আগামীকাল ৩৩তম বিসিএস লাইভস্টক ক্যাডারের কর্মকর্তাগণের যোগদানঃ কিছু পরামর্শ

প্রথমেই যারা ৩৩তম বিসিএস লাইভস্টক ক্যাডারে যোগদান করতে যাচ্ছেন তাদের প্রত্যেককে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা আর অভিনন্দন। এতোটা ধৈর্য্য নিয়ে সকল ধাপ অতিক্রম করে যারা কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছার আর মাত্র কয়েক ঘন্টা দূরে, তাদের আগমী ‍দিনগুলো যেন অনেক সুন্দর হয়, কর্ম চাঞ্চল্যপূর্ণ হয় সেই শুভ কামনাও জানাচ্ছি।


আগামীকাল ৭ আগষ্ট ২০১৪, বৃহঃপতিবার, ১৪৫ জন ভেটেরিনারিয়ান আর ২৯ জন এনিমেল হাজবেন্ড্রী গ্র্যাজুয়েটবৃন্দের জন্য একটি স্মরণীয় দিন। এদের মধ্যে হয়তো কেউ কেউ আগে অন্য চাকরি করেছেন। যারা আগে চাকরি করেছেন তাদের মধ্যে কেউ হয়তো সরকারী প্রতিষ্ঠানে ছিলেন আবার কেউ হয়তো বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে। তবে বেশ অনেকের জন্যই এটিই তাদের প্রথম চাকরি বা হয়তো এবারই প্রথম সরকারী প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছেন। ৩ বছর সরকারী প্রতিষ্ঠানে বিশেষতঃ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে চাকরি করার অভিজ্ঞতা থেকে সেইসব নতুনদের জন্য কিছু পরামর্শ রইলো, যাতে আপনাদের কর্মময় জীবনটা অনেক সুন্দর আর সফলতাপূর্ণ হতে পারে।

ক) একটু সকল সকাল-ই বেরিয়ে পরুন, যেন পূর্বাহ্নেই যোগদান করতে পারেন। এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

খ) প্রথমেই আপনাদের সংশ্লিষ্ট রিপোর্টিং অফিসার যেমন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অফিসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারির সঙ্গে পরিচিত হয়ে নিন। জেনে নিন কে সিসিডি বা ক্লার্ক, কে আপনার কম্পাউন্ডার, কে ড্রেসার ইত্যাদি (খেয়াল করবেন, পরিচিত হওয়ার সময় কেউ কেউ আপনাকে সালাম দেবে আর ২/১ জন দেখবেন দেবে না। যারা দেবে না তাদের মার্ক করে রাখুন, ভবিষ্যতে কাজে লাগতে পারে!)।  প্রথম দিন সিসিডি বা ক্লার্কের সাথে আপনার কাজ থাকবে বেশি-ঐ কাগজপত্র সংক্রান্ত কাজগুলো।

গ) আপনার প্রতিস্ঠানের অর্গানোগ্রামটি জেনে নিন। আর সে অনুযায়ী কাকে ‘তুমি’ সম্বোধন করবেন আর কাকে ‘আপনি’ সম্বোধন করবেন তাও মার্ক করে রাখুন। ভবিষ্যতে আপনার অর্ডার ক্যারি করানোর ক্ষেত্রে এই সম্বোধনগুলো খুবই জরুরী। ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারিদেরকে ‘তুমি’ সম্বোধন করুন, তা সে আপনার তুলনায় বয়স যত বেশিই হোক না কেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সাংগঠনিক কাঠামো
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সাংগঠনিক কাঠামো

খেয়াল করে দেখুন কম্পাউন্ডার, এফ এ এবং ড্রেসার এই ৩ জন হলো ভেটেরিনারি সার্জনের স্টাফ আর বাকিরা ইউএলও’র। সুতরাং এরা আগে আপনার কাছে দায়বদ্ধ।

ঘ) এবার আসি আপনাকে কি বলে সম্বোধন করবে- এই সমস্যাটি মূলতঃ Female অফিসার হলে হয়, দেখা যায় তাকে ‘আপা’ সম্বোধন করে বসে, যা মোটেই ঠিক নয়। এখন তো বিভিন্ন সরকারি অফিসের boss যদি নারীও হয় তবুও তাকে ‘স্যার’ বলেই সম্বোধন করতে হয়। সুতরাং এবার আপনিই ঠিক করে নিন আপনাকে কি বলে আপনার অধিনস্তরা ডাকবে।

ঙ) এবার আসি কোম্পানির অফিসারদের কথায়। এদের সাথে খুব সতর্কতার সহিত সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে এক মায়ের পেটের সব সন্তান যেমন এক রকম হয় না, তেমনি এক কোম্পানির সব প্রোডাক্ট-ই ভালো হবে, বা সব প্রোডাক্টই খারাপ হবে তার কোন মানে নেই। তাই বোঝার চেষ্টা করবেন কোনটা ভালো আর কোনটার আরো উন্নত হওয়া প্রয়োজন। অফিসারদের কথায় ভোলা যাবে না, তবে তার কথাগুলো মনোযোগ সহকারেই শুনতে হবে, তারপর ঐ ড্রাগ নিয়ে নিজে পড়াশোনা করবেন, প্রয়োজনে ট্রায়ালে যাবেন, তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন। মনে রাখতে হবে, আপনি ভালো ডাক্তার হলেই আপনার পেছনে কোম্পানিগুলোর লাইন থাকবে। কোন বাজে কোয়ালিটির ড্রাগ ব্যবহার করে বা অন্য কিছু লোভে পরে যদি ভুল করতে থাকেন তবে একসময় আপনি হারিয়ে যাবেন, এটা নিশ্চিত। আর একটা কথা, চেষ্টা করবেন ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে তাদের সাথে মেশার, নয়তো এরা আপনার সামনে আপনার খুব প্রসংশা করে যাবে, আর আড়াল হলেই সমালোচনা করবে।

চেষ্টা করবেন কোম্পানির অফিসারদের সাথে এক এক করে কথা বলতে, কয়েকটি কোম্পানির অফিসারদের একসাথে আপনার রুমে বসিয়ে কথা বলাটা এড়িয়ে চলবেন। খামারিদের বেলায়ও তাই, এক এক করে কথা বলবেন।

চ) যারা নতুন প্রাকটিশনার হবেন, তারা নির্দিধায় প্রয়োজনে ড্রাগের লিটারেচার দেখে প্রেসক্রিপশন লিখুন, দরকার পড়লে বই দেখুন, সিনিয়র কারো সাথে পরামর্শ করুন-চেষ্টা করুন ভালো একটা প্রেসক্রিপশান করার। এতে রোগী যেমন ভালো হবে, তেমনি একটা সময় দেখবেন আর কাউকে ফোন করার প্রয়োজন পড়বে না। এখানে বলে রাখি, পোল্ট্রি সংক্রান্ত কোন সমস্যায় পড়লে আমাকে ফোন করতে পারেন।

প্রথমদিকে ড্রেসার, কম্পাউন্ডারের পরামর্শও নিতে হতে পারে, এটা কোন ব্যাপার না। তবে তা যেন বেশি দিন ধরে না নিতে হয়, কারন এরাও এক সময় খামারিদের বলতে বলতে পারে- ”আরে ওনাকে ডাক্তারী শেখালাম আমি”। আমাদের দেশে প্রানি হাসপাতালের চেয়ার-টেবিলও ডাক্তারি করে। এদের কাছ থেকে নিস্তার নেই, কেননা একটা উপজেলায় একজন মাত্র ভেটেরিনারিয়ান দিয়ে কিভাবে চলে? তাই এদের সাথে লাগতে যাবেন না। তবে ওরা কেমন ধরনের পরামর্শ দেয় খামারিদের তার খোঁজ খবর রাখতে হবে, মাঝে মধ্যে যখন বড় ধরনের ভুল দেখবেন তখন খামারির সামনেই ঠান্ডা মাথায় তার ভুলটা ধরিয়ে দিন। এতে ঐ খামারিও বুঝবে কে বড় ডাক্তার, আর ঐসব স্টাফরাও আপনাকে সমিহ করেই চলবে।

