প্রিয় পাঠক, আমাদের মধ্যে অনেকেরই মনে পোল্ট্রি নীতিমালা নিয়ে একটা ধুম্রজাল তৈরি হয়ে আছে। আদৌ পোল্ট্রি নীতিমালা আছে কিনা, থাকলে তা কবে পাশ হলো, তাতে কি আছে, না কি কোন নীতিমালাই নেই ইত্যাদি সংশয় বা জিজ্ঞাস্য অনেকেরই মনে উঁকি দেয়। যাদের মনে এমন প্রশ্ন উঁকি দেয় তাদেরকে বলছি, হ্যা নীতিমালা আছে। যা “জাতীয় পোল্ট্রি উন্নয়ন নীতিমালা ২০০৮” নামে পাশ হয়। আর এতে কি আছে তা নিয়ে আমি এখানে ধারাবাহিকভাবে লিখব।
আজ ১ম পর্ব
প্রথমেই দেখে নিই কি কি বিষয় রয়েছে এই নীতিমালায়-
১। ভূমিকা
২। সংজ্ঞাসমূহ
৩। জাতীয় পোল্ট্রিনীতির উদ্দেশ্যাবলী
৪। জাতীয় পোল্ট্রি উন্নয়ন নীতির প্রয়োগ ও পরিধি
৫। পোল্ট্রিনীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রসমূহ
৬। পোল্ট্রিনীতি বাস্তবায়ন কৌশল
৭। উদ্যোক্তা উন্নয়ন
৮। সম্প্রসারণ
৯। মাননিয়ন্ত্রণ
১০। বিবিধ
১.০ ভূমিকা
১.১ পোল্ট্রি বলতে বুঝায় পাখি জাতীয় যে সকল প্রজাতি মানুষের তত্ত্বাবধানে থেকে বংশবৃদ্ধি করে এবং মানুসের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে যেমনঃ হাঁস, মুরগি, কোয়েল, কবুতর, টার্কি ইত্যাদি। পোলী শিল্পের উন্নয়ন বলতে পোল্ট্রি ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পণ্যের বিজ্ঞানসম্মত উৎপাদন, ব্যাবস্থাপনা বা বাজার ব্যাবস্থাপনার উন্নয়নকে বুঝায়।
১.২ বাংলাদেশের পোল্ট্রি পালন পদ্ধতি প্রধানত দু’ভাগে বিভক্ত। একটি হলো ঐতিহ্যগতভাবে পরিচালিত পারিবারিক পদ্ধতি এবং অন্যটি বাণিজ্যিক পোল্ট্রি পালন পদ্ধতি। গ্রামীন এলাকায় প্রায় ৮০ ভাগ বাড়িতে পারিবারিক পদ্ধতিতে হাঁস-মুরগি পালন করা হয়। বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী উন্নত কৌলিক মানের পোল্ট্রির জাত উন্নয়নে পারিবারিক পোল্ট্রির কৌলিক বৈশিষ্ট (Genetic trait) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১.৩ বর্তমানে দেশে মোট পোল্ট্রির সংখ্যা প্রায় ২৪৬ মিলিয়ন। ডিম উৎপাদনে বাণিজ্যিক ও পারিবারিক খামারের অনুপাত প্রায় সমান সমান এবং মাংস উৎপাদনে বাণিজ্যিক ও পারিবারিক খামারের অনুপাত প্রায় ৬০ঃ৪০। পোল্ট্রি শিল্পটি কম পুঁজি নির্ভর ও অধিক শ্রমঘন হওয়ায় দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও দারিদ্র বিমোচনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পোল্ট্রি শিল্পে বিনিয়োগকৃত অর্থের পরিমান প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং শুধুমাত্র বাণিজ্যিক পোল্ট্রিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৫০ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং পোল্ট্রির উন্নয়ন পরিকল্পনায় বাণিজ্যিক ও পারিবারিক পোল্ট্রি সমান গুরুত্ব বহন করে। সরকারের ভূমিকা মূলত মান উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সেবা, প্রশিক্ষণ, সম্প্রসারণ ও গবেষণা কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ থাকবে। পোল্ট্রি উন্নয়নে বেসরকারি খাত মূখ্য ভূমিকা পালন করবে এবং সরকার সহায়তাকারীর ভূমিকা পালন করবে।
১.৪ বাংলাদেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর আমিষের চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন, জীববৈচিত্র সংরক্ষণ, জাত উদ্ভাবন ও উন্নয়নে পারিবারিক পোল্ট্রির কৌলিক বৈশিষ্ট সংরক্ষণ, বাজার সৃষ্টি, পোল্টির স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির পূর্বশর্ত হিসেবে একটি উন্নয়ন-বান্ধব পোল্ট্রি নীতি প্রয়োজন। এতদুদ্দেশ্যে সরকার জাতীয় পোল্ট্রি উন্নয়ন নীতিমালা, ২০০৮ প্রণয়ন করছে।
আজ এ পর্যন্তই। আগামী পর্বে থাকবে সংজ্ঞাসমূহ ও জাতীয় পোল্ট্রি নীতির উদ্দেশ্যাবলী।