গত ২০/০৩/২০১২ তারিখ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়-এর মাননীয় মন্ত্রী জনাব আব্দুল লতিফ বিশ্বাস এর সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পোল্ট্রী শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত সকল পর্যায়ের সংস্থা/Stacholder গণের সাথে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় সভার শুরুতেই বলেন, বাজারে যেহেতু অসুস্থ মুরগি পাওয়া যাচ্ছে এবং ঢাকার বাহির থেকে অসুস্থ মুরগি বাজারে আসছে এবং দু’জন মানুষের সংক্রমিত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে, তাই জরুরী ভিত্তিতে ঢাকার চারপাশে চেক পোস্ট স্থাপন করা হয়েছে এবং ঢাকার লাইভ বার্ড মার্কেটসমূহের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক সার্ভেইলেন্স জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া আরও কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সে বিষয়ে আলোচনার আহ্বান জানালে শুরুতেই অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রাণিস্বাস্থ্য ও প্রশামন) এবং সিভিও বাংলাদেশ, ডাঃ মোছাদ্দেক হোসেন একটি প্রতিবেদন পেশ করেন। প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশে ২০০৭ সাল থেকে ২০১২ এর মার্চ পর্যন্ত মোট ৫৪৫ টি আউট ব্রেক হয়েছে। তার মধ্যে ২০১২ সালে মার্চ পর্যন্ত ১৬টি আউট ব্রেক হয়েছে। রোগটি সাধারনত বাংলাদেশে শুষ্ক এবং কম আদ্রতার সময় যেমনঃ ফেব্রুয়ারি হতে মার্চ মাসে বেশী দেখা দেয়। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোট ৫২টি জেলা আক্রান্ত হয়েছে, তবে পার্বত্য জেলাগুলি কখনই আক্রান্ত হয়নি , কারণ পার্বত্য জেলাসমূহে সবসময় আদ্রতা বেশি থাকে। বাংলাদেশে ২০০৭ সালে ভাইরাসের যে ক্লেইড পাওয়া গিয়েছিল, ২০১১ সালে আরো অতিরিক্ত ২টি ক্লেইড পাওয়া যায়। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোট ৬জন মানুষ আক্রান্ত হলেও কোন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। বাংলাদেশসহ এশিয়ার প্রায় ১২টি এবং আফ্রিকার ২টি দেশে বর্তমানে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে ঢাকার লাইভ বার্ড মার্কেটগুলিতে এবং ঢাকার আশেপাশের জেলাগুলিতে কিছু সংক্রমিত মুরগি পাওয়ার প্রেক্ষিতে মংস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক সার্ভেলেন্স ও মনিটরিং এর মাধ্যমে সব্বোর্চ সতর্কতা অবলম্বনসহ ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে ১২টি চেক পোস্ট স্থাপন করা হয়েছে মর্মে সভায় জানানো হয়।
সিভিও আরো জানান বর্তমান অবস্থা মোকাবেলার জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক ঢাকার লাইভ বার্ড মার্কেট প্রতিদিন তদারকি করার জন্য একাধিক কর্মকর্তা ও কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এবং মনিটরিং করার জন্য ১০টি টিম গঠন করা হয়েছে। অসুস্থ মুরগির উৎস সনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, মার্কেটগুলোর বায়োসিকউরিটি ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য প্রচার-প্রচারণা এবয় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম যেমনঃ স্প্রে মেশিন, জীবাণুনাশক, মাস্ক, হ্যাণ্ড গ্লোভস ইত্যাদি সরবরাহ করা হচ্ছে। বর্ণিত কার্যক্রমকে জোরদার করার জন্য মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, সিটি কর্পোরেশন, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং পোল্ট্যী ব্যবসায়ীদের অধিক সহযোগীতা কামনা করেন। প্রসঙ্গতঃ তিনি বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম চেক পোস্টে ৩টি অসুস্থ মুরগিবাহী ট্রাক আটকের কথা উল্লেখ করে ব্যবসায়ীদের এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। জনগণের সচেতনতা ছাড়া উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়।
সভায় এগ প্রোডউসারস এসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, কৃষি খাতের মতো পোল্ট্রী খাতে ভর্তুকি বৃদ্ধিসহ অসুস্থ মুরগি কালিং এর যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান না করা হলে ব্যবসায়ীগণ কর্তৃক অসুস্থতার তথ্য গোপন করা হবে। তাই ক্ষতিপূরণের অর্থ বৃদ্ধি করতে হবে।
ব্রিডার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, এবার অনেক বেশি খামার এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্ত হয়েছে এবং ডিম ও মুরগি উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। তাই সঠিক তথ্য মোতাবেক কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করে পোল্ট্রী শিল্পকে রক্ষার জন্য তিনি আবেদন জানান। এ ব্যপারে পোল্ট্রী ইণ্ডাসট্রিজ এসোসিয়েশনের সভাপতিসহ সভায় উপস্থিত পোল্ট্রী ব্যবসায়ীগণের অনেকেই ভ্যাক্সিনেশনের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত জানতে চান। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় জানান, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ন্ত্রণ ভ্যাকসিন ব্যবহারের বিষয়টি স্বাস্থ্য মণ্ত্রণালয়ের জয়েণ্ট কমিটি (JTC) অথবা আরো উচ্চ পর্যায়ের মাল্টি সেক্টরাল টাস্ক ফোর্সের সভায় উপস্থাপন এবং আলোচনাপূর্বক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
