টার্কি মূলত মেসোআমেরিকান (মেক্সিকো এবং কেন্দ্রীয় অঅমেরিকা) অঞ্চলের বন্য প্রজাতির এক ধরনের পাখি। আমেরিকাতে ইউরোপীয় কলোনী স্থাপনের পূর্বে এই পাখিকে মেসোআমেরিকায় সর্বপ্রথম গৃহপালিত পাখি হিসেবে পালন শুরু করা হয়। এই বন্য পাখির বহু প্রজাতি মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকার বনাঞ্চলে এখনো দেখ যায়। এটি এভিস শ্রেণীর অর্ন্তভুক্ত ফ্যাসিএনিডি (Phasianidae) পরিবারভূক্ত মিলিএগ্রিস গণের “গ্যালাপাভো ” প্রজাতির গৃহপালিত পাখি। টার্কি পাখির বাচ্চা দেখতে মুরগীর বাচ্চার মত হলেও পরিপূর্ণ বয়সে বদলে যায় আকৃতি ও চেহারা। টার্কি বাণিজ্যিক মাংস উৎপাদনের জন্য খুবই উপযুক্ত। এরা দেখতে খুব সুন্দর হয়। তবে এরা বাণিজ্যিকভাবে ডিম উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত নয়। তারা দ্রুত বড় হয়ে যায় এবং ব্রয়লার মুরগির মত খাওয়ার উপযুক্ত হয়ে উঠে। পুরুষ টার্কিকে ডাকা হয় ”টম” নামে এবং স্ত্রী টার্কিকে ডাকা হয় ”হেন” নামে।
পশ্চিমা দেশগুলোতে টার্কি অধিক জনপ্রিয়। সবচেয়ে বেশি টাার্কি পালন করা হয় মার্কিন যুক্তরাস্ট্র, কানাডা , জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ড, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশে। বর্তমানে পৃথিবীতে আমেরিকা (USA) সর্ব্বোচ টার্কি উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বিবেচিত। বছরে প্রায় ২৫ লক্ষ টন টার্কি মাংস শুধুমাত্র আমেরিকায় উৎপন্ন হয়। সমগ্র ইউরোপে প্রায় ১৭.৫ লক্ষ টন টার্কি মাংস উৎপাদিত হয়। এশিয়া, আফ্রিকা এবং মধ্য প্রাচ্যের মানুষ বছরে প্রায় ৪.৫ লক্ষ টন টার্কি মাংস ভক্ষণ করে থাকেন। বিখ্যাত টিভি সিরিজ মিস্টার বিন এর নায়ক রোয়ান এটকিনসনকে টার্কির মাংস নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ার দৃশ্য খুব বেশি দিন আগের কথা নয় যা হতে বুঝা যায় উন্নত বিশ্বে বিভিন্ন অনুষ্টান ও উপলক্ষতে টার্কির মাংস ব্যাপকভাবে প্রচলিত।
টার্কি পালনের সুবিধাসমূহ:
১) টার্কি বাণিজ্যিকভাবে মাংস, ডিম ও পোষা প্রাণী হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।
২) টার্কি পালনে বাড়তি কোনো ঝামেলা নেই।
৩) টার্কি বাণিজ্যিকভাবে মাংস উৎপাদনকারী একটি প্রজাতি তবে ডিমের জন্য নয়।
৪) টার্কি ব্রয়লার মুরগি ও শুকরের চেয়ে দ্রুত বাড়ে।
৫) টার্কি পালনে খাদ্য খরচ কম কারণ এরা দানাদার খাদ্যের চেয়ে ঘাস, লতা-পাতা জাতীয় খাদ্য বেশি খায়।
৬) টার্কি যেহেতু দেখতে খুব সুন্দর তাই এরা বাড়ির সৌর্ন্দয বর্ধনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
৭) টার্কির মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ অন্য প্রজাতির পোল্ট্রির চেয়ে বেশি এবং চর্বির আধিক্য কিছুটা কম।
৮) টার্কির মাংসে অধিক পরিমাণ আয়রন, জিংক, পটাসিয়াম, ফসফরাস থাকে। এ উপাদানগুলো মানব শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী এবং নিয়মিত এ মাংস খেলে কোলেস্টেরল কমে যায়।
৯) টার্কির মাংসে এমাইনো এসিড ও ট্রিপটোফ্যান অধিক পরিমাণে থাকে বিধায় এদের মাংস শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্বিতে সহায়তা করে।
