়টি কে দেখতে হবে পপুলেশন জেনেটিক্স এর দৃষ্টিকোণ হতে। অর্থাৎ , আমাদের সাভারস্থ কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রে প্রজনন ষাঁড়গুলোর মধ্যে কি ধরনের জিনপুল সংরক্ষিত আছে আর তা দেশব্যাপী সরবরাহের মাধ্যমে সামগ্রিক ভাবে আমরা কি পরিমাণ উৎপাদন বা ফলাফল পাচ্ছি? বিশ্ব খাদ্য সংস্থার রিপোর্টে দেখা যায়, ১৯৭৮-৭৯ সালের তুলনায় এখন দেশে ক্রসব্রিড গরুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়নি। স্পষ্টতই, এটি আমাদের প্রাণীসম্পদে ইনব্রিডিং ডিপ্রেশনেরই ফল। (বাকী অংশটি দেখুন এখানে )
সম্পূর্ণ নিবন্ধটি দৈনিক আমাদের সময়, দৈনিক আমাদের অর্থনীতি ও দৈনিক ইত্তেফাক -এ প্রকাশিত হয়েছে।
I got the article very interesting and believe that Dr. Siddiqui clearly unveil the real picture of faulty reproduction system in dairy animal in Bangladesh. I think our policy makers should consider his opinion seriously in order to make milk revolution in Bangladesh.
জিনিষটা আসলে কি?
ফ্রাঙ্কেনস্টাইন হচ্ছে মেরী শেলী কর্তৃক রচিত (1823) জগদ্বিখ্যাত উপন্যাস (Science Fiction) “ফ্রাঙ্কেনস্টাইন” এর মূল চরিত্র, যাকে পরীক্ষাগারে সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু পদ্ধতিগত ভুলের ফলে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন হয়ে উঠে এক ভয়ানক দানব যা পরবর্তীতে সে তার স্রষ্টাকেও কে ধ্বংস করতে চায়। এই নিবন্ধে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন শব্দটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত।