অর্গানোগ্রাম নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পয়েন্ট তুলে ধরতে চাই।
১। প্রথমত আমাদের হাতে সময় খুব কম, কেননা, আগামী ৩ মাস পার হবার পর সরকারের বক্তব্য জনপ্রশাসন এর কর্মকর্তারা খুব একটা গুরুত্বসহকারে শুনবে বলে আমার মনে হয় না। তাই সময় যেহেতু কম তাই আমাদেরকে প্রথমে ডিপ্লোমেটিক উপায়ে অগ্রসর হতে হবে।
২। ফিসারিজ ডিপার্টমেন্ট তাদের অর্গানোগ্রাম জমা দিয়ে দিয়েছে, মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন (নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে খবর পাওয়া) আগামী ৭ দিনের মধ্যে আমাদের উভয় পক্ষকে (AH-DVM) মন্ত্রণালয়ে গিয়ে মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে দেখা করে ওখানেই সব ফয়সালা করতে, তাই আমি বলবো সময় খুবই কম। যা করার এর মধ্যেই করতে হবে।
ঘরে বাইরে ষড়যন্ত্রঃ
৩। একটা অরগানোগ্রাম জমা দেয়ার পর আমাদের উভয় পক্ষ থেকেই মাননীয় মন্ত্রীকে ফোন করে তাকে বিভ্রান্ত করা হয়। আর এটা করে ডিএলএস-এর ভেতরকার কিছু নেত্রীস্থানীয় কর্মকর্তাবৃন্দ। তারা বাকী জীবন ঢাকায় থাকতে চায়, আর নেতামী করতে চায়, আর সেই জন্যই তারা চায় না এই অরগ্রানোগ্রাম পাশ হোক। আবার কিছু স্বার্থপর কর্মকর্তাবৃন্দ রয়েছেন, যাদের বয়স শেষ, আর প্রমোশনের কোন সম্ভাবনা নেই, তারা মনে করে এই অর্গানোগ্রাম পাশ হলে আমাদের কি লাভ? তাই তারা আরো প্যাচ লাগিয়ে বসে থাকে। গুটি কয়েক কর্মকর্তা রাতের আধারে বিভিন্ন AH কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে প্রথম যে ৬:১ অর্গানোগ্রাম জমা দেয়া হয়েছিল তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে, জমা দেয়ার ২০-২৫ দিন পরে মন্ত্রী মহোদয়কে বলেন, যে অর্গানোগ্রামে AH এর পোস্ট কম হয়ে গিয়েছে! আর তারা এখনও ষড়যন্ত্রে লীপ্ত। খালী এই চিন্তায় মগ্ন থাকে যে ভেটেরিনারির কোন্ পোস্টটি কেটে বাদ দেয়া যায়। আর মন্ত্রী মহোদয়কে ফোন করে বলে যে অমুক পোস্টটির কোন দরকার নেই…। এভাবে কাল-বিলম্ব করে করে তারা কাদের সর্বনাশ করছে? এই আমাদের, মানে শুধু ভেটেরিনারিনদের নয়, সেই সাথে এনিমেল হাজবেন্ড্রীদেরও, এরা আসলে এটা করছে তাদের ব্যাক্তি স্বার্থের জন্য। তারা আসলে এনিমেল হাজবেন্ড্রী বা ভেটেরিনারিয়ান কারোর পক্ষেই কাজ করছে না বরং আরো কিভাবে সময় ক্ষেপন করা যায়, তারই চেষ্টা করে যাচ্ছে। কাজেই তাদেরকে চেনা আমাদের খুব প্রয়োজন।
৪। এইসব কালপ্রিটদের সাথে আবার আরেকটা ষড়যন্ত্রকারী যোগ হয়েছে, আমাদের সাথী ডিপার্টমেন্টের ভাইয়েরা, যারা আমাদের চেয়ে সংখ্যায় অনেক বেশিই ছিল, তারা আবার চায় না, আমাদের ডিপার্টমেন্টের কোন উন্নতি হোক, কেননা তাদেরকে অনেক ক্ষেত্রে প্রায় এন্ট্রি লেভেল পোস্ট থেকেই রিটায়মেন্টে যেতে হয়, বড়জোড় একটা প্রমোশন হয়, তাই আমাদের দ্রুত পদন্নোতি হোক এটা তারা চায় না।
ফিল্ডের কি পরিস্থিতিঃ