ছ) মাঝে মধ্যেই ফার্মেসিগুলোতে যাবেন, সময় দেবেন, দেখবেন, এলাকার অনেক তথ্য জানতে পারবেন। যে পোল্ট্রি ফিডের দোকানের বিক্রি বেশি তার ওখানেও সময় দেবেন, খামারিদের সাথে কথা বলবেন, অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। কোন এলাকায় কোন রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হচ্ছে ইত্যাদি নানান তথ্য এসব জায়গায় সহজেই পেয়ে যাবেন। যা আপনাকে ভালো একজন প্রাকটিশনার হতে সাহায্য করবে। তবে যেখানেই যান না কেন আপনার পোশাক-পরিচ্ছদটা যেন পরিপাটি থাকে সেদিকটি খেয়াল রাখবেন। এটা আপনার সম্মানের জন্যই জরুরী।

পারতঃপক্ষ্যে একটা প্রেসক্রিপশনে সব ঔষধ একটা কোম্পানির লিখবেন না, যাতে এটা মনে না হয় যে আপনি কোন কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ। এতে করে সমালোচকরা সমালোচনা করার সুযোগ পাবে না। মনে রাখতে হবে এখন কিন্তু বিভিন্ন কোম্পানির নিজস্ব ডাক্তার আপনার এলাকায় অনেক রয়েছে।

জ) পোল্ট্রি প্রাকটিস করতে চাইলে পোস্টমর্টেম আপনি নিজ হাতে করবেন, পোস্টমর্টেম করার সময় সেখানে কখনও অন্য কাউকে রাখবেন না, এমন কি খামারিকেও না।

ঝ) স্টাফদের কেউ অন্যায় করলে তাকে একা ডেকে নিয়ে যা বলার বলবেন, অন্য কারো সামনে তাকে কিছু বললে সে অপমানিত বোধ করতে পারে এবং আপনার প্রতি প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে যেতে পারে। স্টাফদের সাথে ভালো আচরণ করুন, মাঝে মধ্যে তাদের পরিবারের খোঁজ খবরও নিতে পারেন। আপনাকে ভালোবাসলে তারা আপনাকে সম্মানও করবে, আপনিও চাকরিটা করে মজা পাবেন। বোঝেনই তো, যে ক্যাডার-এ চাকরি করতে যাচ্ছেন, কতদিন একই পোস্টে থাকতে হবে তা কে জানে?

সর্বপরি বলবো, আপনার উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে সদ্ভাব বজায় রেখে চলুন, তাতে আপনার লাভই হবে।

পেশাগত যে কোন সমস্যায় বা যে কোন পরামর্শের জন্য অথবা এমনিতেই কোন তথ্য জানাতে আমার সাথে নিস্বংকোচে যোগাযোগ করতে পারেন, সাধ্যমতো চেষ্টা করবো।

সবাইকে আবারো অনেক অনেক শুভেচ্ছা…….।

 

 

লেখকঃ ডাঃ তায়ফুর রহমান

ডাঃ তায়ফুর রহমান; ডিভিএম, এম এস, এমপিএইচ ; ন্যাশনাল টেকনিক্যাল এডভাইজার-এপিডেমিওলজি, জাতিসঙ্ঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা, ঢাকা; ব্লগ এডমিনিষ্ট্রেটর, ভেটসবিডি

এটাও দেখতে পারেন

বিভিএ’র নবনির্বাচিত কমিটির বিগত এক মাসের অর্জন

এক মাস পূর্ণ করলো বিভিএ ২০১৭-২০১৮ কমিটি। কেমন ছিলো এই এক মাসের অগ্রযাত্রা ? কী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.