ডেইরি ও পোলট্রির মত গরু মোটাতাজাকরন বা বীফ ফেটেনিং প্রাণীজ কৃষির একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। অধিক মাংস উৎপাদনের জন্য বিশ্বের সকল দেশেই বীফ ফেটেনিং করা হয়। তবে আমাদের দেশে মূলতঃ কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে এই কর্মযজ্ঞটি সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। কোরবানীর ঈদের ৩-৪ মাস আগে থেকে অর্থাৎ রোজার মাস থেকেই শুরু হয় গরু মোটাতাজাকরন প্রক্রিয়া। সারাদেশে অজস্র ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী ভাইয়েরা এই সময়ে কোরবানী উপযোগী গরুগুলোকে প্রচুর পরিমাণে খাইয়ে নাদুসনুদুস করে তুলেন। একটু লাভের আশায় কৃষক ভাইয়েরা বিগত ৩-৪ মাস কখনো কখনো ধার দেনা করে প্রতিটি গরুর পিছনে হাজার হাজার টাকা ব্যয় করেছেন আর অক্লান্ত শ্রম দিয়েছেন এগুলোকে তরতাজা, মাংসল আর আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য।
ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি আছে। ঢাকা শহরের হাটগুলো ক্রমেই জমে উঠছে। ব্যাপারীরা গাদাগাদি ঠাসাঠাসি ভাবে ট্রাক ভর্তি হাজার হাজার কোরবানীর গরু নিয়ে ঢাকা শহরমুখী হচ্ছে । প্রায় প্রতিদিনই পত্রপত্রিকায় কোরবানীর গরু মোটাতাজাকরন প্রক্রিয়া সম্ভন্ধীয় রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে । রিপোর্ট গুলোর মুল বক্তব্যে ঘুরেফিরে আসছে স্টেরয়েড হরমোনের অপব্যবহার। বিভিন্ন বাণিজ্যিক নামে ডেক্সামেথাসন নামের স্টেরয়েডের কথাই শোনা যাচ্ছে বেশী। আজকে স্টেরয়েড যেন একটি আতঙ্ক, একটি ভীতির নাম। পত্রপত্রিকার রিপোর্টের ফলে জনমনে এক ধরনের আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে যে, মোটাতাজা এই সব কোরবানীর গরুর মাংশ কতটুকু নিরাপদ?
কোরবানীর গরুগুলো দুই ধরনের হয়, দেশীয় ও ভারতীয়। ভারতীয় গরু তুলনামুলকভাবে সস্তা। কোরবানীর হাটে বিক্রি না হলে এগুলোর আর ফিরে যাওয়ার উপায় নেই তাই বাজারে প্রতিযোগিতাও প্রবল। এগুলো চেনার জন্য যদিও বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই তবে এদের চিনতে পারাটা সবার জন্যই ভালো। কারণ সত্যিকারের স্টেরয়েড সমস্যা ভারতীয় গরুতেই বেশী। পত্রপত্রিকার রিপোর্টে বলা হচ্ছে এ বছর কোরবানী উপলক্ষে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার ও বেশী ব্যবসা বাণিজ্যের সম্ভাবনা আছে। যার সিংহ ভাগই দেশের অজস্র ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীর ঘাম ঝরানো শ্রমের ফসল। তাই সংশ্লিষ্ট সকলের সচেতনতা জরুরী যাতে শেয়ার বাজারের মত এখানেও কোন মহল অহেতুক আতংক ছড়িয়ে কোনরূপ ফায়দা লুটতে না পারে। গরু মোটাতাজাকরন ও স্টেরয়েড সম্ভদ্ধে আরোও জানতে দেখুন কোরবানীর মোটাতাজা গরু ও স্টেরয়েড নিয়ে গন-আতঙ্ক (২)।
পুরো প্রতিবেদনটি গত ১০/৫/২০১৪ তারিখে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার কৃষি ও সম্ভাবনা ফিচার কলামে প্রকাশিত হয়েছে, দেখুন।