Dr. Peter C. Doherty হলেন একমাত্র ভেটেরিনারিয়ান যিনি নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার স্টেট ভেটেরিনারি অফিসার (State Veterinary Officer) ছিলেন। Specificity of the cell mediated immune defence নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের জন্য ১৯৯৬ সালে সুইস ফিজিশিয়ান Dr. Rolf M. Zinkernagel-এর সাথে যৌথভাবে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পান।
১৯৪০ সালে জন্ম নেয়া এই মহান বিজ্ঞানী অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড প্রদেশে বেড়ে উঠেন। স্কুল জীবনে কুইন্সল্যান্ড বিশ্বদ্যিালয়ের স্কুল অব ভেটেরিনারি পরিদর্শণ তাঁকে ভেটেরিনারি মেডিসিন বিষয়ে আগ্রহী করে তোলে। চিকিৎসা বিজ্ঞানী চাচাতো ভাইয়ের উৎসাৎসাহে ১৬ বছর বয়সে ভেটেরিনারি স্কুলে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং Food Producing Animal -এর রোগ নিয়ে গবেষণা করবেন বলে মনস্থির করেন।
ছোটবেলা থেকেই তিনি সমাজের রোগ-শোকে জর্জরিত মানুষদের সাথে সময় কাটাতেন এবং ভাবতেন এমন বিষয় নিয়ে গবেষণা করবেন যা ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দেবে এবং মানুষকে দুররোগ্য ব্যধি থেকে মুক্ত করবে। মূলত এসব চিন্তাধারাই তাঁকে পরবর্তীতে ফিজিওলজি ও মেডিসিনের মৌলিক বিষয়ে গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করে।
১৯৬৬ সালে তিনি BVsc ডিগ্রি অর্জন করেন এবং এরপর তিনি State Veterinary Laboratory-তে Diagnostic Pathology নিয়ে কাজ করেন এবং Bovine Leptospirosis ও Avian Influenza নিয়ে অধ্যয়ন করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি স্কটল্যান্ডের Moredun Research Institute-এ Experimental Pathologist পদ লাভ করেন। এখানে তিনি Diagnostic Neuropathology এবং ভেড়ার Louping Ill Virus নিয়ে অধ্যয়ন করেন। ১৯৭০ সালে তিনি প্যাথলজিতে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন।
ইম্যুনোলজিতে বিশেষ করে T-cells নিয়ে গভীর জ্ঞান অর্জনের জন্য তিনি ১৯৭২ সালে অস্ট্রেলিয়ার John Curtin School of Medical Research (JCSMR)-এ রিসার্চ ফেলো হিসেবে যোগ দেন। এখানে তিনি Immune Response to Viruses বিষয়ে বিশদ জ্ঞান অর্জন করেন।
মহৎ কীর্তি/মহান আবিষ্কার
JCSMR -এ তিনি ও তাঁর সহকর্মী Mouse’s Immune response to Viruses নিয়ে গবেষণা করবেন বলে মনস্থির করেন। এজন্য তাঁরা বিভিন্ন প্রজাতির ঈদুঁরকে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত করান এবং এর Immunological Response পর্যবেক্ষণ করেন। প্রথমে তাঁরা ভাইরাস আক্রান্ত কোষের In Vitro টেস্ট করে তাঁরা দেখেন যে, ভাইরাস সংক্রমনের ফলে সৃষ্ট T-cells গুলো আক্রান্ত কোষকে ধ্বংস করছে। কিন্তু তাঁরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেন যে, এক প্রজাতিতে সৃষ্ট T-cells গুলো অন্য প্রজাতির আক্রান্ত কোষকে ধ্বংস করছে না। এর কারন হিসেবে তাঁরা ব্যাখা করেন যে, ভাইরাস সংক্রমনের ফলে আক্রান্ত কোষের তক্বে (cell surface)-এর Histocompatibility Antigens গুলো পরিবর্তিত হয় এবং এ পরিবর্তনগুলো প্রজাতিভেদে ভিন্ন হয়। পূর্বে ধারণা করা হতো যে, ভাইরাস সংক্রমনের ফলে সৃষ্ট T-cells গুলো শুধু আক্রান্ত কোষ নয় এমকি শরীরের স্বাভাবিক কোষকেও ধ্বংস করে।