১০) টার্কির মাংসে ভিটামিন ই অধিক পরিমাণে থাকে যা এন্টিঅক্সিডেন্ট ও রোগ প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে।
১১) অন্যান্য পাখীর তুলনায় এর রোগ বালাই কম এবং কিছু নিয়ম কানুন মেনে চললে রোগ বালাইয়ের ঝুকিঁ কম।
টার্কির জাত: টার্কিকে সুনির্দিষ্ট জাত অনুযায়ী ভাগ করা যায় না তবে এদের ৭টি আর্দশ ভ্যারাইটি আছে যা মাংস উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত যেমন ১. বেল্টসভিলি ২. ব্রোঞ্জ ৩.বরবন রেড ৪. ন্যারাগেনসেট ৫. ব্লাক ৬. শ্লেট ৭. হোয়াইট হল্যান্ড। এদের মধ্যে ব্রড ব্রেস্টেড হোয়াইট টার্কি ভারতসহ আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত ভাল একটি জাত।
টার্কির স্থিতি মাপসমূহ:
ডিম দেওয়া শুরুর বয়স ঃ ৩০ সপ্তাহ
পুরুষ ও স্ত্রীর অনুপাত ঃ১:৫
গড় ডিমের ওজন ঃ ৬৫ গ্রাম
বছরে ডিম উৎপাদন ঃ ৮০-১০০
ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবার সময় ঃ ২৮ দিন
এক দিনের বাচ্চার ওজন ঃ ৫০ গ্রাম
২০ সপ্তাহে গড় ওজন টম (পুরুষ পাখি) ঃ ৭-৮ কেজি
২০ সপ্তাহে গড় ওজন হেন (স্ত্রী পাখি) ঃ ৪-৫ কেজি
ডিম দেওয়ার সময়সীমা ঃ ২৪ সপ্তাহ
বাজারজাত করার উপযুক্ত বয়স টম ঃ ১৪-১৫ সপ্তাহ
বাজারজাত করার উপযুক্ত বয়স হেন ঃ ১৭-১৮ সপ্তাহ
বাজারজাত করার উপযুক্ত ওজন টম ঃ ৭.৫ কেজি
বাজারজাত করার উপযুক্ত ওজন হেন ঃ ৫.৫ কেজি
ডিম উৎপাদন: সাধারণত ৩০ সপ্তাহ বয়স থেকে টার্কি ডিম পাড়া শুরু করে এবং পরর্বতী ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত একটানা ডিম দেয়। প্রায় ৭০% টার্কি বিকাল বেলায় ডিম পাড়ে। এদের ডিমের এক প্রান্ত সরু এবং শক্ত খোলসে আবৃত। টার্কির ডিমে প্রায় ১৩.১% প্রোটিন, ১১.৪% লিপিড, ১.৭% কার্বোহাইড্রেট, ০.৪% মিনারেল এবং প্রতি গ্রাম কুসুমে প্রায় ১৫.৬৭ হতে ২৩.৯৭ মিগ্রা কোলেস্টেরল বিদ্যমান।
মাংস উৎপাদন: নানাবিধ কারণে টার্কির মাংস সাধারণভাবে ভোক্তার কাছে ব্যাপক গ্রহনযোগ্য অর্জন করেছে। টার্কির মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অন্যান্য পোল্ট্রির চেয়ে বেশী। এক গবেষণায় দেখা গেছে ৪ আউন্স ওজনের টার্কির মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ ৩৪ গ্রাম। এছাড়া ও মাংসে ভিটামিন বি ১, বি ২, বি৫, বি৬ এবং বি ১২ যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যমান রয়েছে। এতে ওমেগা ৬ এবং ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিডের পরিমোণ ও অধিক রয়েছে। টার্কির মাংস প্রায় ২৪% আমিষ, ৬.৬% ফ্যাট এবং প্রতি ১০০ কেজি মাংসে ১৬২ ক্যালরি শক্তি বিদ্যমান। তদুপরি এ মাংসে প্রচুর পরিমাণে সেলেনিয়াম রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে জিংক, কপার, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং আরও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। টার্কি মাংসে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ একবারেই কম রয়েছে। এ সমস্ত বৈশিস্ট্যের কারণে মানব স্বাস্থ্যের জন্য টার্কির মাংস অত্যন্ত উপযোগী বলে চিহ্নিত হয়েছে। এছাড়া ও টার্কি তৃণভোজী পাখি হওয়ায় এর মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু বলে বিবেচিত হয়েছে।