ফিল্ড লেভেল থেকে AH এবং DVM এর সবাই চায় যে কোন ভাবেই হোক না কেন, অর্গানোগ্রাম পাশ হোক, তারা কোন দলাদলীর মধ্যে থাকতে চায় না, এটাই বেশিরভাগের মনোভাব। শুধু গুটি কয়েক কেন্দ্রীয় নেতাদের আর বাকৃবির কিছু সংখ্যক এনিমেল হাজবেন্ড্রী শিক্ষকদের স্বার্থের বলী হতে হচ্ছে আপামর এনিমেল হাজবেন্ড্রী আর ভেটেরিনারিয়ানদের। শিক্ষকেরা চায় তাদের ডীনশিপ টিকে থাকুক, আর নেতারা চায়, বিভিন্ন প্রজেক্ট আর বদলী বাণিজ্যটা রমরমা করে রাখতে। এনিমেল হাজবেন্ড্রী শিক্ষকদের আমি বলতে শুনেছি, “একবিন্দু রক্ত থাকতে দুই ফ্যাকাল্টি এক হতে দেব না”। আমার প্রশ্ন হলো এই কথাটা কি তাদের মুখ থেকে শোনার কথা, না কি এটা ছাত্রদের বলার কথা? কেননা, বেকার থাকলে তো থাকবে, ছাত্ররা, আপনারা তো চাকরি পেয়েই গেছেন! বাকৃবিতে ডীন হয় জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে। প্রতি ২ বছর পরপর ডীন পরিবর্তন হয়। দুই ফ্যাকাল্টি এক হয়ে গেলে তখন কি হবে? যেহেতু ভেটেরিনারিতে ডিপার্টমেন্ট বেশি এবং শিক্ষকও বেশি, তাই দুই ফ্যাকাল্টি এক হয়ে গেলে এনিমেল হাজবেন্ড্রী ফ্যাকাল্টির দুইজন শিক্ষকের মাঝে বেশ কয়েকজন ভেটেরিনারির শিক্ষক ঢুকে পরবেন, ফলে তাদের প্রমোশনের সময় পিছিয়ে যাবে। একবার আমরা দুই ফ্যাল্টির ছাত্র-নেত্রীবৃন্দ মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমরা দুই ফ্যাকাল্টি এক করে ফেলবো। উভয় ফ্যাকাল্টির ছাত্র-ছাত্রীরা দুই ফ্যাকাল্টির সাবজেক্ট সমূহই পড়বো। রাতারাতি এনিমেল হাজবেন্ড্রী ছাত্র-নেতাদের তাদের শিক্ষকেরা এমন থ্রেড দিলেন যে, পরের দিন আর তাদের খুঁজেই পাওয়া গেল না! এইসব শিক্ষকেরা তাদের বেতন থেকে অর্থ কেটে নিয়ে ছাত্রদের আন্দোলনের পরামর্শ দেন, আমার প্রশ্ন হলো, কেন? সেটা কি ছাত্রদের মঙ্গলের জন্য? না, আমি তা মনে করি না, কারন, বাংলাদেশের ফিল্ডের পরিস্থিতি কি তা কি কখনও ছাত্রদের জানানো হয়? প্রাক্তন ছাত্রদের সাথে কি অভিজ্ঞতা শেয়ার করা হয়? হয় না, আমি প্রাক্তন কিছু এনিমেল হাজবেন্ড্রীর ছাত্রদের সাথে কথা বলেছি, যারা সেই সময় তুখর ছাত্র নেতা ছিল, এনিমেল হাজবেন্ড্রীর হয়ে কত কিছুই না করেছে, তারাও আজ বলে যে বাংলাদেশে পৃথক এই দুটি ডিগ্রীর কোন প্রয়োজন নেই, কম্বাইন্ড হয়ে যাওয়াই ভালো। আমি কয়েকজন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি, যারা এনিমেল হাজবেন্ড্রীর ছাত্র ছিলেন, তারাও একই কথা বলেন, “বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে কোন প্রয়োজন নেই আলাদা দুটি ডিগ্রীর”।
আজ আমরা পৃথক থেকে দুই ভাই ঝগড়া করে করে, ১০০ বছর পিছিয়ে গেছি, এর জন্য দায়ী কারা? আজ সমাজে আমাদের অবস্থান কোথায় দাড়িয়েছে? এর জন্য দাযী কারা? একটা কথা আছে, “যখন দুই ভাই ঝগড়া করে, তখন তৃতীয় পক্ষ তার সুযোগ নেয়”।
আমি এনিমেল হাজবেন্ড্রীর ছাত্র ভাইদের বলতে চাই, আপনারা সারা দেশে কয়জন? আর কম্বাইন্ড ডিগ্রী এবং শুধু ডিভিএম পাশ করা ছাত্র কয়জন? একবার নিস্বার্থভাবে ভেবে দেখুন না, আপনারা বেকার না থাকলেই তো হলো, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এনিমেল হাজবেন্ড্রী ফ্যাকাল্টি খুলে তারপর ছাত্র ভর্তী করিয়ে, তারপর ৫ বছর পর তাদের পাশ করিয়ে এরপর তাদের ধরে এনে চাকরি দিতে চান, আর ভেটেরিনারিয়ানরা বেকার থাকুক, এটা চাওয়ার কি যুক্তিসঙ্গত কোন কারন আছে?
