Broiler Management

ব্রয়লার ব্যবস্থাপনাঃ


একজন ব্রয়লার পালনকারী  খামারী লাভবান হবে না ক্ষতিগ্রস্থ হবে তা নির্ভর করবে গুনগত মান সম্পন্ন বাচ্চা, গুনগত মান সম্পন্ন খাদ্য এবং সঠিক খামার ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কারিগরী জ্ঞানের উপর। আদর্শ পোল্ট্রি খামার গড়ে তোলার জন্য ও বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হতে ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত  যে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখা দরকার তা অতি সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-

১। মুরগীর বাসস্থানঃ

  • মূরগীর ঘর অবশ্যই পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা হবে।
  • ঘরের সর্বনিম্ম উচ্চতা হবে ৮.৫ ফুট।
  • ঘরের প্রস্থ ২৪ ফুটের বেশি না হওয়াই ভালো।
  • পর্যাপ্ত পরিমান আলো ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

২। প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমাণঃ

  • চিকগার্ডে প্রতি বাচ্চার জন্য ০.২ বর্গফুট হিসাবে ৫০০ বাচ্চার জন্য ৬ ফুট ব্যাসার্ধের বৃত্তাকার পরিধি তৈরি করতে হবে।
  • শীতকালে ও গরমকালে স্থান সংকুলান নিম্নরূপঃ
শীতকালীন গরমকালীন
বয়স(দিন) জায়গা/মুরগী বয়স(দিন) জায়গা/মুরগী
১-৩ ০.২ বর্গফুট ১-৩ ০.৩ বর্গফুট
৪-৭ ০.৩৫ বর্গফুট ৪-৭ ০.৪৫ বর্গফুট
৮-১১ ০.৪৫ বর্গফুট ৮-১১ ০.৬ বর্গফুট
১২-১৪ ০.৫ বর্গফুট ১২-১৪ ০.৮৫ বর্গফুট
১৫-২০ ০.৬ বর্গফুট ১৫-৩৫ ১.২ বর্গফুট
২১-৩৫ ১.০ বর্গফুট    

৩। বাচ্চা আসার পুর্বকালীন ব্যবস্থাপনাঃ

  • ঘরের দেয়াল ও মেঝে জীবাণুনাশক দ্বারা স্প্রে করতে হবে।
  • বাচ্চা আসার আগের দিন চিকগার্ড স্থাপন করে ধানের তুষ বিছিয়ে তার উপর খবরের কাগজ বিছিয়ে দিতে হবে।
  • বাচ্চা ব্রূডারে ছাড়ার ১২ ঘন্টার পুর্বে প্রয়োজনীয় তাপ দেয়া শুরু করতে হবে।
  • শীতকালে চিক গার্ড এর চারদিকে পর্দা টানিয়ে দিতে হবে।
  • পরিমানমত পানি ড্রিংকারে করে ব্রূডার হাউজে স্থাপন করতে হবে যাতে পানি হালকা গরম হয়।

৪। বাচ্চার আসাকালীন ব্যবস্থাপনাঃ

  • বাচ্চা আসার পর বাচ্চা গণনা করে ব্রূডারের নিচে ছেড়ে দিতে হবে।
  • যদি কোনো বাচ্চা পানি না খায় তাহলে তাদের ধরে পানি খাওয়াতে হবে।
  • প্রথম ৩-৪ ঘন্টার পানির সাথে গ্লূকোজ বা চিনি এবং ভিটামিন-সি মিশ্রিত পানি দিতে হবে। গ্লূকোজ ৫০ গ্রাম/লিটার, ভিটামিন-সি ১ গ্রাম/ ২ লিটার
  • বাচ্চা ছাড়ার ৩০-৬০ মিনিট পর ব্রয়লার স্টার্টার খাবার দিতে হবে।

৫। ব্রূডার এর তাপমাত্রাঃ

বয়স ফারেনহাইট সেলসিয়াস
১ম সপ্তাহ ৯৫˚ ফারেনহাইট ৩৫˚ সেলসিয়াস
২য়সপ্তাহ ৯০˚ ফারেনহাইট ৩২˚সেলসিয়াস
৩য় সপ্তাহ ৮৫˚ ফারেনহাইট ২৯˚ সেলসিয়াস
৪র্থ সপ্তাহ ৮০˚ ফারেনহাইট ২৬˚ সেলসিয়াস

৬। খাবার ব্যবস্থাপনাঃ

  • প্রথম ১-২ দিন খবরের কাগজের উপর খাবার ছিটিয়ে দিতে হবে।
  • প্রথম ৭ দিন পর্যন্ত ট্রে ফিডার ব্যবহার করা যায় অতঃপর গোলাকার ফিডারে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
  • প্রথম ২ সপ্তাহে ৩-৪ ঘন্টা অন্তর অন্তর, ৪র্থ সপ্তাহ পর্যন্ত ৩-৪ বার এবং এরপর ৩ বার খাবার দিলেই চলবে।
  • ট্রে ফিডারঃ ১০০ বাচ্চার জন্য ১ ট্রে ফিডার ১ম সপ্তাহে ব্যবহার করা যায়।
  • গোলাকার ফিডারের পরিমানঃ
বাচ্চার বয়স ১০০০ বাচ্চার জন্য ফিডারের পরিমান
১ম সপ্তাহ ১০ টি
২য় সপ্তাহ ১৫ টি
৩য় সপ্তাহ ২০ টি
৪র্থ সপ্তাহ ২৫ টি
৫ম সপ্তাহ ৩০ টি