টার্কি পালন পদ্বতি: টার্কি পালন মুক্ত এবং আবদ্ব উভয় অবস্থাতেই করা যায়।
ক) মুক্ত অবস্থায় পালন: মুক্ত চারণ পদ্বতিতে এক একর জায়গাতে ২০০-২৫০ টি প্রাপ্ত বয়স্ক টার্কি পালন করা যায়। প্রতিটি প্রাপ্ত বয়স্ক টার্কির জন্য কমপক্ষে ৩-৪ বর্গফুট জায়গা দরকার। চরে খাওয়ার সময় শিকারী জীবজন্তুর হাত থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে। বাসস্থান ঠান্ডা রাখার জন্য গাছ লাগাতে হবে। চারণভূমি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করতে হবে যার ফলে পরজীবী সংক্রমণের ঘটনা কম হতে সাহায্য করে।
উপকারিতা: ৫০% খাদ্য খরচ কম হয়। স্বল্প বিনিয়োগের দরকার হয়। খরচের তুলনায় লাভের হার বেশী।
মুক্ত অবস্থায় খাবার: টার্কি খুব ভালভাবে আর্বজনা খুটেঁ খায় বলে এরা কেচোঁ, ছোট পোকামাকড়, শামুক,রান্নাঘরের বর্জ্য ও ইউপোকা খেতে পারে, যাতে প্রচুর প্রোটিন আছে যা খাবারের খরচকে ৫০ ভাগ কমিয়ে দেয়। এছাড়া শিম জাতীয় পশুখাদ্য যেমন লুর্সান, স্টাইলো ইত্যাদি খাওয়ানো যায়। চরে বেড়ানো পাখীদের পায়ের দুর্বলতা ও খোঁড়া হওয়া আটকাতে খাবারে ঝিনুকের খোসা মিশিয়ে সপ্তাহে ২৫০ গ্রাম হিসাবে ক্যালসিয়াম দিতে হবে। খাবারের খরচ কম করার জন্য শাকসবজির বর্জ্য অংশ দিয়ে খাবারের দশ শতাংশ পরিমাণ পূরণ করা যেতে পারে।
স্বাস্থ্য রক্ষা: মুক্ত চারণ ব্যবস্থায় পালিত টার্কির অভ্যন্তরীণ (গোলকৃমি) ও বাহ্য (ফাউল মাইট) পরজীবী সংক্রমণের সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশী। তাই পাখীদের ভাল বিকাশের জন্য মাসে একবার Deworming ও Diping করা দরকার।
খ) আবদ্ব অবস্থায় পালন: আবদ্ব পদ্বতিতে টার্কি পালনে রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, শিকারী প্রাণী থেকে সহজেই রক্ষা করা যায়। দেশের অপেক্ষাকৃত গরম এলাকায় ঘরগুলি লম্বালম্বি পূর্ব থেকে পশ্চিমে রাখতে হবে। অল্প বয়স্ক টার্কির ক্ষেএে পরস্পর ২টি বাসস্থানের দূরত্ব কমপক্ষে ২০ মিটার ব্যবধানে এবং প্রাপ্ত বয়স্ক টার্কির জন্য ৫০-১০০ মিটার ব্যবধান রাখতে হবে। খোলা ঘরের প্রস্থ ৯ মিটারের বেশি হওয়া চলবে না। মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত ঘরের উচ্চতা ২.৬ থেকে ৩.৩ মিটারের মধ্যে থাকতে পারে। বৃষ্টির ঝাপটা আটকাতে ঘরের চালা ১ মিটার বাড়িয়ে রাখতে হবে। ঘরের মেঝে সস্তা, টেকসই ও নিরাপদ ও আর্দ্রতারোধক বস্তু যেমন কংক্রিটের হওয়া উচিত। একটি টার্কির জন্য মেঝে, খাবার এবং পানির জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা নিচে দেওয়া হল:
বয়স | মেঝে (বর্গফুট) | খাদ্য পাত্র (সেমি) | পানির পাত্র (সেমি) |
০-৪ সপ্তাহ | ১.২৫ | ২.৫ | ১.৫ |
৫-১৬ সপ্তাহ | ২.৫ | ৫.০ | ২.৫ |
১৬-১৯ সপ্তাহ | ৪.০ | ৬.৫ | ২.৫ |
প্রজনন টার্কি | ৫.০ | ৭.৫ | ২.৫ |