গবেষণা সমাপ্তির পর তাঁরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, পরিবর্তিত Histocompatibility antigens গুলোই মূলত T-cells গুলোকে শরীরের স্বাভাবিক কোষকে চিহ্নিত করতে সহায়তা করে এবং আক্রান্ত কোষকে ধ্বংস করে। এভাবেই ভাইরাস আক্রান্ত কোষসমূহ T-cells দ্বারা কিভাবে বা কোন পদ্ধতিতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় তার ব্যাখা আবিষ্কার হয়। তাঁদের এ আবিষ্কার T-cells নিয়ে গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত উম্মোচন করে।
তাঁরা বুঝতে পারেন যে, গবেষণালব্ধ সিদ্ধান্ত এবং ব্যাখাসমূহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের মৌলিক গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তাঁদের গবেষণালব্ধ ফলাফলকে তাঁরা ১৯৭৪ সালে বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী দ্যা ন্যাচার-এ প্রকাশ করেন। তাঁদের গবেষণালব্ধ পর্যবেক্ষণ পুরোপুরি বিতর্কের বাইরে ছিল না। কারন অনেক বিজ্ঞানী এর সমালোচনা করেন। তাঁরা মনে করতেন Histocompatibility Antigens গুলোর কাজের ক্ষেত্র আলাদা। পরবর্তীতে আরো দুঞ্চজন বিজ্ঞানীর গবেষণার ফলাফল Dr. Doherty ও Dr. Zinkernagel-এর আবিষ্কারকে সমর্থন করে।
ক্যারিয়ারের মধ্যগগণ ও নোবেল প্রাপ্তি
পরবর্তীতে Dr. Doherty ফিলাডেলফিয়ার Wistar Institute-এ যোগ দেন এবং সেখানে তিনি University of Pennsylvania-এর গবেষকদের সাথে কাজ শুরু করেন। Influenza থেকে শুরু করে তিনি Rabies, Multiple Sclerosis ইত্যাদি রোগ নিয়ে গবেষণা করেন।
১৯৮২ সালে তিনি পুনরায় JCSMR-এ ফিরে আসেন এবং Department of Experimental Pathology-এর প্রধান হিসেবে যোগ দেন। Immunology-তে গবেষণা করার নিমিত্তে তিনি ১৯৮৮ সালে আবার St. Jude Children’s Research Hospital-এ চলে আসেন। ৮০ ও ৯০ঞ্চর দশকে তিনি আন্তর্জাতিক প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (ILRI)-এর Board Member হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৬ সালে নোবেল কমিটি Dr. Doherty-কে ফোনে জানায় দুই দশক পূর্বে আবিষ্কৃত ফলাফলের জন্য তিনি এবং Dr. Zinkernagel যৌথভাবে এবছর চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পরষ্কার লাভ করেন। এরপর ২০০২ সালে তিনি University of Melbourne-এর ভেটেরিনারি অনুষদে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি University of Melbourne এবং St. Jude Children’s Research Hospital-এ তাঁর শিক্ষকতা ও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বর্তমান প্রয়াস
তাঁর চিন্তা ও গবেষণার বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে Immunology। তিনি Influenza Virus-কে মানুষের সামনে মূর্তিমান আতংক মনে করছেন। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে যেখানে Avian Influenza-র কারনে মিলিয়ন মিলিয়ন মুরগী ধ্বংস করতে হচ্ছে এবং এতে করে ঐসকল দেশের অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। বর্তমানে তিনি গবেষণা থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য বইগুলো হচ্ছে-
