গত কয়েক দিন ধরে টোপ ব্যবহার করে বাঘের ছবি তোলা নিয়ে একটি খবর বিভিন্ন ব্লগ ও সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোতে এবং সেই সাথে সচেতর মহলে বেশ উদ্বেগের সুষ্টি করেছে। ‘হোয়াইট মাউন্টেইন ফিল্ম’ যুক্তরাষ্ট্রেরে একটি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ও ভারতের সুন্দরবনে ‘টাইগার টাইগার’ নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করছে। অস্কার মনোনয়ন পাওয়া পরিচালক জর্জ বাটলার এটি পরিচালনা করছেন। ভারত ও বাংলাদেশের সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশে এই প্রামান্য চিত্রের শ্যুটিং হওয়ার কথা। তারই অংশ হিসেবে ভারতের অংশে বাঘের ছবি তোলার অনুমতি চাইলে, ভারত সরকার এভাবে বাঘের ছবি তোলার উপর নিষেধাজ্ঞা পেয়ে এখন তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আর সব সম্ভবের এই দেশে এ নিয়ে চলছে গভীর এক লুকোচুরি খেলা। বর্তমানে বুড়িগোয়ালিনী খোলপেটুয়া নদীর চৌমুহিনীতে অবস্থান করছে ‘হোয়াইট মাউন্টেন ফিল্মস’র একটি ভাড়া করা জাহাজ। এদিকে সুন্দরবনে টোপ দিয়ে বাঘের ছবি ধারণে হলিউডের ‘হোয়াইট মাউন্টেন ফিল্মস’কে লিখিত নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জহিরুদ্দিন।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার সকালে বুড়িগোয়ালিনীতে এসে মধু সংগ্রহের দৃশ্য ধারণ করতে ‘হোয়াইট মাউন্টেন ফিল্মস’ আট জন জেলেকে তাদের জাহাজে নেয়। এর পরিচালক হলিউডের বিখ্যাত পরিচালক জর্জ বাটলার। সেই সাথে তারা শক্তিশালী একটি ইলেকট্রনিক্স হেলিকপ্টার উড়িয়ে সুন্দরবনের দৃশ্য ও জেলেদের মাছ ধরা দৃশ্য ধারণ করছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।
বুধবার সকাল এগারোটায় রায়মঙ্গল নদী পার হয়ে জোরশিং আংটিহারা নামক বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে এদেশের সুন্দরবনে প্রবেশ করে দলটি। আগামী ২৯ মার্চ বিকেল নাগাদ দলটি বুড়িগোয়ালিনী ষ্টেশন ছেড়ে সুন্দরবনের আরো গভীরে প্রবেশ করবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জহিরউদ্দিন।
তিনি বলেন, “হোয়াইট মাউন্টেইন টিম ভারত হয়ে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। তারা এখন সুন্দরবনের কাছাকাছি বুড়ি গোয়ালিনী এলাকায় অবস্থান করছে।”

অস্কার মনোনয়ন পাওয়া পরিচালক জর্জ বাটলার বাংলাদেশের সুন্দরবনে ‘টাইগার টাইগার’ নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করবেন।
মার্কিন এই চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠানটি এর আগে গরু-ছাগল অথবা অন্য কোনো গৃহপালিত পশুর নাড়ি-ভুড়ির লোভ দেখিয়ে বাঘ ডেকে এনে ক্যামেরাতে ধারণের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিলো।
প্রথমে দ্য গাইড ট্যুরস লিমিটেড নামক একটি বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান ‘হোয়াইট মাউন্টেন ফিল্ম’র আয়োজক উল্লেখ করে গত বছর নভেম্বরে টোপ দিয়ে বাঘের ছবি ধারণের জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করে।
মন্ত্রণালয় ১৩ ফেব্রুয়ারি বন অধিদপ্তরে বিষয়টি বিবেচনার জন্য একটি জরুরি চিঠি পাঠায়। সেখানে বলা হয়, “যুক্তরাষ্ট্র্রের ‘হোয়াইট মাউন্টেন ফিল্ম’র জর্জ বাটলার কর্তৃক সুন্দরবনে ‘টাইগার টাইগার’ নামের প্রামাণ্যচিত্র অনুমতি পেয়েছে।”
বন কর্মকর্তা জহিরউদ্দিন জানান, “গরু-ছাগল বা এর মৃতদেহ বা নাড়িভুড়ি টোপ হিসেবে ব্যবহার করা বা ‘বেটিং’ করার অনুমতি না পেয়ে তারা তাদের কর্মসূচি ১০০ দিন থেকে কমিয়ে সংক্ষিপ্ত করেছে। তারা বাংলাদেশের সুন্দরবনে এপ্রিল মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত অবস্থান করবে।”
“তবে আর যাই হোক সুন্দরবনের গভীরে প্রবেশ করে তারা যেন কোনো টোপ বা ফাঁদ দিয়ে বাঘের ছবি যাতে তুলতে না পারে সেদিকে বনবিভাগ বিশেষ নজরদারী করবে,” জানান তিনি।
তবে অনুমতির ধরণ, বেটিং বা টোপ ব্যবহার এবং অনুমতি পাওয়ার সত্যতা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন।
বেটিং বা টোপ ব্যবহার না করার জন্য লিখিত নির্দেশ পাঠিয়েছেন বলে উল্লেখ করে বন কর্মকর্তা জহিরউদ্দিন বলেন, “তারা যেন বনের ভেতর কোনো অনুমতি বহির্ভূত কর্মকাণ্ড না চালাতে পারে এজন্য তাদের সাথে সার্বক্ষণিক ৪ জন বনরক্ষী থাকবে। এছাড়াও বিভিন্ন পয়েন্টে সংশ্লিষ্ট অফিসাররা নিয়মিত পরিদর্শনে থাকবেন।”
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নুরজাহান সরকার বলেন, “সুন্দরবনে কাজ করার অনুমতি দুই ধরনের। একটা হলো টোপ ব্যবহার করে বাঘের ছবি তোলা। অন্যটি হলো সুন্দরবনে চলচ্চিত্র নির্মাণের অনুমতি। মন্ত্রণালয় থেকে হোয়াইট মাউন্টেইন টিমের এই দুই ধরনের অনুমতির কোনোটিই নেই। তবে, তাদের প্রতি নিশ্চয়ই অথোরিটির প্রচ্ছন্ন সমর্থন আছে।”
এই বক্তব্যের ভিন্নমত পোষণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, “মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘হোয়াইট মাউন্টেইন ফিল্মস’কে বাংলাদেশের সুন্দরবনে ‘টাইগার টাইগার’ নামে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করার অনুমতি আগেই দিয়ে দিয়েছে। প্রামাণ্যচিত্রে বাঘের ছবি ধারণ করতে টোপ হিসেবে খাদ্য সরবরাহের বিষয়টি নিয়ে গত ৮ মার্চ আমাদের বিশেষজ্ঞ কমিটির সভা হয়। বেটিং বা টোপ দিয়ে ছবি ধারণের ব্যাপারটির বিরোধীতা করে সভায় সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেই আমরা। মিটিংয়ে থাকা সাত জনের মধ্যে পাঁচ জন বেটিং না করার পক্ষে মত দিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।”
সুন্দরবনে বেটিং করে হোয়াইট মাউন্টেনকে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের বিষয়ে ৮ মার্চের বিশেষজ্ঞ সভায় তিনটি প্রস্তাবনা রেখেছিলেন বলেও জানান তিনি।