লিটার ব্যবস্থাপনা: টার্কির লিটার হিসেবে সহজলভ্য দ্রব্যাদি ব্যবহার করতে হবে। যেমন (ক) কাঠের ছোবড়া (খ) কাঠোর গুড়াঁ (গ) ধানের কুড়া (ঘ) বালি ইত্যাদি। শুরুতে ২ ইঞ্চি পুরু লিটার তৈরি করতে হয় এবং ধীরে ধীরে আরো লিটার যোগ করে ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত করা যেতে পারে। লিটার সবসময় শুকনা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। ভেজা অংশ তুলে ফেলে পুনরায় শুকনা লিটার যোগ করতে হবে।
খাবার: টার্কির খাবার সরবরাহের জন্য ২ টি পদ্বতি ব্যবহার করা হয়। যেমন ম্যাশ ফিডিং ও পিলেট ফিডিং।
# টার্কির খাবারে শক্তি,আমিষ, ভিটামিন ও মিনারেল অন্যান্য পাখির তুলনায় বেশি লাগে।
# পুরুষ ও স্ত্রী টার্কির রেশনে আলাদা আলাদাভাবে তৈরি করতে হয়।
# মাটিতে খাবার সংগ্রহ বা সরবরাহ করা যাবে না।
# রেশন ধীরে ধীরে পরির্বতন করতে হয়।
# সব সময় অবিরাম পরিষ্কার পানি সরবরাহ করতে হবে।
# গ্রীষ্মকালে পানির সাথে স্যালাইন বা গ্লুকোজ দিতে হবে।
# গ্রীষ্মকালে দিনের অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা সময়ে টার্কিদের খাবার দিতে হবে।
# পায়ের দূর্বলতা এড়াতে দিনে ৩০-৪০ গ্রাম হারে ঝিনুকের গুড়ো দিতে হবে।
সবুজ খাদ্য: নিবিড় পদ্বতিতে উৎু সধংয হিসাবে মোট খাদ্যের ৫০ ভাগ পর্যন্ত সবুজ খাবার দেওয়া যায়। সব বয়সের টার্কির জন্য টাটকা লুর্সান প্রথম শ্রেনীর সবুজ খাদ্য । এছাড়া খাবারের খরচ কম রাখার জন্য কচুরি পানা,কলমি শাক,সবুজ ঘাস কুচি করে টার্কিদের খাওয়ানো যেতে পারে।
দানাদার খাবার: টার্কির একটি আদর্শ খাদ্য তালিকা নিচে দেওয়া হল:
খাদ্য উপাদান | শতকরা হার |
ধান | ২০% |
গম | ২০% |
ভূট্টা | ২৫% |
সযাবিন মিল | ১০% |
ঘাসের বীজ | ৮% |
সূর্যমুখীর বীজ | ১০% |
ঝিনুক গুড়া | ৭% |
মোট | ১০০% |
টার্কির প্রজনন ব্যবস্থাপনাঃ পূর্ণ বয়স্ক টার্কির জন্য ৩-৪ বর্গফুট বাসস্থান প্রয়োজন। ঘরে পর্যাপ্ত আলো এবং বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ঘরকে জীবাণুমুক্ত রাখতে নিয়মিত লিটার পরিষ্কার করতে হবে। প্রতিদিন সতেজ ডিম সংগ্রহ করে দ্রুত পরিষ্কার করে নিতে হবে। প্রজনন ঋতুতে তালিকা অনুযায়ী খাবার এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি সরবরাহ করতে হবে।
ডিম ফোটানোঃ টার্কির ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ২৮ দিন সময় লাগে। সাধারণত ২ টি পদ্বতিতে টার্কির ডিম ফোটানো হয়। যেমন-
ক) কুচেঁ টার্কি দ্বারা প্রাকৃতিকভাবে ডিম ফোটানোঃ একটি কুচেঁ টার্কি একসাথে প্রায় ১০-১৫ টি ডিমে তা দিতে পারে। এ সময় এদের পর্যাপ্ত আলো-বাতাস এবং খাবার সরবরাহ করতে হয়।
খ) কৃএিমভাবে ডিম ফোটানোঃ কৃএিমভাবে ডিম ফোটানোর জন্য ইনকিউবেটর ব্যবহার করা হয়। এক্ষেএে তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নিচে তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার একটি আর্দশ তালিকা দেয়া হল:
সময় | তাপমাত্রা (ফারেনহাইট) | আ: আর্দ্রতা (%) |
সেটার | ৯৯.৫ | ৬১-৬৩ |
হ্যাচার | ৯৯.৫ | ৮৫-৯০ |
রোগবালাই: টার্কির প্রচলিত রোগকে সংক্রামক ও অসংক্রামক দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। সংক্রামক রোগের কারণ হিসাবে রয়েছে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া। অসংক্রামক রোগের কারণ হল বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক বিষাক্ত পদার্থ,টক্সিন, নিম্নমানের খাদ্য, আবহাওয়া এবং পরিবেশ। টার্কির সাধারণ রোগগুলো হচ্ছে-
