মাংসের চাহিদা মিটাতে পারে বেলজিয়ান ব্লু

বিশ্বের অন্যতম গরু উৎপাদনকারী দেশ হল বেলজিয়াম। দেশটির অন্যতম বা বিখ্যাত গরুর জাতের নাম হচ্ছে “বেলজিয়ান ব্লু” বা নীল গরু। নানা নামেই ডাকা হয় এ গরুকে। যেমন “হোয়াইট ব্লু” “ব্লু হোয়াইট”,”হোয়াইট ব্লু পাউন্ড” সহ আরো অনেক নামে। গরুটির নাম আসলে গরুর গায়ের রঙের উপর নির্ভর করে। গরুতে সাদা রঙের আধিক্য বেশি হলে নাম হয় হোয়াইট ব্লু কাউ। নীল রঙের আধিক্য হলে নাম হয় ব্লু ব্ল্যাক।


বেলজিয়ান ব্লু গরুর ওজন হয় গড়ে কমপক্ষে ৮০০ কেজি। বাংলাদেশি জাতের গরুগুলোর চেয়ে বেলজিয়ান ব্লুর ওজন গড়ে অন্তত ৫ গুন বেশি। আর বেলজিয়ান ব্লু ষাড়েঁর ওজন হয় গড়ে কমপক্ষে ১ হাজার ১০০ থেকে ১২৫ কেজি পর্যন্ত।

বেলজিয়ান ব্লু জাতটি ষাটের দশকে মধ্য বেলজিয়াম ও বেলজিয়ামের ওপরের দিককার অঞ্চলে প্রথম বিকাশ লাভ করে। ডাবল মাসলিং বৈশিস্ট্যের জন্য দ্রুতই বিখ্যাত হয়ে ওঠে এই জাত। এই বিশাল গুরুতে রয়েছে থরে থরে মাংসপেশি। এর পিঠে কুঁজ নেই্। একদম সমান। জন্মের তিন বছরের ভেতর এর ওজন বেড়ে দাঁড়ায় ৭৫০ কেজি। একদিন বয়সী বাছুরের ওজন হয় ৬৫ কেজি যার কারণে বেশিরভাগ বাছুরই প্রসব করতে সিজারিয়ান প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হয়। বাছুরগুলো প্রতিদিন প্রায় ৫ লিটার দুধ খায়।  তিন মাস বয়স থেকে বাছুরগুলোকে দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেওয়া হয় দানাদার খাদ্য। অত্যন্ত মানসম্পন্ন ও পুষ্টিকর খাবার খেয়ে দ্রুত বেড়ে ওঠে এরা।

এসব গরুতে কোন ধরনের এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় না। বেলজিয়ান ব্লুর স্বাভাবিক বৃদ্বিই এ রকম। মিয়োস্ট্যাটিন জিনের মিউটেশনের জন্য এ রকম বৃদ্বি হয়ে থাকে। গবেষণা বলছে, বেলজিয়ান ব্লু জাতটির শরীরে আছে দুই ধরনের মিয়োস্ট্যাটিন জিন। ডাবল মাসলিং বৈশিষ্ট্যের এই জাত বিশ্বের যেকোন মাংসের গরুর থেকে বেশি মাংস দিয়ে থাকে।

একটি হিসাব করে দেখা যায়, আমাদের দেশি গরুর গড়ে মাংস হয ২০০ কেজি বা ৫ মণ। বিশেষ ব্যবস্থায় লালন পালনের মধ্য দিয়ে দেড় থেকে সর্ব্বোচ সাড়ে আট বা নয় মণের মধ্যে ওঠানামা করে একটি গরু থেকে প্রাপ্ত মাংসের পরিমাণ। ঠিক এর বিপরীতে প্রাকৃতিকভাবেই বেলজিয়ান ব্লু জাতটির মাংস আসে গড়ে ৮০০ কেজি বা ২০ মণ থেকে ২৫ মণ পর্যন্ত। এই পরিমাণ মাংস পৃথিবীর আর কোন গরু থেকে আসে না। যে কারণে সংখ্যা যাই হোক না, মাংসের চাহিদার প্রশ্নে আমাদের দেশে উৎপাদিত গরু কোনভাবেই যথেষ্ট নয়। এ ক্ষেএে বেলজিয়ান ব্লু জাতটিকে যদি দেশে এনে প্রয়োজনীয় গবেষণা সম্পন্ন করে তা খামার পর্যায়ে পেীছে দেয়া যায়, তাহলে সহজেই পূরণ করা যেতে পারে দেশের মাংসের চাহিদা। ইতিমধ্যে এই জাত ইউরোপ, ব্রাজিল, আমেরিকা, কানাডা এবং নিউজিল্যান্ডে ব্যাপকভাবে লালন পালন করা হচেছ।

উল্লেখ্য দেশে মাংস উৎপাদন বাড়ানোর জন্য গত ২০০৮-১০ অর্থবছরে প্রাণিস্পদ অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের আওতায় খামার পর্যায়ে লালন পালন শুরু হয়েছে বিখ্যাত একটি আমেরিকান জাত “ব্রাহমা” এর। ইতিমধ্যে দেশের ৮০ টি উপজেলার খামারে চলছে এই জাতের গরুর লালন পালন, যার ফলাফল এখন পর্যন্ত যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর খামার পর্যায়ে লালন পালন করে ” ব্রাহমান” ও  “বেলজিয়ান ব্ল” এই দুই জাতের ভেতর একটি তুলনামূলক গবেষণা চালাতে পারে। যে গরুর মাংসের মান ও পরিমান যথাক্রমে ভাল এবং বেশি হবে, সে গরুটি বাংলাদেশে কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক গবেষণা, মাঠপর্যায়ের প্রযুত্তি, গভীর উপলদ্বি।

লেখকঃ ডা: আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সাইদুল হক

আবুল হাসনাত মোঃ সাইদুল হক, ডিভিএম।

এটাও দেখতে পারেন

What heat stress does in poultry

যে ৪ উপায়ে বিটেইন (Betain) হিট স্ট্রেস মোকাবিলায় কাজ করে

হিট স্ট্রেস (heat stress) গবাদিপশু ও পোল্ট্রি খামারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা, যা ওজন কমায়, …

একটি মন্তব্য

  1. how I can fiend this cow

    I need to start Bangladesh cow farm please help ne
    please send me email

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.