নিপাহ : প্রাণঘাতী ভাইরাস

নাম করণ ঃ ১৯৭৮ সালের দিকে মালয়েশিয়ার প্রথম নিপাহ ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া যায়। দেশটির নেজেরি সেমভিলান রাজ্যের সুংগাই নিপাহ গ্রামে এ ভাইরাস পাওয়া যায় বলে এর নামকরণ করা হয় নিপাহ ভাইরাস। এটা Paramyxoviridae পরিবারের একটি অনত্মর্গত একটি ভাইরাস। নিপাহ ভাইরাস আবিস্কার করেন Dr. Chua Kaw Bing.


বাহক ঃ টেরোপডিডি (Pteropodidae) গোত্রের বাদুড়ই (Pteropus vampyrus) নিপাহ ভাইরাসের প্রধান বাহক। এ বাদুড়ের আরেক নাম “লার্জ ফ্লাইং ফক্স”। অস্ট্রেলিয়া,বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়ায় এর দেখা মেলে। আফ্রিকায়ও এটা নিপাহ ভাইরাস ছড়িয়েছিল। উলেস্নখ্য, ২০০৩ সালে নওগাঁয় শুকুরের মাধ্যমে ছড়িয়েছিল নিপাহ।

 small_Nipah

সংক্রমণ ঃ দক্ষিণ এশিয়ায় এ যাবৎ নিপাহ ভাইরাস ১৩ বার মহামারীর রূপ নিয়েছে। ১৯৯৯ সালে মালয়েশিয়ায় নিপাহ ভাইরাসের সন্ধান পাওয়ার পর সিঙ্গাপুরেও এর প্রার্দর্ভাব দেখা যায়। IEDCR (Institute of Epidemiology Disease Control & Research) – তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রথম নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় ২০০১ সালে মেহেরপুর জেলায়। এরপর ২০০৩ সালে নওগাঁয়, ২০০৪ ও ২০০৮ সালে রাজবাড়ীতে, ২০০৪ ও ২০১০ সালে ফরিদপুরে, ২০০৫ সালে টাঙ্গাইলে, ২০০৭ সালে কুষ্টিয়া, ঠাকুরগাঁওয়ে, ২০০৮ সালে মানিকগঞ্জে এবং ২০১১ সালে লালমনিরহাট ও দিনাজপুর। সাধারণত জানুয়ারী থেকে মে পর্যন্ত এটি ছড়ায়।

যেভাবে ভাইরাস ছড়ায় ঃ Pteropodidae গোত্রের বাদুড়ের মুখের লালা, মুত্র ও শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে এর বিসত্মার ঘটে। এর প্রাথমিক বাহক হিসাবে কাজ করে ঐ বাদুড়ের লালা ও মুত্র। খেজুরের কাঁচা রস আংশিক খাওয়া ফলমুল ইত্যাদির মাধ্যমে এ ভাইরাস মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাসটির কার্যকারী সংক্রামক হওয়ায় তা মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে। বাদুড় খেজুরের রসের হাড়িতে সরাসরি মুখ ঢুকিয়ে দিতে পারে। আর ভাইরাস ওই রসের ভিতরেও বংশ বৃদ্ধি করতে পারে। তখন রসের হাড়িটা হয়ে যায় আস্ত জীবানুবোমা।

 Henipavirus2

রোগের লক্ষণ ঃ
মানব দেহে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রামক ঘটলে উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর, সর্দি, তীব্র মাথা ব্যাথা, শ্বাসকষ্ট ও বমির ভাব হয়
* চরম পর্যায়ে মস্তিস্কে প্রদাহ হলে মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে রোগী আবল-তাবল বকতে পারে
* খিচুনি ও অজ্ঞান হতে পারে।

 nipa death

আক্রান্ত হলে করণীয় ঃ
নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যথা সম্ভব দুরে থেকে সেবাশুশ্রূষা করে যেতে হবে
* রোগীর ব্যবহৃত রোমাল, গামছা ও ব্যবহারের কাপড় চোপড়ের সংস্পর্শ পরিহার করতে হবে
* রোগীর সাথে একই বিছানায় ঘুমানো যাবে না
*রোগীর কাছাকাছী গেলে ফিরে এসে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে
* আক্রান্ত ব্যক্তির লালা ও হাচি-কাশি থেকে দুরে থাকতে হবে। তাৎড়্গনিক ভাবে রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে।

 

সর্তকতা ঃ
সরাসরি নিপাহ ভাইরাস নিরাময়ে কোন ঔষুধ বা প্রতিষেধক ভ্যক্সিন এখনো আবিস্কার হয়নি। তবে প্রতিরোধক ব্যবস্থা হিসাবে নিম্নলিখিত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
(১) পাখি দ্বারা আধা বা আংশিক ফল খাওয়া ও খেজুরের কাঁচা রস পান করবেন না এবং এ বিষয়ে জনসচেতনা তৈরী করুন।
(২) যে কোন ধরণের ফলমুল পরিস্কার পানি দিয়ে ভালমত ধুয়ে খান।
(৩) আক্রান্ত মানুষের সরাসরি শারীরিক সতর্ক এড়িয়ে চলুন।
(৪) আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসার সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।
(৫) নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমন রোধে বিশেষজ্ঞরা সংশিস্নষ্ট মানুষকে আপাতত খেজুরের গুড় ও রস, আখের রস, পেঁপে, পেয়ারা, বরইসহ স্থানীয় ফল বা অর্ধেক খাওয়া ফল না খাওয়ার পরামর্শ দিন।

সুএ:

  • Monthly Professor’s Current Affairs, March 2011, Page No -65
  • Henipavirus: Wikipedia
  • IEDCR

লেখকঃ ডাঃ মোঃ নাহিদ হাসান

DVM, M.S in Pharmacology (BAU) E-mail: nahiddvm788@gmail.com

এটাও দেখতে পারেন

Antibiotics: Handle with care

World Antibiotic Awareness Week during 13-19 November 2017 is being observed globally with the aim …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.