রাণীক্ষেত, মাইকোপ্লাজমা, এভিয়ান রাইনোট্রাকিয়াইটিস, রক্ত আমাশয়, হিমোরেজিক এন্টারাইটিস ভাইরাস, ফিতা কৃমি, গোল কৃমি, ব্লাক হেড, ফাউল পক্স, নেক্রোটিক এন্টারাইটিস, ফাউল কলেরা ইত্যাদি।
ভ্যাকসিন শিডিউল: নিচে ছকের মাধ্যমে টার্কিতে ভ্যাকসিন প্রদানের সময় এবং ভ্যাকসিনের নাম দেওয়া হল:
টার্কির বয়স | ভ্যাকসিনের নাম |
১ম দিন | এন.ডি (বি১ স্ট্রেইন) |
৪র্থ ও ৫ম সপ্তাহে | ফাউল পক্স |
৬ষ্ঠ সপ্তাহে | এন.ডি (লাসোটা স্ট্রেইন) |
৮ম-১০ম সপ্তাহে | ফাউল কলেরা |
বাজার সম্ভাবনা: ক) টার্কির মাংস পুষ্টিকর ও সুস্বাদু হওয়ায় এটি খাদ্য তালিকার একটি আদর্শ মাংস হতে পারে। পাশাপাশি দেশের বৃহক্তর জনগোষ্ঠীর মাংসের চাহিদা মেটাতে গুরুক্তপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যাদের অতিরিক্ত চর্বি যুক্ত মাংস খাওয়া নিষেধ অথবা যারা নিজেরাই এড়িয়ে চলেন, কিংবা যারা গরু বা খাসীর মাংস খায় না, টার্কি তাদের জন্য হতে পারে বিকল্প। তাছাড়া বিয়ে, বৌ-ভাত, জন্মদিন সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাসীর বা গরুর মাংসের বিকল্প হিসেবে টার্কির মাংস হতে পারে অতি উৎকৃষ্ট একটি খাবার এবং গরু বা খাসীর তুলনায় খরচ ও হবে কম।
খ) বাণিজ্যিক খামার করলে এবং মাংস হিসেবে উৎপাদন করতে চাইলে ১৪-১৫ সপ্তাহে একটি টার্কির গড় ওজন হবে ৫ থেকে ৬ কেজি এবং ২৪ সপ্তাহ বয়সে টার্কির ওজন প্রায় ১০ থেকে ১৫ কেজি। ৪০০ টাকা কেজি দর হিসেব করলে একটি টার্কির বিক্রয় মূল্য দাঁড়াবে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা। ১৪ থেকে ১৫ সপ্তাহ পালন করতে সর্ব্বোচ খরচ পড়বে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। তাহলে কমপক্ষে একটি টার্কি থেকে ৩০০-৫০০ টাকা আয় করা সম্ভব।
গ) তবে মাংস হিসেবে বাণিজ্যিক খামার গড়ে উঠতে আমাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। বর্তমানে ছোট আকারের খামার করার যে চাহিদা দেশ ব্যাপী তৈরি হয়েছে,তাতে আগামী ৩/৪ বৎসরে কয়েক লাখ টার্কির প্রয়োজন হবে এবং সে ক্ষেএে দাম ও বেশী পাওয়া যাবে। ৩০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত বয়স ও রং ভেদে টার্কির জোড়া কেনা বেচা চলছে।
উপসংহার: বাংলাদেশে মুরগি পালনের পাশাপাশি আমিষের উৎস হিসাবে টার্কি পালনে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। টার্কি যেহেতু ব্রয়লার মুরগির চেয়ে দ্রুত বাড়ে তাই পরীক্ষামুলকভাবে প্রাণিসম্পদ বিভাগের উদ্যোগে কিছু কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই টার্কি পালন শুরু করেছেন। উদাহরনস্বরুপ নওগাঁ জেলার ঝিল্লুর রহমান, ঢাকার উক্তর বাড্ডার মিরাজ হোসেনের নাম উল্লেখ করা যায়। গ্রাম্য এলাকায় মুক্ত অথবা অর্ধমুক্ত অবস্থায় টার্কি পালন অত্যন্ত লাভজনক। মুক্ত অবস্থায় টার্কি পালনে অল্প পুজিঁতে সহজেই লাভজনকভাবে খামার গড়া যায়। তাছাড়া আমাদের দেশের আবহাওয়া টার্কি পালনের জন্য খুবই উপযুক্ত।
সূত্র: বিভিন্ন পত্রপত্রিকা , ম্যাগাজিন , ইন্টারনেট