পানি ব্যবস্থাপনাঃ

  • পর্যাপ্ত পরিমান বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে।
  • দিনে অন্তত চার (৪) বার পানি পরিবর্তন করে দিতে হবে।
  • ড্রিঙ্কারের পরিমান-
বাচ্চার বয়স ১০০০ বাচ্চার জন্য ড্রিংকারের পরিমান
১ম সপ্তাহ ১০ টি
২য় সপ্তাহ ১৫ টি
৩য় সপ্তাহ ২০ টি
৪র্থ সপ্তাহ ২৫ টি
৫ম সপ্তাহ ৩০ টি

৮।লিটার ব্যবস্থাপনাঃ

  • লিটার হিসাবে ধানের তুষ, কাঠের গুড়া,বালি, পারটেক্সের গুড়া ব্যবহার করা যায়, তবে ধানের তুষ ব্যবহার করাই উত্তম
  • লিটারের পুরুত্বঃ শীতকালে ২-৩ ইঞ্চি, গরমকালে ১-১ᱹ৫ ইঞ্চি।
  • লিটার সবসময় শুকনা রাখতে হবে এবং ভেজা বা স্যাতঁস্যাতে লিটার পরিবর্তন করে দিতে হবে।
  • প্রতিদিন যথাসম্ভব ৩-৪ বার লিটার উল্টে পাল্টে দিতে হবে।

৯। ভ্যাক্সিনেশনঃ

বয়স ভ্যাকসিনের নাম প্রয়োগ
আইবি+এনডি (লাইভ)/বিসিআরডিভি চোখে এক ফোটা
১০ আইবিডি ইন্টারমিডিয়েট স্ট্রেইন চোখে এক ফোটা/পানিতে
১৭ আইবিডি ইন্টারমিডিয়েট প্লাস স্ট্রেইন পানিতে
২১ এন ডি ক্লোন ৩০ অথবা ৭৯/ল্যাসোটা পানিতে
  • ভ্যাক্সিনেশনের উপযুক্ত সময় হলো ভোরবেলা/সন্ধ্যা
  • ভ্যাক্সিনেশনের আগে ও পরে ভিটামিন এডি৩ই ব্যবহার করতে হবে।
  • প্রতিটি বাচ্চার জন্য সঠিক মাত্রার ভ্যাক্সিন নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে কম মাত্রার ভ্যাক্সিন ব্যবহার করা যাবেনা।
  • ভ্যাক্সিনেশনের পুর্বে ১-২ ঘন্টা পানি বন্ধ রাখতে হবে এবং ১-২ ঘন্টার মধ্যে ভ্যাক্সিনের পানি শেষ করতে হবে।
  • ভ্যাক্সিনেশনের আগের দিন, পরের দিন এবং ভ্যাক্সিনেশনের দিনে জীবাণুনাশক ব্যবহার করা যাবেনা।

১০ জৈব নিরাপত্তাঃ

রোগমুক্ত ও লাভজনক খামারের জন্য জৈব নিরাপত্তার গুরুত্ব অপরিসীম। জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য যে দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে, তা হলো-

  • অন্য খামার হতে দূরে খামার স্থাপন করতে হবে।
  • অন্য কোনো খামারী, দর্শনার্থীকে খামারে প্রবেশ করতে দেয়া যাবেনা।
  • কর্মরত শ্রমিককে খামারে ঢুকতে হলে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত হয়ে ঢুকতে হবে।
  • খামারের প্রবেশ পথে ফুটবাথ স্থাপন করতে হবে।
  • মুরগীর ঘরের জন্য আলাদা জুতা ব্যবহার করতে হবে।
  • মুরগীর ঘরে ব্যবহৃত জিনিসপত্র জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
  • মুরগীর ঘরের আশেপাশে পানিতে জীবাণুনাশক মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
  • মৃত মুরগী গর্ত করে পুতে ফেলতে হবে অথবা আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  • মুরগী বিক্রয় করার পর ঘর খুব ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে এবং জ়ীবাণু নাশক ব্যবহার করতে হবে।
  • এক ব্যাচ হতে পরবরতী ব্যাচের মধ্যে অন্তত ১৫ দিন বিরতি দিলে ভাল হয়।

 

 

 

 

ডা. মোঃ সাইফুল ইসলাম

চীফ টেকনিক্যাল সার্ভিস অফিসার

নিউ হোপ ফিড মিল বাংলাদেশ লিমিটেড

লেখকঃ Dr. Saiful

Dr. Md. Saiful Islam DVM, MS in Poultry Science, Chief Technical Service Officer, New Hope Feed Mill BD Ltd. Contact: 01713450479

এটাও দেখতে পারেন

আলমডাংগার তরুন উদ্যোক্তা সোহাগের জীবন যুদ্ধের গল্প, সোনালী ব্রিডার ফার্ম

দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গা। জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার এক তরুন উদ্যোক্তা মো রোকনুজ্জামান সোহাগ। আদর্শ …

একটি মন্তব্য

  1. ঔষধ খাওয়ানোর তালিকা প্রকাশ করলে উপকৃত হতাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.