একদম প্রত্যন্ত কোন উপজেলায় চাকরি করে এমন কোন এনিমেল হাজবেন্ড্রী গ্রাজুয়েটকে জিজ্ঞেস করে দেখবেন, আশা করি প্রকৃত চিত্রটি পেয়ে যাবেন। যাই হোক, আমি বোধহয় প্রসঙ্গ থেকে খানিকটা দূরে চলে গেলাম, দুঃখিত।
তবে একটা কথা বলতে চাই, ঝগড়া করে করে এই সরকারের আমলের চার বছর সময়ে আমরা কিছুই অর্জন করতে পারলাম না! আর বাকি যেটুকু সময় আছে, যদি সেটুকুকেও কাজে লাগাতে না পারি, তবে সত্যিই অনেক পস্তাতে হবে।
অর্গানোগ্রাম বাস্তবায়নে কি করণীয়ঃ
প্রথমে আমাদের ছাত্রদের এবং ফিল্ড পর্যায়ের ডিগ্রি-নির্বিশেষে এক মনোভাবাপন্ন হতে হবে। কেউ কারো শত্রু না- এটা ভাবতে হবে। বাস্তব অবস্থা বিচার করে দুই পক্ষই কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও লক্ষ্যটা অর্জন করতে হবে।
মন্ত্রী মহোদয়ের বেধে দেয়া ৭ দিন সময়ের মধ্যে কারা কারা প্রতিনিধিত্ব করে সেই বৈঠকে উপস্থিত হবেন তা নির্ধারন করতে হবে। এখানে একটা কথা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, “বিভিএ’র নেত্রীবৃন্দ, আপনাদের ভূমিকা নিয়ে এমনিতেই আপামর ভেটেরিনারিয়ানবৃন্দ ভীষণ ক্ষুব্ধ, কাজেই আপনারা বুঝে-সুঝে কাজ করবেন, যদি আপনারা সেই বৈঠকে যেতে বিব্রত বোধ করেন, তবে আগেই স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেবেন, যাতে আমরা বিকল্প ব্যবস্থা নিতে পারি। এবার আর কোন রকম গাফিলতি সহ্য করা হবে না ।”
অর্গানোগ্রামের দাবী এবার দুই পক্ষ থেকেই জোড়ালো, আমরা চাই, যেভাবেই হোক না কেন, দুই পক্ষ একসাথে বসে একটা চুড়ান্ত ফয়সালা, আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার আমরা কাউকে দেইনি। অতএব, সাবধান!!!
আমি ৩০তম এবং ৩১তম বিসিএস এর লাইভস্টক ক্যাডারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আপনারা দয়া করে অগ্রনী ভুমিকা নিন। কেননা, আপনারা বয়সে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি তরুন।
প্রয়োজন হলে, দুই ফ্যাকাল্টির প্রতিনিধিদের নিয়ে “অর্গানোগ্রাম বাস্তবায়ন কমিটি” একটা আলাদা ফোরাম গঠন করুন।আমরা ডিএলএস-এর গুটিকয়েক কর্মকর্তাদের পোস্টমর্টেমের ছুরির নিচে আর আমাদেরকে দেখতে চাই না। এবার চাই একটা নিষ্পত্তি।
বিভিএর নেতাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আপনাদের ঐ আসনগুলিতে আমরা আপনাদের জোড় করে বসিয়ে রাখিনি, আমাদের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে, আমাদের সরল প্রাণকে প্রভাবিত করে, আমাদের রায় নিয়েই ঐ আসনে অধিষ্টিত হয়েছেন। এই কথাটা যদি আপনারা ভুলে গিয়েও থাকেন, তবে আমরা কিন্তু ভুলিনি, আর কথা দিচ্ছি, ভুলবও না।
ষড়যন্ত্রকারীদের আমরা সাবধান করে দিতে চাই, এখন কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশের যুগ, সব খবর মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে! তাই আবারও বলছি, সাবধান!!!
মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের আন্তরিকতাকে সম্মান দিন। যে সুবর্ণ সুযোগ আমাদের হাতে আছে তাকে মর্যাদা দিয়ে অতি শীঘ্র পদক্ষেপ নিন, নইলে এর দায়দায়িত্ব আপনাদেরকেই নিতে হবে।
চমৎকার একটি সম্পাদকীয়। কিন্তু কে বুজতেছে এর মর্যাদা। এত সুন্দর একটি লেখায় মন্তব্য খুজে পাচ্ছি না। যাহোক কাজ করে যাও ফল একদিন ফলবেই। কোন ভাল কাজ কখনো বৃথা যায় না।
এই লেখাটি আমি ফেইসবুকে শেয়ার করেছিলাম, সেখানে বেশ কয়েকজন কমেন্ট করেছেন। আমাদের সম্মানিত পাঠকগণ অনেক বিচক্ষণ, আশা করবো তারা ফেইসবুকের পাশাপাশি শেয়ারকৃত মূল লেখাটিতেও মন্তব্য করার অভ্যাস গড়ে উঠবে। মূল লেখার নিচে মন্তব্য করলে তার মন্তব্যটি যারা যেখান থেকেই লেখাটি পড়ুক না কেন সবাই তার সেই মন্তব্যটি পড়তে পারবে। আর ফেইসবুকে মন্তব্য করলে সেই মন্তব্যটি শুধুমাত্র যারা লেখাটি ফেইসবুক থেকে পড়ছেন কেবল তারাই দেখতে পাবেন। ধন্যবাদ, শিশির, দারুন, একটি ফিডব্যাক দেয়ার জন্য।