জাপানে এসেই সর্বপ্রথমে যে যন্ত্রটির খুব বেশি প্রয়োজন ছিল, সেটি হল প্রিয়জনের সঙ্গে বার্তা আদানপ্রদানের জন্য একটি মুঠোফোন । বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে যথারীতি ভেবেছিলাম এ আর কি, যেকোন একটি দোকানে যাবো, যন্ত্রটি ক্রয় করেই কথা বলা শুরু করে দিব। ক্রয় করতে আর কতক্ষন লাগবে, ৩০ মিনিট এর বেশিনা। প্রথমদিন হোলই না, পরেরদিন অনেক খুজাখুজি করে একটি ফোন দোকানে গিয়ে কথা বলেই বুঝলাম ফোন কেনা ঝামেলার কাজ। তাদের কথা হল ফোন কিনতে হলে এই ডকুমেন্টস গুলো লাগবেই-
১. ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট আইডি কার্ড
২. রেসিডেন্সিয়াল আইডি কার্ড
৩. হেলথ কার্ড
৪. ব্যাংক পাস বুক
৫. ক্রেডিট কার্ড
ভাবছেন আমি এখানে বিদেশী বলে। মোটেইনা, সবার জন্য একই নিয়ম প্রযোজ্য। দেশটির রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। আমাদের দেশেতো কোন এক নাম নাজানা পাতি নেতা আসলেই সকল আইন তার কাছে পানি, রাষ্ট্রপতি তো দুরের কথা।
মেজাজতো চরমে উঠে গেল। একটি সেলফোন কিনবো তাই এতো ঝামেলা। কি আর করা, অপেক্ষা করতে থাকলাম এই সকল ডকুমেন্টস গুলোর জন্য।
আসার প্রায় ১০ দিন পরে বহু কাঙ্ক্ষিত সেই যন্ত্রটি হাতে পেলাম। কত টাকায় জানেন, শুনলে অবাক হবেন………মাত্র ০ ইয়েনে (০ টাকা), যদিও প্রথম মাসে কিছু ইয়েন ফোন সার্ভিস চার্জ বাবদ বেশি কেটে নিবে। এরপর মাসে যত ইয়েনের কথা বলবো তত ইয়েন দিতে হবে। তবে কমপক্ষে ৯৮০ ইয়েন দিতেই হবে।
একটি নম্বরে এফ এন এফ করা যাবে, সেটি যার নম্বরের সাথে করা হবে তার সম্মতি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাকে সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে । এই নম্বরে আপনি রাতদিন ২৪ ঘন্টা ফ্রি কথা বলতে পারবেন। স্পউজ হলে, তার জন্য ম্যারেজ সার্টিফিকেট দেখাতে হবে এন্ড দুজনকেই উপস্থিত থাকতে হবে । সেটিই করতে হল অনেক কষ্টে।
পরে বুঝলাম কেন এত ঝামেলা। এই শেষ, আর কখনই আপনাকে আর কিছু করতে হবেনা। আপনি যত ইয়েনের কথা বলবেন তত ইয়েন মাস শেষে আপনার ব্যাংক থেকে কেটে নিবে। ১ ইয়েনও বেশি কাটবেনা। এতগুলো ডকুমেন্টস নিয়েছে, যাতে আপনি মুঠোফোনে কোন দুর্নীতি করতে না পারেন। এফ এন এফ করার জন্য ম্যারেজ সার্টিফিকেট নিয়েছে, এখন আপনি চাইলেউ এটি পরিবর্তন করে আপনার ইচ্ছেমত এফ এন এফ করতে পারবেন না, বিধায় কাউকে ডিস্টার্ব করতে পারবেননা।
এখন বলি দেশের ভিতরে কথা বলার খরচ কেমন। একই কোম্পানীর হলে রাত ৯ টা থেকে রাত ১ টা পর্যন্ত প্রতি মিনিট প্রায় ৪২ ইয়েন। অন্য কোম্পানীর হলে আরো কিছু বেশি। বাকি সময়ে একই কোম্পানীর সবার সাথে ফ্রি। বাংলাদেশ থেকে পুরোটাই উল্টো । অফিস সময়ে যাতেকরে মানুষ স্বল্প খরচে কথা বলতে পারে। রাত ৯ টা থেকে রাত ১ টা পর্যন্ত এখানে ঘুমাতে যাওয়ার সময়। এই সময় যদি ফ্রি দিতো তাহলে অনেকে না ঘুমিয়ে কথা বলতো। যেটি আমাদের দেশে হয়। কেউই রাত ১ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে না ফ্রি কথা বলার জন্য। কারন কথা বলতে পারে এমন সবাইকেই সকাল ৮-৯ টার মধ্যেই নিজ নিজ কাজে যোগদান করতে হবে। দেরিতে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। এক-দুইদিনের বেশি দেরি হলেই জরিমানা দিতে হবে ।
এখানে মুঠোফোনে কথা বলার খরচ বেশি, তার কারন হল মানুষ যাতে কাজ ব্যতিতো মুঠোফোনে বেশি কথা বলতে না পারে। বাংলাদেশে মুঠোফোনে কথা বলার জন্য উৎসাহ দিয়ে থাকে কোম্পানীগুলো। যত বেশি কথা তত বেশি বোনাস। রাত ১২ টার পরে ফ্রি।
বাংলাদেশে ইউনিভার্সিটির সকল তরুণ-তরুণীরা রাত জেগে মুঠোফোনে কথা বলে সকালে ক্লাসে আসে দেরি করে, এসেও ঘুমায়। এবিষয়ে ছেলে-মেয়েদের বাবা-মা, দেশের সুশীল সমাজ, দেশের নীতি নির্ধারক কেউই প্রতিকারের জন্য চেষ্টা করছেননা এমনকি কোন চিন্তাও করছেনা।
আজ দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে অনেকেই দেশের নামকরা জাতীয় পত্রিকায় বিশাল বিশাল কলাম লিখেন, অথচ দেশের ভবিষ্যৎ কর্নধারদের জন্য কোন লেখা নেই। আর লিখলেও সেই সকল নামকরা জাতীয় পত্রিকার সম্পাদকগন পত্রিকায় ছাপবেননা কারন তারাতো টাকার পাহাড় গড়তে পারবেননা যদি মুঠোফোন কোম্পানীগুলোর বিজ্ঞাপন প্রচার না করে……………।
Vetsbd Livestock related only Bangla blog
খুব ভাল লেগেছে।আরও লেখা প্রত্যাশা করছি।