ঢাকা সিটিকর্পোরেশন(উত্তর) এর প্রশাসক লাইভ বার্ড মার্কেটসমূহে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি, জীবনিরাপত্তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় হতে প্রস্তাব করা হলে লাইভ বার্ড মার্কেট সমূহ সপ্তাহে ১দিন বণ্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। তিনি প্রসঙ্গত আরো বলেন, ক্ষতিপূরণের অর্থের চেয়ে দেশপ্রেম জরুরী। যদি বিশ্ব ব্যাংক প্রকল্পের মাধ্যমে এভাবে ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়া বন্ধ করে দেয় এবং সরকারও যথেষ্ট ভর্তুকি না দিতে পারে তাহলে কি অসুস্থ মুরগি খাইয়ে ব্যবসায়ীগণ জনগণকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবেন? তিনি এ রোগ মোকাবেলায় সকলের সদিচ্ছা কামনা করেন।
প্রতিশ্রুতির বিষয়ে সম্মতি জানিয়ে সভায় উপস্তিত স্থানীয় সবকার বিভাগের যুগ্মসচিব এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ন্ত্রণে সিটিকর্পোরেশনের এবং পৌরসভাসমূহের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগীতার আশ্বাস দেন। তিনি উল্লেখ করেন, ভ্যাকসিনেশনের সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী হবে কেননা ভ্রাকসিনেশনের ফলে ক্লেইড পরিবর্তনসহ পোল্ট্রীতে রেসিডুয়ার এফেক্ট এর মাধ্যমে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার জীবাণু ব্যাপকভাবে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হবে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে জীবনিরাপত্তা নিশ্চিত করাই সর্বোত্তম উপায়। তিনি র্পর্বে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছেন বিধায় তিনি জানেন, অ্যানথ্রাক্সের মতো ভয়াবহ রোগ প্রতিরোধের অভিজ্ঞতা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের রয়েছে। সবাই যথাযত দায়িত্ব পালন করলে বর্তমনের এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জাও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ঢাকা সিটিকর্পোরেশন (দক্ষিণ) জানান যে, তাঁরা ইতিমধ্যে ভেটেরিনারি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব প্রদান করেছেন এবং সভার আলোচনা অনুযায়ী পরবর্তী সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেন।
বিএলআরআই-এর মহাপরিচালক এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা শহর এবং অন্যান্য জেলা শহরগুলোতে ক্রমান্বয়ে লাইভ বার্ড মার্কেট বন্ধ করে শহরের বাহিরে ল্যাণ্ডিং স্টেশনসহ প্রোসেসড/ড্রেসড মুরগি বেচাকেনা চালুর উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিধ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক বলেন, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। যথাযথ পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং জীবনিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সভায় এ ভ্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সবশেষে মাননীয় মন্ত্রী উল্লেখ করেন, মৎস্য ও প্রানিসম্পদ মন্ত্রণালয় অধিদপ্তর এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন স্টেক হোল্ডাদের সমন্বয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেঅ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সাতে সাথে অন্যান্য সংস্থার বিশেষ করে স্থানীয় সরকার, সিটিকর্পোরেশন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পুলিশ ও আনসার বাহিনী এবং পোল্ট্রী শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন পর্যায়ের সংগঠন ও ব্যাক্তিবর্গের একান্ত সহযোগীতাও প্রয়োজন। যার যার অবস্থান থেকে সার্বিক সহযোগীতা প্রদানের জন্য তিনি সকলকে অনুরোধ করেন। তিনি আরো জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জয়েন টেকনিক্যাল কমিটি (JTC) গত বৎসর ভ্যাকসিনেশনের বিপক্ষে মতামত দিয়েছিলেন। তাই ভ্যাকসিনেশনের বিষয়টি উক্ত কমিটি বা আরো উচ্চ পর্যায়ের এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রান্ত মাল্টি সেক্টরাল টাস্ক পোর্সের সভায় উপস্থাপন এবং আলোচনা পূর্বক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সচিবসহ প্রশাসনের বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।