প্রস্তাব তিনটি ছিলো বাংলাদেশের বনবিভাগ খতিয়ে দেখবে ভারত তাদের দেশে হোয়াইট মাউন্টেইনকে বেটিং করে শুটিং করতে দেয় কিনা, বেটিং করে চিত্রধারণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট ভারতের পরামর্শ যাচাই-বাছাই করে দেখবে এবং বিড়াল গোত্রীয় প্রাণীকে (বাঘ) আকর্ষণ করতে ব্যবহৃত ‘সুগন্ধ’ ব্যবহার না করার জন্য পরামর্শ প্রদান।
ভারত হোয়াইট মাউন্টেইনকে চিত্র ধারণ করতে দিয়েছে কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “আমার এটা জানার কোনো সুযোগ নেই।”
ভারত বেটিং করে চিত্র ধারণ করতে দেয়নি এ তথ্য জানানোর পর অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “আমাদের সাথে ভারতে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের কোনো যোগাযোগ নেই।”
প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নুরজাহান সরকার বলেন, “তারা (হোয়াইট মাউন্টেইন) সুন্দরবন ধ্বংস করার জন্য এসেছে। আর এটাতে প্রশ্রয় দিচ্ছে অথোরিটির গুটি কয়েক লোক।”
তিনি আরো বলেন, “৪০ বছর ধরে আমি বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করছি। ইহ জনমে এ ধরনের প্রস্তাবে রাজি হওয়ার কথা শুনিনি। ওরা ভারতের সুন্দরবনে শুটিং করার প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখাত হয়েছে। আমি বুঝিনা বাংলাদেশ অথোরিটি কি করছে।”
অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম ও বন সংরক্ষক তপন কুমার দে’কে সরাসরি অভিযুক্ত করে ড. নুরজাহান সরকার বলেন, “এই ধরনের আত্মঘাতী সহযোগীতার নজির পৃথিবীর আর কোথাও নেই। সবাই বিপক্ষে থাকার পরেও মাত্র দুইজন মানুষ গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর করে কিভাবে এই পা-চাটা কাজ করে আমি বুঝিনা।”
ড. নুরজাহান সরকার হোয়াইট মাউন্টেইনের প্রামাণ্যচিত্র ধারণের তৎপরতাকে ‘আশঙ্কাজনক’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
“এই লক্ষণগুলো খুবই আশঙ্কার। বাঘ শেষ হলে সুন্দরবন শেষ। সুন্দরবন শেষ হলে দেশ শেষ। আইলা বা সিডরের মতো দুর্যোগে সুন্দরবন না থাকলে আমরা শেষ হয়ে যাব,” বলেন ড. নুরজাহান।
বাঘ বিশেষজ্ঞ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় জীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান বলেন, “হোয়াইট মাউন্টেইন টিম পুরো সুন্দরবন জুড়ে কাজ করবে। তবে আমি তাদেরকে নিয়ে আশঙ্কার কোনো কারণ দেখি না। আমাদের বনবিভাগের লোকজন সার্বক্ষণিকভাবে তাদের সাথে থাকবে। আর ‘দ্য গাইড ট্যুরস লিমিটেড’ বা ‘হোয়াইট মাউন্টেইন ফিল্ম’ যদি এমন কোনো কাজ করে, যা সুন্দরবন বা বাঘের জন্য নেতিবাচক- তবে সেটা তাদের সুনাম নষ্ট করবে।” খবরঃ পরিবর্তন ডট কম
দেশের সব কিছু তো নিয়ে গেছে বিদেশিরা এখন নজর পড়ছে সুন্দরবন আর বাঘ গুলোর উপর। কয় দিন পরে এগুলো ও নিয়ে যাবে মনে হ্য়। আমাদের দেশে আর কিছু থাকবে না
ধন্যবাদ তায়ফুর ভাই।নাজমুল ভাই আশা করি এরকম কিছুই হবে না।ইনশা আল্লাহ।
যারা আমাদের বাঘের সাথে দুই নাম্বারি করতাছে, তাদেররে যেন বাঘে ধরে