The Beginner’s Guide to Winning the Nobel Prize- যা ২০০৫ সালে প্রকাশিত হয়। এবইয়ে তিনি কেন ও কিভাবে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার উদঘাটন করেছেন অত্যান্ত সহজ ও সাবলীলভাবে তুলে ধরেছেন।
A Light History of Hot Air- এটি ২০০৭ সালে প্রকাশিত হয়। এবইয়ে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনসহ অন্যান্য ইস্যুগুলি নিয়ে নিজের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এবছর আরও দুটি বই প্রকাশ হতে পারে। একটির সম্ভাব্য শিরোণাম হলো Sentinel Chicken এবং অন্যটি হলো A Guide to Pandemics।
নোবেল জেতার পর থেকে তিনি নিয়মিত বিভিন্ন ভেটেরিনারি কমিউনিটি/সেমিনার/সিম্পোজিয়াম-এ বক্তৃতা করছেন। তিনি ভেটেরিনারি শিক্ষার্থীদের গবেষণায় মনোযোগী করার জন্য নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর মতে ভেটেরিনারি পেশা নিঃসন্দেহে একটি মহৎ সেবামূলক পেশা। আমরাও তাই মনে করি। তাঁর নোবেল প্রাপ্তিতে ভেটেরিনারিয়ান হিসেবে আমরা গর্ববোধ করি। বাংলাদেশের ভেটেরিনারিয়ানদের পক্ষ থেকে তাঁকে জানাই অভিনন্দন। জয় হোক ভেটেরিনারি পেশার।
বি.দ্র. বৈজ্ঞানিক অনেক শব্দগুচ্ছকে ইংরেজিতে রাখা হয়েছে বলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
নিচে মন্তব্য করে আর্টিকেলটি সম্পর্কে আপনার অনুভূতি ব্যাক্ত করুন ।
সূত্র: এখানে ।
ভেটসবিডি নীতিমালা ১.৪ অনুসারে টেকনিক্যাল শব্দগুলি ইংরেজিতে লিখা যাবে। এসব শব্দের বাংলা করলে তা অনেক সময় বোঝা কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাই এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করার কিছু নেই।— এডমিন |
দারুন! মঈন, দারুন একটা আর্টিকেল লিখেছ! সত্যিই ওনার জন্য আমরা গর্বিত। তোমাকেও ধন্যবাদ এমন একটা চমৎকার আর্টিকেল শেয়ার করার জন্য।
শামীম তোমাকে ধন্যবাদ। কারন ভেটসবিডি চালু হয়েছে বলেই কিছু লিখতে পারছি ।
আমি একজন ভেটেরিনারিনারিয়ান হিশেবে নিজেকে নিয়ে গরব করি। কিনটু খারাপ লাগে জখন দেখি পাস করার পরে আমরা আর আমাদের মহান পেসায় থাকতে চাইনা, অন্য পেশায় চলে জেতেই পছন্দ করি। অথচ, এই সব মহান বিজ্ঞানীদের পদাঙ্ক অনুসরন করলে আমাদের দেশটা অনেক এগিএ যেতো। আফসোস…………….। কিছু মনে করবেন না আমার এই ওডভুট বানান ডেখে, আমার পিসি টে বাংলা ফনট না ঠাকার কারনে এই ওনাকানখিটো ভুল বানানেই লিখটে হলো।
আপনি ঠিক বলেছেন । আমদের এই নিয়ে চিন্তা করা উচিত ।
খুব ভাল লাগল। সুন্দর একটি আর্টিকেল।
ধন্যবাদ সাগর, তোমার মন্তব্যের জন্যে।
টুমি ভাল লিখছ
I really feel proud as a Veterinarian for a Noble Prize Winner Veterinarian also reading your article. Though I knew it earlier but you are the person who circulated the information into a community. From your profile I came to know you are now working at ICB. Usually earlier Veterinarian who are not directly engaged in the related sector forget their identity as a Vet. You are the person though working in a very different sector you didn’t forget your identity and for that I’m really proud of you too.